ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

বইমেলা প্রাঙ্গণ বড় করতে হবে: রবীন আহসান

এম জে ফেরদৌস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১২

বইমেলা থেকে: মননশীল বই প্রকাশে অগ্রগামী প্রকাশনাগুলোর অন্যতম ‘শ্রাবণ’ প্রকাশনী। বইমেলায় ‘শ্রাবণ’ প্রকাশনীর কর্ণধার রবীন আহসান বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন সুষ্ঠুভাবে বইমেলা আয়োজনে বাংলা একাডেমীর ব্যর্থতা ও অনিয়মেরকথা; তুলে ধরেছেন অনিয়ম, সৃজনশীল প্রকাশকদের বিবিধ দুর্বলতা-প্রতিকূলতা, মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম ও প্রকাশনাশিল্পের সংকট মোকাবেলায় করণীয় প্রসঙ্গসহ নানা দিক।

তার সঙ্গে আলাপে উঠে আসে বইমেলা আয়োজনে বাংলা একাডেমীর ব্যবস্থাপনার বর্তমান চালচিত্র।

আলোচনার শুরুতেই বইমেলা প্রসঙ্গে রবীন আহসান বলেন ‘বাংলা একাডেমীর কর্তৃত্বে আয়োজিত এই বইমেলা আসলে কোনো প্রকৃত বইমেলা নয়। এটা নীলক্ষেত মার্কেট বা বাংলাবাজারের সারি সারি দোকানের সমাহার। বাংলা একাডেমী ডেকে এনে অনেক অপ্রকাশকদের স্টল বরাদ্দ দিয়েছে। স্টলগুলির সাজসজ্জা, চেহারা দেখলেই বিশ্রী লাগে। একটা বড় স্টলের পাশে ছোট ছয় ফুটের স্টল খুবই বেমানান। ছয় ফুটের একটি স্টলে আসলে একজন প্রকাশক কীভাবে বইমেলা করবে? মেলায় একটাও প্যাভিলিয়ন নাই। প্যাভিলিয়ন থাকলে মেলা দেখতে অনেক সুন্দর হত। শিশুদের স্টলগুলি একসঙ্গে থাকলে ভাল হত। বাচ্চারা একবারে সব স্টল দেখতে পারতো। এখন অনেক অভিভাবক ও বাচ্চা ভিড়ের কারণে পুরো বইমেলা না দেখেই চলে যায়। আর স্টল সাজানোর জন্য মাত্র তিন দিন আগে প্রকাশকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। তিন দিনে একটা স্টলকে কি আর সুন্দর রুচিশীল করে গড়ে তোলা যায়?’

মেলা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলা একাডেমী রাজনৈতিক চাপে ২৫০টি সংগঠনকে স্টল বরাদ্দ দিয়েছে, যাদের সারা বছর কোনো প্রকাশনা থাকে না। এই অপ্রকাশকেরাই মেলায় পাইরেটেড বই, নিম্ন মানের বই নিয়ে আসে মুনাফা করতে। কোনো কোনো প্রকাশনীকে কেন স্টল বরাদ্দ দেওয়া হল জানতে চাইলে বাংলা একাডেমী কোনো জবাব কখনই দেয় না। একাডেমী বছরে তিনটা বোনাস পায়, এর মধ্যে একটা মেলা আয়োজন বাবদ একটা। আর এই বোনাসের অঙ্কটা বেশ বড়। সংগঠনকে স্টল বরাদ্দ দিয়েও একাডেমীর কর্মকর্তারা টাকা কামান। বাংলা একাডেমীতে অনেক লেখক যেহেতু আছে তাদের বই যারা প্রকাশ করে তাদের স্টল পাইয়ে দেয়। আর এসব কারণেই বাংলা একাডেমী বইমেলা আয়োজনের কর্তৃত্ব হাতছাড়া করতে চায় না। একাডেমী প্রাঙ্গণ থেকে সরিয়ে টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত যদি মূল প্রকাশকদের ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলেও বইমেলার স্থানাভাব কেটে যায়। ’

