ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

‘লেখক-পাঠক হিসেবে নিষ্ঠাবান মানুষ ছিলেন কবি হায়াৎ সাইফ’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৪ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৯
‘লেখক-পাঠক হিসেবে নিষ্ঠাবান মানুষ ছিলেন কবি হায়াৎ সাইফ’ প্রয়াত কবি হায়াৎ সাইফের মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন। ছবি: ডিএইচ বাদল/বাংলানিউজ

ঢাকা: কবি হায়াৎ সাইফ অত্যন্ত নিভৃতচারী একজন মানুষ ছিলেন। পাঠক হিসেবে এবং লেখক হিসেবে ছিলেন অত্যন্ত নিষ্ঠাবান একজন মানুষ। আমরা সেই মানুষকে হারালাম।

সদ্য প্রয়াত কবি হায়াৎ সাইফের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে এমনটাই বলছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী।  

মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুরে কবির মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রাখা হয়।

একই সঙ্গে সেখানে তার জানাজাও অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী এবং একাডেমির সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে প্রয়াত কবির প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা নিবেদন করে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ।

শ্রদ্ধা জানানো শেষে কবি হায়াৎ সাইফ সম্পর্কে বলতে গিয়ে রামেন্দু মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, হায়াৎ সাইফ অত্যন্ত রুচিবান একজন ব্যক্তি ছিলেন। আমার সাহিত্য রুচি তৈরিতে ওর একটা অবদান ছিল। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সঙ্গে ইংরেজি বিভাগে পড়লেও বাংলা সাহিত্যে আলাদা একটা ভালোবাসা ছিল।

পড়ুন>>কবি হায়াৎ সাইফ আর নেই

কবি তারিক সুজাত বলেন, হায়াৎ সাইফের হাত ধরে শুধু মৌলিক কবিতা নয় বরং অসাধারণ সব অনুবাদ কবিতাও আমরা পেয়েছি। আর এই কবি সংখ্যায় কম লিখলেও মানের দিক থেকে সবগুলো অনন্য।

বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েল উপ-উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার, অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, কথাশিল্পী রশীদ হায়দার, কবি জাহিদুল হক, কবি কামাল চৌধুরী, কবি আসাদ মান্নান, কবি জাহাঙ্গীর ফিরোজ, কবি সালেম সুলেরী, কবি হালিম আজাদ, কবি গৌরাঙ্গ মোহান্ত, লেখক আমিনুল ইসলাম বেদু, কবি আমিনুর রহমান, কথাশিল্পী আবু সাঈদ জুবেরী, সাবেক কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমেদ, ডাক বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক আতাউর রহমান, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ, প্রকাশক নিশাত জাহান রানা প্রমুখ।

বাংলা একাডেমিতে শ্রদ্ধা জানানোর আগে মঙ্গলবার ফজরের নামাজের পর উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরে এবং সকাল ১০টায় রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় স্কাউট ভবনে কবির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।  

বাংলা একাডেমির পর কবির মরদেহ গুলশান আজাদ মসজিদে আনা হয়। সেখানে জানাজা শেষে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে বলে জানান কবিপুত্র জিসান সাইফ।

এছাড়া আগামী সোমবার (২০ মে) সকাল ১১টায় বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে কবি হায়াৎ সাইফের প্রয়াণে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী।

কবিতায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে কবি হায়াৎ সাইফ ২০১৮ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। কর্মজীবনে তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) সদস্য ও পরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া স্কাউটিংয়ে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি বিশ্ব স্কাউট সংস্থার সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড ‘ব্রোঞ্জ উলফ’ এবং বাংলাদেশে স্কাউটসের সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড ‘রৌপ্য ব্যাঘ্র’ অর্জন করেন।

১৯৪২ সালে ঢাকায় জন্ম নেওয়া কবি হায়াৎ সাইফের বাবার নাম মোসলেম উদ্দিন খান ও মাতার নাম বেগম সুফিয়া খান। পিতার কর্মস্থল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার সুবাদে তিনি তার শৈশব কাটান রাজশাহীতে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

রোববার (১২ মে) দিনগত রাত ১২টা ৫মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বার্ধক্য ও কিডনিজনিত অসুস্থতার কারণে বেশ কিছুদিন ধরে সেখানেই ভর্তি ছিলেন কবি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৭ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৯
এইচএমএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।