শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক: ‘ভাঙার গান ’ প্রকাশিত হয় ১৩৩১ বঙ্গাব্দের শ্রাবণে (আগষ্ট ১৯২৪)। ১১ নভেম্বর ১৯২৪ তারিখে বইটি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।
বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত নজরুল রচনাবলী (প্রথম খণ্ড)-এর পাঠানুসারে নিচে ‘ভাঙার গান’ গ্রন্থ সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত তথ্য দেওয়া হলো-
‘ভাঙার গান’ ১৩৩১ শ্রাবণে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। তৎকালীন বঙ্গীয় সরকার গ্রন্থখানি বাজেয়াফত করেন।
‘ভাঙার গান’ শীর্ষক গানটি সম্বন্ধে জনাব মুজ্জফর আহমদ লিখিয়াছেন:
“আমার সামনেই দাশ-পরিবারের শ্রীকুমাররঞ্জন দাশ ‘বাঙ্গালার কথা’র জন্যে একটি কবিতা চাইতে এসেছিলেন। শ্রীযুক্তা বাসন্তী দেবী তাঁকে কবিতার জন্যে পাঠিয়েছিলেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ তখন জেলে। ... অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নজরুল তখনই কবিতা লেখা শুরু ক`রে দিল। সুকুমাররঞ্জন আর আমি আস্তে আস্তে কথা বলতে লাগলাম। বেশ কিছুক্ষণ পরে নজরুল আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে তার সেই মুহূর্তে রচিত কবিতাটি আমাদের পড়ে শোনাতে লাগল। ...নজরুল ‘ভাঙার গান’ লিখেছিল ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসের কোনো এক তারিখে। ‘ভাঙার গান’ ‘বাঙ্গালার কথা’য় ছাপা হয়েছিল। ” —[কাজী নজরুল ইসলাম: স্মৃতিকথা]
‘জাগরণী’ শীর্ষক কোরাস গানটি সম্পর্কে জনাব আফতাব-উল ইসলাম লিখিয়াছেন:
“১৯২১ সনে শ্রীযুত ধীরেন সেন (কাজীর এবং আমাদের সকলের ‘রাঙা দা’) তখন কুমিল্লা জাতীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষক। কাজী নজরুল কান্দিরপাড় তাঁরই বাড়ীতে থাকেন। প্রিন্স্ অব ওয়েল্সের ভারত-ভ্রমণ উপলক্ষে কংগ্রেস-ঘোষিত হরতাল-পালনের জন্য (২১শে নভেম্বর) একটি গান লিখে দেওয়ার অনুরোধ নিয়েই প্রথম তাঁর সাথে দেখা করি ‘রাঙা দা’র বাড়ীতে। তিনি তা তো দিলেনই, অধিকন্তু কাঁধে হারমোনিয়াম বেঁধে মিছিলের সঙ্গে তিনি নিজেও গাইলেন :
ভিক্ষা দাও। ভিক্ষা দাও
ফিরে চাও ওগো পুরবাসী,
সন্তান দ্বারে উপবাসী,
দাও মানবতা ভিক্ষা দাও। " —[গুলিস্তাঁ, নজরুল সংখ্যা]
‘মোহান্তের মোহ—অন্তের গান’ সম্বন্ধে ডক্টর সুশীলকুমার গুপ্ত বলেন:
"অসহযোগ আন্দোলন আরম্ভ হবার পর তারেকশ্বরের দুর্নীতিপরায়ণ অসচ্চরিত্র ধর্মব্যবসায়ী মোহান্তকে তাড়াবার নিমিত্ত একটি আন্দোলন উপস্থিত হয়। নজরুল এই সময় `মোহান্তের মোহঅন্তের গান` লিখে এই আন্দোলনকে সমর্থন ও শক্তিশালী করেন। " — [নজরুল-চরিত-মানস, ১৫৭ পৃষ্ঠা]
`আশু-প্রয়াণ-গীতি; ১৩৩১ আষাঢ়ে ৩য় বর্ষের ৫ম সংখ্যক `বঙ্গবাণী`তে বাহির হইয়াছিল।
`দুঃশাসনের রক্তপান` ১৩২৯ বঙ্গাব্দের ১০ই কার্তিক শুক্রবার ১ম বর্ষের ১৭শ সংখ্যক `ধূমকেতু`তে `দুঃশাসনের রক্ত` শিরোনামে প্রকাশিত হইয়াছিল।
`শহিদী ঈদ` সাপ্তাহিক `মোহাম্মদী`তে ছাপা হইয়াছিল।
‘ভাঙার গান’ থেকে অংশ বিশেষ:
ভাঙার গান
[গান]
১
কারার ঐ লৌহ-কবাট
ভেঙে ফেল, কর রে লোপাট
রক্ত-জমাট
শিকল-পুজোর পাষাণ-বেদী!
ওরে ও তরুণ ঈশান!
বাজা তোর প্রলয়-বিষাণ!
ধ্বংস-নিশান
উড়ুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদি।
২
গাজনের বাজনা বাজা!
কে মালিক? কে সে রাজা?
কে দেয় সাজা
মুক্ত-স্বাধীন সত্যকে রে?
হা হা হা পায় যে হাসি
ভগবান পরবে ফাঁসি?
সর্বনাশী
শিখায় এ হীন তথ্য কে রে?
৩
ওরে ও পাগলা ভোলা!
দে রে দে প্রলয়-দোলা
গারদগুলা
জোরসে ধরে হেঁচকা টানে!
মার হাঁক হায়দরি হাঁক,
কাঁধে নে দুন্দুভি ঢাক
ডাক ওরে ডাক
মৃত্যুকে ডাক জীবন পানে!
৪
নাচে ঐ কাল-বোশেখি,
কাটাবি কাল বসে কি?
দে রে দেখি
ভীম কারার ঐ ভিত্তি নাড়ি!
লাথি মার, ভাঙ রে তালা!
যত সব বন্দি-শালায়—
আগুন জ্বালা,
আগুন জ্বালা, ফেল উপাড়ি।
বাংলাদেশ সময়: ০০১০ ঘণ্টা, ২৫ মে ২০১৩