ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

সিলভিয়া প্লাথ ও এ্যান স্যাক্সটন—এর কবিতা

অনুবাদ:কল্যাণী রমা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১২
সিলভিয়া প্লাথ ও এ্যান স্যাক্সটন—এর কবিতা

সাগরবেলা ম্যাগনোলিয়া

উপরে এই এখানে সীগাল কাঁদছে আর আমরা হেঁটে চলেছি –
বিবর্ণ লাল ছোপ ছোপ ধ্বংসাবশেষ, সামুদ্রিক প্রাণীদের দাঁড়া,
আর খোলসের গোলকধাঁধার ভিতর দিয়ে

যেন এখনও গরমকাল।
ওই ঋতু ঘুরে দাঁড়িয়েছে।


যদিও সমুদ্রে সবুজ বাগান  

পথ থমকে, মাথা নুইয়ে ফিরে
পেয়েছে নিজেদের মুখচ্ছবি - যে ছবি
আঁকা এক প্রাচীন বই-এর পাতায়, অবিনশ্বর বাগানে

কিংবা হয়ত দেয়ালে ঝোলানো ট্যাপেস্ট্রির নকশায়,
ফেলে আসা গাছের পাতাগুলো দুমড়ে, মুচড়ে ঝরে পড়ে।
এমনকি শুকায় সময়, ফেলে আসা মাস।


আমাদের নিচে
এক শাদা সীগালের দখলে আগাছায় পিছল পাহাড়ের খাঁজ,
তাড়া করে উড়িয়েছে সে অন্য সীগাল। কাঁকড়ারা

ঘুরে মরে পাথর সাম্রাজ্যে;
আঙ্গুরের মত থোকা, থোকা ঝিনুকঃ
ঠোঁটে করে ঘরে আনে সীগাল শিকার।

ছবি আঁকে শিল্পী - জলরঙ,
মাতাল বাতাসে আঁকড়ে ধরে তুলি।
দিগন্তে জাহাজ নেই,                          

সাগরবেলা, পাথর-স্তূপ শূন্য।
শীতে ডানা ঝাপটানোর শব্দ, শিল্পী আঁকে
এক প্রবল তুষারঝড় – অসংখ্য সীগাল

মূল :  সিলভিয়া প্লাথ, অক্টোবর ১৯৫৯
http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2012February/silvia 7720120207141605.jpg


 

 

 

 

 

 

 

 

 

মা, জ্যাক আর বৃষ্টি
[জন্মদিনে  নিপা-কে]

আমার নিজের একটা ঘর আছে।
বৃষ্টি ঝরে সেই ঘরে। আমার কপালের হাড়ে গাছের থেকে
ফোঁটায় ফোঁটায় পড়ে বৃষ্টি, কিলবিলে পোকার মত।
বৃষ্টি পাগলের মত আমাকে  তাড়া করে ফেরে, সবসময়। আর এই ঘর শুধু সেই
শব্দগুলোই উচ্চারণ করে যাদের আমি জন্ম দেব, একা।
কোথায় ঘরের তাক, কোথায় আপেলের মত শক্ত কাঠ – অন্ধের মত
হাতড়ে হাতড়ে চলি। আলতো করে আঙ্গুল বুলাই কলমে – সেইতো আমার ছুরি।
এই কলম দিয়েই হাতের মুঠোয় তুলে নিই নিজ আত্মা আর তারপর
ওই মৃত শিষ্যদের সাথেই সব আঁকড়ে ধরি আমি।
তবুও জানালার শার্সিতে বৃষ্টির অভিশাপ- ‘লেখা হোক কবিতা’।

