ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

‘বাংলা ভাষার বিবর্তনমূলক অভিধান’ প্রণয়ন বিষয়ক সেমিনার

শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০১২
‘বাংলা ভাষার বিবর্তনমূলক অভিধান’ প্রণয়ন বিষয়ক সেমিনার

বাংলা একাডেমী সম্প্রতি বাংলা ভাষার বিবর্তনমূলক একটি অভিধান প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই অভিধানে চর্যাপদ থেকে শুরু করে ২০০০ সাল পর্যন্ত মুদ্রিত শব্দাবলির অর্থান্তর ও রূপান্তরকে প্রয়োগকাল ও প্রয়োগবাক্যসহ সংকলন করা হচ্ছে।

ইতিমধ্যে ৭০,০০০ শব্দ সংকলিত হয়েছে।

অভিধানটি অধিকতর প্রতিনিধিত্বশীল ও পূর্ণাঙ্গ করার লক্ষ্যে আজ ৪ জানুয়ারি  একাডেমীর সেমিনার কক্ষে সকাল ১০ টায় থেকে দিনব্যাপী সেমিনার ও ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়।

ওয়ার্কশপের শুরুতে একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান ‘বাংলা ভাষার বিবর্তনমূলক অভিধান’ প্রণয়ন সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করেন। পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে অভিধান প্রণয়ন কর্মসূচির পরিকল্পনা ও অগ্রগতি উপস্থাপন করেন কর্মসূচির সম্পাদক অধ্যাপক গোলাম মুরশিদ। অভিধানের সংকলন পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা দেন কর্মসূচির সহযোগী সম্পাদক অধ্যাপক স্বরোচিষ সরকার।

অভিধানের নানা বিষয়ে মতামত, প্রস্তাবনা ও সুপারিশ পেশ করেন বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ড. কেতকী কুশারী ডাইসন, কবি সৈয়দ শামসুল হক, অভিধান বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জামিল চৌধুরী, অধ্যাপক পবিত্র সরকার, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, গবেষক হায়াৎ মামুদ, অধ্যাপক মাহবুবুল হক, অধ্যাপক শফি আহমেদ, ড. ফিরোজ মাহমুদ, অধ্যাপক সিদ্দিকা মাহমুদা, অধ্যাপক হাকিম আরিফ এবং অধ্যাপক গুলশান আরা বেগম।

সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরী, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক জীনাত ইমতিয়াজ আলী, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মোঃ মোশাররফ হোসেন, উপ-সচিব শিখা সরকার, সহকারী-সচিব নিশাত জাহান, ড. কল্পনা ভৌমিক, কবি জাফর আহমদ রাশেদ, কবি ব্রাত্য রাইসু এবং কর্মসূচির পরিচালক ও বাংলা একাডেমীর প্রাতিষ্ঠানিক-পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক শাহিদা খাতুন।

শামসুজ্জামান খান বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বাংলা একাডেমী অভিধান চর্চাকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সম্পাদিত আঞ্চলিক বাংলা ভাষার অভিধানসহ মধ্যযুগ, আরবি-উর্দু-পালি প্রভৃতি ভাষার অভিধান প্রণয়ন করে একাডেমী বাংলা ভাষার শ্রীবৃদ্ধি সাধনে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

তিনি বলেন, বাংলা একাডেমীকে প্রকৃত উচ্চতর গবেষণার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, বাংল ভাষার বিবর্তনমূলক অভিধান, বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক ইতিহাস প্রণয়নসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ প্রকাশের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাংলা একাডেমীকে এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করছেন বর্তমান সংস্কৃতিবান্ধব সরকার।

গোলাম মুরশিদ বলেন, ইতিপূর্বে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষার বিবর্তনমূলক কোনো অভিধান প্রণীত হয়নি। বাংলা একাডেমী বাংলা ভাষার বিবর্তনমূলক অভিধান কর্মসূচি প্রণয়ন করে বাংলা অভিধানের এই অপূর্ণতা দূর করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দেড় লক্ষ শব্দ সংকলনের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়ে তিনবছর মেয়াদী এ কাজ শুরু করা হয়েছে। চর্যাপদ থেকে শুরু করে ২০০০ সাল পর্যন্ত সময়কে শব্দসংগ্রহের কালসীমা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে মধ্য-উনিশ শতক সময়সীমার আওতায় সত্তর হাজার শব্দ সংগৃহীত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এ ধরনের একটি মহার্ঘ্য অভিধান প্রণয়ন কর্মসূচি যথেষ্ট জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। নানান সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বাংলা ভাষার দুষ্প্রপ্য সূত্র সংগ্রহ করে অভিধান কাজটি সম্পন্নতা দানের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ কাজ যথাযথভাবে সম্পাদিত হলে বাংলার ইতিহাসের ধারাকেও অনুধাবন করা সম্ভব হবে এবং এটি হবে ভাষা বিষয়ে এ যাবৎকালের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর একটি।

আলোচকবৃন্দ সুপারিশ পেশ করে বলেন, শুধু সাহিত্যিক উৎস নয়, এই অভিধানে ইতিহাস-রাজনীতি-সংস্কৃতি-অর্থনীতি-বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন শাখায় ব্যবহৃত শব্দের উৎসমূলের কাছেও যেতে হবে; শুধু মুদ্রিত নয়, অমুদ্রিত উৎস, শিলালিপি, তাম্রলিপি থেকেও শব্দ সংকলন করে অভিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং এই ভুক্তি নির্মাণের জন্য একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন; সময়ের প্রেক্ষিতে অর্থের পতন এবং উন্নতির নির্দেশক হিসেবে একটি পরিশিষ্ট খ- প্রণয়ন; শব্দের সমাজতাত্ত্বিক এবং অর্থগত বিবর্তন সংকলন, প্রচলন হ্রাস পাওয়া এবং অব্যবহৃত শব্দের সংকলন, ভাষাগত এবং অন্যান্য উৎসের প্রামাণ্যতা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ এই অভিধানের বানানরীতি বাংলা একাডেমী প্রণীত প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণের সাথে সমতা বিধান করতে হবে। একটি পূর্ণাঙ্গ বৃহৎ বাংলা অভিধানের লক্ষ্যে এই অভিধান প্রণয়ন করে তা নিয়মিত হালনাগাদ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আলোচকবৃন্দ সুপারিশ করেন।

 

বাংলাদেশ সময় ১৮০০, জানুয়ারি ০৪, ২০১২

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।