ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

বইমেলা

‘ছফা ও রাইসুসহ মেলায় ভারতীয় বইয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছিলাম’

তানিম কবির | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৫
‘ছফা ও রাইসুসহ মেলায় ভারতীয় বইয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছিলাম’ সৈয়দ তারিকের সঙ্গে জুয়েল মাজহার (বামে)

বইমেলা থেকে: অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫-য় শুদ্ধস্বর থেকে পুনঃপ্রকাশিত হলো আশির দশকে আবির্ভূত কবি জুয়েল মাজহারের কবিতার বই ‘মেগাস্থিনিসের হাসি’। এর আগে ২০০৯ সালে ‘বাঙলায়ন’ থেকে বইটি প্রথমবার প্রকাশিত হয়।

উল্লেখ্য, গত বছরও জুয়েল মাজহারের কবিতার প্রথম বই ‘দর্জিঘরে একরাত’ পুনঃপ্রকাশ করে শুদ্ধস্বর। ২০০৩ সালে প্রথমবার বইটি প্রকাশ করে ‘আগামী’।

এখন পর্যন্ত প্রকাশিত জুয়েল মাজহারের কবিতার বইয়ের সংখ্যা তিনটি। প্রথম বই ‘দর্জিঘরে একরাত’ ২০০৩ সালে, দ্বিতীয় বই ‘মেগাস্থিনিসের হাসি’ ২০০৯ সালে এবং তৃতীয় বই ‘দিওয়ানা জিকির’ প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালে।

 দ্বিতীয় সংস্করণে প্রকাশিত বইটির প্রচ্ছদ করেছেন বিধান সাহা। ৬৪ পৃষ্ঠার এ বইটি স্থান পেয়েছে মোট ৫৬টি কবিতা। কবিতাগুলোর রচনাকাল ২০০৩ সাল থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত। এছাড়া ২০০৩-এর আগে লেখা হারিয়ে যাওয়া কিছু অপ্রকাশিত কবিতাও শুদ্ধস্বর প্রকাশিত বর্তমান পরিমার্জিত সংস্করণে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে বলে কবি জানিয়েছেন।

 দ্বিতীয় সংস্করণের প্রচ্ছদের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমার নিজের খুব পছন্দ হয়েছে। আমি বলব প্রচ্ছদ শিল্পে অচিরেই কবি বিধান সাহা হয়ে উঠবেন এক অপরিহার্য নাম। ওর এবারের করা প্রচ্ছদগুলো তার প্রমাণ। ’

বইটির পুনঃপ্রকাশনা বিষয়ে জানতে চাইলে জুয়েল মাজহার বলেন, বইটা প্রথমে প্রকাশ করেছিল “বাঙলায়ন”। এরপর বইটির আর কোনও কপি বাজারে পাওয়া যাচ্ছিল না। এর পরবর্তী কোনও সংস্করণ প্রকাশের উদ্যোগ বাঙলায়নের তরফে নেওয়া হয়নি। ফলে বাঙলায়নের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিই। এরমধ্যেই দ্বিতীয় দশক সহ আমার পরবর্তী প্রজন্মের কবিবন্ধুরা তাগিদ দিচ্ছিলেন বইটির আরো একটি সংস্করণ করার জন্য।

তিনি বলেন, পরে আমার বইয়ের বর্তমান প্রকাশক “শুদ্ধস্বর” প্রকাশনীর কর্ণধার কবি আহমেদুর রশীদ টুটুল “মেগাস্থিনিসের হাসি” আবার নতুন আঙ্গিকে প্রকাশ করতে আগ্রহী হন। এ সুবাদে বইটি আবার নতুন রূপে-আঙ্গিকে প্রকাশিত হতে পারল। পরিমার্জিত “মেগাস্থিনিসের হাসি”-তে ২০০৯ সালের সংস্করণের বেশ কিছু কবিতা বাদ দিয়ে হারিয়ে যাওয়া বেশ কিছু কবিতা দিয়েছি। ’

 এ বইটির পুনঃপ্রকাশ সহ এখন পর্যন্ত প্রকাশিত তিনটি বইয়ের মিল-অমিল পার্থক্যের জায়গাগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে জুয়েল মাজহার বলেন, এই বইয়ে আমার নিজের ভ্রমণপথটা গেছে বদলে—অন্তত “দর্জিঘরে এক রাত”-এর বাইরের অচেনা এক পৃথিবীর দিকে। এক “কুমারী রাস্তা”র দিকে যাত্রার উদ্বোধন ঘটেছে “মেগাস্থিনিসের হাসি”তে এসে—ভাষাভঙ্গি, বিষয়, আঙ্গিক সব মিলিয়েই।

 তিনি বলেন, ‘এ বইয়ে কেবল চেনা জমিনের সীমানাই বাড়েনি বরং একইসঙ্গে নতুন ভূখণ্ড জয়ের অভীপ্সাও লক্ষ্যযোগ্য হবে এতে—এমনটাই আমার নিজের বিনীত অভিমত। বাকিটা পাঠকের বিবেচনা। ’

 বইমেলা কেমন দেখছেন? অন্যবারের চেয়ে ভালো বা মন্দ লাগার কোনও বিষয় যদি থাকে...

