ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

সিন্ধুলিপি পাঠোদ্ধারে আলো দেখালেন বাঙালি মেয়ে

শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৯
সিন্ধুলিপি পাঠোদ্ধারে আলো দেখালেন বাঙালি মেয়ে

দেড়শো বছর ধরে সিন্ধু সভ্যতার লিপির পাঠোদ্ধারের চেষ্টা চলছে বিশ্বজুড়ে। বাঘা বাঘা গবেষকদের এই চেষ্টায় সামিল হয়েছেন বাঙালি মেয়ে বহতা অংশুমালী মুখোপাধ্যায়। বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা এই প্রযুক্তিবিদ তার পেশার বাইরে এসে, প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ডিগ্রি ছাড়াই কাজ করছেন চার হাজার বছর আগের ব্রোঞ্জ-যুগীয় সিন্ধু সভ্যতার লিপির পাঠোদ্ধারে। 

আন্তর্জাতিক বহুমাত্রিক জার্নাল নেচারের পত্রিকা ‘প্যালগ্রেভ কমিউনিকেশন্স’ বহতার সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধার নিয়ে গবেষণাপত্র  প্রকাশ করেছে সম্প্রতি। তার “Interrogating Indus inscriptions to unravel their mechanisms of meaning conveyance” শীর্ষক লেখাটির (Palgrave Communications, volume 5, Article number: 73, 2019) প্রশংসায় পঞ্চমুখ গবেষকরা।

 

বহতার ভাষ্যে, তার প্রথম কাজ ঠিক পাঠোদ্ধার নয়, পাঠোদ্ধারের প্রকৃতি নির্ধারণ। বহতার মতে, ‘সিন্ধুলিপি মূলতঃ লোগোগ্রাম বা শব্দচিত্রের মাধ্যমে লেখা, বানান করে নয়, শব্দচিত্রদের ধ্বনির মতো ব্যবহার করে অর্থাৎ রেবাস পদ্ধতিতেও  (rebus principle) নয়। বহু অগ্রগণ্য গবেষক, যাদের কাজের নানান দিক পুরাতত্ত্ব এবং ইতিহাসের নতুন কিছু দিগন্ত খুলে দিয়েছে, তারা কিন্তু বিশ্বাস করেন, রেবাস পদ্ধতি ব্যবহার করেই  সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধার করা যাবে। ’ 

তবে যেহেতু বহতার গবেষণায় রেবাস পদ্ধতির বিরুদ্ধে এবং শব্দচিত্রের সপক্ষে কিছু খুব জোরালো যুক্তি দেওয়া হয়েছে, তাই এই কাজটি সিন্ধুলিপিকে বানান করে বা রেবাস পদ্ধতিতে পড়ার জনপ্রিয় প্রবণতাকে কিছুটা হলেও প্রতিহত করবে বলে আশা গবেষকের।

বহতা তার গবেষণাপত্রে বলতে চান, সিন্ধুলিপিতে উৎকীর্ণ মিনিয়েচার সিলমোহর, ট্যাবলেট ইত্যাদি প্রায় ১০ লাখ বর্গকিলোমিটারজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সিন্ধুসভ্যতার জনপদগুলিতে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং নানান উৎপাদন সামগ্রীর বণ্টনব্যবস্থায় স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন আর ব্যুরোক্রেসির কাজে ব্যবহৃত হতো। এখনকার স্ট্যাম্প, কয়েন, র‍্যাশন টোকেন ইত্যাদিতে যেমন সুনির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে নানান তথ্য ভরে দেওয়া থাকে, এই সিলমোহর আর ট্যাবলেটগুলিতেও তেমনি ফর্মুলার মতো নিয়ম মেনে শব্দচিত্র দিয়ে লেখা বাক্যাংশগুলিতে লেখা থাকতো জরুরি তথ্য।  

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, গণিতবিদ এবং পদার্থবিদ রণজয় অধিকারীর কাছে সিন্ধুলিপি নিয়ে কাজের প্রথম সুযোগ পান এই তরুণী। যদিও পরে নিজের মতো করে কাজটি করার ইচ্ছের ফলে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সাহায্য বা অবেক্ষক ছাড়াই তিনি কাজটি চালিয়ে যান। ২০১৬ সালে করা এই কাজের প্রথম গবেষণাপত্র প্রকাশিত হলো তিন বছর পর এসে ২০১৯ সালে। তার দ্বিতীয় গবেষণাপত্রটি  প্রকাশনার প্রক্রিয়ায় আছে বলেও জানান বহতা।  

কাজের সময়টায় কেমন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে? বহতার ভাষ্যে, ‘দিনের পর দিন পাঁচ সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ঘুমিয়ে, ছেলে সংসার চাকরি সামলে করা কাজ। ’ এই কাজে,  বিজ্ঞানী রণজয় অধিকারী, প্রয়াত গবেষক পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত ইরাভথম মহাদেবন, কানাডিয়ান গবেষক ব্রায়ান ওয়েলস প্রমুখ বহতাকে বইপত্র দিয়ে অনেক সাহায্য করেছেন, আর বহতার বাবা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অমর্ত্য মুখোপাধ্যায় তাকে  উৎসাহ যুগিয়েছেন বলে জানান বহতা। ফেসবুকে পরিচিত অনেক গুণী ব্যক্তি, যেমন পদার্থবিদ ও আইএসআই ব্যাঙ্গালোরে কর্মরত অধ্যাপক উৎপল চট্টোপাধ্যায়, বিশ্বভারতীতে কর্মরত শিল্পী নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রাক্তন অধ্যাপিকা সোনিয়া আমিন এবং আরও অনেকে অলক্ষে কাজ করার সময়ে মানসিক সাহস যুগিয়েছেন তাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৯
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।