ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

এভিয়াট্যুর

বেড়িয়ে যান বাঘ-হরিণের দেশে

মাহবুবুর রহমান মুন্না, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৩ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৪
বেড়িয়ে যান বাঘ-হরিণের দেশে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা: ভ্রমণ পিপাসু মানুষের কাছে ঈদের ছুটির গুরুত্ব অনেক বেশি। এ সময় দেশ-বিদেশে বেড়ানোর সুযোগ নিতে চান অনেকেই।



এবারের ঈদে এই সুযোগ যারা কাজে লাগাতে চান তারা বেড়িয়ে যেতে পারেন বাঘ-হরিণের দেশ সুন্দরবন।

পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে পারেন জীববৈচিত্র্যে ভরপুর পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ এ বনে।

সময় কাটাতে পারেন হরিণ দেখে, বাঘ খুঁজে, বানর ও কুমিরের সাথে লুকোচুরি করে। কিংবা নির্জন বনের সৈকতে গোসল ও সাঁতার কেটে।

এছাড়া মন ভরে দেখতে পারেন সুন্দরবনের নানা দর্শনীয় স্থান-করমজল, কটকা, কচিখালী, পক্ষীর চর, ডিমের চর, তিনকোনা, হারবাড়িয়া, কোকিলমোনি, হিরণপয়েন্ট, দুবলারচর ও আলোরকোল।

মূলত এই স্পটগুলোর প্রতিই থাকে সুন্দরবন ঘুরতে আসা পর্যটকদের মূল আকর্ষণ।

মংলা থেকে মাত্র এক থেকে দেড় ঘণ্টায় যাওয়া যায় সুন্দরবনের করমজলে। এখানে বনবিভাগ কুমির প্রজনন খামার ও মিনি চিড়িয়াখানা তৈরি করেছে।

কচিখালীতে আছে সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্যের হাতছানি। ভ্রমণ-পিপাসুদের জন্য কচিখালী হচ্ছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান। এরপর কটকা ও হিরণপয়েন্ট।
এই ৩টি পয়েন্টে মংলা থেকে ট্রলারে করে পৌঁছাতে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা সময় লাগে।

কটকাতে রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। এই টাওয়ারে উঠে একনজরে দেখে নেয়া যায় অপূর্ব সুন্দর সুন্দরবনকে। এরচেয়ে একটু বেশি সময় নিয়ে পৌঁছানো যায় দুবলারচর ও আলোরকোল। আলোরকোল পর্যটকদের কাছে বাড়তি আকর্ষণ। সূর্য উদয় ও অস্তের দৃশ্য দেখার জন্য ভ্রমণ-পিপাসুরা ভিড় জমায় এখানে।

এখানে সূর্য যেন পানির ভেতর থেকে উঠে আবার পানিতেই ডুবে যায়। এ দৃশ্য দেখার জন্য সবাইকে হাতছানি দেয় আলারকোল।

দুবলারচরে গেলে দেখা যাবে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে গড়ে ওঠা অস্থায়ী জেলেপল্লি। হাজার হাজার জেলে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছেন এই চরে।

প্রায় ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট এই সুন্দরবন ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৬ বার তার রূপ বদলায়। খুব ভোরে এক রূপ, দুপুরে অন্যরূপ, পড়ন্ত বিকেলে আরেক রূপ, সন্ধ্যায় সাজ নেয় ভিন্নরূপে।

মধ্য ও গভীর রাতে সৌন্দর্য আরেক রকম। আর যদি চাঁদনি রাত হয়, তবে তো কথাই নেই। এর সব ক’টি রূপ আপনাকে দেখতে হলে অবশ্যই একটু সময় নিয়ে আসতে হবে।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল এলাকাজুড়ে সুন্দরবনের অবস্থান। দুইশ’ বছর আগে মূল সুন্দরবনের বিস্তৃতি ছিল প্রায় ১৬ হাজার ৭শ’ বর্গ কিলোমিটার। সংকুচিত হতে হতে বর্তমানে এর প্রকৃত আয়তন এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারে। ব্রিটিশ ভারত বিভাগের পর সুন্দরবনের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ পড়েছে বাংলাদেশে এবং বাকিটা ভারতে। এ হিসেবে সুন্দরবনের বাংলাদেশের অংশ প্রায় ৫ হাজার ৮শ’ বর্গকিলোমিটার এবং ভারতের অংশে প্রায় ৪ হাজার ২শ’ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশ অংশের মধ্যে প্রায় ৪ হাজার ১শ’ বর্গকিলোমিটার স্থলভাগ ও ১ হাজার ৭শ’ বর্গ কিলোমিটার জলাভূমি।

পূর্ব ও পশ্চিম দু’টি বিভাগের অধীনে চারটি প্রশাসনিক রেঞ্জে ভাগ করা হয়েছে সুন্দরবনকে। রেঞ্জগুলো হলো চাঁদপাই, শরণখোলা, খুলনা ও সাতক্ষীরা।