বইমেলার অতীত ইতিহাস তুলে ধরে রবিন আহসান আরও বলেন, ‘এই বইমেলা প্রকাশকদেরই প্রচেষ্টায় গড়ে তোলা। মুক্তধারার প্রকাশক প্রয়াত চিত্তরঞ্জন সাহা বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে মাটিতে মাদুর বিছিয়ে বইমেলা শুরু করেছিলেন। তার সঙ্গে আরও যুক্ত হয়েছিল অন্যান্য প্রকাশক। পরে বাংলা একাডেমী একে সহযোগিতা করতে কর্তৃত্ব নেয়। কিন্তু বাংলা একাডেমীর কাজ এটা নয়। বাংলা একাডেমী ভাষা গবেষণা করবে, বিদেশি ভাষার ভাল বই বাংলায় অনুবাদ করবে আমাদের ভাষাকে আরও উন্নত স্তরে নেওয়ার জন্য। কিন্তু বাংলা একাডেমী সে জায়গা থেকে সরে এসেছে। গত ১০ বছরে কোনো ভালো অনুবাদ বাংলা একাডেমী করে নি। এইসব ব্যর্থতা ঢাকতেই বাংলা একাডেমী বইমেলা কুক্ষিগত করে রেখেছে। ’

বাংলাদেশে প্রকাশনাশিল্পের নানাবিধ সমস্যা ও সংকট বিষয়ে আলাপে রবীন আহসান বলেন, ‘সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা আমরা বিগত ১০ বছরে কোনো সৃজনশীল নতুন লেখক তৈরি করতে পারি নি। বাংলাদেশে মাত্র দুই-তিন জন লেখক আছেন যাদের বই বেশ ভাল বিক্রি হয়। সৃজনশীল-মননশীল বই লেখেন এরকম লেখকের সংখ্যা ৫০ জনও নয়। গণমাধ্যমের প্রপাগান্ডার কারণে এখন মেলায় অনেক লোক সমাগম হয়। সাধারণ মানুষ ভাবেন প্রকাশকেরাও ঝুঝি অনেক মুনাফা করেন। সেটা দেখে লেখকেরা ভাবেন প্রকাশকেরা তাদের ঠকাচ্ছেন। এতে একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। ১০০০ মানুষ বইমেলায় এলে ৯০০ জনের হাতে কোনো বই দেখা যায় না। সারা ঢাকা শহরে কোনো বইয়ের দোকান নেই, তাহলে প্রকাশকেরা লাভবান কোথা থেকে হবে? যে দেশে মাত্র ৪০% লোকের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্বাক্ষরতা জ্ঞান পর্যন্ত সে দেশে বইয়ের মার্কেট আগে দরকার। মাত্র ৫% লোকের কম্পিউটার জ্ঞান আছে অথচ তাদের জন্য মার্কেট রয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের অধীনে প্রকাশকদের মার্কেট করে দেওয়া দরকার। এটা আমাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ের জায়গা। লেখক-প্রকাশক সম্মিলিত ভাবে এই দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যালয়গুলি বই কেনে না। বই কেনা বাবদ সরকারি বরাদ্দ নেই। এই যদি হয় দশা তবে পাঠক বাড়বে কেমন করে? আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম সৃজনশীল হবে কীভাবে? একটা শ্রাবণ প্রকাশনী বা একজন প্রকাশক মুনাফা করলে জাতির কোনো লাভ তাতে হবে না। সমাজের কোনো উপকারে আসবে না তা। লেখক-প্রকাশক-পাঠকের সমন্বিত প্রচেষ্টায় আমাদের অগ্রসর হতে হবে। যথাযথ কর্তৃপক্ষ ও সরকারকে এক্ষেত্রে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে বৃহত্তর স্বার্থে। ’

বাংলাদেশ সময়: ২০০০, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।