ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

মাথার উপর মস্তবড় পাথর

ফকরুল চৌধুরী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১১
মাথার উপর মস্তবড় পাথর

মোড় পেরিয়ে গাড়িটা ফুটওভার পেরিয়ে কাউন্টারের দিকে ধাবমান।   দৌড় দৌড়...।


পায়ে স্যান্ডেল, কাঁধে ঝুলন্ত ব্যাগ। মাথায় তিন-মণী পাথর। কুব্জপৃষ্ঠ। দৌড়ুনিতেও বাধা, লাল বাতির মতো মানুষের দঙ্গল। এক একটি ভ্রাম্যমান স্টপ ব্রেকার। কয়েক সেকেন্ড পরপর ব্রেক। এরই ফাঁকফোকরে বাইনমাছ হয়ে আঁকাবাঁকা চলা-- দৌড়, যতটা সম্ভব। বাস কখনো থমকে, কখনো থেমে থেমে চলছে। ধরতে হবে গাড়িটা, তা না হলে বিচ্ছিন্নতা। গাড়িটা খুড়িয়ে খুড়িয়ে কাউন্টারে পৌঁছে গেছে, হুড়মুড় করে যাত্রীরা উঠছে--- দীর্ঘক্ষণ তারা দাঁত কটমট করে লাইন ধরে দাঁড়িয়েছিল। একজন একজন করে উঠছে, কেউ লাইন ব্রেক করলে সমবেত চিৎকার। তারপরও কয়েক বেহায়া... কোনো কিছুতে ভ্রুক্ষেপ না করে, ফুরুৎ করে উঠে যায়।

লোকটা কাউন্টারে পৌঁছুতে পৌঁছুতে গাড়িটা ছেড়ে দেয় প্রায়, দৌড়ে টিকেট কেটে ঘুরে দাঁড়াতেই দেখে গাড়িটা চলতে শুরু করেছে। তারপরও শেষ চেষ্টা, সামনে পা চালিয়ে দৌড়োবে, তখনই চিৎপটাং। ফুটপাথ থেকে মেইনরোডে দ্রুত নামার পথে একটি সাইকেল থামানো ছিল, সাইকেলটি ধরে একজন আরেক জনের সঙ্গে খোশগল্প করছিল, নামতে যেয়ে সাইকেলে পা আটকে আকাশে ঘূর্ণি খেয়ে ভূমিতে পটাং। কিছুক্ষণ পড়ে থাকে। দেহ দলামলা কুঁকড়ানো। কিছুটা সময় অনুভূতিহীন। তারপর স্প্রিংয়ের মতো ওঠে দাঁড়ায়।

সাইকেলঅলা অমায়িক, কণ্ঠ যান্ত্রিকতা, বলে-- সরি। আশপাশে কিছু বিরক্তিকর শব্দ, লোকটার দিকে তাকিয়ে পলকমাত্র তাকিয়ে কেউ সময় নষ্ট করতে চায় না। কিছুটা সামনে গাড়িটা জ্যামে আটকে আছে, তড়িঘড়ি ধরার একটা উদ্যোগ নিল। পারল না। পা দুটো নড়ছে না। বারবার চেষ্টায় ফুটপাথে এক চায়ের দোকানে নিজের দেহটা টেনে হেঁচড়ে এনে ধপাস করে আছড়ে ফেলল। গাড়িটা ধীরে ধীরে চলছে, অদূরে; দৌড় দিলেই ধরা যায়। অথচ চলমান নগরীতে সে এক মূর্তিবৎ। দেখে আকাশ, ফ্যাকাশে সাদা; একটি পাখি, অবয়বে পরিচিত কিন্তু নাম জানেন, শূন্যে এদিক-সেদিক উড়ছে।

চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে লোকটা মানুষের জঞ্জাল দেখছিল। মানুষেরা সব পিপিলিকা হয়ে গেছে, দাঁড়াবার সময় নেই; খাদ্যের সন্ধানে বের হয়েছে। সবার মাথাগুলো শরীরের তুলনায় বেমানান-রকম বড়। মাথার পেছনে একটি খোঁড়ল। ভেতরে মগজশূন্য, খা খা মাঠ। খাদ্যের গোডাউন। খাদ্য চিন্তায় তারা ভো ভো করছে। কখনো কখনো দুয়েকটি শালিক খড়কুটোর সন্ধানে খোড়লে ঢুকে পড়ে, কিন্তু না পেয়ে ঠোক্কর মারে। তখন মানুষগুলোর মাথা আচানক নড়ে ওঠে, চুলকানির জন্যে। শালিকগুলো ফুড়ৎ করে খোড়ল বদলায়, শস্যশূন্য খাদ্যভাণ্ডার তাদের হতাশ করে। তবুও ক্ষুধা ও আশার তাড়নায় তারা পুনরাবৃত্তি করে, মানুষের মতো।
অদূরে ডাবের পশরা নিয়ে বসেছে একজন, এরপাশে বেশ কিছু ফলের দোকান, চায়ের দোকান আরো কয়েকটি, পাশেই ব্যাংক আর এটিএম বুথ।

http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2011October/Head in Head20111026173105.jpgমানুষের জঞ্জাল এখানে একটু বেশিই, মৌমাছির মতো মৌ মৌ করছে। ডাবঅলা যতœ নিয়ে একটি ডাব কাটছে, আর আরেকটা লোকের সঙ্গে কথা বলছে। বুঝাই যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ কোনো আলাপ। ক্রেতা লোকটা হাতে ডাব নিয়েই চায়ের দোকানে ভারী দেহ নিয়ে চা-পানরত লোকটাকে ডাকলো, কণ্ঠে বিরক্তি। লোকটার চা ইতিমধ্যে ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। ডাব-ক্রেতা লোকটিকে তার চেনা চেনা লাগছে, তবুও যেন অচেনা। এবার মহা গোস্বা-স্বরে লোকটা তার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করলো।

এতে তার হাত থেকে চায়ের কাপটি পড়ে গেলো, একই সঙ্গে আহত দেহের ব্যাথা চাগিয়ে উঠলো, এবং বড় কথা- সে ডাব-ক্রেতাকে চিনতে পারলো। লোকটি তার অতি চেনা। লোকটা অন্যকে খাওয়াতে পছন্দ করে। এক সময় এক-এক জিনিস খাওয়ানোর প্রতি তার আগ্রহ। ইদানিং সে ডাব-প্রেমিক হয়েছে। এবং অন্যকে খাওয়াতে পারলে দিলে আনন্দ পান। তবে গড়পরতা সবাইকে যে খাওয়ায় তা নয়, কাউকে কাউকে খাওয়ান। মাথায় মস্তবড় পাথর বসানো লোকটি ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ান, ভাঙা শরীর নিয়ে এগুতে থাকেন। ডাব-ক্রেতার কাছে পৌঁছলে সে হো হো করে হেসে ওঠে, একে বলে বত্রিশ-পাটি হাসি। বলে-- ডাব হলো অতিশয় পুষ্টিকর খাদ্য, প্রচণ্ড ক্ষুধা নিবারণকারী। তারপর ডাবঅলাকে ইঙ্গিত করে বলে-- এদের আমরা বলি মুখ্য, অথচ কর্পোরেটের ইতরামি-কথা এরাও জানে, ও ভাই বলেন তো ডাবে পানি নাই ক্যানে? উত্তর ডাবঅলার কণ্ঠেই ছিলো-- ডাবের পানি মোবাইলে খাইয়া ফ্যালতাছে।

