ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

টোমাস ট্রান্সট্রোমারের আত্মস্মৃতি

স্মৃতির চাহনি : স্মৃতিলেখ [শেষ কিস্তি]

ভাষান্তর : কুমার চক্রবর্তী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০১১
স্মৃতির চাহনি : স্মৃতিলেখ [শেষ কিস্তি]

সাহিত্যে সদ্য নোবেলজয়ী কবি টোমাস ট্রান্সট্রোমার। জন্ম ১৯৩১ সালরে ১৫ এপ্রলি সুইডনেরে স্টকহোমে।

১৯৫৪ সালে মাত্র ২৩ বছর বয়সে প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতার বই ‘১৭ টি কবিতা’তার উল্লেখযোগ্য অন্যান্য কবিতার বইয়ের মধ্যে রয়েছে--- Secrets on the way (1958), Half-finished heaven (1962), (Echoes and traces/bells and tracks (1966),  Seeing in the dark (1970),  For the living and the dead (1989) 

১৯৯০ সালে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারান ট্রান্সট্রোমার। ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত হয় তার স্মৃতিকথা। এতে উঠে আসে তার শৈশব-কৈশোর এবং কবি হিসেবে তার বেড়ে ওঠার অনেক ঘটনাই। বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তিন পর্বে প্রকাশিত সেই স্মৃতিকথার শেষা পর্ব তুলে ধরা হলো।  

 

গ্রামার স্কুল

প্রাইমারি স্কুল থেকে শুধু আমার দুজন বন্ধু মাধ্যমিক স্কুলে (লিয়ালস্কোলা) উঠতে পেরেছিলো। আর আমি ছাড়া কেউই সোডা লাতিন গ্রামার স্কুলে ভর্তির আবেদন করলো না। এই স্কুলে ভর্তির জন্য আমি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। তার একমাত্র স্মরণীয় স্মৃতি হলো আমি ‘বিশেষত’ (sarskilt) বানানটা ভুলভাবে লিখেছিলাম! আমি দুটো ‘‘এল’’ দিয়ে বসলাম। সে থেকেই এই শব্দটি আমাকে প্রতারণা করতে লাগলো এবং ১৯৬০ সাল পর্যন্ত এ-রকমই চলতে লাগলো।

১৯৪২-এর শরতে সোডা লাতিন স্কুলে যাওয়ার প্রথম দিনটি আমার নিকট ছিলো স্বতন্ত্র স্মৃতিময়। স্কুলে আমার চারপাশে ছিলো এগারো বছর বয়সী অপরিচিতদের মুখ। আমার অবস্থা ছিল দোদুল্যমান আর সচকিত। অন্যান্যরা সম্ভবত একে অপরের পরিচিত ছিল কারণ তারা ছিল মারিয়া প্রপার্টির ছাত্র। আমি কাতারিনা নোরার দিকে তাকালাম, সেও আমার দিকে তাকালো। আমার মানসিকতা একই সাথে ছিল আশা-নিরাশায় দোলায়িত।

ক্লাসে আমাদের নাম ডাকা হলো, তারপর আমরা তিন শ্রেনীতে বিভক্ত হয়ে গেলাম। আমি পড়লাম ১৫-খ শ্রেনীতে। আমাদের শ্রেনী শিক্ষক হল ড.মহলিন, যিনি ছিলেন একজন পুরনো শিক্ষক। তার বিষয় হলো জার্মান। তিনি ছোটখাট অনেকটা মার্জারসুলভ, কর্তৃত্বপরায়ণ। তিনি ধীর স্থির কিন্তু চকিতভাবে চলাফেরা করতেন; তার ছিল লোমজ শরীর অবিন্যস্ত ধূসর চুল। তার সম্পর্কে মূল্যায়ন ছিল : ম্যালে-- তাকে এই নামে ডাকা হতো-- একজন ‘সৎ ও কড়া’ লোক। প্রথম থেকেই মনে হয়েছিল প্রাথমিক স্কুল থেকে গ্রামার স্কুল সম্পূর্ণ ভিন্ন। এটা ছিল পুরোপুরি ছেলেদের স্কুল, কোনো মহিলা স্টাফও ছিল না, শুধু কয়েক বছর পর দু-জন মহিলা কর্মাচারী হিসেবে প্রথমবারের মতো নেওয়া হয়েছিল।

