ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বিনোদন

নাচে আমি দ্বিতীয় হইনি : ফেরদৌস আরা

কামরুজ্জামান মিলু | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৩
নাচে আমি দ্বিতীয় হইনি : ফেরদৌস আরা

নজরুল সংগীত শিল্পী ফেরদৌস আরা। নজরুল সংগীত নিয়ে সাধনা করে যাচ্ছেন ।

সংগীতে অবদানের জন্য বিভিন্ন সময়ে দেশ বিদেশে পেয়েছেন নানা পুরস্কার। তার সংগীত জীবনের শুরু থেকে আজ অবধি নানা বিষয় নিয়ে বাংলানিউজের সাথে দীর্ঘসময় কথা বলেছেন এই শিল্পী।

জন্মস্থান ও বেড়ে ওঠা কোথায় ?
 
জন্মস্থান বাংলাদেশের ব্রাহ্মনবাড়িয়ায়। আর এখানে জন্ম নিয়ে আমি অনেক  গর্ববোধ করি। কারণ আমাদের এ উপমহাদেশের গুণীশিল্পী ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ’রও জন্ম এখানে। আমার বাবা (এ এ কে এম আব্দুল হাই) এর চাকরি সূত্রে আমার ব্রাহ্মনাবড়িয়ায় জন্ম। বাবাও সুশিল্পী ছিলেন। উচ্চাংগসংগীত বিশারদ ছিলেন। তবে বাবা অনেক বড় মাপের প্রকৌশলী ছিলেন। তাই বাবার চাকরি সূত্রে আমি ময়মনসিংহ, রাজশাহী , চট্টগ্রাম ও সবশেষে ঢাকায়  থেকেছি।

গানের সাথে আপনার সখ্যতা তৈরি কিভাবে?
 
আমি তখন চট্টগ্রামে। প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী। সেসময় গান শেখার জন্য আমার বড় তিন বোন সংগীত পরিষদে যেতেন। তারা গান করতে গেলেও আমি যেতাম খেলতে। কিন্তু খেলাটাকে পন্ড করে আমি একমনে জানালার গ্রিল ধরে তাদের নাচ দেখতাম ও গান শুনতাম। খেলার ছলে কি প্রচন্ড একটা আকর্ষণ বা টানে আমি সেসময় এটা করতাম , সেটা এখন বুঝি। এরপর আরও দিন কেটে গেল। আস্তে আস্তে গান শেখা শুরু হল। ওস্তাদরা যা যা গান শেখাতেন সব মুখস্থ  করে ফেলতাম।

তাছাড়া স্কুলের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় প্রথম হতাম। এরপর চলে আসলাম রাজশাহী। আমার  কিশোরী কাল, সবচেয়ে সুন্দর সময়। রাজশাহীর অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও অসম্ভব সংগীতের পরিবেশ আমাকে আজও মুগ্ধ করে। আমরা বড় আপুদের সহযোগিতায় আমি নানারকম খেলাধুলা, নাচ ও গানে অংশগ্রহণ করতাম। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় প্রথম হতাম। আমি অনেক দুষ্ট ছিলাম এজন্য আপুরা গান শিখতেন। আর আমাকে বেশির ভাগ সময়ই নাচে ব্যস্ত রাখতেন। আর নাচে আমি কখনই দ্বিতীয় হইনি। এভাবেই বড় হওয়া।

ঐ সময়ের স্মৃতিগুলো অনেক মজার ছিল...
 
হ্যাঁ। যেমন রাজশাহীর অনেক স্মৃতির মধ্যে কয়েকটা স্মৃতির কথা এখনো বেশ মনে পড়ে। একবার ওস্তাদ সালামত আলী নাজাকত আলী বাংলাদেশে আসলেন। আর সেসময় কোন শিল্পী আসলেই বাবার সাথে দেখা করতেন। কারণ বাবা ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিউটের হর্তা-কর্তা ছিলেন এবং সব বড় অনুষ্ঠান সেখানে হত। সেসময় ওনারা আসার এক সপ্তাহ পূর্বে রাজশাহীর ক্লাসিক্যাল গানের ওস্তাদ আব্দুল জব্বারের কাছে বড় আপুরাসহ গান শিখতাম। আপুরা গান শিখতেন আর আমি প্রায় সময় গান না শিখে পালিয়ে যেতাম।

