ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বাংলানিউজ স্পেশাল

রাজধানী যদি প্রতিদিন এমন হতো!

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৮ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৪
রাজধানী যদি প্রতিদিন এমন হতো! ছবি: ফাইল ফটো

ঢাকা: নেই গাড়ির আধিক্য। নেই বাসে বা যাত্রীবাহী পরিবহনে ওঠার কোনো ঝুঁকি-ঝামেলা।

ঘড়ির কাঁটা ধরে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পৌঁছানো যাচ্ছে গন্তব্য স্থানে। রাজধানীবাসীর কাছে এটি অকল্পনীয় হলেও শনিবারের বাস্তব চিত্র এটি।
 
টানা দুই দিনের ছুটিতে (শুক্রবার ও পবিত্র শবে-ই-বরাত উপলক্ষে শনিবার) প্রায় ফাঁকা হয়ে গেছে রাজধানীর রাস্তাগুলো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাসা-বাড়ি ও গলি থেকেই বের হয়নি অধিকাংশ স্কুল পড়ুয়ারা। আর অফিস বন্ধ থাকায় সরকারি-বেসরকারি সব শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন বাসা-বাড়িতে।
সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে কোথাও দেখা মেলেনি যানজটের চিত্র। এমনকি যানজটপ্রবণ মোড়গুলোতেও (সিগন্যাল পয়েন্ট) ব্যক্তিগত অথবা গণ কোনো পরিবহন থামানোর প্রয়োজন হচ্ছে না।
 
প্রতিটি রাস্তায় চলাচল করতে দেখা গেছে হাতে গোনা কয়েকটি ব্যক্তিগত গাড়ি। আর যাত্রীর আধিক্য না থাকায় যাত্রীবাহী পরিবহনও চলাচল করছে গুটি কয়েক। কোনো স্থানে রাস্তায় নেমে ক্রিকেট ও ফুটবল খেলতে দেখা গেছে স্কুল পড়ুয়াদের।
 
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, গুলিস্থান, মতিঝিল, পল্টন, শাহবাগ, কারওয়ানবাজার, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, গুলশান, বনানী, উত্তরা, বাড্ডা, রামপুরা, শান্তিনগর, মুগদা, কমলাপুর, মিরপুর, ধানমণ্ডি ও মোহাম্মদপুরসহ সকল রুটেই যানজটহীন পরিবহন চলাচল করতে দেখা গেছে।
 
এদিকে রাজধানীর চিরাচরিত যানজট না দেখে বেশ খুশি ঘর থেকে বের হওয়া সাধারণ মানুষ। বিষাক্ত কার্বন-ডাই অক্সাইডমুক্ত অক্সিজেন ও নির্মল বিনোদন পেতে অনেকেই ঘরে ছেড়ে বেড়িয়ে এসেছেন বিভিন্ন পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রে।
 
রাজধানীর হাতিরঝিলে কথা হয় বেসরকরি একটি কোম্পানির কর্মকর্তা আরিফুল ইসলামের সঙ্গে। মিরপুর থেকে দুই ছেলে মেয়েসহ পরিবার নিয়ে এসেছেন তিনি।
 
আরিফুল বলেন, বিকালে ভিড় হতে পারে। তাই বাচ্চাদের নিয়ে সকালে এসেছি। সিএনজিচালিত অটোরিকশায়  করে আসতে খুবই অল্প সময় লেগেছে। ইচ্ছা আছে, বাচ্চাদের নিয়ে সরাদিন ঘুরবো। যদি সকালের মতো সারাদিন যানজটমুক্ত থাকে, তবে রমনা, শিশুপার্ক, লালবাগ কেল্লা ও আহসান মঞ্জিলে যাওয়ার ইচ্ছা আছে।
 
এ সময় একটু হতাশার সুরে আরিফুল বলেন, আহ রাজধানী যদি এমন হতো! পরিবার নিয়ে যেখানে খুশি সেখানে বিনা ঝামেলায় যেতে পারতাম। যখন মন চাইতো তখন বের হতে পারতাম।
 
তিনি বলেন, আমি কখনো রাজধানীর রাস্তা এমন ফাঁকা দেখিনি। ঈদে কখনো ঢাকায় থাকা হয়নি। তবে বিভিন্ন মিডিয়ার খবর দেখে ও পড়ে জেনেছি, ঈদের সময় রাজধানী প্রায় ফাঁকা হয়ে পড়ে। হয়তো আজকের (শনিবার) মতো।
 
রমনা পার্কে দুপুর ১২টার দিকে কথা হয় ইরিনা ও তমালের সঙ্গে। দু’জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। রাজধানীর চিত্র দেখে তারাও বিস্ময় প্রকাশ করেন।
 
তারা বলেন, রাজধানীর প্রকৃত চিত্র যদি এমন হতো! কোনো যানজট নেই। নেই বাসে, সিএনজিচালিত অটোরিকশা অথবা রিকশায় ওঠার কোনো ঝামেলা। কিন্তু এটা কখনোই সত্য হবে না।

রোববার থেকেই রাজধানী আবার চিরাচরিত যানজটের চিত্রে রূপ নেবে বলেও আশঙ্কা তাদের।
 
এদিকে বিভিন্ন রুটে ঘুরে দেখা গেছে, যে পরিবহনগুলোতে যাত্রীদের অনেকটা লড়াই করে উঠতে হতো সে পরিবহনগুলোতেই অত্যন্ত স্বচ্ছন্দে উঠছেন যাত্রীরা। পরিবহনে উঠতে ধাক্কা-ধাক্কি, দৌঁড়াদৌঁড়ি কিছুই করতে হচ্ছে না। স্টপেজে বাস এলে সহজেই উঠে যাচ্ছেন যাত্রীরা। কোথাও কোথাও হাতের ইশারাই বাস থামিয়ে উঠছেন যাত্রীরা।
 
দুপুর ১টার দিকে গুলিস্থানে কথা হয় সুপ্রভাত গাড়ির চালক রহিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাস্তা এমন ফাঁকা থাকলে গাড়ি চালিয়ে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া যায়। যাত্রী কম হলেও কারও সঙ্গে ঝগড়া-ঝাটি করতে হয় না। যাত্রীরাও আরামে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাচ্ছেন, আমরাও ঝামেলামুক্ত গাড়ি চালাচ্ছি।  
 
যাত্রাবাড়ীতে কথা হয় আইডিয়াল স্কুলের ছাত্র রিফাতের সঙ্গে। বাসার গলিতে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলায় ব্যস্ত এ কিশোর বলেছে, দুই দিন স্কুল ছুটি। আম্মু-আব্বু সবাই বাসায়। অন্যদিন সকালে খেলতে চাইলে দুজনেই বাধা দিতেন। আজ কেউ নিষেধ করেননি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৭ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বাংলানিউজ স্পেশাল এর সর্বশেষ