১৮৭৫ সালে সুন্দরবনকে প্রথম সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ৩২ হাজার ৪শ’ হেক্টর এলাকা বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ১৯৯৭ সালে সুন্দরবন ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পায়। বিশ্বের ৭৯৮তম বিশ্ব ঐতিহ্য এটি। এক হিসেবে সুন্দরবনে বর্তমানে প্রায় সাড়ে চারশ’ ডোরাকাটা বাঘ বা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ও ত্রিশ হাজারেরও বেশি চিত্রা হরিণের বসবাস। এ ছাড়া মায়া হরিণ, বন্য শূকর, বানর, গুঁই সাপ, ভোঁদড়, ডলফিন, লোনাপানির কুমির, কিং কোবরা, বেঙ্গল কোবরা, অজগর ইত্যাদি বন্যপ্রাণীর দেখা মেলে সুন্দরবনে।

সুন্দরবনে প্রায় ৩৩০ প্রজাতির গাছপালা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সুন্দরী, কেওড়া, পশুর, ধুন্দল, আমুর, গরান, গর্জন, খোলশী, বলা, হেতাল, গোলপাতা, টাইগার ফার্ন, হারগোজা ইত্যাদি।

স্থানীয় ও পরিযায়ী মিলে সুন্দরবনে প্রায় ২৭০ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। এর মধ্যে বড় সাদা বক, সি ঈগল, বাজ, মাস্ক ফিঙ্কফুট, বিভিন্ন প্রজাতির মাছরাঙা, ফিঙে, সুঁইচোরা, কাঠঠোকরা, বন মোরগ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া প্রায় চারশ’ রকম মাছ পাওয়া যায় সুন্দরবন এলাকায়।
তবে বনে ঝুঁকি এড়াতে ভ্রমণের সময় বনরক্ষীদের সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।

যেভাবে আসতে হয় সুন্দরবনে:
ঢাকার মতিঝিল, আরামবাগ, শ্যামলী, কল্যাণপুর, গাবতলী থেকে গ্রিনলাইন, সোহাগ, হানিফ, ঈগল, এ কে ট্রাভেলসসহ বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির এসি/ননএসি বাস খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। খুলনা নেমে লোকাল বাসে বাগেরহাট, মংলা যাওয়া যাবে। এছাড়া সায়েদাবাদ থেকে সুন্দরবন, পর্যটক, বনফুলসহ বিভিন্ন বাস খুলনা, বাগেরহাট ও মংলার উদ্দেশে ছেড়ে যায় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত।

পাশাপাশি ট্রেনে খুলনা এবং বিমানে যশোর পর্যন্ত যাওয়া যাবে। নৌপথেও আসা যায়।

যেখানে থাকবেন ও খাবেন:
খুলনায় থাকা-খাওয়ার জন্য হোটেল সিটি ইন (০৪১-২৮৩৪০৬৭), হোটেল রয়্যাল (০৪১-৭৩০৭১৪), হোটেল ক্যাসল সালাম (০৪১-৭৩০৩৪১), হোটেল এ্যাম্বাসেডর (০৪১-৭২২৩৭০), হোটেল টাইগার গার্ডেন (০৪১-৭২২২৪৬) সহ বেশ কয়েকটি ভালোমানের হোটেল রয়েছে। বাগেরহাটে থাকতে চাইলে বাগেরহাট সদরে আছে বেশকিছু হোটেল। মংলায় আছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল পশুর (০১৭৭৩-০৪৪৪৭০) এছাড়া আমিন ইন্টারন্যাশনাল লি. (০১৭২৫-৮১৯৪৫৩)।

আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা অনুযায়ী সুন্দরবন ঘুরিয়ে দেখাতে রয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থা।

এর মধ্যে খুলনার উল্লেখযোগ্য-এক্সপ্লোর ট্যুরিজম কর্পোরেশন লি.( ০১৭১১-১৭৬৫৯৩), দি গাইড ট্যুরস লি. (০১৭১১-৫৪০৪৩১), ভিশন ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস লি. (০১৭১১-০০০০৩৮), দি বেঙ্গল ট্যুরস লি.।  

খুলনার এক্সপ্লোর ট্যুরিজম কর্পোরেশন লি. এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আল-আমিন লিটন বাংলানিউজকে বলেন, এবারের ঈদে সাপ্তাহিক ছুটি, ঈদের ছুটি ও ঐচ্ছিক ছুটি মিলিয়ে প্রায় ৯ দিনের ছুটি হচ্ছে। এই লম্বা ছুটিতে ঈদের আনুষ্ঠানিকতা সেরে প্রিয়জনদের সঙ্গে নিয়ে দেখে আসতে পারেন সুন্দরবন। কর্মব্যস্ত জীবনের মধ্যে এই এক চিলতে সময় সজীব সবুজের মাঝে জুড়িয়ে নিতে পারেন প্রাণটাকে।

তিনি জানান, ঈদে খুলনা শহর থেকে সুন্দরবন যেতে নৌবিহারের আয়োজন করেছে তাদের প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।