আমাকে একদিন ওস্তাদজি প্রশ্ন করল ‘তুমি কেন গান গাও না?’ আমি তখন বিরক্ত হয়ে বললাম, ‘আপনি আমাকে যেসব গান শেখান, আমার একদম ভালো লাগে না। আমি বাচ্চাদের গান শিখতে চাই না। অথচ আমি ঐ সময় (বাচ্চা), উনি আমাকে শিশুদের গান  শেখাতেন (খুকু মনির পুতুল বিয়ে)। আমি বললাম এসব গান আমি গাইবো  না। তার পরে সে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন ‘কি ধরনের গান তুমি করবা?’ আমি সঙ্গে সঙ্গে সন্ধা মুখোপাধ্যায়ের ‘উজ্বল এক ঝাঁক পায়রা’ শিরোনামের একটি গান শুনিয়ে দিলাম। শোনার পর উনি দুই মিনিট চুপ ছিলেন। তখন উনি আমাকে কাছে টেনে নিয়ে বললেন, ‘মা আমি তো সত্যিই বুঝতে পারিনি তুমি এতো ভালো গান করো। ’ আমি ভয়ভীতি ছাড়াই আবার  বললাম, ‌‌আমি বড় আপু, এমনকি সন্ধা মুখোপাধ্যায়ের চেয়ে ভালো গাই।

তখন তিনি আমাকে বললেন, ‘তোমার পছন্দের গান শেখাবো, কি শিখতে চাও? তখন আমি বলাম, ‘রাগাশ্রী’ গান শিখব, অথচ  (ঐ সময়  ওসব গান তেমন বুঝতাম না)।

এরপর ওস্তাদ আমাকে গান করতে দিলো ‘ইয়া মুহাম্মদ বেহেশত হতে খোদায় পাওয়া পথ’ শিরোনামের একটি গান । আমি শিখলাম আর আমার নিজেরও এ গানটি বেশ ভালো লাগল। এর এক সপ্তাহ পরেই ওস্তাদ সালামত আলী নাজাকত আলী রাজশাহী আসলেন এবং বাবার সাথে দেখা করে আমাদের বাসায় উঠলেন এবং সে দিন সারা রাত ক্লাসিক গান হলো। রাতে আমি সারা রাত জেগে থেকে না খেয়ে একটানা গান শুনলাম।

আমার  দু’চোখের পলক নাকি পড়েনি, এটা আমি বুঝতে পারলাম সকাল বেলা। ভোরে উঠেই গান শেষে ওস্তাদ নাজাকাত আলী জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘এটা কার মেয়ে? সারা রাত এই মেয়েটা গান শুনেছে (হা-করে)। সবাই একবার হলেও ঘুমিয়েছে কিন্তু এই মেয়ে এক মনে গান শুনেছে। তখন আমার বাবা বললেন, ‘এটা আমার মেয়ে, ভারী দুষ্টু কোন কথা শুনে না। ও আধুনিক গান করে। (তখন আধুনিক গান করাটাও ভালো কথা না। ) গান করতে চায় না। তখন তিনি বললেন, ‘না ওর আচারণ বলছে ও প্রচন্ড গানপ্রেমী, ভীষণ  গান-প্রিয়াসী। পুরো অনুষ্ঠানে আপনার মেয়ে সন্ধ্যা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত দুইচোখের পলক ফেলেনি। এটা একটা দেখার বিষয় ছিলো। ’

আমাকে প্রশ্ন করল, ‘তুমি গান করো?’ আমি ও তখন ভয়ভীতি ছাড়াই উত্তর দিলাম, ‘আমিও গান করি। ’ তিনি এবার বললেন ‘তাহলে তুমি একটা গান শোনাও। ’ আমি ইয়া মুহাম্মদ গানটিই তাদের শুনালাম। খালি গলায় আমার করা গানটি শোনার পর তারা দু’জনেই একটু পরেই আমার সাথে বসলেন। পুরো গানটা শোনার পর মাথায় হাত দিয়ে অনেক দোয়া করলেন। আমার বাবাকে বললেন, ‘তুমি ভুল করো না। ও দুষ্টু হলেও ওর ভিতরে যে গানের প্রতিভা আছে সেটাকে জাগাও, ওর সুরেলা একটা গলা আছে। ওকে এখন থেকে গ্রুমিং করাও। আমাদের দোয়া রইল, ও অনেক বড় শিল্পী হবে। ’ এই স্মৃতি আজও মনে পড়ে।

ঢাকায় আসা হল কবে এবং পরবর্তী সময়টা কিভাবে কেটেছে?

