ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘কওমী’ নিয়ে আলেমদের দ্বন্দ্ব

মাজেদুল নয়ন; স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৬ ঘণ্টা, মে ৪, ২০১২
‘কওমী’ নিয়ে আলেমদের দ্বন্দ্ব

ঢাকা: দেশের ইসলামভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা ‘কওমী’ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন দেশের আলেম-ওলামা-মাশায়েখরা। সরকারি স্বীকৃতিবিহীন এ শিক্ষা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ চায় আলেমদের কয়েকটি গ্রুপ।

বর্তমানে প্রায় ২০টি গ্রুপ-উপগ্রুপে জর্জরিত এ শিক্ষা ব্যবস্থা। বাংলানিউজের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দম্ভ, দ্বন্দ্ব, প্রভাব ও রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণেই কওমী মাদ্রাসা নিয়ে আলেমরা একক কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেন না।

সংসদে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রীর দেওয়া তথ্যমতে দেশে কওমী মাদ্রাসার সংখ্যা ২৪ হাজার ৯৩১টি।

২০০৮ সালে কওমী শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর বাংলাদেশ তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) পরিচালিত এক গবেষণায় কওমী মাদ্রাসায় সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ লাখের মতো। কিন্তু কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক) এর তথ্যানুযায়ী এ সংখ্যা ২০ লাখের ওপর হবে।

বেফাক ছাড়া দেশে জাতীয় ও আঞ্চলিকভাবে আরো আঠারোটি কওমী মাদ্রাসার বোর্ড রয়েছে বলে জানা যায়।

দেশে বিশুদ্ধ আকিদা-বিশ্বাস, প্রকৃত ইসলামী শিক্ষা বিস্তার ও দ্বীনি চেতনা বিকাশের জন্যে কাজ করে গেলেও রাজনৈতিক বিরোধিতা ও আলেমদের নিজস্ব দাপট বজায় রাখতেই গ্রুপগুলোর ঐক্য হচ্ছে না।

গত ১৫ এপ্রিল কওমী মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, শিক্ষাদানের বিষয় ও কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা সনদের সরকারি স্বীকৃতির লক্ষ্যে সুপারিশমালা প্রণয়নের জন্য ‘বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন’ গঠন করে সরকার। চট্টগ্রামের দারুল উলুম মঈনুল ইসলামের মহাপরিচালক মওলানা আহমদ শফীকে চেয়ারম্যান করে ১৭ সদস্যের এ কমিশন নিয়ে শুরু হয় আলেমদের মতবিরোধ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একজন কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার বাংলানিউজকে জানান, আলেমরা সরকারকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। যেহেতু বেশিরভাগ কওমী মাদ্রাসা নিজস্ব নিয়মে চলতে চায়, তাই কমিশনের ব্যাপারে তাদের আগ্রহও কম। তারা চায় না এ ক্ষেত্রে সরকারের কোনো তত্ত্বাবধান বা মনিটরিং থাকুক। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপি দু’সরকারই চেষ্টা করেছে কওমী মাদ্রাসাকে সরকারি তত্ত্বাবধানে রাখার।

তিনি জানান, এখানে বড় একটি সমস্যা হচ্ছে আলেমদের দম্ভ ও প্রভাব প্রদর্শন। তারা প্রকাশ্যে বলে বেড়ান, সরকারের স্বীকৃতির দরকার নেই। আবার নিজেরাই গোপনে তাদের পছন্দের সরকারের সঙ্গে আপোস করে কমিশন গঠনের মাধ্যমে বাহবা কুড়াতে চান। কারণ বেশিরভাগ কওমী মাদ্রাসার আলেমদের মধ্যে এখন এ ধারনা স্পষ্ট যে, সরকারি স্বীকৃতি না নিতে পারলে ভবিষ্যত ভালো হবে না।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ওই কর্মকতা বলেন, ‘বর্তমানে সরকার যে কমিশন করে দিয়েছে, সেখানে কওমী মাদ্রাসার সবচেয়ে বড় বোর্ড (বেফাক) সভাপতি মওলানা আহমদ শফিকে নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। সরকার অনেক ভাবনা-চিন্তা করেই সর্বজনস্বীকৃত এ আলেমকে চেয়ারম্যান করেছে। কিন্তু কমিটি করার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাদের নাম প্রস্তাব করেছিলেন, তাদের অনেককে বাদ দিয়ে আওয়ামী ঘরানার দু’জন আলেমকে যোগ করায় শফি সাহেব নিজেই এখন কমিশনের বিরোধিতা করছেন। ’