প্রতিদিন সকালে আমরা হল ঘরে এসেম্লিতে দাঁড়াতাম, স্তব গান করতাম, ধর্মীয় শিক্ষকের নিকট হতে বাইবেলের ধর্মপদেশ শুনতাম। তারপর নিজ নিজ ক্লাসরুমে মার্চ করে চলে যেতাম। সোডার লাতিন গ্রামার স্কুলের সামাগ্রিক পরিবেশ ইঙ্গমার বার্গমেনের ছবি ‘হেটস’-এ অবিস্মরণীয় করে তুলে ধরা হয়েছে। (ছবিটির স্যুটিং স্কুলেই হয় এবং আমরা যারা তখন ছাত্র ছিলাম তারা ছবির কিছু কিছু চিত্রায়িত অংশে অতিরিক্ত চরিত্রে অংশগ্রহণ করেছিলাম। )

স্কুল হতে আমাদের সকলকে একটি স্কুল ম্যানুয়েল সরবরাহ করা হয়েছিল যাতে অন্যান্য জিনিসের সাথে ছিল ‘স্কুল স্ট্যাটাসের উপযোগী নিয়ম ও আদেশ বিষয়ক নির্দেশিকা’’।

ছাত্ররা নির্ধারিত সময়ে প্রদত্ত নির্দেশাবলী পালন করবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করবে এবং স্কুলের বই-পুস্তক সাথে রাখবে। তারা আদেশ-নির্দেশ মান্য করবে এবং সঠিক আচরণ করবে আর প্রদত্ত নির্দেশসমূহ মনোযোগের সাথে অনুসরণ করবে। ছাত্ররা, অধিকন্তু, সকালের প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করবে এবং সেখানে শান্ত ও পরিপূর্ণভাবে নিজেদের সমর্পণ করবে...

ছাত্ররা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের প্রতি তাদের প্রাপ্য শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করবে আর তাদের আদেশ গ্রহণ ও পালন করবে...

transtromerস্কুল ছুটির পরের সময় ছিলো বন্ধনহীন, মুক্ত। অনেক সময় প্যালেকে নিয়ে আমি বাড়ি ফিরতাম। স্কুলের প্রথম বছরে সে-ই (প্যালে) ছিলো আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমাদের দুজনেরই ছিলো অনেক ব্যাপারে সমিলতা : তার পিতাও একজন নাবিক-- দীর্ঘদিন ধরে ঘরছাড়া ও অজানা, তার মাও একজন কোমলস্বভাবা নারী ছিলো যে আমাকে খুব আদর করতো। একমাত্র সন্তান হিসেবে প্যালের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিলো আমারই মতো। আর সবচেয়ে বড়ো কথা সে-ছিল একজন সংগ্রহকারী; কিসের?--- যে কোনো কিছুর : বিয়ারের লেবেল, দেশলাই বাক্স, তরবারি, ডাকাটিকিট, পোস্টাকার্ড, পাথরের কুঠার, নৃতাত্ত্বিক নমুনা আর হাড়গোড় এই ছিল তার সংগ্রহের স্মারক।

যুদ্ধ সরঞ্জাম আর বিভিন্ন বস্তুতে ঠাসাঠাসি করা তার ঘরে আমরা দুজন তলোয়ার দিয়ে ডুয়েল লড়তাম। আমরা একসাথে, বাইরে, রিদ্দারহলমেনের দিকে কোনো গোপন স্থানে মাটির খননকার্য চালাতাম, আর খননের ফলে বের হয়ে আসা কঙ্কালের টুকরোগুলো কুড়োতাম। পরবর্তীকালে আমার দন্তচিকিৎসক এই টুকরোগুলোকে ‘মানব কঙ্কালের অংশ’ বলে শনাক্ত করেছিলেন।