১৯৭১ এর পর ঢাকায় আসলাম। এরপর স্কুল ও কলেজে পড়ার সময় বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতাম। আমার বোনেরা হিরন আলম, জান্নাত আরা, আর সেজ বোন নূর-ই-জান্নাত (বিখ্যাত সেতারাবাদক ওস্তাদ মীরকাসিম এর ছাত্রী ছিলেন)। তারা সবাই আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। সেই কারণেই আমি পরবর্তী সময়ে ইডেন কলেজে খেলাধুলা, নাচে ও গানে প্রথম হতে পেরেছি। গানের দিকটা মনে হয় আমার  রক্তেই মিশে ছিল। ইডেন কলেজেই আমি বেশ কয়েকবার গানে প্রথম হয়েছি। বড় আপু  জান্নাত আরা যখন ছিলেন তখন তিনি প্রথম হতেন এবং আমি রার্নস আপ হতাম। কিন্তু আধুনিক গানে আমি সব সময়ে প্রথম হতাম। কলেজ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে আমি এম.এ করেছি। এরপর অবশ্য  নাচ, খেলা আস্তে আস্তে বাদ হলেও গান আমার সাথে সবসময়ই ছিল।

নজরুল সংগীতশিল্পী হিসেবে আপনি বেশি পরিচিত। কিভাবে নজরুল সংগীতের সঙ্গে  সম্পৃক্ত হলেন?

সেই যে ‘রাগাশ্রী’ গান বলেছিলাম, (উচ্চাংগ সংগীতের) প্রতি আমার একটা টান ছিল। কারণ ভোর হলেই দেখতাম বাবা (ওস্তাদ বড় গোলাম আলী খাঁ সাহেবের) ক্ল্যাসিক্যাল গান শুনছেন কিংবা আমির খাঁ সাহেবের গান বাসায় প্রতিদিন বাবা শুনছে। এই যে শোনা, একটি পরিবার থেকে যদি এই রকম একটি ব্যাকগ্রাউন্ড থাকে। তাহলে যে কোন শিল্পী বিখ্যাত না হলেও তার  কণ্ঠে অন্তত সুর থাকবে। আর আমার বাবার বাড়ি ছিল এলিফ্যান্ট রোডে । সেখানে গ্যারেজের উপরে দুইটি রুম করা ছিল, সেখানে আমরা প্র্যাকটিস করতাম। এখানে দেখা যেত, পড়াশুনা শেষ করে রাত ১২ টার পর ঐ রুমে গিয়ে সব ভাই- বোনেরা (চার বোন-এক ভাই) যন্ত্র নিয়ে বসে গান শুরু করতাম। সুরে বাঁধা পরিবার ছিল। বাবার করা অনেক গান রেকর্ড করে রেখেছি, সেটা সিডি করব। আর আমার চাচা প্রয়াত বিশিষ্ট লেখক, সাহিত্যিক ও সংগীতবিশারদ আবদুস শাকুর তিনিও প্রায়ই আসতেন। আর তার নিজের গাওয়া বেশকিছু রেকর্ড করা গানও রয়েছে। তাই সংগীত কিছুটা হলেও পরিবার থেকেই হতে হয়।

অ্যালবাম প্রকাশ কবে থেকে শুরু?

অ্যালবাম বলতে ক্যাসেট বা সিডি আকারে বহু কোম্পানী গান রেকর্ড করেছে। সর্ব প্রথম সারগাম থেকে নজরুল সংগীতের ক্যাসেট প্রকাশ হয়। সে সময়ে পরপরই (একই মাসের মধ্যে) ‘আকাশের মিটি মিটি তারা’ টাইটেলে একটি ক্যাসেট বের হলো। ক্যাসেটটি আজ অবধি  ডাবল স্পিডে (বেস্ট সেল)  হয়েছে। আর পরবর্তীতে সিডি আকারে দারুন ব্যবসা করে। এরপর অনেক কাজ করা হয়েছে। বাংলাদেশের পাশাপাশি ভরতের এইচ এম ভি থেকেও একাধিক সিডি ক্যাসেট প্রকাশ হয়েছে। প্রথম বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে ভারতের এইচ এম ভি থেকে আমারই প্রথম অ্যালবাম বের হয়েছিল। বাংলাদেশে নজরুল সংগীতের মিউজিক ভিডিও আমারই প্রথম বেরিয়েছে। এছাড়া নজরুল নিয়ে যতগুলো সিনেমা হয়েছে সবগুলোতে প্লে-ব্যাক করেছি।

গানের বাইরেও আপনি অন্যান্য কিছু কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। সেগুলো শুনতে চাই?
 