সরকারের করা শিক্ষা কমিশনের আলেমদের পরিচয় সর্ম্পকে তিনি জানান, আল্লামা আহমদ শফি দেশের বয়োজ্যেষ্ঠ আলেম। বার্ধক্যের কারণে তিনি এখন শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। মাওলানা ফজলুল হক আমিনী ছাড়া দেশের প্রায় সব কওমী মাদ্রাসার আলেমরাই তাকে মেনে নেন। তিনি বেফাকের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক।

কমিশনের সদস্য সচিব মুফতি রুহুল আমিন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার গহরডাঙ্গা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। দেশের এক সময়কার বিখ্যাত আলেম আল্লামা শামছুল হক ফরিদপুরীর ছেলে তিনি। টুঙ্গিপাড়া বাড়ি হওয়ায় সরাসরি শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা যায়।

আলেমদের সবচেয়ে বেশি বিতর্কের জায়গা হচ্ছে কমিশনের কো-চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদউদ্দীন মাসউদকে নিয়ে। কিশোরগঞ্জের এ আলেম আওয়ামী ঘরানার বলে সবার কাছে পরিচিত। গত আওয়ামী সরকারের আমলে তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনে গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায়েএলে এশিয়ার সবচেয়ে বড় ঈদগাহ কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় মাওলানা মাসউদকে। গত বিএনপি সরকারের আমলে জঙ্গি কানেকশনের অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে বেশ কিছুদিন কারাভোগও করেছিলেন তিনি।  

এছাড়া কমিশনের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন আরব বিশ্বে প্রভাবশালী চট্টগ্রামের জামেয়া দারুল মা’আরিফ মাদ্রাসার মহাপরিচালক মাওলানা সুলতান যওক নদভী। চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রভাবশালী চট্টগ্রামের পটিয়া মাদ্রাসার মহাপরিচালক মাওলানা আবদুল হালিম বোখারি। বেফাকের সহ-সভাপতি ও কুমিল্লার জামেয়া কাসেমুল উলুম মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস মাওলানা আশরাফ আলী।

বেফাকের প্রভাবশালী সহ-সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জামেয়া ইমদাদিয়ার মুহতামিম মাওলানা আনোয়ার শাহ। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার সম্পর্কও বেশ ভালো বলে অনেকে মনে করেন। আছেন বেফাকের মূল চালিকাশক্তি মহাসচিব মাওলানা আব্দুল জববার। আরো রয়েছেন, সিলেটের প্রভাবশালী মাওলানা আবদুল বাসেত বরকতপুরি। তিনি সিলেটের দক্ষিণকাছ হোসাইনিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ।

কমিশনের সবচেয়ে ক্লিন ইমেজের সদস্য হচ্ছেন— দ্বীনি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ঢাকার মিরপুরের মারকাজুদ দাওয়াহ আল-ইসলামিয়ার শিক্ষাসচিব মাওলানা মুফতি আব্দুল মালেক।

এক সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সর্ম্পক খারাপ থাকলেও ঢাকার মোহাম্মদপুরের জামেয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মুফতি মাহফুজুল হককে সদস্য করা হয়েছে। অবশ্য তার সবচেয়ে বড় কারণ, তিনি শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের ছেলে এবং বেফাকের সহকারী মহাসচিব।

আরো রয়েছেন, জামেয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, আলী নূর রিয়েল এস্টেটের অধ্যক্ষ মাওলানা হিফজুর রহমান। আল্লামা আহমদ শফির স্নেহভাজন ঢাকার ফরিদাবাদ মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আবদুল কুদ্দুস। ইসলামিক রিসার্স সেন্টারে মুফতি এনামুল হক কমিশনের অন্যতম সদস্য। হবিগঞ্জের মাদ্রাসা নূরে মদিনার অধ্যক্ষ ও ধর্মীয় বক্তা মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী। এছাড়াও কমিশনে রয়েছেন উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় মাদ্রাসা বগুড়ার জামিল মাদ্রাসার মাওলানা আব্দুল হক হক্কানী এবং খুলনার জামেয়া দারুল উলুম মাদ্রাসার হাফেজ মাওলানা মোশতাক আহমাদ। এ দু’জনকে মূলত এলাকাভিত্তিক প্রতিনিধিত্বের জন্যই কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ইসলামী ঐক্যজোটের এক অংশের আমির আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ট মাওলানা মিজবাউর রহমান শুক্রবার বাংলানিউজকে জানান, গত ৮ এপ্রিল মাওলানা শফির দেওয়া প্রস্তাব জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য সেখানে মোট ২১ জনের নাম প্রস্তাব করেন শফি সাহেব।