পাথর-মাথা লোকটার কপালে কুঁচি। ডাব-ক্রেতা লোকটা যেন মজা পেয়েছে, হো হো করে আকাশ-ভাঙা হাসি হাসে। ডাবঅলার দিকে টিপ্পুনি ছুড়ে দেয়। মেশিনের মতো ডাবঅলার স্বর-- যেহানে যেহানে মুবাইল টাওয়ার আছে, হেয়ানের ডাবে পানি অয়না, গুড় গুড় কইরা পইরা যায়। আরো কত ছিদ্দত অয়। ডাবক্রেতা বলে-- এই জন্যই তো ডাবের দাম এত্ত বেশি। চল্লিশ টাকা। কাছে আসেন, কাছে আসেন; ঐ আরেকটা ডাব কাটো, লেওয়াঅলা। লেওয়াঅলা ডাব খেয়ে আহত লোকটা শক্ত হয়। সতেজতা ফিরে আসে। ডাবক্রেতা বলে-- আরেক পিস হবে? লোকটা মাথা নাড়ায়। তারপর যেতে উদ্যত হয়। ডাবের টাকা দিতে দিতে মেঝবান লোকটি বলে-- যাচ্ছেন কোথায়? আপনের বাড়ি কই? আপনি যার মেহমান হয়ে খেলেন তাকে একটু ধন্যবাদ দেন। লোকটি ক্ষীণ কণ্ঠে বলে-- ধন্যবাদ। মেজবান ফিক করে হাসে। তারপর বলে-- থাক, জোর করে ধন্যবাদ দেওয়ার দরকার নেই। চলেন জঙ্গলে ঘুরাফেরা করি। লোকটা বলে-- এই শহরে জঙ্গল কই? মেজবান লোকটা তখন আবার হো হো করে হাসে, বলে-- এটা হলো মানুষের জঙ্গল, বুঝলেন না। বলে সে মানুষের জঙ্গলে মিলিয়ে যায়। লোকটা মানুষ-জঙ্গল দেখে। ভাবে, জঙ্গলে ফুল-ফলের বৃক্ষ নেই কেন!

মানুষময় শহরে লোকটা নিজেকে ছেড়ে দেয়। গাড়ি ও মানুষ সমানতালে ছুটছে। কখনো মানুষ গাড়ি থামিয়ে দেয়, কখনো গাড়ি মানুষ থামিয়ে দেয়। লোকটা একটি রিক্সার আরোহী হয়। রিক্সা চলছে শা শা, মহাপরাক্রমশালী রিক্সা, মানুষ ও গাড়ি কিছুই মানে না, সব কিছু থামিয়ে দেয়। লাল বাতির তোয়াক্কাও সে কয়েকবার করেনি। চলছে পঙ্খিরাজ। মনে হচ্ছে রিক্সায় নয়, আকাশে মেঘের ভেলা হয়ে দেহ ভাসছে। তারপর জটলা, সামনে হাজারো গাড়ি; পঙ্খিরাজ ডানা-ভেঙে পড়ে থাকে। আর দেহ-থেকে-মাথা-বড় সব মানুষ স্থির হয়ে বসে থাকে, গরমে ঘামে, বৃষ্টিতে ভিজে। ভ্যাপসা পরিবেশ। ইতোমধ্যে রাস্তায় পানি জমে গেছে। কিছু মানুষ পানি ভাঙছে। মেয়ের সংখ্যাই বেশি। এরা পানি ভেঙে গার্মেন্টসে যাচ্ছে। কোনো দিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। দাঁড়াবার সময় যে নেই। অনেক মানুষ, তবুও যেন আলাদা; পাশের অস্তিত্ব নিয়ে নেই আবেগ। কোনো এক নির্দিষ্ট নিয়তির দিকে হন হন করে ছুটছে। মস্তিষ্ক-খোঁড়ল নিয়ে সবার ভাবনা-- খাবার সন্ধানে যাই। টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যে জ্যাম কিছুটা আলগা হলো। ধীরে ধীরে রিক্সা এগোচ্ছে, রিক্সাঅলা নানাবিধ কৌশল করেও জঞ্জাল থেকে বের হতে পারছে না, এর মধ্যে পাশের প্রাইভেট কারটিতে কয়েকটি গুঁতো দিয়ে ফেলেছে। কারে বসা সুবেশধারী উচ্চ মধ্যবিত্ত লোকটি তেড়ে আছে। রিক্সাঅলাও কম নয়-- আহারে ভদ্দরনোক, গাড়ি আছে বইলা আমাগো মানুষ মনে করে না, এই ব্যাটা গেলি, নাইলে টেংরি ভাইঙ্গা দিমু। আশপাশের রিক্সাঅলারা এরপর ধুমসে হাস্য-মসকরা করতে থাকে। সঙ্গে নানা মন্তব্য। উচ্চ মধ্যবিত্ত লোকটা চুপসে যায়, মুখাবয়ব লাল হয়; বৃষ্টিতেও চুবচুব।

