ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

এভিয়াট্যুর

কেবিন ক্রুকে যৌন নির্যাতন, প্রমাণ বিমানের হাতে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০১ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৫
কেবিন ক্রুকে যৌন নির্যাতন, প্রমাণ বিমানের হাতে ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এক কেবিন ক্রুকে যৌন নির্যাতনের প্রমাণ মিলেছে।

বিমানের চিফ পার্সার নুরুজ্জামান রঞ্জু ও স্টুয়ার্ড অপুক মুমের সিনহার বিরুদ্ধে এয়ারলাইন্সের এক কেবিন ক্রুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।

এ ঘটনার সব তথ্য-প্রমাণ এখন বিমানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের হাতে।   
 
বিমান সূত্রে জানা গেছে, গত জানুয়ারি মাসে লন্ডনের এক হোটেলে চিফ পার্সার নুরুজ্জামান রঞ্জু ও স্টুয়ার্ড অপুক মুমের সিনহা হোটেল কক্ষে বিমানের এক কেবিন ক্রুকে যৌন নির্যাতন করেন। ঘটনার পর বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালান দুই অভিযুক্ত। কিন্তু বিমানের গঠিত তদন্ত এই দু’জনের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের প্রমাণ পেয়েছে, যা এখন বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাইল হেউডের হাতে।

তদন্ত কমিটি এদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এদের দুইজনের পদাবনতি (ডিমোশন) করা হবে। তবে এটি সর্বনিম্ন শাস্তি। সর্বোচ শাস্তি চাকরিচ্যুতি।    

এদিকে, অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় এই দুজনের বিরুদ্ধে বিমানের বিভাগীয় চার্জশিট গঠনের প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছে কাউল হেউড। বিমানের নিয়মানুযায়ী অভিযুক্ত দু’জনকে আর ফ্লাইটে পাঠানো হবে না। তাদের গ্রাউন্ডেড করা হবে।   
 
নুরুজ্জামান রঞ্জুর বিরুদ্ধে এর আগেও এ ধরনের অভিযোগ ছিল। কিন্তু চিফ পার্সারকে খুশি না রাখলে কেউই ভালো ফ্লাইটে যেতে পারেন না। তার রিপোর্টের ওপরই নির্ভর করে একজন কেবিন ক্রু’র পারফরম্যান্স। যে কারণে চিফ পার্সারের বিরুদ্ধে কোনো কথাই বলতে পারেন না কোনো কেবিন ক্রু।

এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অতীতেও বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, রঞ্জু তার অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে অত্যন্ত প্রভাবশালী। এজন্য কয়েকবার এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েও পার পেয়ে যান তিনি। তবে এবার বিমানের শীর্ষ পর্যায়ে ঘটনাটি জানাজানি হলে শেষ রক্ষা হয়নি তার।

সেদিন যা ঘটেছিল

বিমানের ঢাকা-লন্ডনে ফ্লাইটে ডিউটি ছিল ওই কেবিন ক্রুর। ফ্লাইটটি লন্ডনে পৌঁছানের পর ককপিট ক্রু (বৈমানিক) ও কেবিন ক্রুরা হোটেলে পৌঁছে। রাতে চিফ পার্সার রঞ্জু বিমানের সদ্য চাকরিতে ঢোকা ওই কেবিন ক্রুকে তার কক্ষে ডাকেন। তিনি যেতে রাজি না হলে রঞ্জু বলেন, শুধু তুমি না, তোমার সঙ্গে আরো একজন কেবিন ক্রু থাকবে। এরপর রাতে এক সঙ্গে ডিনার করবো।

তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডাকায় বিষয়টিতে না করতে পারেননি ওই কেবিন ক্রু। এরপর তার কক্ষে গিয়ে দেখেন শুধুই সে ছাড়া আর কেউ নেই। তার বসকে আরেক সহকর্মী আসার কথা জিজ্ঞেস করেন। উত্তরে রঞ্জু জানায়, আসবে। একথা বলে চিফ পার্সার অচেতন করা ওষুধ মেশানো খাবারে খেতে দেয়। কেবিন ক্রু হালকা ঝিমুনি আসলেই রঞ্জু তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। মেয়েটি বারবার তাকে প্রতিহত করার চেষ্টা চালায়। একপর্যায়ে রঞ্জু তার অধস্তন স্টুয়ার্ড সিনহাকে ওই কেবিন ক্রুকে তার কক্ষে দিয়ে আসতে বলে।

কক্ষে পৌঁছে দিয়ে এবার সিনহা মেয়েটিকে যৌন নির্যাতনের চেষ্টা চালায়। দুই দফায় দুই সহকর্মীর হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে মুষড়ে যায় মেয়েটি। এরপর এই দুই ব্যক্তি মেয়েটিকে এ নিয়ে কোনো ধরনের রিপোর্ট না করতে শাসায়। এখানেই থেমে থাকেনি সে, রঞ্জু ওই মেয়ের পরিবারকেও হুমকি ধামকি দেয়, যাতে তারা বিষয়টি নিয়ে আর সামনে অগ্রসর না হয়।

কিন্তু পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছে যায় এ খবর। এরপর রঞ্জু তার অ্যাসোসিয়েশনের শীর্ষ নেতাকে দিয়েও বিমানের উচ্চ পর্যায়ে তদবির করেন। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের একজন শীর্ষ নেতাও তার পক্ষ নিয়ে তদবির করেন।

এরপর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সেন্টারের (বিএটিসি) ডেপুটি ইন্সট্রাকটর ডালিয়াকে প্রধান করে কমিটি করে কর্তৃপক্ষ। তদন্ত কমিটি গঠনের পরেও রঞ্জুর হুমকি থেমে থাকেনি। তিনি ডালিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে সফলও হয়েছিল। তবে বিমানের শীর্ষ পর্যায়ের নজর থাকায় সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫২ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৫ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।