ঢাকা, রবিবার, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০১ জুন ২০২৫, ০৪ জিলহজ ১৪৪৬

জাতীয়

শতবর্ষে সারদা পুলিশ একাডেমি

শরীফ সুমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১:২৮, ডিসেম্বর ৬, ২০১২
শতবর্ষে সারদা পুলিশ একাডেমি

রাজশাহী: ১৮৬১ সালে এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম ইউনিফর্মধারী পুলিশের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। এর ৩২ বছর পর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করে তার নামকরণ হয় ট্রেনিং স্কুল।

স্কুল থেকে ট্রেনিং কলেজ, কলেজ থেকে একাডেমি। এটাই সারদা পুলিশ একাডেমির শতবর্ষের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

সারদা পুলিশ একাডেমি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর অহংকার। এখান থেকেই কঠোর অনুশীলন আর সমসাময়িক ধ্যান-ধারণায় প্রশিক্ষিত হয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা।

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা সদর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে পদ্মার পাড়ে মনোমুগ্ধকর পরিবেশে অবস্থিত দেশের একমাত্র পুলিশ একাডেমি সারদা পদার্পণ করছে শতবর্ষে। ডিসেম্বরেই উদযাপিত হতে যাচ্ছে শতবর্ষের অনুষ্ঠান। ৬ থেকে ৮ ডিসেম্বর ৩ দিনব্যাপী এ জমকালো অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পুলিশ একাডেমির মিডিয়া সেলের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, শতবর্ষ উদযাপনের জন্য সারদাকে সাজানো হচ্ছে নতুন আঙ্গিকে।

এদিকে, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির শতবর্ষ  উদযাপন উপলক্ষে ৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সারদা আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি পুলিশ একাডেমিতে হেরিটেজ প্যারেডে সালাম গ্রহণ ও প্যারেড পরিদর্শন করবেন। রাজশাহী জেলা প্রশাসকের নেজারত ডেপুটি কালেক্টরের গোপনীয় শাখা প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক পত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানায়।
 
এতে জানানো হয়, ৬ ডিসেম্বর সকাল সোয়া ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ একডেমির প্যারেড গ্রাউন্ড হেলিপ্যাডে অবতরণ করবেন। এরপর সাড়ে ১০টায়  প্যারেডে সালাম গ্রহণ ও প্যারেড পরিদর্শন শেষে প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন।

পরে তিনি বিশেষ কৃতিত্বের জন্য নির্বাচিত প্রশিক্ষকদের মধ্যে শতবর্ষ মেডেল দেবেন। এছাড়া তিনি দুপুর ১২টায় শতবর্ষ ডাকটিকেট অবমুক্ত ও শতবর্ষ অডিও-ভিডিও প্রদর্শনী পরিদর্শন এবং পৌনে ১টায় পুলিশ একাডেমি চত্বরে বৃক্ষরোপন করবেন। বেলা আড়াইটায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রাজশাহী ত্যাগ করবেন তিনি।

সারদা পুলিশ একাডেমি সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ভারত উপমহাদেশের মধ্যে অন্যতম পুরনো পুলিশের ট্রেনিং একাডেমি এটি। ১৯১২ সালের জুলাই মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে এর যাত্রা শুরু হয়। কালের আবর্তে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানা গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস।

১৮৬১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশ বাহিনীর শুরুর ৩২ বছর পর তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ১৮৯৩ সালে পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকার মিলব্যারাকে পরীক্ষামুলকভাবে পুলিশ সদস্যদের জন্য ১২ মাসের ট্রেনিং কার্যক্রম শুরু হয়।

এ কার্যক্রমে পুলিশের মানোন্নয়নে ব্যাপক সফলতা আসে। এর ১১ বছর পর ১৯০২ সালে মিলব্যারাকে আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের অনুমতি দেয় সরকার। আর ১৯০৬ সালে ট্রেনিং স্কুলকে করা হয় ট্রেনিং কলেজ। অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান তৎকালীন ব্রিটিশ মেজর এইচ. চ্যামেনি।

