ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

বইমেলা ৫ দিনেই পরিণত

ফেরদৌস মাহমুদ, আদিত্য আরাফাত, মহিউদ্দিন মাহমুদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১২
বইমেলা ৫ দিনেই পরিণত

বইমেলা থেকে: ‘মেলায় যারা আসছেন তাদের ৩ ভাগের ১ ভাগও হয়তো বই কিনছেন না। উল্টে-পাল্টে বই দেখছেন।

মেলায় আড্ডায় দিচ্ছেন। বইয়ের ক্রেতা না হলেও একুশের বইমেলা প্রাণবন্ত করতে এসব দর্শনার্থীদের অবদান আছে। ’ বলছিলেন কবি নির্মলেন্দু গুণ।
    
অমর একুশের বইমেলার পঞ্চম দিনে বিকেল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা জমজমাট থাকলেও সে অনুযায়ী বিক্রি হয়নি। তবে এতে আক্ষেপ নেই স্টল প্রকাশকদের।

তারা মনে করছেন দশ-বার তারিখের পরই আশানুরুপ বিক্রি হবে। বইমেলার অতীতের ইতিহাসেও তাই দেখা গেছে। প্রাণবন্ত মেলার দৃশ্য দেখে প্রকাশকরা বিক্রি না  হলেও খুশি।

কাকলী প্রকাশনীর কর্ণধার নাসির আহমেদ সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘টানা তিনদিন সরকারি ছুটি থাকলেও যে হারে পাঠকরা মেলায় এসেছেন সে অনুযায়ী বিক্রি হয়নি। তবে বিক্রি একবারেই যে খারাপ তাও নয়। ’

এ প্রকাশক মনে করছেন চার-পাঁচদিন পরই মেলার বিক্রি বাড়বে। একই আশাবাদ অন্যান্য প্রকাশকদেরও।

অন্যপ্রকাশ এর পরিচালক মাসুম রহমান বলেন, ‘জমজমাট বিক্রি না হলেও মেলা পরিণত হয়েছে এতেই ভালো লাগছে। ’

সন্ধ্যায় দেখা যায় বইমেলার গেট থেকে শাহবাগে জাতীয় যাদুঘর পর্যন্ত দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে দর্শনার্থীরা মেলায় প্রবেশ করে।

সাভার থেকে মেলায় আসা মুনিরা জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘বই কিনিনি এখনও দেখছি...। ’

সন্ধ্যার পরই বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণ জমজমাট। লেখক-পাঠকের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে পঞ্চম দিনের বইমেলা।

মুখরিত বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণ। পঞ্চম দিনে মেলার ভেতর জমিয়ে আড্ডা দিয়েছেন কেউ কেউ। লিটল ম্যাগাজিন চত্ত্বরে তরুণ কবি-লেখকরা বিকেল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জমিয়ে আড্ডা দিয়েছেন।

ঈদে মিলাদুন্নবীর ছুটি থাকায় মেলা শুরু পঞ্চম দিনের বইমেলা সকাল ১১টা থেকে শুরু হয়েছে।

৫ম দিনের যত বই:
বাংলা একাডেমীর উপপরিচালক মুর্শিদ আনোয়ার বাংলানিউজকে জানান, পঞ্চম দিন মেলায় ১৭১টি বই এসেছে। এরমধ্যে গল্প ১৮টি, উপন্যাস ৩৭টি, প্রবন্ধ  ১১টি, কবিতা ৩০টি, গবেষণা ৬টি, ছড়া ৬টি, শিশুসাহিত্য ৭টি, জীবনী/স্মৃতিচারণ ২টি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ৫টি, বিজ্ঞান-৫, ভ্রমণ- ৬টি, ইতিহাস-১টি, চিকিৎসা/স্বাস্থ্য ১টি, রম্য/ধাঁধা ১২টি, ধর্মীয় ২টি, অনুবাদ ৪টি, সায়েন্স ফিকশন/গোয়েন্দা ২টি, অন্যান্য ১৬টিসহ মোট ১৭১ টি বই প্রকাশিত হয়েছে।