নজরুল ইনস্টিটিউটে নজরুল সংগীতের ক্ল্যাস নিচ্ছি এছাড়া প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, প্রশিক্ষক তৈরির ক্ল্যাসগুলোও করছি। এছাড়া বিভিন্ন মিউজিক কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইউডাতে খন্ডকালিন অধ্যাপনা করছি।

সংগীতে প্রাপ্তি নিয়ে জানতে চাই?

বাংলাদেশের জনসাধারণের যে ভালোবাসা এটা তো দেখতে পাওয়া যায় না। সাধারণত সামনা-সামনি, দুই একটি জায়গায় দেখতে পেয়েছি। ত্রিশালের দরিরামপুর হাইস্কুলে নজরুল সম্মেলনে (তিনদিন ব্যাপি) বিশাল জনসমাবেশ প্রায় ৩০-৪০ হাজার লোক আসে গান শুনতে। কতখানি ভালোবাসার টান থাকলে গ্রাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ ছুটে আসে। বহুবছর ধরে তিনদিনের একদিন একক পরিবেশনায় আমি অংশ নেই।  

faradosraসেটাও শ্রোতাদের ভালোবাসার জন্যে। আর কর্মাশিয়াল স্বীকৃতির চেয়ে মানুষের ভালোবাসার স্বীকৃতি আমার কাছে সবচেয়ে বড়। সেটাই আমার কাছে ‘অ্যাওয়ার্ড’। ‘নিউহাম ওয়েলফার ট্রাস্ট অ্যাওয়ার্ড’ (লন্ডন), সানরাইজ রেডিও অ্যাওয়ার্ড (লন্ডন), দেশে ঢাকায় জয়নুল আবেদীন স্বর্ণ পদক, এটিএনবাংলার অ্যাওয়ার্ড, চ্যানেল আই আজীবন সম্মাননা, বাচসাস অ্যাওয়ার্ডসহ দেশে বিদেশে অনেক পুরস্কার পেয়েছি। এছাড়া কুজবেকস্থানে ৫২টি দেশের মধ্যে নজরুলের ফোক গান করে আমি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। এটাও আমার জন্য একটি বড় প্রাপ্তি।

বিচারক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন...

হ্যাঁ , আমি ক্ষুদে গানরাজ, মার্কস অলরাউন্ডার, প্রতিবন্ধিদের নিয়ে ‘অন্য আলোর গান’সহ নানা প্রতিযোগিতায় বিচারকের কাজ করেছি। আর  ক্লোজ আপ ওয়ানের গ্রুমিং করিয়েছি।

বর্তমান সময়ের তরুণরা কতটুকু সংগীত চর্চা করে বলে আপনি মনে করেন?

আমাদের দেশে কণ্ঠ সম্ভার যথেষ্ট আছে। অনেকেরই গানের জন্য সুন্দর গলা আছে। তবে সেটাকে ব্যবহার করার ব্যাপারে আরো  মনোযোগী হতে হবে।

বর্তমানে ব্যস্ততা কি নিয়ে ?

বর্তমানে উপস্থাপনা করছি একুশে টিভির গান নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘হারানো দিনের গান’ । আর সেখানে আমি দেখেছি তরুণ শিল্পীরা যথেষ্ট ভাল গান করেন। কিন্তু তাদের প্রতি আমার একটাই আবেদন, তারা যেন মনোযোগ দিয়ে গান শোনে এবং গানের চর্চা করে। কারণ আমাদের জীবনের এত যান্ত্রিকতার মধ্যে দিয়ে তারা তাদের চর্চার বিষয়টা হারিয়ে ফেলছে।

তারা কখনই উত্তোরত্তর উন্নতির দিকে যাচ্ছে না। হয়ত ভালো প্ল্যাটফর্ম পেয়েছে কিন্তু তেমন শিল্পী হতে পারছে না । আমি এসব ভেবে অনেক ব্যাথিত হই। কারণ গান করতে আসলে বুঝি তাদের কণ্ঠের মাধুর্য আছে, কিন্তু তেমন ব্যবহার নাই। আমাদের সময় আমরা প্ল্যাটফর্ম পাইনি। আমাদের জায়গা ছিল বাংলাদেশ বেতার ও  বিটিভি। বর্তমানে যাদেরকে দিয়ে আশা করি, তারাও তেমন মনোযোগী না।

তরুণ শিল্পীদের প্রতিভা টিকিয়ে রাখতে বর্তমানে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

কণ্ঠশৈলী সবার থাকে না। আর গান ও সুর আল্লাহ প্রদত্ত , কারো হাত নাই এখানে। দেখা গেছে, একই পরিবারের চার সন্তানের মধ্যে একজনই ভালো গান করেন। নিজেকে বুঝতে হবে, গানের জন্য পরিবারকেও পরিস্থিতি তৈরি করে দিতে হবে।

সংগীতের চর্চার  জন্য আরো কোন ইনস্টিটিউটের দরকার আছে কি না?