মিজবাউর রহমান জানান, ৯ এপ্রিল গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ ঘরানার কয়েকজন আলেমের সঙ্গে বৈঠক হয়। আল্লামা শফির প্রস্তাবিত আলেমদের মধ্য থেকে ১০ জন এবং বাইরে থেকে আরো ৫ জন নিয়ে তখন ১৫ সদস্যের কমিশনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তখনই শফি সাহেব এ কমিশনকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছিলেন।

মিজবাউর জানান, পরে ১৫ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় আরো দু’জনসহ ১৭ সদস্যবিশিষ্ট কমিশনের প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপনে বেফাক মহাসচিব মাওলানা আবদুল জব্বার ও ইসলামিক রিসার্চ  সেন্টারের সিনিয়র মোহাদ্দিস মুফতি এনামুল হককে অর্ন্তভুক্ত করে তালিকা প্রকাশ করা হয়। ১৬ এপ্রিল আশকোনা হজ ক্যাম্পে কমিশনের জন্য একটি অফিসও প্রস্তুত করা হয়।

কিন্তু নিজের দেওয়া সুপারিশ মেনে না নেওয়ায় ও প্রস্তাবিত নাম বাদ দেওয়ায় এবং সরকারদলীয় লোক অর্ন্তভুক্ত করায় মাওলানা শফি ১৬ এপ্রিল এক বিবৃতিতে কমিশন প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি কমিশন গঠন প্রক্রিয়াকে বিভ্রান্তিকর ও ষড়যন্ত্রমূলক আখ্যায়িত করেন।

মিজবাউর রহমান জানান, সরকার সমর্থিত সিনিয়র সহসভাপতি ইকরা বাংলাদেশের মহাপরিচালক মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে কমিশনের কো-চেয়াম্যান করা হয়েছে। এছাড়া সম্মিলিত কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের মহাসচিব গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মহাপরিচালক মুফতি মাওলানা রুহুল আমিনকে কমিশনে কো-চেয়ারম্যান করা হয়েছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্র জানান, আল্লামা আহমদ শফিকে নিয়ে বিব্রত অবস্থায় রয়েছে সরকার। কমিশন মেনে নিতে রাজি করানোর জন্য কমিশনের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ ও সদস্যসচিব মুফতি রুহুল আমিন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে বেফাকের সরকার সমর্থক একটি অংশকেও কাজে লাগানো হচ্ছে।

সূত্র জানান, গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় কমিশনের প্রথম সভা করার লক্ষ্যে আল্লামা শফিকে বিশেষ ব্যবস্থায় ঢাকায় আনা হয়। কিন্তু তিনি সভায় যোগ দেননি। এখন তারিখ পরিবর্তন করে ১০ বা ১১ মে প্রথম সভা করার চেষ্টা চলছে।  

এ ব্যাপারে বেফাকের মহাসচিব মাওলানা আবদুল জব্বার শুক্রবার বাংলানিউজকে জানান, বেফাকের দেওয়া শর্ত মানার ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি। বেফাকের অভ্যন্তরে অনেকেই প্রস্তাব দিচ্ছেন, সরকারের মনোভাব জানতে। আবার অনেকের মতে কওমী স্বীকৃতির নামে এ শিক্ষাকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে সরকার। তবে এখন পর্যন্ত আমরা কমিশনের পক্ষ থেকে সদস্যপদ গ্রহণ বা সভায় যোগদানের কাগজপত্র পাইনি।

