ঢাকা, শুক্রবার, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৪ মে ২০২৪, ১৫ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘মানুষ কোনো দিন মরে না’

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৬
‘মানুষ কোনো দিন মরে না’ ছবি: সোহেল সরওয়ার, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: ‘মানুষ কোনো দিন মরে না, যতদিন সে অন্যের স্মৃতিতে বেঁচে থাকে’  মন্তব্যটি করেছেন খ্যাতিমান প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও সাংবাদিক সিদ্দিক আহমেদ। জন্মদিনে রোববার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

চট্টগ্রামের তরুণ লেখক, সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের অভিভাবক হিসেবে পরিচিত ‘সিদ্দিক ভাই’ অকপটে বললেন, ‘তরুণরা আমার সন্তানতুল্য। তাদের প্রতি আমার মমতাটা একটু বেশি। পেশাগত নবীনরা যেমন তেমনি ছাত্ররাও। যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। সুপরামর্শ দিয়েছি। যথনই রিকশায় চড়ে গেছি, পরিচিত কাউকে দেখলেই নাম ধরে ডাক দিয়েছি। ভাবিনি আমি দৈনিক আজাদীর সহকারী সম্পাদক। কেউ বলতে পারবে না, আমি তাদের সঙ্গে অহমিকা দেখিয়েছি। কিংবা আমার টেবিল থেকে খালি হাতে ফিরেছে। প্রতিদান হিসেবে তারা আমাকে ভালোবাসে। এটিই বড় প্রাপ্তি। ’

তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে ভাবি তরুণরা আমাকে পছন্দ করে কেন? আমি তো কাউকে এক কাপ চা-ও খাওয়াইনি। সবাই আমাকে খাইয়েছে।

তরুণদের কথা উঠলো যথন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক আর অনলাইন নিউজপোর্টালের কথা দূরে থাকবে তা কি হয়। দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত সিদ্দিক আহমেদ এখন ‘কেমো’র যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। তারপরও নিজহাতে চালান নিজের ফেসবুক। ঢু মারেন অনলাইন নিউজপোর্টালে।

এ প্রসঙ্গে বললেন, আমি ভালো করেই জানি দৃষ্টিভঙ্গি না বদলালে হবে না। আমার মনে হচ্ছে আগামী দিনে প্রিন্টেড পত্রিকা আর থাকবে না। অনলাইন গণমাধ্যমেরই জয়জয়কার হবে। ইতিমধ্যে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো অনলাইনমুখী হওয়ার ঢেউ বাংলাদেশেও ধাক্কা দিচ্ছে। যাদের যোগ্যতা আছে, অভিনবত্ব আছে, তারুণ্য আছে, দেশপ্রেম আছে তারাই টিকে থাকবে। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.ডট কম এক্ষেত্রে ভালো অবস্থানে আছে। আরেকটি বিষয় না বললেই নয়, ফেসবুকে আমার নিজের অ্যাকাউন্ট নিজেই পরিচালনা করি। দেশ-বিদেশে হাজারো ছাত্র, পরিচিতমুখ, প্রিয় মানুষ ছড়িয়ে আছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কুশল বিনিময় করি। আমি মনে করি, ইচ্ছেশক্তি আর স্মার্টফোন থাকলে আমার চেয়ে বৃদ্ধ যারা তারাও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করতে পারবে।

বাংলাভাষা নিয়ে উদ্বিগ্ন সিদ্দিক আহমেদ। বললেন, সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, সাহিত্য চলে যাবে পদ্মার ওপারে। মানে বাংলাদেশে। একসময় নাম-যশ-খ্যাতির জন্যে মানুষ কলকাতামুখী হতেন। এখন কলকাতায় হিন্দি আর ইংরেজির আগ্রাসন চলছে। বাংলাভাষা অবহেলিত। এই তো সেদিন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেছেন, পূর্ব বাংলা তথা বাংলাদেশ নিজস্ব ভাষা নির্মাণ করতে পেরেছে। আমি বাংলাভাষার চর্চার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নিয়ে ভীষণ আশাবাদী।

জন্মস্থান চট্টগ্রাম প্রসঙ্গে সিদ্দিক আহমেদের উপলব্ধি হতাশাব্যঞ্জক। বললেন, চট্টগ্রামের আয় দিয়ে সারা দেশ চলতে পারবে। পারছে না সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবের কারণে। পারছে না জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে। সম্পদের অপচয়ের কারণে। সরকারকে দোষ দিলে হবে না। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। নীতিনির্ধারকদের বুঝিয়ে বলতে হবে।

আবারও তরুণদের প্রসঙ্গ। বললেন, আমাদের তারুণ্যের যে শক্তি তা যদি বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া যেত তবে পুরো বিশ্ব উপকৃত হতো। আমি তরুণ উদ্দেশে বলি, তুমি যে প্রফেশনে থাক আগে মানুষকে ভালোবাসতে হবে। না হলে কোনো প্রফেশনে সাকসেস হতে পারবে না। সাংবাদিক, পুলিশ, ডাক্তারের কাছে মানুষ কখন যায়? যখন অসহায়ত্ব বোধ করে। শেষ ভরসাস্থল মনে করে যায়। তাই ভালো ব্যবহার করতে হবে।

‘খোলা জানালায় গোপন সুন্দরবন’, ‘আপেলে কামড়ের দাগ’, ‘জল ও তৃষ্ণা’, ‘পিকাসো’সহ অনেক বইয়ের জনক সিদ্দিক আহমেদের নতুন বই ‘প্রভৃতি’ শিগগির প্রকাশিত হবে বলে জানালেন আলাপচারিতায়।

বাংলানিউজের ভালোবাসা

সিদ্দিক আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে রোববার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় ফুলেল শুভেচ্ছা জানায় বাংলানিউজ। চট্টগ্রাম ব্যুরো এডিটর তপন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট রমেন দাশগুপ্ত, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট উজ্জ্বল ধর, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট মো. মহিউদ্দিন ও আল রাহমান, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট সোহেল সরওয়ার এবং স্টাফ করেসপন্ডেন্ট তাসনীম হাসান। বাংলানিউজ পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে কেক কাটেন সিদ্দিক আহমেদ।

এ সময় সিদ্দিক আহমেদকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন। তিনি সিদ্দিক আহমেদকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান এবং কুশল বিনিময় করেন।

সিদ্দিক আহমেদকে টেলিফোনে শুভেচ্ছা জানান চট্টগ্রামের সন্তান বিচারক মোহাম্মদ মাহ‍াবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আপনি আমাদের এই শহরের সক্রেটিস। আপনি একটি বই লিখেছেন, ‘মানবফুল’। আমি মনে করি, আপনি নিজেই মানবফুল। আপনি আমাদের মাঝে আরও অনেক বছর বেঁচে থাকবেন, আমাদের জ্ঞান বিতরণ করবেন, এই কামনা করি। ’   

বাংলাদেশ সময়: ২২১০ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৬

এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

চট্টগ্রাম প্রতিদিন এর সর্বশেষ