প্যালেকে বন্ধু হিসেবে পাওয়া ছিল আমার এক মহার্ঘ-প্রাপ্তিযোগ, কিন্তু ধীরে ধীরে আমরা দূরে সরে গেলাম। অসুস্থতার জন্য প্যালে স্কুলে অনুপস্থিত থাকতে লাগলো দীর্ঘদিন। যখন তাকে অন্যস্থানে সরিয়ে দেওয়া হলো তখন পারস্পরিক ঘনিষ্ঠতা হারালাম। আমার এই ঘনিষ্ঠ পুরোনো বন্ধু দূরে সরে যাচ্ছিল। আসলে মৃত্যু তার শরীরে বাসা বেঁধেছিল। মাঝে-মাঝে স্কুলে আসতো : বিবর্ণ ধূসর আর মারাত্মক অসুস্থ শরীর, এক পা কেটে ফেলা হয়েছে তার। তার মৃত্যু যখন হলো, আমার নিকট এই মৃত্যুকে গ্রহণ করা অসম্ভব হয়ে উঠলো। আমি এক ধরনের বাজে বিবেককে জাগ্রত করলাম কিন্তু তাকে অবশেষে স্বীকার করে নিতে পারলাম না। এটা মনে হতো যেন আমার এইসব স্মৃতিকে অবদমিত করা উচিত।

আমি এখনও অনুভব করি যে আমি প্যালের সমান বয়সী যে ৪৫ বছর আগে বড় না হয়েই মরে গিয়েছিল। কিন্তু আমার পুরনো শিক্ষকরা-- যাদেরকে সবাই আমরা বলতাম ‘‘প্রাচীন বুড়ো’’-- আমার স্মৃতিতে বুড়োই রয়ে গেলো, যেন তাদের মধ্যে যারা বয়স্ক তারা আমার এখনকার বয়সের সমানই; যেমন এই বয়সে আমি এটা লিখছি। আমরা সবসময়ই আমাদের প্রকৃত অবস্থার চেয়ে নিজেদের তরুণ ভাবি। একটি গাছ যেমন তার বয়সের মণ্ডলকে তার শরীরে ধরে রাখে আমিও তেমনি আমার ভিতরে আমার আগের চেহারাকে ধরে রাখি। এই সব কিছুই হলো ‘আমি’। আয়না শুধু আমার সর্বশেষ চেহারাটাকে দেখায়, কিন্তু আমি আমার আগেকার সব মুখগুলোকেই দেখি।

 

ভূত ঝাড়ানো

আমার যখন পনেরো বছর বয়স, তখন পুরো শীতকাল আমি এক মারাত্মক উদ্বেগের তাড়নায় উৎপীড়িত ছিলাম। এক সার্চলাইটের ফাঁদে আটকে গিয়েছিল আমার জীবন যার থেকে আলো নয় অন্ধকার বের হয়ে আসছিল। প্রতিদিন অপরাহ্ন বা সন্ধ্যা হতেই আমি আক্রান্ত হতাম আর ভোর না হওয়া পর্যন্ত এই ভয়ঙ্করের থাবা থেকে মুক্তি পেতাম না। ঘুমোতাম খুব কম, সাধারণত একটি কম পৃষ্ঠার বই চোখের সামনে ধরে বসে থাকতাম। এ-সময় অনেকগুলো পাতলা বই আমি পড়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু বলতে পারছি না যে আমি সত্যিকার অর্থে বইগুলো পড়েছিলাম। কারণ এগুলোর কোনো অভিঘাত আমার স্মৃতিতে নেই এখন। আসলে বইগুলো আলোকে আড়াল করার এক ছুতো ছিল।

