ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

শিশুদের বইয়ের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন: আনু মুহাম্মদ

এম জে ফেরদৌস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১২
শিশুদের বইয়ের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন: আনু মুহাম্মদ

বইমেলা থেকে: বিদায় দিনের হাওয়া লাগা বইমেলায় বৃহস্পতিবার এসেছিলেন রাজনীতি ও অর্থনীতির বিশ্লেষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে স্টলে স্টলে ঘুরে দেখলেন বইমেলায় আসা তার ও অন্য লেখকদের নতুন-পুরোনো বইগুলো।

আনু মুহাম্মদ মেলায় এসেছেন জেনে তাকে ঘিরেও ছিল ছোট্ট একটি ভিড়। মেলায় বই দেখতে দেখতে কথা বলছিলেন তার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটতে থাকা তরুণদের সঙ্গে।

অন্যান্যরা কী বই কিনেছেন আগ্রহ নিয়ে সেগুলোও দেখছিলেন। বই কেনা ও দেখার ফাঁকে বইগুলো নিয়ে  ছোট ছোট মন্তব্যও করছিলেন।

দক্ষিণারঞ্জন মিত্রের বহুল পঠিত শিশু-কিশোরদের বই ‘ঠাকুরমার ঝুলি’র সংক্ষিপ্ত সংস্করণ দেখে কিছুটা হতাশ হলেন আনু মুহাম্মদ। যখন জানলেন, কোনো কোনো প্রকাশক সাধুরীতির ভাষা বদলে চলিত ভাষায় বইটি প্রকাশ করে বিক্রি করছেন, তখন আফসোস করে বললেন ‘ভাষা বদলাতে হবে কেন? যে লেখক যে ভাষায় লিখেছেন সেটাই তো রাখতে হবে!’

শিশুদের বইয়ের প্রকাশনার মান, মুদ্রণ প্রমাদ ইত্যাদি দেখে ক্ষুব্ধই হলেন তিনি। শিশুদের বইয়ের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন ব্যক্ত করলেন।

বইমেলা ঘুরে ঘুরে বই কেনা শেষে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেন আনু মুহাম্মদ। প্রকাশনা শিল্পের নানা অনিয়ম ও অপেশাদারিত্ব, প্রকাশনায় সরকারের ভূমিকা, পাঠকের অবস্থা, প্রকাশকদের লাভ-ক্ষতি, লেখক হিসেবে তার উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার কথা প্রকাশ করলেন বাংলানিউজের সংবাদকর্মীদের কাছে ।

বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস’র  স্টলের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘বিবিএস’র প্রকাশনাগুলি শুধু ইংরেজিতে কেন হবে? বাংলা ভাষায় প্রকাশ করাই প্রধানত জরুরি কাজ। বাংলায় বিবিএস’র রিপোর্টগুলো প্রকাশিত হলে কৃষকেরা জানতে পারবেন, উৎপাদন কেমন হলো। ইংরেজি যেহেতু আন্তর্জাতিক ভাষা তাই তারা ইংরেজিতেও প্রকাশ করবে। কিন্তু বাংলায় প্রকাশনার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। ’

প্রকাশনা শিল্পের আরো নানা দিক উঠে আসে তার কথায়। বইয়ের মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বইয়ের দাম বেড়ে যাচ্ছে। লেখক হিসেবে এটা আমার জন্য চিন্তার বিষয়। প্রকাশকদেরও করার কিছু নাই। কারণ, বই প্রকাশে খরচ বেশি পড়ে যাচ্ছে। এ কারণে প্রকাশনা শিল্পে সরকারের ভর্তুকি প্রয়োজন। ভারতেও প্রকাশনায় ভর্তুকি দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সরকার তা দেয় না। ’

তিনি আরো বলেন, ‘বইয়ের মান বৃদ্ধিতে প্রকাশকদের আরো যত্নশীল হতে হবে। প্রকাশকেরা অনেক বই প্রকাশ করছেন, এটা ভালো বিষয়। অনুবাদগ্রন্থ বেড়েছে, এটাও আনন্দের বিষয়। তবে গুণগতমান বিচার করতে হবে। সমাজ, বিজ্ঞান, ধর্ম, দর্শন ও ইতিহাসের বই কম দেখা যাচ্ছে। কারণ, এ সকল বই প্রকাশ ব্যয়সাপেক্ষ ও বিক্রির ক্ষেত্রে একটা ঝুঁকি থাকে বলে প্রকাশকেরা অনাগ্রহী। ’

তিনি বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বই প্রকাশে দলীয় বিচার বিবেচনা দেখা যায়। বাংলা একাডেমী ও সরকারের অর্থায়নে গবেষণা ও নিরীক্ষাধর্মী বই, ইতিহাস, সমাজ, বিজ্ঞান ও দর্শন এবং সৃজনশীল মননশীল বইয়ের প্রকাশ করা দরকার।

বাংলা একাডেমী প্রসঙ্গে আনু মুহাম্মদ আরো বলেন ‘একাডেমী প্রকাশনায় মনোযোগ দিচ্ছে না। যে ধরনের বই প্রকাশে ঝুঁকি আছে কিন্তু যে বই প্রকাশ হওয়া জাতির মননশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখবে সেই বই প্রকাশে ঢিলেঢালা ভাব দেখাচ্ছে বাংলা একাডেমী। কিন্তু এটা বাংলা একাডেমীর কাজ। বাংলা একাডেমীর নিজের কাজের ক্ষেত্রে আরো তৎপর হওয়া উচিৎ। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad