ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দলের ভেতর কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন গফরগাঁওয়ের সেই সাংসদ গিয়াস!

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১২
দলের ভেতর কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন গফরগাঁওয়ের সেই সাংসদ গিয়াস!

ময়মনসিংহ: গফরগাঁওয়ে ক্ষমতসীন দলের দাপুটে সাংসদ সাবেক সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন আহমেদ রীতিমতো কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। দলীয় নেতা-কর্মী এমনকি তার ‘গুণধর’ শিষ্যরাও এখন তাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেছেন।



নানা ঘটনায় বিতর্কের ঝড় তুলে এ ‘দণ্ডমুণ্ডের কর্তা’ দলের ভেতরে-বাইরেও অনেকটাই একঘরে। নিজের বেপরোয়া আচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, দলে ত্যাগী নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের উপেক্ষার জের ধরে দলীয় হাইকমান্ডেরও চাপের মুখে রয়েছেন জনমনে বিস্ময়-আতঙ্কের আলোচিত এ ব্যক্তি।  

এ বছরের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে গফরগাঁও উপজেলার উস্থি ইউনিয়নের কান্দিপাড়া বাজারে ক্ষুব্ধ জনতার প্রতি নিজের পিস্তল দিয়ে গুলি বর্ষণের ঘটনার পর থেকে এ সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মানসিকভাবে অস্বস্তিতে রয়েছেন। দলের মাঝে তার বিরুদ্ধে শক্তিশালী পক্ষ মাঠে থাকায় নিজ নির্বাচনী এলাকায় রীতিমতো কোণঠাসা তিনি।  

ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগও গফরগাঁওয়ের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত। তারা সাংগঠনিকভাবে এসব বিষয় কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের কাছে তুলে ধরারও উদ্যোগ নিয়েছে বলে সূত্রের দাবি।

দলীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভাতে বেশ কয়েকজন দলীয় সংসদ সদস্য উপস্থিত থাকলেও উপস্থিত ছিলেন না এ সাংসদ। দলের শীর্ষ সারির নেতাদের তোপের মুখে পড়ার আতঙ্কেই তিনি এড়িয়ে চলছেন জেলার নেতাদেরও।

আলোচিত এ সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠরাও মনে করছেন, স্বল্পদৈর্ঘ্য রাজনীতিক জীবনের অধিকারী অবসরপ্রাপ্ত এ ক্যাপ্টেনের রাজনৈতিক জীবন ভুলের সুতোয় বোনা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই গফরগাঁওয়ে তার ভিত্তি দুর্বল হচ্ছে। এ কারণে সামনের নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন, এমন গুঞ্জণ চলছে গফরগাঁওয়ে দলীয় পরিমণ্ডলে।

সূত্র জানায়, এ কারণে তার এক সময়ের ঘনিষ্ঠ অনেক অনুসারীও তার কাছ থেকে সরে যাচ্ছেন। গ্রুপ বদলের প্রস্তুতিও শুরু করেছেন কেউ কেউ।

সূত্রমতে, নিজের ঘনিষ্ঠদের এমন আশঙ্কা ভাবিয়ে তুলেছে ‘মাথা গরম’ এ সাংসদকে। যারপরনাই দলীয় হাইকমান্ডকে বুঝাতে তিনি দৌড়ঝাঁপও শুরু করেছেন।

দলের শীর্ষ নেতাদের নিজেদের অনুকূলে রাখতে জোরালো লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। এ কারণে বেশিরভাগ সময় তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকা ছেড়ে ঢাকাতেই থাকছেন। গফরগাঁও আওয়ামী লীগে ‘সিজন্যাল বার্ড’ বলে পরিচিত এ নেতা এখন ভিড় করছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের দুয়ারে দুয়ারে, এমন দাবি সূত্রের।  

‘সংসদ সদস্য হবার পর অবসরপ্রাপ্ত এ সেনা কর্মকর্তা মানব থেকে দানব হয়ে উঠেছেন’ উল্লেখ করে গফরগাঁও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল বাংলানিউজকে বলেন, “সাংবাদিক নির্যাতন করে একবার দেশব্যাপী দলকে ডুবিয়েও নিজে রক্ষা পেয়েছিলেন গিয়াস উদ্দিন। কিন্তু এবার আর তার রক্ষা নেই। তাকে দলীয় মনোনয়ন দিলে দলের ত্যাগী-পরীক্ষিত ও দুর্দিনে যারা দলের হয়ে কাজ করেছেন তারা কখনোই তা মেনে নেবে না। ”

“যারা ভোট দিয়ে সাংসদ গিয়াসকে সংসদে পাঠিয়েছে তাদেরকেই তিনি এখন দমন করতে চান বলেই গফরগাঁওয়ে আর তার ঠাঁই নেই” যোগ করেন প্রয়াত সাবেক জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আলতাফ হোসেন গোলন্দাজের পুত্র গফরগাঁও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল।  

ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল আরো বলেন, “এ সাংসদের ক্ষমতার অপব্যবহারে অতিষ্ঠ গফরগাঁওয়ের সাধারণ মানুষ। প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়াস উদ্দিনের ঘুষ, দুর্নীতি ও লুটপাট নিয়ে অভিযোগ থাকার পরেও কোন তদন্ত না হওয়ায় হতাশ গফরগাঁওবাসী। ”

সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসেম খান বলেন, “গফরগাঁও আওয়ামী লীগকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছেন সাংসদ নিজেই। আগামী নির্বাচনের আগে এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভবপর নয়। ”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, গফরগাঁওয়ের নানা ঘটনা ক্ষমতাসীন সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। বিরোধী দল নয়, গফরগাঁওয়ে সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের সামাল দিতেই হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রতিবেদন
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে সম্প্রতি ‘বদমেজাজি’ সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন অবসরপ্রাপ্ত গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশ। সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সাংসদের ক্যাডারদের তা-বে অসহায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

বিএনপি’র সময়েও যারা শান্তিতে থাকতে পারেনি এখনো তাদের শান্তি নেই। সংসদ সদস্য হবার পর থেকে বিএনপি’র ক্যাডারদের নিয়ে তিনি এলাকা দাবড়ে বেড়ান।

ওই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল বলেন, “নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও যারা বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন তারাই এখন সাংসদের চারপাশে থাকেন। এমন ক্যাডারের সংখ্যা ৩৩। এরাই বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের নির্যাতন করেছেন। এই হচ্ছেন সাংসদ গিয়াসের চরিত্র। ”

এসব অভিযোগের বিষয়ে ময়মনসিংহ-১০-গফরগাঁও আসনের সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) গিয়াস উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

পরবর্তীতে তিনি বলেন, “এসব আমার বিরুদ্ধে একটি বিশেষ মহলের অপপ্রচার। ”

বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১২
প্রতিনিধি/ জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