আসলে তা শুরু হয়েছিল হেমন্তে। এক বিকেলে সিনেমা হলে গিয়ে মদাসক্ততার ওপর ‘ছবি অপচয়ী দিনগুলো’ দেখলাম। সে শেষ হয় এক বিকারাবস্থায়-- এক দুর্দশাগ্রস্ত সিকোয়েন্স যাকে এখন মনে হয় শিশুসুলভ কিন্তু তখন মনে হয়নি।

আমি যখন ঘুমোতে যাই তখন ছবিটি আমার মনশ্চক্ষে পুনরায় ভাসতে থাকে যেন সিনেমা দেখার অবস্থা।

তখন হঠাৎ করেই ঘরের পরিবেশ ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। কেউ যেন আমাকে দখল করে নেয় পুরোপুরি। সাথে-সাথেই আমার শরীর বিশেষত পা-দুটো কাঁপতে শুরু করে। আমি যেন এক দম দেওয়া খেলনা যা মোচড়াতে আর গরগর করতে করতে লাফ দিতে শুরু করে অসহায়ভাবে। খিল ধরা ছিল আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে, আমি কখনোই এ-ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন আর হইনি।

আমি আর্তনাদ করে উঠি, মা তখন সেই শব্দে ছুটে আসে। ধীরে-ধীরে তখন শরীরের খিল কমতে থাকে আর পুনরায় হয় না। কিন্তু এই ভয়ঙ্করতার তীব্রতা থেকেই যায়, সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত তার থেকে আমি মুক্ত হতে পারি না।

আমার অস্তিত্বের অন্যতম প্রধান উপাদান ছিল এই ‘অসুস্থতা’। পৃথিবী যেন এক বিশালাকায় হাসপাতাল। আমার চোখের সামনে মানুষের বিকৃত দেহ আর আত্মা ভাসতে থাকে। আলো নিভে যায় আর ভয়ঙ্কর মুখগুলোকে ধরতে চায়, কখনো আমি ঝিমোতে থাকি। আমার চোখের মনি বন্ধ হয়ে আসে, আর ভয়ঙ্কর মুখগুলো হঠাৎ করে আমার ভিতর মিলিয়ে যায়।

এসব কিছুই ঘটে নীরবতায়, যদিও নিস্তব্ধতার ভিতর স্বরগুলো বিরামহীনভাবে ব্যাস্ত থাকে। ওয়ালপেপার ধরনের সৃষ্ট মুখ। কখনো কখনো দেয়ালের মাঝে টিকটিক করে, নিস্তব্ধতা ভেঙে পড়ে। কিন্তু কীভাবে তা উৎপন্ন? কার দ্বারা? আমার দ্বারা? দেয়াল মটমট করে ভাঙে কারণ আমার ক্লিশে চিন্তারা তাদের চায়। অতি খারাপ অবস্থা।

আমি কি পাগল হয়েছি? প্রায় তাই।

এই উন্মাদগ্রস্ততার তাড়নায় আমি ভীত হয়ে পড়লাম। কিন্তু সাধারণত কোনো ধরনের অসুস্থতায় আমি ভয় পেতাম না। এটা ছিলো কিছুটা স্নায়ুবিক ধরনের রোগ-- কিন্তু তা ছিলো সম্পূর্ণ অসুস্থতার রূপ যার থেকে জন্ম হতো ভয়।

transtromerকয়েক বছর আগে আমি চেয়েছিলাম একজন অন্বেষক হতে। এখন আমি নিজেকে এমন এক অজানা দেশে ঠেলে দিয়েছি যেখানে আমি কখনোই যেতে চাইনি। আমি এক অশুভ শক্তিকে আবিষ্কার করেছি। অথবা হয়তো, এই অশুভ শক্তিই আমাকে আবিষ্কার করেছিল। সম্প্রতি আমি টিনএজারদের বিষয়ে কিছু পড়েছি যারা তাদের জীবনে সমস্ত আনন্দকে হারিয়েছে কারণ তারা বিশ্বব্যাপী ‘এইডস’-এর বিভীষিকায় আতঙ্কগ্রস্ত ও সম্মোহিত। তারাই আমার বিষয়টি অনুধাবন করতে পারবে।

