ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

অমিতাভ পালের এক গুচ্ছ কবিতা

ভূমিকা : ফেরদৌস মাহমুদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১১
অমিতাভ পালের এক গুচ্ছ কবিতা

বছর সাতেক আগে কবি বন্ধু আমজাদ সুজনের মাধ্যমে এক ফর্মার পাতলা একটি কবিতার বই আমার হাতে আসে। বইটির নাম ‘আলোর আলোচনা’।

ওখানে কবিতা ছিল মাত্র ১৬টি। কবির নাম অমিতাভ পাল। ওই প্রথম অমিতাভ দা’র নাম আমি জানি।

ওখানেই পড়ি তার লেখা কিছু উজ্জ্বল পঙক্তি— ‘ছুটন্ত জেব্রার মতো লাফিয়ে উঠছে/অজস্র আগুন/ প্রান্তরে ধূলার ধোঁয়া/ জেব্রার খুড়ের নিচে পিষ্ট হচ্ছে/ নরম সবুজ ঘাস’

 

http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2011December/amitav2220111205133302.jpgকিংবা,

‘ঘুমের ভিতরে আমি অনেক কিছুই হতে পারি/ যেমন একটি জলচর ঢেউ কিম্বা/ স্থলচর মাটি কিম্বা/খেচর মহাশূন্য/কলার বাগান/ঘুম একটা পুকুরের মতো/তার চারপাশে আমাকে বিভিন্নভাবে রাখে/একটি পোষা ঘুম’

বইটি পড়ার মাস তিনেক পর তার সাথে যখন শাহবাগে দেখা হয়, প্রথম আলাপেই আমাদের সম্পর্ক অনেক আন্তরিক হয়ে ওঠে। দীর্ঘ দিন তার সাথে কোনো যোগাযোগ ছিল না, এর মধ্যেই গতকাল ৪ ডিসেম্বর তিনি আসেন আমাদের বাংলানিউজে, কথা বলতে বলতেই এক সময় বলেন ‘আগামীকাল আমার ব্যাট তোলার দিন’। আমি জিজ্ঞেস করি, ব্যাট তোলার দিন মানে? তিনি জানান এই ৫ ডিসেম্বর তার বয়স পঞ্চাশ হচ্ছে।

http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2011December/amitav 1320111205132632.jpgঅমিতাভ পালের জন্ম ১৯৬২ সালের ৫ই ডিসেম্বর ময়মনসিংহ শহরে। তার বাবা আশুতোষ পাল এবং মা শিউলী পাল। কৃষি বিজ্ঞানে স্নাতক এই কবি পরিবেশসম্মত কৃষিতে বিশেষজ্ঞতা অর্জন করেন সুইডেন থেকে। এ পর্যন্ত তার পাঁচটি কবিতার বই এবং কবিতাসমগ্রের প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়াও ‘রাতপঞ্জি’ নামের একটি গল্পের বই এবং ‘একশ’ ফোঁটা বৃষ্টিবিন্দু’ নামের একটি গদ্যগ্রন্থ রয়েছে।

অমিতাভ পালের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো তার এক গুচ্ছ কবিতা।  

 

 

শূন্য আবিস্কারের গল্প

 

একটি বিন্দু থেকে যাত্রা শুরু করে একটি

বক্ররেখার মাধ্যমে ওই বিন্দুতে ফিরে আসা

একটি চিত্রকে বৃত্ত বলে

আমার বউও ঠিক এইরকম

প্রতিদিন সে একই জায়গা থেকে শুরু করা

একটি প্রসঙ্গ ওই জায়গাতেই এনে শেষ করে দেয়

আর আমি বৃত্তস্থিত কেন্দ্রের মতো নিঃশ্চুপ বসে

এই বৃত্ত আঁকায় তাকে ব্যাসার্ধের মতো সাহায্য করি

 

শয্যাতেও দেখেছি আমার বউএর শরীরে

অনেক বর্তুল উপাদান আছে

 

আমি নিশ্চিত- আর্যভট্ট বিয়ে করার পরই

শূন্য আবিস্কার করেছিলেন

 

বিমুক্ত

 

আমার শরীরের রক্তের মধ্যে মিশে গেছ তুমি

সিরিঞ্জের ভিতর দিয়ে ঢোকা ওষুধের মতো

আমার ভিতরে তোমার এই অনুপ্রবেশ

আমাকে বুঁদ করে রাখে সারাক্ষণ

ওদিকে নিরাময় ক্লিনিকগুলি চেঁচিয়ে দেশ গরম করছে

আমাকে মুক্ত করার চেষ্টায়

অথচ বিনয় মজুমদার গায়ত্রীকে সঙ্গে নিয়েই

চিতায় উঠেছিলেন

 

আমি কখনো মুক্ত মানুষ দেখিনি

 

অগ্নিপ্রেম

 

তোমার ভালোবাসা আজকালকার ম্যাচের কাঠির মতো

বাক্সের গায়ে ঘষা দিলে আগুন জ্বলে ঠিকই

কিন্তু সেই আগুনের তেজে কাঠির কাঠটাকে

ধরাবার মতো শক্তিও থাকে না

 

তোমার হিসাবি প্রেমে নেশারা বেমানান

 

পেলে-ম্যারাডোনা

 

দোষটা তো তার

জিন্দেগী উজাড়

করে যে দিয়েছে ঢেলে

তার সবকিছু- ঠিক যেভাবে পেলে

শরীরের সমস্ত ক্ষমতা দিয়ে গোল করতেন

তারও দান ছিল ঠিক সেরকম- মাঠ মাতাতেন

তিনি তার গোলে

তখন সবাই তাকে পেলে ভেবে বিস্মিত হতো

এইভাবে কতবার তার দানে হয়েছে নিহত

বিপক্ষের দেহমন- বিপক্ষের উল্লাস ও সুখ

কিন্তু সময়ের দেহে যখন অসুখ

এসে জড়ো হয়- সাদা হয় চুল

পেলে আর থাকে নাতো- ম্যারাডোনা চলে আসে নিয়ে তার স্বনির্মিত ফুল

 

ঢাকা

 

বখতিয়ার খিলজির বাহিনীর ভয়ে লক্ষণ সেন না পালালে

ঢাকার হয়তো জন্মই হতো না

থাকতো না কুট্টিদের রসিকতায় ভরা

পরিতোষ সেনের জিন্দাবাহার লেন

ফরিদপুর থেকে হয়তো আসাই হতো না শেখ মুজিবের

আর সাতই মার্চের ভাষণসহ স্বাধীনতার যাবতীয় অহংকার

হয়তো এখনো থেকে যেতো অনামা

কোন মায়ের গর্ভে

 

বখতিয়ার খিলজির বাহিনীর ভয়ে লক্ষণ সেন না পালালে

বুড়িগঙ্গার তীরে হয়তো ফাঁকাই পড়ে থাকতো

আমাদের সাধের ঢাকা

 

শিক্ষকের তৈলচিত্র

 

সিড়ি

   আমাকে

        উত্থান

            পতন

               শিখিয়েছে  

 

 

বাংলাদেশ সময় ১২০০, ডিসেম্বর ০৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad