ঢাকা, বুধবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অবসরে থাকছেন বদিউজ্জামান, সুপ্রিম কোর্টে ফিরছেন চুপ্পু

আদিত্য আরাফাত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৬
অবসরে থাকছেন বদিউজ্জামান, সুপ্রিম কোর্টে ফিরছেন চুপ্পু বদিউজ্জামান ও সাহাবুদ্দিন চুপ্পু

ঢাকা: রোববার (১৩ মার্চ) শেষ হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান এবং কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর অধ্যায়। সোমবার (১৪ মার্চ) থেকেই ১, সেগুনবাগিচা দুদকের সদর দফতরে তাদের আর দেখা মিলবে না।

দুদক চেয়ারম্যান এবং কমিশনার শব্দটি তাদের নামের সঙ্গে ‘সাবেক’ হয়েই জুড়ে থাকবে।

বিদায়ের পরদিন থেকে তাদের চেয়ারে বসবেন দুদকের নতুন চেয়ারম্যান-কমিশনার। টানা পাঁচ বছর দুদকের কাজে বদিউজ্জামান-সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর সকাল সন্ধ্যা ফাইলবন্দি ব্যস্ততা থাকলেও এবার অবসর...।

শনিবার (১২ মার্চ) দু’জনের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। বদিউজ্জামান অবসরের কথা বললেও সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ‘অবসর’ মানতে নারাজ। তিনি বললেন, ‘দুদকের দায়িত্ব শেষে আমার পেশাতেই ফিরছি’।

দুদকের বিদায়ী চেয়ারম্যান সত্তরোর্ধ্ব বদিউজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘বয়সতো কম হলো না...মেঘে মেঘে অনেক বেলাই গেলো। দুদকে অনেক বড় দায়িত্ব ছিলো...অনেক কাজ থাকতো। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফাইলের পর ফাইলে চোখ। এর মধ্যে সভা-সেমিনার বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হতো। এখন আর এসব কিছু থাকবে না। নিজের মতো করে থাকতে পারবো’।

অবসরে কি করবেন জানতে চাইলে বদিউজ্জামান বলেন, ‘বিশ্রামেই থাকবো। টানা কয়েকদিন বাসায় থাকবো। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সময় কাটাবো। এরপর পরিবারের সঙ্গে সময় দেওয়ার পাশাপাশি অবসরে সামাজিক কাজেও জড়িত হবো’।

লক্ষীপুর শহরে মজুপুরে ১৯৪৪ সালে জন্ম নেওয়া বদিউজ্জামান বলেন, ‘নিজের জেলায় যাবো মাঝে মধ্যে। ওখানকার বিভিন্ন সামাজিক কাজের সঙ্গে আমি জড়িত ছিলাম। দুদক চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থাকা অবস্থায় হয়তো সেভাবে সময় দিতে পারিনি। এখন নিজের জেলায় বিভিন্ন সামাজিক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখবো’।

গত মাসে নিজের ছোট ভাইয়ের হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণে এখনও ব্যথাতুর বদিউজ্জামান। তাই কথার শেষ পর্যায়ে বললেন, ‘ভাইয়ের মৃত্যুটা খুব পোড়ায়। আমারইতো ছোট...কার কখন মৃত্যু হয়...’।
 
দুদকে পাঁচ বছর কাজের মূল্যায়নের বিষয়ে বললেন, ‘চেষ্টা করেছি দায়িত্ব পালন করতে। হয়তো শতভাগ প্রত্যাশা-প্রাপ্তির সমন্বয় হয় না। তবুও পেছনে ফিরে তাকালে মনে হয়, অর্জন একবারে কম নয়’।

দুদকের বিদায়ী কমিশনার (তদন্ত) সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর কাছে অবসরের বিষয়টি তুলতেই বাংলানিউজকে বললেন, ‘দুদকের এ দায়িত্ব শেষ কিন্তু আমার কাজতো শেষ না। আমি আমার আইন পেশাতেই ফিরছি...’।

বর্নাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী সাহাবুদ্দিন চুপ্পু একাধারে আইনজীবী, অধ্যাপক ও বিচারকও ছিলেন। সাবেক জেলা জজ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, ‘১৯৭৯ সাল থেকেইতো আইন পেশা ও অধ্যাপনা। মাঝে ২৫ বছর বিচারক। তারপর সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় থাকাকালে দুদক কমিশনারের দায়িত্ব পাই। এখন দায়িত্ব শেষে আমি আমার আইন পেশায় ফিরে যাবো’।

সুদীর্ঘকালের আইন পেশায় থাকা সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, ‘আমার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে সনদ আছে। ওটা আপাতত স্থগিত ছিলো। এখন সনদটি একদিন-দু’দিনের মধ্যে পুনর্বহাল করে নেবো। তারপর আমার পেশায় ফিরে যাবো। এ পেশার মাধ্যমেই মানুষের সেবা করবো’।

একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, ‘দায়িত্ব পালনকালে চেষ্টা করেছি, ভালো কাজ করতে। দেশের আলোচিত পদ্মাসেতু, হলমার্ক, ডেসটিনি এসব দুর্নীতির সঠিক তদন্ত হয়েছে। অনেক হাই-প্রোফাইলধারী ব্যক্তিকে দুদকের কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পেরেছি’।

১৯৪৯ সালে পাবনা শহরের জুবিলি ট্যাংক পাড়ায় জন্ম নেওয়া চুপ্পু বলেন, ‘পাঁচ বছরে অনেক ভালো কাজ করেছে দুদক। দুর্নীতিকে ঘৃণা করার সাহস আমরা সাধারণ মানুষের মধ্যে গড়ে দিতে পেরেছি। অতীতে যা হয়নি তাই করেছি। সারা দেশের ৬৪ জেলায় দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি করে দিয়েছি। এ কমিটির মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন স্তরে মানুষের ভেতর দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব তৈরি করে দিতে পেরেছি। এছাড়া গণশুনানি চালু করেছি। এগুলোতে জনগণের সম্পৃক্ততা ছিলো’।

গত ১০ মার্চ দুদকের চেয়ারম্যান পদে সাবেক সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদ ও কমিশনার পদে সাবেক জেলা ও দায়রা জজ এএফএম আমিনুল ইসলামকে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। ইকবাল মাহমুদ বিদায়ী চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান ও আমিনুল ইসলাম বিদায়ী কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৬
এডিএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