রোববার মেলায় আসা উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে- জাগৃতি প্রকাশনী থেকে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর রাষ্ট্র ও সংস্কৃতি, অনন্যা থেকে ইমদাদুল হক মিলনের উপন্যাস তেতুল পাতায় নয়জন, আগামী প্রকাশনী  থেকে হাসনাত আব্দুল হাই এর উপন্যাস লড়াকু পটুয়া, শুদ্ধস্বর থেকে আবদুস শাকুর এর সাংগীতিক সাক্ষরতা, মিজান পাবলিশার্স থেকে আলী ইমাম-এর রাজা গেল আকাশে, রোদেলা প্রকাশনী থেকে সরদার ফজলুল করিমের সঙ্গ প্রসঙ্গের লেখা, দিব্যপ্রকাশ থেকে সুধাময় দাসের কালের ইতিহাসে মহাভারত, আগামী প্রকাশনী থেকে বদিউল আলম মজুমদার-এর দিন বদল, গণতান্ত্রিক শাসন ও সম্ভাবনার বাংলাদেশ, তরফদার প্রকাশনী থেকে মাহবুব আলমের নেপাল রাজতন্ত্র থেকে প্রজাতন্ত্রসহ কয়েকটি বই।

পঞ্চম দিনে এগারটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

রোববার একুশে বইমেলার নজরুল মঞ্চে ১৭১টি বইয়ের মধ্যে ১১ টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে-ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত সার্জেন্ট নুরুল মোমেন অসীম-এর প্রবন্ধ চালক। মোস্তাফিজুর রহমান পিন্টুর কবিতার বই ক্ষমা করো, হে শহীদ, বরুন কুমার বিশ্বাসের কাব্যগ্রন্থ অজানা’, পাশা মোস্তফা কামালের মনপবন, জিয়া রায়হান ফকির আবদুল মালেক সম্পাদিত ‘বাংলা গদ্য কবিতা সংকলন’, ব্লগারস ফোরাম প্রকাশিত নীড় পদাবলী প্রভৃতি।

আলোচনা গানে ভাষা আন্দোলন
জমজমাট বই মেলা। এরমধ্যে মেলার ভিতর চলে ভাষা আন্দোলনের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠান। বিকেলে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে ভাষা-শহীদ শফিউর রহমান ও আব্দুল জব্বার এবং ভাষা-শহীদ অহিউল্লাহ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে অভিধান বিশেষজ্ঞ জামিল চৌধুরী এবং গবেষক ড. তপন বাগচী।

আলোচনা করেন গবেষক শফিকুর রহমান চৌধুরী, ড. শিহাব শাহরিয়ার এবং কথাসাহিত্যিক আন্দালিব রাশদী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ছড়াকার ফয়েজ আহমদ।

প্রাবন্ধিকদ্বয় বলেন, ভাষা-শহীদদের নিয়ে আমাদের গবেষণা গভীর বা বিস্তৃত কোনোটাই নয়। যাঁদের রক্তের মূল্যে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাঁদের জীবন সম্পর্কে আমাদের ধারণা তেমন না। ভাষা-শহীদদের নিয়ে গত ষাট বছরে উল্লেখযোগ্য কোনো গবেষণা না হলেও কবি, কথাশিল্পী ও সংগীতশিল্পীদের সৃজনশীল রচনায় তাঁরা ভাস্বর হয়ে উঠেছেন ।

সভাপতির বক্তব্যে ফয়েজ আহমদ বলেন, ভাষা-আন্দোলন গবেষণা ৫২’র ২১ ফেব্রুয়ারি তারিখকে ঘিরে মূলত আবর্তিত হলেও একুশের অব্যবহিত পরে এই আন্দোলন যে নতুন গতি লাভ করে সে সম্পর্কে তেমন কোনো গবেষণা হয়নি।

সন্ধ্যায় ফকির আলমগীরের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী। মেলার ভেতর এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মাতিয়ে রাখে দর্শনার্থীদের।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।