ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বাংলা একাডেমীর নানা কর্মসূচি

ডেস্ক রিপোর্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১১
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বাংলা একাডেমীর নানা কর্মসূচি

ঢাকা: শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও স্বাধীনতার ৪০ বছরে বিজয় উৎসব উপলক্ষে বাংলা একাডেমীতে শুরু হয়েছে তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বুধবার সকাল ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এবং রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।



এ সময় একাডেমীর সচিব, পরিচালক, উপপরিচালক এবং সকল স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।

সকাল ৯:০০টায় ‘শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতিকৃতি অঙ্কন’ বিষয়ে আয়োজিত শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা দুটি শাখায় অনুষ্ঠিত হয়। ক-শাখা ও খ-শাখায় মোট ১৫০জন প্রতিযোগী অংশ নেয়। এর মধ্যে ক-শাখায় জান্নাতুল আরবী (প্রিয়া)প্রথম, নওশীন তাসনিম খানদ্বিতীয় ও তাস্নিম ইসলাম আশা তৃতীয় স্থান অধিকার করে এবং খ-শাখায় সৃষ্টি প্রকৃতি সরকারপ্রথম, সাবাহ্ আহমেদ বিদূষীদ্বিতীয় এবং নূর ইসলাম রিপনতৃতীয় স্থান অধিকার করে।

বিকেল ৪:০০টায় একাডেমীর রবীন্দ্রচত্বরে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। ‘বুদ্ধিজীবী হত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা অহিদ। আলোচনা করেন একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি সাংবাদিক শাহ্রিয়ার কবির।

সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

স্বাগত বক্তব্যে শামসুজ্জামান খান বলেন, একাত্তরের ডিসেম্বরে বিজয়ের ঠিক আগমুহূর্তে পাক-হানাদার ও তাদের এদেশীয় দোসরেরা বুদ্ধিজীবীদের যেভাবে হত্যা করে তার তুলনা পৃথিবীর ইতিহাসে খুঁজে মেলা ভার। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই বাংলার বিবেকী বুদ্ধিজীবীগণ ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানবাদের বিরুদ্ধে ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারণাকে সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন। বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের এ ভূমিকা পাক-হানাদাররা সহজে মেনে নেয়নি। তারা ভেবেছিল বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মধ্য দিয়েই বাঙালির আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষাকে হত্যা করা যাবে।

প্রাবন্ধিক ড. জিনাত হুদা অহিদ বলেন, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি বাঙালির প্রতিটি সংগ্রামের পর্বে বুদ্ধিজীবীদের গৌরবজনক ভূমিকা ছিল। সে জন্যেই তারা অন্ধকারের শক্তির লক্ষে পরিণত হয়েছেন। তাঁদের হত্যার মধ্য দিয়ে মূলত জাতিকে মেধাশূন্য করার পাঁয়তারা করা হয়েছে। তিনি বলেন, সামরিক স্বৈরশাসকেরা বিস্মৃতির সংস্কৃতি চালু করার মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধকে একটি মীমাংসিত বিষয় হিসেবে চি‎িহ্নত করার চেষ্টা চালিয়েছে। বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচারের মধ্য দিয়ে বিস্মৃতির বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে, ইতিহাসের সত্যের কাছে আমাদের ফিরতে হবে।

সাংবাদিক শাহ্রিয়ার কবির বলেন, শুধু ’৭১-এর ১৪ই ডিসেম্বরে বুদ্ধিজীবী হত্যা হয়নি বরং ২৫শে মার্চের কালরাত্রি থেকে বুদ্ধিজীবী নিধনপর্ব শুরু হয় এবং শুধুমাত্র রাজধানীবাসী বুদ্ধিজীবীদেরই নয় সারাদেশের বুদ্ধিজীবীদেরই তারা হত্যার লক্ষ্যবস্তু করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে শুধু ব্যক্তির অপরাধকে আমলে নিলে চলবে না বরং যে সংগঠিত-ফ্যাসিবাদী শক্তি বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করেছে তাকেও বিচারের আওতায় আনতে হবে।

সভাপতির ভাষণে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শুরু থেকেই পাকিস্তান রাষ্ট্র বাঙালি সংস্কৃতিকে শত্রু জ্ঞান করেছে। তাই ’৭১ সালে তারা শহীদ মিনারকে ধ্বংস করতে চেয়েছে, বাংলা একাডেমীতে হামলা চালিয়েছে। বুদ্ধিজীবী হত্যাও তাদের সেই বাঙালি সংস্কৃতিবিরোধী অপতৎপরতারই অংশ।

তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর কোথাও গণহত্যা বা যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক অধিকার নেই কিন্তু বাংলাদেশের আমরা এর বিপরীত চিত্র দেখতে পাই। তাই শুধু যুদ্ধাপরাধের দায়ে গুটিকয়েক ব্যক্তির বিচার করলেই মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের ঋণ শোধ হবে না বরং যুদ্ধাপরাধীদের ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক কর্মকা- সমূলে নির্মূল করতে হবে।  

সন্ধ্যায় আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন শিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও আহকামউল্লাহ; সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী মীনা বড়ুয়া, উমা ইসলাম, আবদুল হালিম খান, সরদার মোঃ রহমাতউল্লা, আজাদ হাফিজ, মাহমুদুজ্জামান বাবু, ঝুমা খন্দকার প্রমুখ। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন গৌতম মজুমদার, হাসান আলী, ইবনে খালেদুন রাজন, রতন কুমার রায় এবং সজল কুমার সাহা।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায়  ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ধর্মীয় জঙ্গিবাদ এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার অনুষ্ঠান” শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। স্বাগত ভাষণ দেবেন একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ড. মো. সেলিম। আলোচনা করবেন মেজর জেনারেল হারুন-অর-রশিদ (অব.) বীরপ্রতীক , সাংবাদিক আবেদ খান  ও ড. মুহাম্মদ সামাদ। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বুধবার একাডেমীর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে জানানো হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad