ঢাকা, রবিবার, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

ইনজেকশনে এক মাসেই মোটাতাজা হবে গরু!

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:০৮, আগস্ট ৭, ২০১৪
ইনজেকশনে এক মাসেই মোটাতাজা হবে গরু! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চরাঞ্চল, ময়মনসিংহ ঘুরে : কোরবানি সামনে রেখে ষাঁড় গরু মোটাতাজা করতে এখনই ব্যস্ততা নেই। কোরবানির আগে ইনজেকশনে এক মাসেই মোটাতাজা হবে গরু।

ময়মনসিংহের চরাঞ্চলে ঘুরে এমনটাই জানা গেলো।

এখানকার গৃহস্থরা অতিরিক্ত মুনাফার আশায় স্বল্প সময়ে গরু মোটাতাজা করতে ব্যবহার করেন বিভিন্ন দেশীয় কোম্পানির ইনজেকশন ও পাউডার। এসব ওষুধ ইনজেক্টের ফলে মাত্র এক মাসেই স্বাস্থ্যবান হবে গৃহস্থের গরু, তা জানালেন খামারিরা।

ময়মনসিংহ সদর, গৌরীপুর ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চল ঘুরে কথা বলে জানা গেছে, ভেটেরিনারি চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই শহরের বেশ কয়েকটি গবাদি পশুর ওষুধের দোকানে হাত বাড়ালেই মিলবে ইনজেকশন।

জানা যায়, কোরবানির ঈদে ময়মনসিংহের গরুর হাটগুলোতে স্থানীয় গরুর চাহিদা থাকে ব্যাপক। তুলনামূলকভাবে ভারতীয় গরু এখানকার হাট-বাজারগুলোতে কম উঠে। নিজেদের গরুর দরদাম বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে গৃহস্থরা গরু তরতাজা করতে ‘ছোট ঈদের’ (ঈদ-উল-ফিতর) পর পরই শুরু করেন ব্যাপক প্রস্তুতি।

বছরজুড়ে স্থানীয় হাট-বাজার থেকেই কেনা ভূষি, খৈল, ঘাস ও খড় গবাদি পশুর স্বাভাবিক খাবারের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত থাকলেও কোরবানির ঈদের মাসখানেক আগে গ্রামের গৃহস্থরা গরুর খাবারের রুচি বাড়ানোর নাম করে ব্যবহার শুরু করেন নানা ওষুধ।

এ সময়টাতে শহরের ওষুধপাড়ায় বিভিন্ন ফার্মেসীতে গবাদি পশুর ওষুধ বিক্রির মাত্রাও বেড়ে যায়। চাহিদা বুঝে বেশ কয়েকটি ফার্মেসি এ ধরণের ইনজেকশন ও ভিটামিনের জোগান বাড়ায়।

এখনই বিভিন্ন ফার্মেসিতে একমি গ্রুপের এ-সল ভেট, ভিটামিন এডিই, এফএনএফ গ্রুপের ক্যাটাসল, রেনেটা গ্রুপের ক্যাটাফস, টেকনো গ্রুপের মেটাফস, নোভার্টিস কোম্পানির মেগাভিট ডিভিসহ বিভিন্ন ইনজেকশন ও পাউডার বিক্রি হচ্ছে। এসবের দাম ১৮০ টাকা থেকে ৫’শ টাকা পর্যন্ত।

চরাঞ্চলে দেখা গেছে, লাভজনক হওয়ায় অনেক বিত্তবান কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরু পালন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। এই বিত্তবানরা গরু কিনে দরিদ্র পরিবারগুলোর কাছে ভাগি (বর্গা) দেয়। তবে তারা এ ব্যবসা করলেও সচরাচর প্রচার বা প্রকাশ করেন না।

ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারে ময়মনসিংহ শহর সংলগ্ন চরাঞ্চলের চর নিলক্ষীয়া ইউনিয়নের ভাটিপাড়া এলাকায় নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কৃষক ও দিনমজুর শ্রেণীর লোকের বসতি। কোরবানির ঈদে বাড়তি আয়ের লক্ষ্য নিয়ে এ গ্রামের মানুষ কম দামে গরু কিনে মাস ছয়েক আগে থেকেই লালন-পালন শুরু করেন।

এ গ্রামের প্রায় ঘরে ঘরেই গরু। যাদের গোয়ালঘর নেই তাদের বাড়ির আঙিনাতেও ৩ টি থেকে ৫ টি গরু খুঁটিতে বাঁধা অবস্থায় দেখা গেছে। ঈদের আগে কৃত্রিমভাবে গরু মোটাতাজা করে তারা মুনাফাকে বাড়িয়ে তোলার ধান্ধা করেন।  

