ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সেই ২০ উপদেষ্টা কে কোথায়

মাজেদুল নয়ন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৩
সেই ২০ উপদেষ্টা কে কোথায়

ঢাকা: নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার গঠনের জন্য ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে ১০ জনকে বাছাইয়ের প্রস্তাব করেছেন বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া। আগের দুটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২০ জন উপদেষ্টা থেকে সরকারি দলকে ৫ জন এবং বিরোধী দলগুলো থেকে ৫ জনকে নিয়ে এই নির্দলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন তিনি।



তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০ জন উপদেষ্টার কয়েকজন এরই মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। আবার অনেকের শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। এছাড়াও দুজন উপদেষ্টা দুই তত্ত্বাবধায়কের আমলেই দায়িত্ব পালন করেছেন।

সেই হিসাবে দুই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মোট ১৮ জন উপদেষ্টা দায়িত্ব পালন করেন। এদের মধ্যে অন্তত ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদের বেশিরভাগই শারীরিকভাবে অসুস্থ্ হয়ে পড়েছেন।

`৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা সাবেক প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমানের শারীরিক অবস্থা বর্তমানে সম্পূর্ণ সুস্থ নয়।

৯৬ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. ইউনূস। বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংক ইস্যুতে বেশ বিতর্কিত অবস্থায় রয়েছেন এই নোবেলজয়ী।  

`৯৬ ও ২০০১ সালে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন  আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ। তিনি বর্তমানে বেঁচে নাই।

শিক্ষা, যুব ও ক্রীড়া এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (১৮ তম) অধ্যাপক শামসুল হক। বর্তমানে বেঁচে নেই এই শিক্ষাবিদও।     

`৯৬ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, পাট এবং বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন সেগুফতা বখত চৌধুরী। তিনিও মৃত্যুবরণ করেছেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ এবং ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মে. জে. (অব) আব্দুর রহমান খান। তিনিও বেঁচে নেই।

তৎকালীন কৃষি, খাদ্য, মৎস্য ও পশুসম্পদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, এ জেড এম নাসির উদ্দিন। তিনি বর্তমানে রাজনৈতিক আলোচনার বাইরে।

অর্থ এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিউদ্দিন মাহমুদও এখন শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ।

শ্রম ও জনশক্তি, সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমা চৌধুরী বর্তমানে শারীরিকভাবে অসুস্থ।
 
সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী ৯৬ এবং ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। `৯৬ সালে যোগাযোগ, নৌপরিবহন, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কৃষি, নৌ পরিবহন, মত্স্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ২০০১ সালে।

বর্তমানে একটি বেসরকারি ব্যাংকের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক-এর উপাচার্য হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।  

২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান। তিনি এখনো বিভিন্ন সভা সেমিনারে অংশ নিয়ে থাকেন।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাবেক বিচারপতি বিমলেন্দু বিকাশ রায় চৌধুরী। তিনি বর্তমানে বেঁচে নেই।

অর্থ, পরিকল্পনা, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন সাবেক অডিটর জেনারেল হাফিজ উদ্দিন খান। তথ্য, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত, খাদ্য, পরিবেশ ও বন এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন মো. আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী।

বর্তমানে এই দুই সাবেক উপদেষ্টাই নিজ নিজ ব্যক্তিগত জীবন ও কর্ম নিয়ে ব্যস্ত।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক, সমাজকল্যাণ, শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন, বাংলাদেশের প্রথম মহিলা ব্যাংক ম্যানেজার ও ব্যবসায়ী রোকেয়া আফজাল রহমান। বর্তমানে ব্যাবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই’র দায়িত্বশীল পদে রয়েছেন তিনি।

যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন প্রকৌশলী আমানুল ইসলাম চৌধুরী।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন সাবেক সেনাকর্মকর্তা ব্রি. জে. (অব) আব্দুল মালেক। তিনি এখন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।

শিল্প, বাণিজ্য, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাবেক সেনাকর্মকর্তা মে. জে. (অব) মইনুল হোসেন চৌধুরী। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এ সাবেক উপদেষ্টা বেঁচে নেই।

শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এএসএম শাহজাহান। বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত রযেছেন তিনি।

তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টাদের নিয়ে এ ধরনের সরকার গঠনের প্রস্তাবকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শওকত আরা হোসাইন।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বিতর্কিত বলেছিলেন। আবার `৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বিএনপি অভিযুক্ত করেছিলেন পক্ষপাতিত্বের। এছাড়াও ওই সময়কার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের অনেকেই বর্তমানে বেঁচে নেই। অথবা রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে অনেক দূরে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের আরেক সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. গিয়াসউদ্দিন মোল্যা বাংলানিউজকে বলেন, ১৫তম সংশোধনীর পর এমনিতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হয়েছে। তারপরও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মডেল প্রস্তাব করা ফলপ্রসু হবে না।

বাংলাদেশ সময় ১৯৪৫ ঘণ্টা; অক্টোবর ২১, ২০১৩
এমএন/এনএস/জেসিকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