ঢাকা: ‘অ- তে অন্তর, আ-তে আলো। অন্তরে অন্তরে আলো জ্বালো’
১৪ বছর ধরেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে সূর্যের প্রখরতা নয়, মোমের মায়াবী আলোর মতো দীপ জ্বেলে যাচ্ছেন মৌলভীবাজারের সূর্য দাস তপন।
ছিন্নমূল শিশু দেখলেই বিনামূল্যে বইবিতরণ করছেন সূর্য । প্রিয় বর্ণমালার সঙ্গে যেসব শিশুর পরিচয় নেই, তাদের বর্ণমালা চিনিয়ে দিচ্ছেন তিনি।
ছোটবেলা থেকেই সূর্য দাসের স্বপ্ন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কিছু করার। ১৯৯৮ সালের জানুয়ারিতে একটি মাটির ব্যাংক কেনেন সূর্য। সেখানে প্রতিদিন হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে পাঁচ-ছয় টাকা করে জমা করতেন।
কয়েক মাস পর সূর্য দাসের মাটির ব্যাংকে বেশ কিছু পয়সা জমে। সেই জমা পয়সা মুদি দোকানে ভাঙিয়ে নোট করে নেন। তারপর সেই টাকা দিয়ে কিছু আদর্শলিপি, শ্লেট, খাতা কেনেন। তারপর সেই বইখাতা তিনি বিলিয়ে দেন বিভিন্ন বস্তিতে, চাবাগানে কাজ করা পথশিশুদের মাঝে।
’৯৮ সালে মাটির ব্যাংকে পয়সা জমিয়ে তিনি যে মহৎ কাজ শুরু করেন, তা এখনও চলছে। থেমে নেই সূর্য দাস। যেখানেই যাচ্ছেন শিশুদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করছেন বই। বিশেষ করে চা বাগানের শিশুদের নিয়েই তার পথচলা।
একুশে বইমেলা উপলক্ষে ঢাকায় এসেছেন সূর্য দাস। বর্ণকুঁড়ি নামের একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করতেই ঢাকায় এসেছেন। পথশিশুদের জন্যই তার বিনামূল্যের এ বইটি।
ঢাকায় এসে টোকাইদের মাঝেও বই বিলাচ্ছেন তিনি।
না, তিনি কোনও প্রচার চান না। নিভৃতে কাজ করে যেতেই তার আনন্দ।
সূর্য দাস বলেন, ‘দেশে এখনও হাজার হাজার শিশু আছে, যারা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত অনেক শিশুই শিশুশ্রমে নিয়োজিত। সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুর মাঝে সরকার ও বিভিন্ন এনজিও’র পাশাপাশি আমার মতো এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। ’
তিনি বলেন, ‘আমি মূলত চা বাগানের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করছি। তাদেরকে বিনামূল্যে বই ও শিক্ষার উপকরণ বিতরণ করছি। ’
সূর্য দাসের হাতে সব সময় এক বান্ডিল আদর্শলিপি শোভা পায়। তিনি বলেন, ‘হাতে সব সময় আদর্শলিপি রাখার কারণ হচ্ছে, চলতে ফিরতে পথশিশুদের এটা দেওয়া যায়। আদর্শলিপির মাধ্যমে বিদ্যা অর্জনের শুরু। ’
সূর্য দাস জানান, বর্তমানে এসব কাজের জন্য তার প্রবাসী বন্ধু রাধাকান্ত ধর ও মাহাবুবুর রশিদ শাম্মি আর্থিকভাবে কিছুটা সহযোগিতা করছেন।
সূর্য দাস তপন পেশায় একজন ফটোগ্রাফার। মৌলভীবাজারের সেন্ট্রাল রোডে তার একটি স্টুডিও আছে। এ স্টুডিও থেকে আয়ের বেশিরভাগ টাকাই চলে যায় দরিদ্র শিশুদের জন্য শিক্ষার উপকরণ কিনতে।
কিছুদিনের মধ্যে তিনি সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র শ্রমজীবী শিশুদের জন্য একটি স্কুল নির্মাণ করবেন বলেও জানান, যে স্কুলে সবাই বিনামূল্যে পড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১২