অধ্যক্ষ চ্যামেনি ঢাকা থেকে স্টিমারে কোলকাতা যাওয়ার পথে একাডেমির স্থান অনুসন্ধানের জন্য রাজশাহীর পদ্মা নদী তীরবর্তী (সারদা) চারঘাটে থামেন। এখানকার মনোরম পরিবেশে বিশেষ করে বিশাল আম বাগান, সু-উচ্চ বড় বড় কড়ই গাছ ও প্রমত্তা পদ্মার বিশালতায় মুগ্ধ হন তিনি।

এখান থেকে ফিরে গিয়েই তিনি সারদায় পুলিশ একাডেমির স্থান নির্ধারণের জন্য ব্রিটিশ সরকারের কাছে প্রস্তাব দেন। ওই জায়গার মালিক ছিলেন মেদিনীপুরের জমিদার। সরকার জমিদারের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকায় একাডেমির জন্য ১৪২ দশমিক ৬৬ একর জায়গা কিনে নেন। তখন এলাকাটি ছিল ঘন জঙ্গলে ঠাসা। ছিল হিংস্র বাঘের উপদ্রব। জনশ্রুতি আছে এলাকায় বাঘের উপদ্রব থাকার কারণে বলা হতো, শেরদা (এর অর্থ ছিল বাঘের গ্রাম)। পরে শেরদা থেকে সারদা নামকরণ হয়।

শুরুতে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির নাম রাখা হয় ‘সারদা পুলিশ সেন্টার’। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর (ভারত-পাকিস্তান) সারদা পুলিশ সেন্টারকে ট্রেনিং কলেজ নামকরণ করা হয়। ১৯৬২ সালে উদযাপিত হয় পঞ্চাশ বছর পূর্তি (গোল্ডেন জুবিলি)। ওই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান। সে সময় আরেক দফা নাম পরিবর্তন হয়। পুলিশ ট্রেনিং কলেজ থেকে পুলিশ একাডেমি। সর্বশেষ ২০০৭ সালে নামকরণ হয় ‘বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি’।

সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে রয়েছে সুবিশাল প্যারেড গ্রাউন্ড, প্রিন্সিপাল, ভাইস প্রিন্সিপালের জন্য বিশাল বাংলো, প্রশাসনিক ভবন, পুলিশ সুপারের বাসভবন, একাডেমিক ভবন, অফিসার্স মেস, সহকারী পুলিশ সুপারদের ডরমেটরি, প্রশিক্ষণরত সাব-ইন্সপেক্টর ও কনস্টেবলদের ডরমেটরি, ভিআইপি অতিথির জন্য গেস্ট হাউজ, চ্যামেনি মেমোরিয়াল অডিটোরিয়াম, হাসপাতাল, অশ্ব ট্রাক এবং প্লেয়ার হল ও মসজিদ। সারদা পুলিশ একাডেমির বর্তমান অধ্যক্ষ অতিরিক্ত আইজিপি নাঈম আহমেদ।

এখানে কনস্টেবল থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন মেয়াদে ট্রেনিং দেওয়া হয়। এর মধ্যে শিক্ষানবীশ এএসপি ১২ মাস, শিক্ষানবীশ সাব-ইন্সপেক্টর ১২ মাস, বিভাগীয় সাব-ইন্সপেক্টর ৬ মাস, সার্জেন্ট ৬ মাস, শিক্ষানবীশ কনস্টেবল ৬ মাস।

এছাড়া নিয়মিত কনস্টেবল ৬ মাস, রিডার (কনস্টেবল) ৬ মাস, এছাড়া বিভাগীয় এএসপি ৪ সপ্তাহ, ইন্সপেক্টর নিরস্ত্র ৬ সপ্তাহ, ইন্সপেক্টর সশস্ত্র ৬ সপ্তাহ, নিরস্ত্র সাব-ইন্সপেক্টর ৮ সপ্তাহ, সশস্ত্র সাব-ইন্সপেক্টর ৮ সপ্তাহ, সার্জেন্ট, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) ৮ সপ্তাহ, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ৮ সপ্তাহ, প্রধান কনস্টেবল (নিরস্ত্র) ৮ সপ্তাহ,  প্রধান কনস্টেবলদের (সশস্ত্র)  ৮ সপ্তাহের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০১১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বরে ৬, ২০১২
এসএস/ সম্পাদনা: জয়নাল আবেদীন, নিউজরুম এডিটর/আরআই/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