ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

বিএনপি

বিএনপিকে নিয়ে অমিত শাহ’র বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৯
বিএনপিকে নিয়ে অমিত শাহ’র বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি

ঢাকা: ভারতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে আলোচনায় দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিএনপিকে নিয়ে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন তথ্য উপস্থাপন করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

এ বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, কূটনৈতিকভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক এখন এক সোনালী অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দু’দেশের নেতারা প্রায়ই এমন দাবি করলেও ভারতের লোকসভায় অমিত শাহ বলেছেন সেই বন্ধু প্রতিম বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানরা এখনও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।

তিনি বলেন, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পার্লামেন্টে তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারের নাম উচ্চারণ করে শিষ্টাচার বহির্ভূতভাবে সরাসরি অভিযোগ করে বলেছেন বাংলাদেশে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাবস্থায় সেখানে ব্যাপক হারে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে।

নির্যাতনের শিকার সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় ভারতে পালিয়ে এসেছে।

রোববার (২২ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, হিন্দুত্ববাদী প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও বিএনপির কাঁধে বন্দুক রেখে মিথ্যাচারের মাধ্যমে সম্পূর্ণ শিষ্টাচার বহির্ভূতভাবে এ অঞ্চলের রাজনীতিকে একটি অসুস্থ পরিবেশের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এদেশের বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের কথা এড়িয়ে গিয়ে ইচ্ছাপ্রণোদিতভাবে বিএনপির মতো একটি অতি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে বিষোদগার করায় এটি প্রমাণিত হয় যে, বর্তমান ভারত সরকার তার সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য বাংলাদেশের জনগণের পরিবর্তে নতজানু আওয়ামী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে বেশি আগ্রহী।

তিনি বলেন, বিএনপি দৃঢ়ভাবে মনে করে যে, বিজেপির সভাপতি ও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রাবীশ কুমার উভয়ের বক্তব্যই দুঃখজনকভাবে অসত্য, অপব্যাখ্যামূলক, একপাক্ষিক, বৈষম্যমূলক, বিভ্রান্তিকর এবং চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের বক্তব্য আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করছি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকারের সময় বরাবরই বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুন্ন ছিলো। এমনকি বাবরী মসজিদ সংকট এবং গুজরাট-দাঙ্গার সময়ও খালেদা জিয়ার আমলে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় ছিলো। এক কথায় বলতে গেলে, বিএনপির সব আমলেই তার সরকার  সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখতে সফল হয়েছে।  

মির্জা ফখরুল বলেন, নাগরিক সংশোধনী আইনকে অগণতান্ত্রিক, বৈষম্যমূলক, অসাংবিধানিক ও মানবতাবিরোধী আখ্যায়িত করে সারা ভারতে এখন প্রতিবাদ চলছে। কোথাও কোথাও এ প্রতিবাদ সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। বিশ্ব গণমাধ্যমও এ বিষয়ে সোচ্চার। কেবলমাত্র সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়কে টার্গেট করেই এ আইন প্রণীত হয়েছে বলে আজ জনমনে বিশ্বাস স্থাপিত হয়েছে। এমনকি ভারতের বিবেকবান মানুষও এ বৈষম্যমূলক আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করছে।  

তিনি বলেন, ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব নির্ধারণের এ সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী সমালোচিত ও নিন্দিত হচ্ছে। জাতিসংঘ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের প্রভাবশালী অনেক দেশ ও বিবেকবান জাতিগোষ্ঠী এহেন বৈষম্যমূলক আইনের কারণে চরমভাবে উৎকণ্ঠিত। এরই মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন (ইউএসসিআইআরএফ) মার্কিন প্রশাসনকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করার সুপারিশ জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক এ প্রতিক্রিয়ায় প্রমাণিত হয়, এই অসন্তোষ কেবলমাত্র ভারতের সীমান্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, ক্রমান্বয়ে তা গোটা উপমহাদেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করবে। চরমভাবে আঘাত করবে এ অঞ্চলের শান্তিপ্রিয় জনগণের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চেতনা এবং ঐতিহ্যকে। যার সুদূরপ্রসারী কুপ্রভাবের শিকার হতে হবে জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে আমাদের সবাইকে।  

বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশ-ভারত মধ্যকার তথাকথিত ‘সু-সম্পর্কের সোনালী অধ্যায়ের’ এ পর্যায়ে দাঁড়িয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এনআরসি’র কারণে বাদপড়া নিরীহ ভারতীয় নাগরিকদের ‘উইপোকা’ আখ্যায়িত করে প্রত্যেককে ভারত থেকে বের করে দেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। আসামের গোয়ালপাড়ায় এরই মধ্যে ‘ডিটেনশন সেন্টার’ নির্মাণ করা হয়েছে। সারা ভারতে আরও অনেকগুলো ‘ডিটেনশন সেন্টার’ নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য আর একটি রোহিঙ্গা সংকটের সূত্রপাত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এমনিতেই ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে বাংলাদেশ ভারাক্রান্ত। এর ওপর এনআরসি উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার তাদের ব্যর্থ পররাষ্টনীতির প্রমাণ হিসেবে যেভাবে নির্বিকার রয়েছে, তা স্পষ্টতই আমাদের জনগণ, সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রবিরোধী অবস্থান।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৯
এমএইচ/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।