চট্টগ্রাম: দ্রুত আরোগ্যলাভ ও দীর্ঘদিন সুস্থ থাকার জন্য সঠিক রোগ নির্ণয় ও আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি দরকার বলে অভিমত দিয়েছেন কলকাতার অ্যাপোলো গ্লিনিগ্যালস হাসপাতালের ৪ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

তারা হলেন, অর্থোপেডিক সার্জন ও সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. তথাগত দাশ, জিআই অ্যান্ড লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন ডা. সুর্ধাসর্তা সেন, নিউরোসার্জন ডা. অনির্বাণ দীপ ব্যানার্জী ও গাইনোকলজিস্ট ডা. সীতা রামা মূর্তিপাল।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) আমন্ত্রণে এসে বন্দরনগরীতে দুই দিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা ক্যাম্পের সমাপনী দিন শনিবার দুপুরে একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনে তারা এ অভিমত দেন।

সম্মেলনে ৪০০ রোগী দেখার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলা হয়, চট্টগ্রামে প্রতি ১০০ জনে ১৫ জনের ক্যানসার, ৫০ জনের হেপাটাইটিসি-বি ও সি, ৮০ জনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা, ৪০ ভাগ মহিলার বাচ্চা না হওয়ার সমস্যা পাওয়া গেছে।

তারা এ-ও বলেন, সিটি কর্পোরেশনের বিনামূল্যের এ চিকিৎসা ক্যাম্পে হয়তো উচ্চবিত্ত শ্রেণির রোগীরা আসেননি। তাই এ তথ্যগুলো শতভাগ সঠিক না-ও হতে পারে। প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হবে।

এসব রোগের কারণ হিসেবে আবহাওয়া, খাদ্যাভ্যাস, লাইফস্টাইল, অসচেতনতা এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে জন্মগত বিষয়কে দায়ী করেন তারা। পাশাপাশি রোগ নিরূপণের কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতি ও ওষুধের সর্বশেষ সংস্করণ সহজলভ্য নয় বলেও মন্তব্য করেন।

নিউরোসার্জন ডা. অনির্বাণ দীপ ব্যানার্জী বলেন, ‘‘ব্রেনের অনেক রোগ আছে যা বার্কিং সার্জারি বা ওষুধেও নিরাময় হয় না, ডায়াবেটিকসের মতো। এক্ষেত্রে ব্রেন পেসমেকার সাহায্য করে। এ পেসমেকার প্রতিস্থাপন করা হলে ১০ থেকে ১৫ বছর কাজ করে। ওষুধের চেয়ে ৪ গুণ খরচ কম পড়ে। ’’

চিকিৎসার খরচ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘‘আমেরিকা ইউরোপে যে চিকিৎসা ব্যয় ভারতীয় মুদ্রায় ৭০ থেকে ৮০ লাখ রুপি, সেখানে একই মানের চিকিৎসায় খরচ পড়বে ১০ লাখ রুপি। ’’

ডা. তথাগত দাশ বলেন, ‘‘কলকাতা অ্যাপোলেতে এখন জয়েন্ট রিপ্লেস করার পর রোগী ৭ দিনের মধ্যে হেঁটে বাড়ি যেতে পারে। দুর্ঘটনাজনিত জটিল ফ্রাকচার ম্যানেজ করতে আমাদের রয়েছে একই ছাদের নিচে সব আয়োজন এবং কম্পিউটার অ্যাডেট সার্জারির ব্যবস্থা। ’’

এখন রক্তনালিতে ক্যানসার ধরা পড়লে তা বাদ দেওয়া যায় উল্লেখ করে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন ডা. সুর্ধাসর্তা সেন বলেন, ‘‘সার্জারির ক্ষেত্রে অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি এসে গেছে। অস্ত্রোপচার সম্পর্কে ধারণা থাকা এক জিনিস, নিয়মিত অস্ত্রোপচার করা আলাদা ব্যাপার। আমরা নিয়মিত অস্ত্রোপচার করছি। এমনকি রোবটিক সার্জারি, মাইক্রোসার্জারিও। ’’

লিভার সিরোসিস হলে প্রতিস্থাপনের বিষয়টি জটিল প্রক্রিয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘ভারতবর্ষে ৩ থেকে ৪টি জায়গায় এ জটিল কাজটি হচ্ছে। অ্যাপোলের চিকিৎসক হিসেবে আমাদের রয়েছে অনেক অনেক সাফল্যগাথা। অপারেশনের পর ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ রোগী ৫ বছরেরও বেশি সময় বাঁচেন। ’’

ডা. সুর্ধাসর্তা সেন বলেন, ‘‘আগে সব ধরনের অস্ত্রোপচার হতো পেট কেটে। এখন ছোট-বড় সব ধরনের ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি সম্ভব হচ্ছে। এক্ষেত্রে আশাতীত সাফল্য আসছে। ’’

তিনি চট্টগ্রামে মা হতে না পারার সুচিকিৎসার অভাব রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ‘‘এখানে একটি ইনফার্টিলিটি সেট আপ দরকার। ’’

প্রবীণ সাংবাদিক জসীম চৌধুরী সবুজ নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘‘অ্যাপোলো হাসপাতালের সুনাম একদিনে অর্জিত হয়নি। তাদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা ও আন্তরিকতার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। ’’

তিনি বলেন, ‘‘চিকিৎসা ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ধারাবাহিকতা রক্ষার যে উদ্যোগ বর্তমান মেয়র মনজুর আলম নিয়েছেন তা প্রশংসার যোগ্য। আশা করি, এ ধরনের আয়োজন নিয়মিত করা হবে। ’’

এ ব্যাপারে তিনি চট্টগ্রামের সন্তান বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা অমলেন্দু সরকারের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন অ্যাপোলো গ্লিনিগ্যালস হাসপাতালের পেশেন্ট অ্যাডভাইজার, মুক্তিযোদ্ধা অমলেন্দু সরকার, মি. সনজিত নায়েক প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ১৯৮৩ সালে অ্যাপোলো হাসপাতাল চেন্নাই প্রতিষ্ঠত হয়। স্বাস্থ্যসেবায় নিবেদিত এ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানটির ৫২টি হাসপাতালে রয়েছে সাড়ে ৮ হাজার শয্যা, ১ হাজার ফার্মেসি ও ১০০ রোগ নিরূপণকেন্দ্র। আরো আছে ১০টি নার্সিং অ্যান্ড হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট কলেজ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১২

এআরএম, সম্পাদনা: তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর