ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

আনু মুহাম্মদের ‘নারী, পুরুষ ও সমাজ’

এম জে ফেরদৌস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১২
আনু মুহাম্মদের ‘নারী, পুরুষ ও সমাজ’

বইমেলা থেকে: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের ‘নারী, পুরুষ ও সমাজ’ বইটির পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত সংস্করণ বইমেলায় এনেছে ‘সংহতি’ প্রকাশন। বইটির অসাধারণ প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী অমল আকাশ।



‘নারী, পুরুষ ও সমাজ’ বাংলা ভাষায় নারীবাদী সাহিত্যে একটি মৌলিক সংযোজন। ১৯৯৬ সালে প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হবার সময়ে যেমন, ১৭ বছর পর এখনও এ বিষয়ে এটি অল্প ক’টি গ্রন্থের একটি হিসেবেই রয়ে গেছে।

বহু কারণেই নারী, পুরুষ ও সমাজ গ্রন্থটি আরও বেশি সমসাময়িক হয়ে উঠছে প্রতিদিন। গ্রন্থটিতে প্রাগৈতিহাসিক পর্বের নারীর উচ্চক্ষমতা ও মর্যাদার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর সারসংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা করে আনু মুহাম্মদ পরের পর্বের ঐতিহাসিক সাক্ষ্যগুলোকে বিবেচনা করেছেন পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা বিকাশের নানা পর্বে নারীকে ক্রমাগত অধস্তন করার ধারাবাহিকতা হিসেবে। এ অধস্তনতা একরৈখিক ছিল না বটেই, ডাইনি রূপে, বিদ্রোহী রূপে নারীর প্রতিরোধও জারি ছিল সর্বদাই। ফরাসি বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে আধুনিক পুঁজিবাদের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে নারীর সীমিত মুক্তি ঘটলেও পূর্ণতর মুক্তির জন্য নারীর লড়াই অব্যাহত থেকেছে। অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে নারীর অধিকারের বিপুল অগ্রগতি সত্ত্বেও নানা পিছুটান অব্যাহত থাকার কারণও আনু মুহাম্মদ এই গ্রন্থে পর্যালোচনা করেছেন।

নারীমুক্তির মার্কসবাদী ধারার সঙ্গে নারীবাদের অন্য আরও নানা স্রোতের বিতর্ক ও সমালোচনা-পাল্টা সমালোচনার পর্যালোচনাটিও এ গ্রন্থের একটা উল্লেখযোগ্য দিক।

‘নারী, পুরুষ ও সমাজ’ গ্রন্থটির সবচে গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের নারীর অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন। উনিশ ও বিশ শতকের নারীমুক্তির পদক্ষেপগুলোর ধারাবাহিতকায় বেগম রোকেয়ার মধ্য দিয়ে নারী মুক্তির চেতনায় বিপ্লবাত্মক গতি পায়। রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করা বাংলাদেশে নারীর মুক্তির প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির ফারাকের একটা আর্থ-রাজনৈতিক পর্যালোচনা তিনি করেছেন পরিবার, উৎপাদনের ক্ষেত্র- সর্বত্র নারীর পরিবর্তিত ভূমিকা, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, যৌনতা, সম্পত্তির অধিকার প্রশ্নে নারীর অগ্রগতি, নারীর বন্ধন কোনো কিছুই তার পর্যালোচনার আওতার বাইরে থাকেনি।

নতুন সংস্করণে যুক্ত হয়েছে সরকারি নারী নীতির একটি বিস্তারিত পর্যালোচনা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি কর্তৃক প্রণীত যৌন নিপীড়ন বিরোধী নীতিমালা।

‘নারী, পুরুষ ও সমাজ’ গ্রন্থটি বিদ্যায়তনিক মহল এবং নারী মুক্তির আন্দোলনের কর্মী সকলের জন্যই একটি জরুরি গ্রন্থ।

উল্লেখ্য, গ্রন্থকার আনু মুহাম্মদ নিজেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন।


বাংলাদেশ সময়: ১৩২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।