অভিন্ন চিত্র দেখা গেছে ভাটিপাড়া লাগোয়া গৌরীপুরের ভাঙনামারী ইউনিয়ন, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উছাখিলা ইউনিয়নের মরিচারচর, রাজিবপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন চরের গ্রামগুলোতে।   

ভাটিপাড়া গ্রামের গৃহস্থ মোহাম্মদ আলী (৫০)। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রায় ৬ মাস আগে তিনি দু’টি ষাঁড় গরু কিনেন। তিনি জানান, সাধারণ খাবারের পাশাপাশি দু’টি গরুকে প্রতিদিন দু’কেজি করে খৈল ও ভূষি খাওয়ানো হচ্ছে।

হাটে কোরবানির এ গরু তোলার এক মাস আগে ইনজেকশন দিতে হবে জানিয়ে আঞ্চলিক ভাষায় এ বয়োবৃদ্ধ বলেন, ‘ঈদের এক মাস আগে ইনজেকশন দিমু। এতো গরু ফুলবো। গতবার বেচোনের আগে গরুরে ফুলার বড়ি খাইয়াইছিলাম। হেইবার ৩৫ হাজার টাকা গরু বেইচ্ছিল্যাম। ’

ইনজেকশনের পাশাপাশি চরাঞ্চলের গৃহস্থদের কাছে ‘বালতি’ হিসেবে পরিচিত নোভার্টিস কোম্পানির মেগাভিট ডিভি’র কদর বেশ। ভূষি এবং খৈলের সঙ্গে মিশিয়ে বড় গরুকে চার চামচ ও ছোট ষাঁড় গরুকে দু’চামচ করে এ পাউডার মিশিয়ে প্রতিদিন খাওয়ানো হয়।

একই এলাকার দরিদ্র কৃষক আবুল হাশেম (৪০) জানান, তার দু’টি গরু আছে। ঘাস, ভূষি ও খৈলের পাশাপাশি তিনিও ষাঁড় গরুকে স্বাস্থ্যবান করতে ঈদের ২০ থেকে ২৫ দিন আগে ইনজেকশন ও বালতি খাওয়াবেন।

গৌরীপুর উপজেলার ভাঙনামারী ইউনিয়নের দুর্বারচর গ্রামের মুনসুরুল আমিন হেলাল (৩৫) জানান, তাঁর ৫ টি ষাঁড় গরু তিনি বাগিদারের কাছে দিয়ে রেখেছেন। ভূষির সঙ্গে খুদ (চালের ক্ষুদ্র অংশ) ও কচুরিপানা মিশিয়ে প্রতিদিন খাওয়ানো হচ্ছে। গরুগুলো মোটাতাজা করে হাটে তোলার জন্য তিনিও ‘বালতি’ (পাউডার) খাওয়াবেন বলে জানান।

তিনি জানান, বালতি খাওয়ালে গরু স্বাস্থ্যবান হয়। গজের মাংস বেড়ে যায়। ষাঁড় দেখে ক্রেতারা আকৃষ্ট হন। এখন সবাই এটা ব্যবহার করে।

স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক রাসেল সরকার জানান, ‘শতকরা ৭০ শতাংশ কৃষক এখন গরু মোটাতাজা করতে ইনজেকশন ও বালতি পাউডার ব্যবহার করেন। এগুলোতে ক্ষতির কিছু নেই। এসব ভিটামিন জাতীয় ওষুধ। ডাক পড়লেই গ্রাম ঘুরে ঘুরে তিনি এসব ইনজেকশন গরুর মাংস পেশীতে পুশ করে দেন।

এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা শরাফত জামান বলেন, ‘গরুর ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণের জন্য গৃহস্থরা এসব ইনজেকশন ব্যবহার করেন। তবে মাত্রাতিরিক্ত এসব ইনজেকশন ব্যবহার করলে গরুর কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ’

তিনি জানান, কিছু কিছু প্রতারক বিভিন্ন নামি কোম্পানিগুলোর লেভেল ব্যবহার করে ক্ষতিকারক স্টেরয়েড জাতীয় হরমোনের ইনজেকশন বিক্রি করে। যা অনেক সময় গৃহস্থরা না বুঝেই ব্যবহার করেন। এ ধরণের ক্ষতিকারক স্টেরয়েড গরুর শরীরে পুশ করা হলে সেই গরুর মাংস মানবদেহের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। ’

** সাতক্ষীরায় গো-খাদ্য সঙ্কট, মোটাতাজায় ওষুধের ব্যবহার
** নাটোরে এবার ‘জিরো ফিগার’ গরু!

বাংলাদেশ সময় ০৯০৫ ঘণ্টা, আগষ্ট ০৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