উল্লেখ্য, এ কমিশনকে কওমী মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষাদানের বিষয়সহ কওমী মাদ্রাসা সনদের সরকারি স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সুপারিশমালা প্রণয়নসহ কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার স্তর বিন্যাস ও শ্রেণি বিন্যাস, শ্রেণি ও বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা কারিকুলাম ও সংস্কার সমন্বয়করণ, মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নির্ধারণ, শিক্ষার মানোন্নয়ন ও কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট উন্নয়নমূলক সব বিষয়ের রূপরেখা, বিধি প্রণয়ন, ধরন, পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া সংক্রান্ত বিষয়াবলি সম্পর্কে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে। কিন্ত কমিশন গঠনের ২০ দিন পার হলেও কমিশনের চেয়ারম্যান এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না হওয়ায় কোনো অগ্রগতি হয়নি।

এছাড়া কওমী কমিশন নিয়ে আলেমদের মধ্যে বিভক্তি উসকে দেওয়ার জন্যই সরকার এ কমিশন গঠন করছে বলে অভিযোগ কমিশন বিরোধী আলেমদের।

ইসলামি আইন বাস্তবায়ন কমিটির আমির এবং লালবাগ ও বড় কাটরা মাদরাসার অধ্যক্ষ মুফতি ফজলুল হক আমিনী শুক্রবার বাদ জুম্মা বাংলানিউজকে বলেন, ‘সরকারের এখন দুঃসময়। আওয়ামী লীগ আলেম-ওলামাদের ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এজন্য তারা আলেমদের সামনে কওমী মাদ্রাসা সনদের সরকারি স্বীকৃতি প্রদানের লোভ দেখাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দেশের চিহ্নিত কয়েকজন দরবারি আলেম সরকারের দুঃসময়ে সরকারের দালালিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। আমার পরিষ্কার কথা, কওমী শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছে কওমী মাদরাসাকে ধ্বংস করার জন্য। এই কমিশনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যেমন রাজনৈতিকভাবে ঠিক হবে না, তেমনি ধর্মীয় দিক থেকেও না। ’

তিনি বলেন, ‘হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিম কেন, কোনো আলেমেরই এই কমিশনের সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। কেউ কওমী মাদরাসা ধ্বংসের এই চক্রান্তে যোগ দিলে তিনি নিজেই ধ্বংস হবেন, কওমী মাদরাসার কিছুই হবে না। ’

তিনি আরো বলেন, ‘কওমী মাদ্রাসার শিক্ষক ও উলামা মাশায়েখদের পক্ষে সরকারের পাতা এ ফাঁদে পা দেওয়া হবে চরম বেঈমানি ও ভুল। খোদা না করুন, যদি উলামা মাশায়েখরা ভুল করেন, তাহলে কওমী মাদ্রাসার সচেতন ছাত্র জনতা তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাবে। ’

কওমী মাদ্রাসা কমিশনের সরাসরি বিরোধিতা চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করীমেরও। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে অয়োজিত এক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘দেওয়ানবাগীদের মতো ভণ্ড পীরদের মদদ দিয়ে যে সরকার ইসলাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে, তারা কওমী মাদ্রাসার উন্নয়ন করবে এটা হতে পারে না। কোরআনবিরোধী নারীনীতি, ইসলামবিরোধী শিক্ষানীতি, বিশেষ বিবাহ আইন চালু করা ইসলামবিরোধী এ সরকারের সঙ্গে কোনো আপোস নেই। ’

এ ব্যাপারে কামরাঙ্গীরচর মাদরাসার মুহাদ্দিস ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খান বৃহস্পতিবার বাংলানিউজকে বলেন, ‘কওমী কমিশনকে আমরা একেবারেই দুরভিসন্ধিমূলক মনে করছি। যে সরকার কোরআনের বিধান পরিবর্তনের দুঃসাহস দেখাচ্ছে, ভিন্ন ধর্মের লোককে বিয়ের আইন করে দেশের মানুষের তাহজিব-তমদ্দুন ধবংসের উদ্যোগ নিয়েছে, তারা কওমী মাদরাসার ভালো চায়, এটা কল্পনাও করা যায় না। ’

আলেমদের এ দম্ভ আর দ্বন্দ্বের কারণে অনিশ্চিতই হয়ে রয়েছে কওমী মাদ্রাসার প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থীর জীবন।

বাংলাদেশ সময় : ১৯১৯ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০১২
এমএন/সম্পাদনা: আহমেদ জুয়েল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর


বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