‘বইমেলায় জায়গা বাড়ানোটা ভালো সিদ্ধান্ত। তবে ভালো সিদ্ধান্তটি মার খেয়েছে বাংলা একাডেমির দায়িত্বশীলদের অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতায়। লিটলম্যাগ কর্নারে বসার বেঞ্চ তুলে দিয়েছিল ওরা। পরে ফেসবুকে অব্যাহত সমালোচনার মুখে বসার কয়েকটা বেঞ্চি বসানো হয়েছে। তবে সেসব পর্যাপ্ত সংখ্যক নয়। আরও গোটা পাঁচেক বেঞ্চি বসানো হলে স্বস্তিকর হতো। ’

 এবং তাঁর অভিযোগ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছুটির দিনে প্রবেশ করলে ধুলার আক্রমণে দিশেহারা হতে হয়। এদিকটায় একাডেমির অমনোযোগ পীড়াদায়ক। ’

 প্রথম কবে বইমেলায় এসছিলেন মনে আছে? বইমেলাকে কেন্দ্র করে উল্লেখযোগ্য কোনও ঘটনা আছে কি?

‘বইমেলায় আমার প্রথম আগমনের স্মৃতি খুব উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। তখন ভারতীয় বইও বিক্রি হতো দেদারসে। তো একবার আহমদ ছফা আমাকে ও ব্রাত্য রাইসুকে সঙ্গে নিয়ে বুকে কাগজ সেঁটে মেলায় ভারতীয় বই বিক্রির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নামেন। আমরা জনাকয় লোক পুরো মেলা ঘুরে বেড়াই। আমাদের সঙ্গে আরো দু’একজন ছিলেন। এদের একজন নজরুল কবির(বর্তমানে টিভি সাংবাদিক)।

 এমনধারা কাণ্ড দেখে  লোকে তখন আমাদের পাগল ঠাউরেছিল—পরিচিত অনেক বন্ধু-সুহৃদকেও দেখেছি পাশে দাঁড়িয়ে ব্যঙ্গের হাসি হাসতে। তো ছফা ভাই বর্ধমান হাউসের সামনে সৈয়দ শামসুল হককে সামনে পেয়ে তাকেও আমাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করতে বললেন। যেই না বলা হক সাহেব কপালে বিরক্তির রেখা ফুটিয়ে “দ্যাখো ছফা, আমি এসবের মধ্যে নেই!!’’—বলে দ্রুত প্রস্থান করলেন। সেদিন আমাদের পাশে কাউকেই পাইনি আমরা। পরে কিন্তু আমাদের এই ছোট্ট প্রতিবাদে ফল ফলেছিল। আর মেলায় কেবল বাংলাদেশের বই-ই বিক্রি ও প্রকাশিত হয়। আজ তো সেকথা কারোরই আর মনে নেই।

এবারকার বই কেনার পরিকল্পনা সম্মন্ধে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১০ হাজার টাকার বই কেনার ইচ্ছা। বাজেটের প্রায় অর্ধেক ছেলের জন্য বরাদ্দ। এরই মধ্যে হাজার ছয়েক টাকার বই কেনা হয়েছে। ’

 নিজের বই বের হওয়া মেলা আর নিজের বই বের না হওয়া মেলার মধ্যে কী পার্থক্য?

পার্থক্যের অনুভূতিটা হলো “নিজের বিয়ে”র পিঁড়িতে বসা আর “অন্যের বিয়েতে উপস্থিত থাকা”র মত।

বইটির কমিশন পরবর্তী বিনিময় মূল্য ১০৫ টাকা। মেলার সোহরাওয়ার্দী অংশে এবং লিটলম্যাগ চত্বরে শুদ্ধস্বরের দুটি স্টলে বইটি পাওয়া যাবে। এছাড়া অনলাইনে বই বিক্রিকারী প্রতিষ্ঠান রকমারি.কম থেকে অর্ডার দিয়েও মেগাস্থিনিসের হাসি সংগ্রহ করা যাবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।