আমার এই সঙ্কটের সময়, হেমন্তের সেই সন্ধ্যায়, সেই শরীর ও মনের খিল আঁটার একমাত্র সাক্ষী হলো আমার মা। যা হচ্ছিল তা ছিল ভয়ঙ্কর। আমি ছিলাম ভূতের দ্বারা পরিবেষ্টিত। আমি নিজেই ছিলাম ভূত। এমন এক ভূত যে প্রতিদিন সকালে হেঁটে স্কুলে যেতো এবং পাঠ নিয়ে বসতো তার ভিতরের জিনিস উন্মোচন না করেই। স্কুল হয়ে উঠলো মুক্তভাবে নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা-- আমার ভয়ঙ্করতা সেখানে এক রকম ছিল না। আমার ব্যক্তি জীবনই শুধু এ দ্বারা তাড়িয়ে ফিরছিলো। সব কিছুই ছিল বিপর্যস্ত।

সে সময় আমি সব ধরনের ধর্মেই সন্দেহগ্রস্ত ছিলাম, কোনো রকম প্রার্থনাই করতাম না। এসবই যদি কয়েক বছর পর আসতো তাহলে আমি তাকে প্রত্যাদেশের মতোই গ্রহণ করতাম, যা কিছু আমাকে জাগাতো, তা ঠিক সিদ্ধার্থের চার মুখোমুখিতার মতন (এক বৃদ্ধের সাথে, এক রুগ্নের সাথে, এক মৃতের সাথে, এক ভিক্ষুর সাথে)। কিন্তু তখন কোনো ধর্মীয় ব্যাখ্যা আমার নিকট সহজপ্রাপ্য ছিল না। কোনো প্রার্থনা নয়, শুধু সংগীতের মাধ্যমেই এই ভূত ঝাড়ানোর কাজ চললো। সেটা ছিল সেই সময় যখন আমি আন্তরিকভাবে পিয়ানোতে ঝাঁপিয়ে পড়া শুরু করি।

আর সবসময়ই আমি বেড়ে যাচ্ছিলাম। সেই শরত-টার্মের শুরুতে আমি ছিলাম ক্লাসের সবচেয়ে ছোট, সবচেয়ে ছোট, কিন্তু তার শেষে হয়ে গেলাম অন্যতম লম্বা একজন। যেন সেই ভয়ঙ্করতার মধ্যে-- যেখানে আমি ছিলাম,-- এক ধরনের সার ছিল যা চারাকে চাগিয়ে দিচ্ছিল।

শীত শেষ হয়ে এলো আর দিনেরা দীর্ঘ হতে থাকলো। তখন, আশ্চর্যজনকভাবে, আমার জীবনের অন্ধকার অপসৃত হলো। এটা হয়েছিল ধীরে ধীরে আর আমি বুঝেছিলাম আস্তে আস্তে তখন কী ঘটছিল। এক বসন্তের বিকেলে আমি আবিষ্কার করলাম যে আমার সব ভয়ঙ্করেরা তখন চলে যাচ্ছে। আমি বন্ধুবান্ধবদের সাথে দার্শনিকতায় মসগুল হলাম আর সিগারেট টানছিলাম। এটা ছিল ধূসর বসন্তের রাতে বাড়ি ফেরার সময় আর মনে হলো না কোনো ভয়ঙ্কর কিছু আমার জন্য সেখানে অপেক্ষমাণ।

এখনো, এটা এমন একটা কিছু যাতে আমি অংশগ্রহণ করেছি। সম্ভবত এটা আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা। কিন্তু তা শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমি ভাবতাম এ-হলো নরক কিন্তু আসলে তা এক শুদ্ধিস্থল।

স্মৃতির চাহনি : একটি স্মৃতিলেখ [কিস্তি-১],[ কিস্তি-- ২]

বাংলাদেশ সময় ১৮০০, অক্টোবর ২৭, ২০১১


বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad