ঢাকা, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মোল্লা নজরুলের ঘুষের প্রমাণ দুদকে

আদিত্য আরাফাত, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৩ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৩
মোল্লা নজরুলের ঘুষের প্রমাণ দুদকে

ঢাকা: কোটি টাকা ঘুষগ্রহণের অভিযোগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-কমিশনার (ডিসি) মোল্লা নজরুল ইসলামের ঘুষের প্রমাণ ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে এসেছে।

এ তথ্য-প্রমাণ অনুসন্ধানকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সূত্র বাংলানিউজকে জানিয়েছে।



দুদক জানায়, এ ঘটনায় হাফডজন ব্যক্তিকে দুদকের এর মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের রোববার থেকে মঙ্গলবারের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ ও বক্তব্য নেওয়ার জন্য নোটিশ পাঠানো হবে।

এ ছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ পাঠানো হচ্ছে নজরুলের দুই সহযোগী পরিদর্শক আজহার উদ্দিন ও এসআই হাসনাতের নামেও।

সেই সঙ্গে যার কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে, সেই বক্তি ব্যবসায়ী সৈয়দ আবিদুল ইসলাম ও নড়াইলের সংসদ কবিরুল হককেও দুদক থেকে নোটিশ পাঠানো হবে।

এ ঘটনায় তাদের বক্তব্য নেওয়া প্রয়োজন মনে করেই দুদকের অনুসন্ধান টিম চিঠি পাঠাবে।

ঘুষগ্রহণের অনুসন্ধান তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন দুদকের পরিচালক পরিচালক ও উইং কমান্ডার তাহিদুল ইসলাম।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘‘নজরুলসহ এ ঘটনায় আরো যাদের নাম এসেছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অনুসন্ধানে অগ্রগতিমূলক কিছু ডুকুমেন্টস এরই মধ্যে আমরা পেয়েছি। জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন তথ্য বের করে আশা করছি, প্রতিবেদন দ্রুত কমিশনে পেশ করা যাবে। ’’

দুদক জানায়, ইতোমধ্যে, দুদক-এর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা  ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মৌখিক আলোচনা করেছেন। অভিযোগের পক্ষে অর্থ লেনদেনের সময় ব্যাংকের সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজও হাতে পেয়েছেন দুদুক-এর অনুসন্ধান কর্মকর্তারা।

এ ফুটেজেই ঘুষ লেনদেনের চিত্র দেখেছে দুদক টিম। এ ছাড়া একটি অডিও ক্লিপও দুদকে এসেছে, যাতে ঘুষ লেনদেনের কথা রয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধান টিম জানায়, মোল্লা নজরুল ইসলাম ঢাকা মহানগর (উত্তর) গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ডিসি থাকা অবস্থায় এক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেন। ওই ব্যবসায়ীকে নির্যাতন করে গত এপ্রিল মাসে এক কোটি টাকা ঘুষ নেন। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়ার পরই তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক। ইতোমধ্যে, অভিযোগের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য টিমের হাতে এসেছে।
 
দুদক সূত্র জানায়, গত ৬ এপ্রিল রাতে গুলশানের বাসা থেকে ব্যবসায়ী সৈয়দ আবিদুল ইসলামকে ধরে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে তার কাছে এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করা হয়। ডিবির উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল হাসনাত ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংকের শান্তিনগর শাখা থেকে ঘুষের টাকা উত্তোলন করেন।

৭ এপ্রিল এক কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ব্যাংকের ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় ঘুষ লেনদেনের দৃশ্য ধরা পড়ে।

এ ঘটনায় ডিসি নজরুলকে ওই পদ থেকে সরিয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে ডিএমপি হেড কোয়ার্টার্সে ন্যস্ত করা হয়। পাশাপাশি ডিবির পরিদর্শক আজহার উদ্দিন ও এসআই হাসনাতকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

গত ৯ই জুন কমিশনের নিয়মিত বৈঠকে নজরুলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দুদক উপ-পরিচালক নাসিম আনোয়ারকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা ও পরিচালক উইং কামান্ডার তাহিদুল ইসলামকে দেওয়া হয় সমন্বয়কের দায়িত্ব।

দুদক প্রাথমিকভাবে যে বিষয়গুলো জানার টার্গেট নিয়ে কাজ শুরু করেছে, তার মধ্যে রয়েছে যে, কোনো অভিযানের আগে অফিসিয়ালভাবে সাধারণ ডায়েরি করে যেতে হয়। কোথায় যাওয়া হচ্ছে, কেন যাওয়া হচ্ছে, এ সব বিষয় উল্লেখ করতে হয় ওই ডায়েরিতে। অভিযান শেষ হওয়ার পর আবার অভিযানে কী হয়েছে, তাও জানাতে হয়।

ব্যবসায়ী আবিদুল ইসলামের বাসায় অভিযান চালানোর সময় আইনিভাবে এ সব বিষয় পালন করা হয়েছে কিনা, তা উদঘাটন করা হবে। একই সঙ্গে যদি অফিসিয়াল নিয়ম মানা না হয়ে থাকে তাহলে নজরুলের দুই সহযোগী পরিদর্শক আজহার উদ্দিন ও এসআই হাসনাত কেন অভিযানে গেলেন, সে বিষয়টি জানতে চাইবেন দুদক তদন্ত কর্মকর্তারা।

এছাড়া এ রকম আর কত অভিযান চালানো হয়েছে? কত টাকা এভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে, ওই টাকা কোথায় রাখা হয়েছে, তাও জানতে চাওয়া হবে।

এ দিকে ঘুষ কেলেঙ্কারির বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য নড়াইলের সংসদ সদস্য কবিরুল হক ও ব্যবসায়ী আবিদুল ইসলামকেও জিজ্ঞাসাবাদ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এসব করার আগে এরই মধ্যে দুদক-এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পুলিশের উপর্যুক্ত কর্তাদের বক্তব্য নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, মোল্লা নজরুলের বিরুদ্ধে নড়াইল এলাকার সংসদ সদস্য কবিরুল হক প্রথম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগে বলা হয়, ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সৈয়দ আবিদুল ইসলাম নড়াইলের ভদ্রবিলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা। ডিবির ডিসি নজরুল ইসলাম কেবল আবিদুলের কাছ থেকেই ঘুষ নেননি, আরো তিন ব্যক্তির কাছ থেকে ৮০, ৬৭ ও ৪০ লাখ টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন।

ঘুষ লেনদেনের ব্যাংক হিসাব ও কথোপকথনের অডিও রেকর্ড ও দুদক এরই মধ্যে সংগ্রহ করেছে।  

এদিকে, মোল্লা নজরুলের সম্পদের হিসাব চাওয়ারও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। কারণ এর মধ্যে দুদক-এর কাছে নজরুলের অবৈধ সম্পদ থাকার অভিযোগ এসেছে,  যাতে উল্লেখ আছে, বেআইনিভাবে নজরুল বিপুল পরিমাণ অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২২ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৩
এডিএ/ আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর;জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