রিক্সায় বসা লোকটার মনে হয়-- মানুষগুলো এখনো একেবারে মরে যায়নি। সে সিগারেট ধরায়। মানুষের মসকরার মধ্যে সে মানুষের সতেজতাই লক্ষ্য করে। নিম্নবর্গ ও উচ্চবর্গের মধ্যে সংঘর্ষের পটভূমি যে তৈরি হচ্ছে, এটা বুঝে আসে। সেও টিপিক্যাল মধ্যবিত্ত। তবু সে নিম্নবর্গের পক্ষে। সিগারেটে একটি জবরদস্ত টান দিয়ে রিক্সাঅলার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে--  বুঝলেন রিক্সাঅলা ভাই, এই যে আপনারা মসকরা করলেন এটা কিন্তু একটা বিপ্লব। দেশে বিপ্লবের কাঁচামাল তৈরি হচ্ছে। আপনারা যদি একটু ঝাকুনি দেন, তাহলে শ্রমিকরাজ তৈরি হয়ে যাবে। এই কথাগুলো বলে লোকটা অনুভব করে মাথার পাথরটি ওজনে একটু কমে গেছে। আরো কিছু বলতে যায়, তার আগেই রিক্সাঅলা কপালে তিনভাঁজ তুলে কয়-- কি কইলেন। লোকটা তৃপ্তির হাসি দিয়ে বলে-- কইলাম, তোমাদের মধ্যে শ্রেণী সচেতনতা তৈরি হচ্ছে। রিক্সাঅলা কিছুটা সময় তার দিকে থায় তাকিয়ে থাকে, তারপর কয়-- এই ব্যাটা আমারে ‘তুমি’ কইলা কা, ‘আপনে’ কইতে পারেন না; গেলি। আশপাশের রিক্সাঅলারা আবার পরিবেশটাকে রসময় করে তোলে। মাথায় মস্তবড় পাথরটি তখন আরো বড় হতে থাকে। সে আর সহ্য করতে পারে না। ধপ করে রিক্সা থেকে পড়ে যায়। জ্যাম ছেড়ে দেয়, রিক্সা-গাড়ি চলতে থাকে।
     
লোকটা অতঃপর নিজেকে আবিষ্কার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বারান্দায়, চটের ওপর দেহখানি স্থাপিত। আসলে কবে কিভাবে-- অজানা। ধীরে ধীরে দেহখানি উঠিয়ে দাঁড় করালো, অতঃপর হন হন করে হাঁটতে থাকে। আশপাশে মানুষজঞ্জাল-- কেউ কিছু বলে না। রাস্তার পাশে বিক্ষিপ্তভাবে হাঁটছে। টের পাচ্ছে মাথার পাথরটা ওজনে বাড়তেছে। উসখুস লাগছে। রাস্তার পাশে বড় বড় বৃক্ষ-- এই বৃক্ষ কোনো এক সবুজ স্বপ্নের কথা মনে করিয়ে দেয়; পিচঢালা পথ-- এই পথ কোনো এক মাটির পথের কথা মনে করিয়ে দেয়। সবই আবছা। সে পথ ধরে হাঁটতে থাকে-- আর অনুভব করে এ-পথ সে-পথ নয়। রুক্ষ-ন্যাড়া শহরে এই এক গোলক ধাঁধাঁ। ঘুরছে ঘুরছে, পথের শেষ নেই, গন্তব্য নেই। পথহারা এক পথিক-- মাথায় মস্তবড় পাথর বয়ে বেড়াচ্ছে। দেহ দিন দিন ছোট হচ্ছে, আর পাথরটি বড় হচ্ছে। ন্যুব্জ ক্যুব্জ হয়ে পাড়ি দেয় সারাবেলা।

