ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

বইমেলা

কথার ঝুড়ি নিয়ে বাড়ি ফেরার দিন আজ

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২০
কথার ঝুড়ি নিয়ে বাড়ি ফেরার দিন আজ

গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ থেকে: ছোট্ট সোনামণি রংতুলি। হালকা সাদা জমিনের উপর বাংলা বর্ণমালা আঁকা শাড়ি পরে সেজেছে সে। তারপর বাবা-মায়ের হাত ধরে এসেছে বইমেলায়। এক হাতে পতাকা ধরে বাবার কোলে থেকেই অন্য হাতে ছোট্ট শিশু আবির নেড়ে দেখছিল বই। বাবাও খুব যত্নে তাকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন বাংলা বর্ণমালার সঙ্গে।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে তারা সবাই বাবা-মায়ের হাত ধরে এসেছিলো অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। খালি পায়ে, কপালে বাঁধা সাদা কাপড়ে অমর একুশ এঁকে, কেউবা আবার গালে রঙ তুলির আঁচড়ে বাংলাদেশের পতাকা অথবা বর্ণমালা এঁকেছে।

তারপর প্রভাতফেরি শেষে বইমেলায় এসেছে এইসব ছোট্ট সোনামণিরা। বাবা-মায়ের প্রেরণায় এখনই বর্ণমালার সঙ্গে পরিচয়ের আগ্রহ তাদের।

মেলা প্রাঙ্গণে কথা হয় আবিরের বাবা আরিফুল ইসলামের সঙ্গে। স্টলে স্টলে ঘুরে ছেলেকে বই দেখাচ্ছিলেন তিনি। কিনেছেনও বেশ কয়েকটি। কথা হলে বলেন, এখনই তো বাচ্চাকে বর্ণমালার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময়। তার উপর এখন ভাষার মাস। তাইতো মহান এ দিনে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ওকে নিয়ে চলে এলাম বইমেলায়।

ছোট্ট শিশু রংতুলি বলে, আজ তো একুশে ফেব্রুয়ারি। তাই সকাল বেলা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে বইমেলা এসেছি। এখন আব্বু-আম্মুর সঙ্গে ঘুরে ঘুরে অনেক বই কিনবো।

শুধু রংতুলি বা আবির নয় নয়, জেসিয়া, তবারাক, ফিহির আর আদিবার মতো প্রভাত ফেরি শেষে একটু অপেক্ষা করে বাবা মায়ের সঙ্গে হাঁটি হাটি পায়ে অনেকই এসেছেন বইমেলায়। তাদের কারো বয়স দুই ছাড়িয়েছে, আবার কারোবা তারও নিচে। শিশুদের সঙ্গে এসেছেন তাদের অভিভাবকেরাও। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এদিন বইমেলার দুয়ার খুলে দেওয়া হয় সকাল ৮টায়। তখন থেকেই শত শত বইপ্রেমী মেলায় আসতে শুরু করেন। একুশের শোক আর শ্রদ্ধায় প্রায় সবাই আজ পরেছে সাদাকালো পোশাক।

ক’দিন আগে বসন্তের প্রথম দিনে মেলা যেমন বর্ণিল হয়ে উঠেছিল বাসন্তি রঙে, তেমনি একুশের দিনে মেলায় আগতদের মার্জিত পরিপাটি পোশাকে স্পষ্ট একুশের ছাপ। তেমনই একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তনিমা শেখ। তিনি পড়েছেন কালো পাড়ের সাদা শাড়ি। শহীদ মিনারে বন্ধুদের সঙ্গে ফুল দিয়ে সরাসরি মেলায় ঢুকেছেন। কিনেছেন হেলাল হাফিজের কবিতার বই।

কথা হলে তিনি বলেন, একুশ তো আমাদের অহংকার। আজ বন্ধুদের সঙ্গে সকালে শহীদ মিনারে এলাম শ্রদ্ধা জানাতে। সেখান থেকই বন্ধুদের নিয়ে বইমেলা। কিছু বই কিনেছি, এখন ঘোরাঘুরি করছি। বইমেলা থেকে বের হবার আগে আরো অনেকগুলো বই কেনার ইচ্ছে আজ।

আজ মেলায় কেবল ঘুরতে আসা নয়, অনেকেই প্রিয় লেখকের প্রিয় বইটি কিনে উপহার দিচ্ছেন প্রিয়জনকে। মোড়কের নিচে সাদা কাগজে লিখে দিচ্ছেন একুশের প্রিয় পঙ্কতি।

সে পঙ্কতিতে সুদূর শহীদ মিনার থেকে ভেসে আসে মাইকের আওয়াজ। সে আওয়াজ শোনা যায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকেও। সুর ওঠে- ‘মাগো, ওরা বলে সবার কথা কেড়ে নিবে/ তোমার কোলে শুয়ে গল্প শুনতে দেবে না/ বলো, মা, তাই কি হয়? তাইতো আমার দেরি হচ্ছে/ তোমার জন্য কথার ঝুড়ি নিয়ে তবেই না বাড়ি ফিরবো। '

সেদিন মায়ের জন্য কথার ঝুড়ি নিয়ে ফেরা না হলেও মুখের ভাষাকে কেড়ে নিতে দেয়নি বাংলার দামাল ছেলেরা। জীবন তুচ্ছ করে মায়ের ভাষার, মুখের ভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছিল রফিক, শফিউর, সালাম, বরকত, জব্বার। আর সে সূত্রকেই আজ যেন আবার সত্যি করছে বর্তমান সময়ের সন্তানেরা। তাইতো বইমেলা থেকে ব্যাগভর্তি বই নিয়ে বাড়ি ফিরছেন তারা। তাইতো আজ সবারই একটু দেরি হবে বাড়ি ফিরতে।

এদিকে প্রকাশকেরাও আশা করছেন আজ মেলা জমজমাট হবে। টিএসসি আর শাহবাগের মতো জনস্রোত নামবে বইমেলার প্রাঙ্গণেও।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২০
এইচএমএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।