ইনস্টিটিউট যথেষ্ট আছে। কিন্তু সঠিক সুরে সঠিক কথাতে গাওয়াটা জরুরি। যদি নজরুল সংগীতের কথা বলি, বাংলাদেশের যে হারে চর্চা গবেষণা হয় যতখানি সঠিক সুর, কথা ঠিক রেখে শেখার চেষ্টা থাকা দরকার সেটা পুরোপুরি হচ্ছে না। আর বাংলাদেশ থেকে অনেকেই গান শিখতে বৃত্তি নিয়ে বাইরের দেশে যায়। কিন্তু আমি মনে করি নজরুল সংগীত শিখতে বাংলাদেশেই আসা যেতে পারে, বাইরের দেশে কেন?

সংগীতশিল্পী না হলে কি হতেন ?

মনে হয় খেলোয়াড় বা নৃত্যশিল্পী হতাম। বাবা-মা চেয়েছিলো ডাক্তার বানাতে, সেটাতো আর হয়নি। তবে আমার বিশ্বাস আমি যে পথেই যেতাম সফলতা পেতাম।

পরিবারে কে কে আছেন?

বর্তমানে পরিবারে আমার স্বামী ড. রফিকুল মুহাম্মেদ এবং ছেলে ফয়সাল কানাডায়  ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে এবং  মেয়ে ফাহমী ফেরদৌস ঢাকায় এ-লেভেল পড়ছে। আমার  মেয়েও গানের সাথে জড়িত। বিটিভিতে গত ঈদে একটি গানের অনুষ্ঠানে আমার সাথে ফাহমী গান করেছিল।

একজন সংগীত শিল্পী হিসেবে বর্তমানে কি ধরণের চিন্তা করেন, যাতে আমাদের নজরুল সংগীত টিকে থাকবে?

আমরা অনেকেই নজরুল সংগীতের অরজিনাল রেকর্ডগুলোকে বের করে, সরকারি ভাবেই রেকর্ড করছি। সেখানে গানগুলোকে যতটুকু সঠিক রূপ দেওয়া যায়, সেই চেষ্টাই বর্তমানে করছি। গানের কাঠামো ঠিক রেখে যদি গায়কি দিয়ে আরো বেশি, মানুষের পছন্দ ও ভালোবাসার কাছে অন্তর- আত্মা ছুয়ে যেতে পারে এ গানগুলো , সেখানেই আমাদের চিন্তার সাফলতা মিলবে। একটি ভালো গানের ইচ্ছে সারা জীবন আছে। যার জন্য একাজগুলো সারাজীবন করে যাচ্ছি। কখন কোন সিডি বের হবে জানি না। কাজ করে যাচ্ছি।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাই ?

অনেক রকম পরিকল্পনা রয়েছে। নজরুল সংগীতের বিষয়ই বেশি। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঠিক মূল্যায়ন করতে গেলে, তাঁর কর্ম-কান্ড, গানকে ও সংগীতকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কারণ নজরুল নিজেই বলেছেন ‘সংগীতেই সম্ভার’। আর এজন্য এর প্রচার প্রসার করার জন্য যে কোন কাজই আমি করতে চাই। অন্য কেউ করলেও সহযোগিতা করতে আগ্রহী। আর গানের শিক্ষাদানের মাধ্যমে সংগীত চর্চার মাধ্যমে, রেকর্ড সংরক্ষণের মাধ্যমে অনেক কাজ করা আমাদের এখনও বাকি আছে। সত্যিকার অর্থে আমাদের যে পরিমাণ কাজ করা উচিত বা দরকাল ছিল। সেই পরিমাণ কাজ হচ্ছে না। একদম কম হচ্ছে। নজরুল সংগীত আমাদের জাতীয় সংগীত না হলেও, একজন জাতীয় কবি হিসেবে  তার গানগুলো নিয়ে অনেক কিছু করার ছিল। সেই সাথে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক কিছু করা ছিল যার  ১০০ ভাগের মাত্র ২ ভাগ কাজ হয়েছে মাত্র।

বাংলাদেশ সময় : ১৬৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৩
এমকে/জিআর, সম্পাদনা : গোলাম রাব্বানী, বিভাগীয় সম্পাদক বিনোদন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বিনোদন এর সর্বশেষ