আবছা কিছু ছায়া চোখে ভাসে। মস্ত বড় মাঠ। কচুরিপানা ভরা একটা পুকুর আর হাঁটুনদীতে জলখেলা। ডুমুর গাছে বসে মাছের ঠোক্কর দেখা আর মাছরাঙা পাখির কুশলী শিকার। একদিন পাগলা ষাঁড়ের দৌড়–নি খেয়েছিলো। পেয়ারা গাছে উঠে খরগোশ-খেলা আর ঝড়ে আমকুড়ানো। গোধূলী বেলার গরুদের সঙ্গে ঘরে ফেরা। আরো কত কত কি? কত স্মৃতি। মাথার পাথরটি যত চেপে বসছে, স্মৃতিরা তত উবে যাচ্ছে। কখনো কখনো ছায়া-স্মৃতি ঝলক মারে। লোকটি তখন রমনা বটমূলে। টুকরো টুকরো স্মৃতিগুলো তোলপাড় করতে থাকে। লোকটা স্মৃতিগুলোকে জোড়াতালি দিয়ে একটি অভিন্ন স্মৃতি নির্মাণে তৎপরতা চালায়। পূর্ণদৈর্ঘ কোনো স্মৃতিই নির্মাণ করতে পারে না। জোড়াতালির বিকলাঙ্গ স্বপ্ন ভীষণ পীড়ন দেয়। সে চিৎকার আর পথটি খুঁজে। দৌড়ায়। গোলকধাঁধাঁয় ঘূর্ণি খেয়ে আবছা স্বপ্নগুলো হারিয়ে ফেলে। মাথার পাথরটি আরো বড় হয়, দেহখানি ছোট হয়। আতংকে সে শুধু দৌড়ায়-- হেথায় নয়, হোথায় নয়, অন্য কোনোখানে। মাথার পেছনের খোঁড়ল দিয়ে প্রচুর লাল পিঁপড়ে প্রবেশ করে। কুটমুট করে কামড়ায়, লোকটা আকাশ-ফাটা চিৎকার করে, কেউ তা শোনে না। কেউ তাকায় না, মাড়ায়ও না।

একবার সে ঠিকই শহরের সীমানা খুঁজে পায়, সীমানা উচুঁ প্রাচীরে ঘেরা। প্রাচীরের ওপর কাঁটাতারের বেড়া। কাঁটাতারে কিছু পাখি বিদ্ধ হয়ে ঝুলে আছে। প্রাচীরের কয়েক জায়গায় লোকটা শহর থেকে বেরুবার দরজাও খুঁজে পেয়েছে। দরজায় কোনো প্রহরী নেই। মানুষ শহরে প্রবেশ করছে। তাদের শরীরে কাদা মাটি লেপ্টে আছে, লতাপাতার গন্ধ লেগে আছে, শরীরময় শেওলার আস্তরণ। তাদের মাথায় ছোট্ট ছোট্ট পাথর। মাথার পাথরটি হাতে তুলে তাদের কেউ কেউ খেলা করছে। তারা যেন সুখের যাত্রী। সুখের যাত্রীরা হৈ-হুল্লোড় করছে, গান করছে। লোকটা আস্তে আস্তে দরজা পাড়ি দিতে চায়, কিন্তু অদৃশ্য এক হাত তাকে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে নিয়ে ফেলে। মস্ত বড় পাথরটি নিয়ে সে-আর সামনের দিকে এগোতে পারে না। কোথা থেকে গরম এক দমকা হাওয়া তার ওপর ঝাপটে পড়ে, ময়লা কাগজের মতো লোকটা গড়াতে গড়াতে থাকে। দেহটা যখন স্থির হয়, দেখে সুখের যাত্রীরা তাকে মাড়িয়ে যাচ্ছে।     

বাংলাদেশ সময় ১৬৫৫, অক্টোবর ২৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।