ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

ব্যাংকিং

ফের বাড়লো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেন

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০২০
ফের বাড়লো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেন

ঢাকা: করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতে ঐতিহ্যবাহী ব্যাংকিংয়ের চেয়ে ডিজিটাল ব্যাংকিংকে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ফলে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের (এমএফএস) মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে।

এমএফএস লেনদেন অবশ্য ঈদের পরে আগস্ট মাসে কমে গিয়েছিলো। কিন্তু সেপ্টেম্বরে আবার আভাস দিয়েছে সামনের দিনগুলোতে নগদ টাকাবিহীন লেনদেন আবার বাড়বে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৪৯,১২১ কোটি টাকা। যা আগের মাসের তুলনায় ১৬ দশমিক ৬০শতাংশ বেশি এবং আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি।

দেশে প্রায় এক দশক আগে এমএফএস চালু হলেও জুলাই মাসের পরে লেনদেনের পরিমান এটি সর্বোচ্চ দ্বিতীয়। জুলাই মাসে লেনদেন হয়েছে ৬২ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। দেশে এখন ১৫টি প্রতিষ্ঠান এমএফএস সেবা  দিচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দিন দিন ডিজিটাল ব্যাংকিং মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে। সাম্প্রতিককালের লেনদেন গ্রাহকের মনোভাবকে পরিবর্তন করেছে।

মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে সরকার চলতি বছরের মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করে মানুষ তখন ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা গ্রহণে কিছুটা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছিলো। তবে এমএফএস লেনদেনের মাধ্যমে মানুষ ধীরে ধীরে ডিজিটাল লেনদেনকে অভ্যাসে পরিণত করেছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অন্যতম বৃহৎ ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে এমএফএস’র মাধ্যমে। যা শাখা পরিচালিত ব্যাংকিং নিরুৎসাহিত করে।

করোনা মহামারির সময় মানুষ এমএফএস বেছে নিয়েছিলো। এর ফলে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪৭ হাজার ৬০১ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে চলতি বছরের মে মাসে। অপরদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর লোকসানি শাখার পরিমান বেড়েছে। লোকসানি শাখা বাড়ার অন্যতম কারণ মানুষ ডিজিটাল ব্যাংকিংসেবা বেছে নিয়েছে বলে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের জুন শেষে লোকসানি শাখার সংখ্যা ১৯০৭টি। যা এক বছর আগের তুলনায় ৩৬ শতাংশ বেশি।

এমএফএসসহ ডিজিটাল ব্যাংকিং আরও জনপ্রিয়তা অর্জনের কারণে সামনের দিনগুলোতে লোকসানি শাখার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার ব্যাংকগুলো ইতোমধ্যে তাদের শাখা বন্ধ করা শুরু করেছে।

দেশের সবচেয়ে বড় এমএফএস সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদির বলেন, এমএফএস লেনদেরে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা মানুষের শাখাবিহীন ব্যাংকিংয়ের প্রতিচ্ছবি। এমএফএস’র মাধ্যমে লেনদেনগুলো আগামী বছরগুলোতে আরও আরও বেশি বাড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

সবচেয়ে বেশি লেনদেনকারী বিকাশের প্রধান নির্বাহী আরও বলেন, বড় ধরনের লেনদেনের রেকর্ড ইঙ্গিত দিয়েছে যে করোনার কারণে ব্যবসায় মন্দা থেকে অর্থনীতি ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার করছে।

ঘরে বসে ব্যাংকিংয়ের জন্য মানুষ এখন ডিজিটাল আর্থিক সরঞ্জামকে আরও বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। এক বছর আগের তুলনায় সেপ্টেম্বর শেষে সক্রিয় এমএফএস অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১৯ দশমিক ৩২ শতাংশ বেড়ে মোট এমএফএস অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ১০ লাখে।

সেপ্টেম্বরে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমান দাঁড়িয়েছে ১৬৩৭ দশমিক ৩৭ কোটি টাকা। এক বছর আগের তুলনায় বেড়েছে ৩৮ দশমিক ২ শতাংশ।

অপরদিকে লেনদেনের সংখ্যা ২৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৩০ কোটিতে।

ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরীন বলেন, ক্রেডিট কার্ড বিল, টিউশন ফি ও খুচরা লেনদেনের জন্য শহরের মানুষ এখন আর ব্যাংকের শাখায় যাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, স্বল্পোয়ের মানুষ আগে এমএফএস সরবরাহকারীদের কাছ থেকে আর্থিক পরিসেবা নিচ্ছিলো। তবে এখন মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-আয়ের মানুষও এই পরিসেবাটি বেছে নিয়েছে। মানুষ এখন নিত্য-প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে ক্রেডিট কার্ডের পরিবর্তে এমএফএস ব্যবহার করছে।

এমএফএসের মাধ্যমে এখন প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাৎক্ষণিক রেমিটেন্স পাঠাতে পারছেন। ব্যবসায় থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে বেতনের বিতরণ এক বছর আগের তুলনায় ১৪৮ দশমিক ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে সেপ্টেম্বর শেষে ১৯৫৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০২০
এসই/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।