ঢাকা, শনিবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৭ জুলাই ২০২৪, ২০ মহররম ১৪৪৬

বিএনপি

বিমানবন্দরে ‘তিক্ত অভিজ্ঞতা’ যেন নিত্যদিনের চিত্র

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২১
বিমানবন্দরে ‘তিক্ত অভিজ্ঞতা’ যেন নিত্যদিনের চিত্র

ঢাকা: বর্তমানে দেশের বাইরে যাওয়া-আসার অপর নাম যেন ‘পানিশমেন্ট’। ঢাকার বিমানবন্দর থেকে বিদেশে যাওয়ার সময় পিসিআর টেস্টের নামে ফ্লাইটের ৬ ঘণ্টা আগে এয়ারপোর্টে উপস্থিত থাকতে হয়।

অথচ দুবাই এয়ারপোর্টে এটা ৬ মিনিটে করা হয়, ইমিগ্রেশন করার আগেই রিপোর্ট চলে আসে ইমিগ্রেশন কাউন্টারে। তারপর সিল দিয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়। অথচ ঢাকায় ফেরার পর শুধু একটা স্বাস্থ্য ফরম জমা দেওয়ার জন্য ২-৩ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

দেশে ঢুকতে বা দেশ ছাড়তে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এখন অনেকেরই এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা। দেশে ফিরেই বিমানবন্দরে চরম হয়রানির কথা বলছেন যাত্রীরা। শুধু বিদেশফেরত যাত্রীই নন, বিদেশ গমনের ক্ষেত্রেও যাত্রীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খলা, যাত্রী হয়রানি ও স্বজনদের ভোগান্তি বেড়েছে। ১০ ডিসেম্বর থেকে রাতের ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার কারণে এই ভোগান্তি। বিমানবন্দরে প্রতিদিন ২৭টি এয়ারলাইনসের ১১০ থেকে ১২৮টি ফ্লাইট ওঠানামা করে। এসব ফ্লাইটে দৈনিক প্রায় ২০ হাজারের বেশি যাত্রী যাতায়াত করেন। কিন্তু গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ে নিয়োজিত বিমানের পর্যাপ্ত জনবল ও সরঞ্জাম নেই। এ ছাড়া বিমানবন্দরে স্থান স্বল্পতা, বোর্ডিং ব্রিজ, বাস-ট্রলির স্বল্পতা, ইমিগ্রেশন ও হেলথ ডেস্কে লোকবলের অভাবে ধাপে ধাপে ভোগান্তি হচ্ছে যাত্রীদের।

দুপুর সোয়া ২টায় ফ্লাইট নামলেও লাগেজ পেতে দেরি হওয়ায় বিকেল সোয়া ৪টায় বিমানবন্দর থেকে বের হন রিয়াদ ফেরত মো. মফিদুর। বিমান বাংলাদেশের এই যাত্রী জানান, স্বাস্থ্য ডেস্ক ও ইমিগ্রেশন কাউন্টারেও ভিড় ছিল। ইমিগ্রেশনে লেগেছে ৪৫ মিনিট, লাগেজ পেতে লেগেছে প্রায় এক ঘণ্টা। বিমান বাংলাদেশের ভাড়া নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, বিমানের ভাড়াও বেশি।

শুধু আসা নয়, যাওয়ার ক্ষেত্রেও সঠিক সময়ে গন্তব্যে ছেড়ে যেতে পারছে না অসংখ্য ফ্লাইট। এতে কানেক্টিং ফ্লাইটে অপেক্ষা ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে এক ঘণ্টার বেশি বিলম্ব হয়েছে ১৬টি ফ্লাইট, দুই ও তিন ঘণ্টা বিলম্ব হয়েছে দুটি ফ্লাইট এবং চার ঘণ্টার বেশি বিলম্ব হয়েছে সাতটি ফ্লাইটের।

হিমালয়া এয়ারলাইনসে ১৪ ডিসেম্বর কাঠমাণ্ডু গিয়েছিলেন ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার সঞ্জয় চক্রবর্তী। ফিরতি ফ্লাইটে নেপাল থেকে ফিরে তিনি বলেন, ‘আসার চেয়ে যাওয়ার ভোগান্তি বেশি। বিমানবন্দরের গেটে লম্বা লাইন ঠেলে ভেতরে ঢুকে করোনা রিপোর্ট পরীক্ষা, চেকইন, বোর্ডিং কার্ড সংগ্রহ, ইমিগ্রেশন শেষ করে ফ্লাইটে উঠতে লেগে যায় তিন ঘণ্টা। এরপর বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনায় ফ্লাইট ছাড়ে আরও দুই ঘণ্টা দেরিতে।

যাত্রীদের মত, প্রবাসীদের বলা হয় রেমিটেন্স যোদ্ধা অথচ এদের মানুষ মনে করা হয় কিনা সন্দেহ আছে। যারা ভিভিআইপি, তাদের এক মুহূর্তও কোথাও দাঁড়াতে হয় না। লাইন ভেঙে তাদের কাজ করে দেওয়া হয়। শুধুমাত্র কাউন্টারের সংখ্যা বাড়ালে এবং যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয় তারা আর একটু দ্রুত কাজ করা ও মানবিক হলেই এই সমস্যার সমাধান হবে।

এদিকে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, সংস্কারকাজের জন্য আগামী ছয় মাস বিমানবন্দরে প্রতিদিন রাত ১২টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত বিমান ওঠানামা বন্ধ থাকছে। ভোগান্তির অন্যতম কারণ হিসেবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্বে থাকা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকেও দায়ী করেছেন বিভিন্ন এয়ারলাইনসের কর্মকর্তারা।

বিমানের এমডি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেন, ‘দিনের বেলায় অনেক ফ্লাইট নামছে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের সক্ষমতা রাতারাতি বাড়ানো যায় না। দুই দিন ধরে অনটাইম ডিপার্চার সম্ভব হচ্ছে। ’

বিমানবন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার এএইচএম তৌহিদ উল আহসান বলেন, ‘রাতে রানওয়ে আট ঘণ্টা বন্ধ থাকায় দিনে চাপ বেড়েছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২১
এইচএমএস/এমআরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।