আমার চোখের মণিতে বৃষ্টি একটা আঙ্গুল।
বৃষ্টি পুরনো, অদরকারি সব গল্প নিয়ে শরীর ফুটো করেই ঢোকে...
আমি আস্তাবলের ঘোড়াটার মত ঘুমাতে যাই বিছানায়।
ঘামে ভেজা নোনতা হাঁটু গ্রীষ্মের স্যাঁতস্যাঁতে বিছানাতে জড়োসড়ো করে
শুনতে পাই দেয়ালের ওপাশ থেকে ভেসে আসে আমাকে দে’য়া বাবার চুমু
শুনতে পাই মা’র হৃত্‌পিন্ডের ধুকপুক ঢেউ-এর মত উঠছে আর নামছে।
জাহাজকে সাবধান করে বেজে বেজে কুয়াশার ভেঁপু
সমুদ্রটাকে চামড়ার মত চ্যাপ্টা করে ফেলে।
আমি কোনদিন কোন সাগরে যাইনি, আমার কোন পাসপোর্ট নেই।
আমি ছিলাম শুধু সেই ওদের কন্যা। হুইস্কি পাশের ঘরে
বাবাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। আর বাবা
সব ঝড়-জল পেরিয়ে নিজের জাহাজ বন্দরে এনেছিল।

বৃষ্টি, বৃষ্টি, ষোল বছর বয়সে বৃষ্টি
ছোট লেকটার ধারে আমি জ্যাক-এর সাথে শুয়ে সারারাত কাটিয়ে দিয়েছিলাম
অথচ কিছুই করিনি, সটান সোজা শুয়ে ছিলাম কড়াইশুঁটির মতই।
আমরা শুধুমাত্র খেলা করবার জন্যই বীয়ার খেতে খেতে, তাস পিটিয়ে ব্রীজ খেলে
ল্যাম্পে কেরোসিন ভরে আলো জ্বেলে দিয়েছি, দাঁত মেজেছি
স্যান্ডউইচ আর চা বানিয়ে কেবিনের বিছানায় ঘুমাতে গেছি। আমি শুয়ে থেকেছি
এক অন্ধ হ্রদের মত, ঘুমের ভান করে গেছি ঠিক যখন জ্যাক পশমি চাদরের নিচে
খুঁজে গেছে আমার শরীর, সেই অদৃশ্য শরীর যা মেয়েরা লুকিয়ে রাখে।
সেই সব মিষ্টি মাতাল রাত আমরা ঝড়ের বুকে লাগাম পড়িয়ে ছুটে গেছি।

আজকাল জ্যাক গীর্জায় প্রার্থনাসভা করে
আর আমার মা নিজ শরীরের হাড়কেই ক্রাচ করে কবরে চলে গেছে।
জঙ্গলে বৃষ্টি ঝরছে, কাচের ভিতর বৃষ্টি ঝরছে
আর আমি আমার নিজের ঘরে একা। কি জানি হয়ত খুব বেশি বেশি ভাবি।
ঈশ্বরের চোখ থেকে মাছগুলো সাঁতার কেটে কেটে কোথাও যাচ্ছে। ওদের যেতে দাও।
মা আর জ্যাক স্বর্গ ভরে রেখেছে; ওরাই আমার নারীত্বর সব সনদপত্র।
পারের কাছাকাছি ভেসে আসে আমার জাহাজ। আমি তীরে এসে নামি ঘোড়ায় চড়ব বলে,
বাজিয়ে দেখব আমার গিটার, তারপর ওদের দু’টো আলাদা নামকে সূর্যমুখি ফুলের মত
এক করে এঁকে দেব, আমার প্রতিদিনের ভাত-রুজি ভেল্কিবাজি করে যোগাড় করব
শুধু টিকে থাকবার জন্য, কোনভাবে শুধু টিকে থাকবার জন্য।

মূল : এ্যান স্যাক্সটন, অক্টোবর, ১৯৬২

http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2012February/anne-sexton 020120207141121.jpg

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

কল্যাণী রমা: যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি লেখক। বিশ্বসাহিত্যের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্মের চমৎকার ঈর্ষণীয় অনুবাদ করেছেন। এছাড়া লেখেন মৌলিক গদ্যও। লেখালেখির বেশিরভাগই করেন মূলত: আন্তর্জালে।

বাংলাদেশ সময় ১৩৫৯, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad