খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বলেছেন, ক্রসফায়ার, অপহরণ, গুম, গুপ্তহত্যা গোটা জাতিকে ভীতি ও আতঙ্কের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। এ এক ধরনের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস।
সম্প্রতি কবি ও কথাসাহিত্যিক ইকবাল হাসানের কাছে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এর জন্য দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক, ধীমান লেখক হাসান আজিজুল হক বলেন, ক্রস ফায়ারিং প্রতিষ্ঠিত হতে হতে ‘এনকাউন্টার’ নাম নিয়ে এখন মানুষকে অপহরণ, গুম ও হত্যার পর্যায়ে চলে গেছে। কী এক ভয়ানক ভয়ংকর রাষ্ট্রে বসবাসকারী নাগরিকরা কল্পনাও করতে পারছেন না। আমিও পারি না। এইসব আইনবিরোধী, মানবতাবিরোধী চরম নিবর্তনমূলক প্রক্রিয়া চালু থাকা পর্যন্ত বাংলাদেশের একজন মানুষেরও বেঁচে থাকার মৌলিক স্বাধীনতার বাস্তবতা নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে একালের বাংলাগদ্য সাহিত্যের অন্যতম এই দিকপাল বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে আজও আমাদের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে কথা বলতে হয়। গত ৪০ বছর এরা লক্ষ মানুষের রক্তে ভেজা এ মাটিতে বীরদর্পে ঘুরে বেড়িয়েছে। জাতি হিসেবে এ আমাদের ব্যর্থতার জ্বলজ্যান্ত দৃষ্টান্ত। যুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হত্যা, নৃশংসতা, তা-ব, ধ্বংসলীলার বিচার নিয়ে পৃথিবীর কোনো দেশেই প্রশ্ন তোলা হয় না। আমরা হতভাগ্য দেশের মানুষ বলেইÑ বিচার হবে কি হবে না, কেন হচ্ছেÑ এসব প্রশ্ন উঠছে। যারা যুক্ত ছিলেন তাদের পরিচয় তো গোপন কিছু নয়।
হাসান আজিজুল হক বলেন, গভীর হতাশা নিয়ে লক্ষ্য করছি যে, দীর্ঘ ৪০ বছর পর এই বিচার প্রক্রিয়া যখন শুরু হয়েছেÑ আমাদের দেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক দল তখন মরিয়া হয়ে উঠেছে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে। দলটি রোডমার্চের নামে ‘গাড়ি মার্চ’ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে জাতিকে। এতে পুলকিত হচ্ছে জামায়াত ও জঙ্গিবাদীরা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নে আজ গোটা জাতি একতাবদ্ধ। এক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের আন্তরিক সাহসী উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অরাজকতা এবং বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের অবিশ্বাস্য উর্দ্ধগতির জন্যে তিনি পুঁজিবাদী অর্থনীতিকে দায়ী করে বলেন, পুঁজিবাদ এখন যেখানে এসে পৌছেছে সেখানে তার রাক্ষুসে চেহারাটা আর কারো কাছে গোপন নেই। কাজেই এই বিশ্বায়ন, মুক্তবাজার অর্থনীতি যা দেবার তাই দিচ্ছেÑ যেখানে যেদিকে যাবার সেদিকেই যাচ্ছে। আর এ অবস্থাটা আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের জন্যে ললাট লিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেন খর¯্রােতে শুকনো পাতার ভেসে যাওয়ার মতোন। আমাদের ভূমিকা নেহায়েৎ অধিনস্থের। কখনোই প্রভূর নয়। আমাদের ভূমিকা দাসের, মালিকের নয়।
তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের প্রধান কারণটি হচ্ছে ‘পকেটতন্ত্র’। পকেটের মধ্যে পকেট, তার মধ্যে পকেট, তার মধ্যে পকেটÑ এইভাবে হিসেব করলে বাংলাদেশে সব রকম পকেটই আছে দেশের গ-ির মধ্যে। প্রভূত্বের পকেট, খাদকের পকেট, উদরস্ত হওয়ার পকেটÑ এই ব্যবস্থাটাই সবকিছুর মূলে। দূর্নীতি বলা হোক, মৌলবাদ বলা হোক, সর্বঘটে পচন বলা হোকÑ গোড়াটা বাঁধা অই একই জায়গায়। তবে আশার কথা, এই ব্যবস্থার মধ্যেও উপজাত সামগ্রী যথেষ্ট পাচ্ছি, প্রযুক্তির সাহায্য পাচ্ছিÑ উপরে ওঠার ধাপগুলো স্পষ্ট হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৭ ঘণ্টা, ২৫ জানুয়ারি, ২০১২