১৯২২ সাল বিশ্বসাহিত্যের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বছর। এ বছর প্রকাশিত হয় বিশ্বসাহিত্যর দুই অমূল্য সম্পদ, মার্কিন কবি টি.এস.এলিয়টের কাব্যগ্রন্থ ‘দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ড’ এবং আইরিশ লেখক জেমস জয়েসের উপন্যাস ‘ইউলিসিস’।
আধুনিক মানুষের প্রাত্যহিক জীবনাচার, ক্রমবিচ্ছিন্নতা, পারম্পর্যহীনতা, উন্নাসিকতা, যৌনাচারের মতো স্পর্শী বিষয়গুলোয় মথিত দুটি অনবদ্য গ্রন্থ।
ইউলিসিস মাত্র একদিনের ঘটনার বিবরণ এবং তা ডাবলিন শহরকে ঘিরেই। অন্যদিকে দ্য ওয়েস্টল্যান্ডের বিস্তৃতি আরো অনেক বেশি--- পুরাণ, উপনিষদ তথা বিশ্বপ্রকৃতিই যেন মিলেমিশে একাকার হয়েছে।
বই দুটিকে নিয়ে অনেক বছর ধরেই পাঠক থেকে লেখক-আলোচক সবার মধ্যেই রয়েছে অদম্য কৌতুহল। ওবায়েদ আকাশ সম্পাদিত ছোটকাগজ ‘শালুক’ এ বই দুটিকে নিয়েই প্রকাশ করেছে এক বিশেষ সংখ্যা। এটি শালুকের ১৩ তম সংখ্যা।
বর্তমান সংখ্যায় ‘দ্য ওয়েস্টল্যান্ড’ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন কবি খোন্দকার আশরাফ হোসেন, মুহম্মদ সবুর, দীলিপ ঘোষ, অদ্রীশ বিশ্বাস, আহাম্মেদ কবীর, মামুন মুস্তাফা ও রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়।
‘দ্য ওয়েস্টল্যান্ড’ নিয়ে লেখা প্রবন্ধগুলিতে উঠে এসেছে বাংলাকবিতায় এটি কী প্রভাব রেখেছে, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে টি.এস এলিয়টের কবিতার সম্পর্ক, আধুনিক কবিতার পালাবদলে এর ভূমিকাসহ বিবিধ বিষয়।
এদিকে ইউলিসিস নিয়ে লিখেছেন বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, হাসনাত আবদুল হাই, আবুবকর সিদ্দিক, মাসুদুজ্জামান, জাকারিয়া শিরাজী, সাদ কামালী, কামাল রাহমান, চৌধুরী সালাহউদ্দীন মাহমুদ, নুরুল করিম নাসিম, কুমার চক্রবর্তী, কামরুল ইসলাম, অরুণেশ ঘোষ, অনন্ত মাহফুজ ও অঞ্জন আচার্য ।
এছাড়াও বর্তমান সংখ্যায় রয়েছে জেমস জয়েসের ‘আ লিটল ক্লাউড’ অবলম্বনে নাহার মনিকার লেখা ‘সামান্য মেঘ’। রয়েছে জাকারিয়া শিরাজী অনূদিত ইউলিসিসের প্রথম চারটি অধ্যায়।
জেমস জয়েসের মূল পরিচয় কথাসাহিত্যিক হলেও তিনি ‘চেম্বার মিউজিক’ ও ‘পোমেস পেনিইচ’ নামে দুটি কবিতার বইও করেছিলেন। বর্তমান সংখ্যায় ‘পোমেস পেনিইচ’ থেকে চারটি কবিতা অনুবাদ করেছেন কুমার চক্রবর্তী ।
টি.এস.এলিয়ট এবং জেমস জয়েসকে নিয়ে আলোচনা ছাড়াও এখানে মুদ্রণ করা হয়েছে দুই বাংলার গুরুত্বপূর্ণ প্রবীণ ও তরুণ কবিদের কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, বই আলোচনা।
২০১১-এর ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত শালুকের বর্তমান সংখ্যাটির মূল্য ২০০ টাকা।
বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো শালুকে প্রকাশ হওয়া কুমার চক্রবর্তী অনূদিত জেমস জয়েসের ৪টি কবিতা---
প্রর্থনা
আবারও!
আসো, দাও ঢেলে আমাকে তোমার সমস্ত শক্তি!
দূর থেকে এক মৃদু ধ্বনি শ্বাস ছাড়ে আমার ভঙ্গুর করোটিতে
যা অতি নিদয় শান্ত, সমর্পণে যন্ত্রণামুখর।
নিয়তিনির্দিষ্ট প্রাণ যেন তার প্রমান্তিমিশ্রিত উৎকণ্ঠা।
নীরবে থাকো হে আমার নিশ্চুপ প্রেম, আমার দুর্ভাগ্য, মরীচিকা
গভীর নৈকট্যে আমাকে দাও অন্ধ করে হে অনুগ্রহ
আমার ইচ্ছার সমুদয় ব্যাপক প্রতীপতা
পারি না বহন করতে দুর্মর শীতলস্পর্শ
মন্থর জীবন থেকে ছুটি দাও
নতজানু হও-- গভীর গভীরে
হৃদয়ের বৃষ্টির ধারায় জেগে ওঠো, স্মরণ আর সহানুভূতিতে
খুঁজো থাকে-- যে আছে, অথবা যে ছিল।
পুনরায়
একত্রে, রাত্রির আঙরাখায় শুয়ে আছে তারা পৃথিবীতে। আমি শুনি
দূর থেকে ভেসে আসা ধ্বনিগ্রাম যা নিশ্বাস ছাড়ে আমার ভঙ্গুর করোটিতে।
আসো, নুয়ে পড়ো, নিদ্রা যাও আমার গভীর গভীরে! আমি আছি এখানেই।
কমলে কামিনী, ছেড়ো না আমাকে। শুধুমাত্র আনন্দ-বেদনায়
আমাকে গ্রহণ করো, রক্ষা করো, স্নিগ্ধ করো, আর যদি পার-- অব্যাহতি দাও।
একা
চাঁদের ধূসর-সোনালি জাল
রাতকে করে অবগুণ্ঠিত
নিদ্রামগ্ন গাছ লতিয়ে ওঠে, হয়ে পড়ে প্রাণিত।
সুকৌশলি নলখাগড়া কানাকানি করে, মুখরিত স্পন্দমান রাতে
একটি নাম-- শুধু তার নাম--
আর আমার আত্মা উতল হয়ে ওঠে আনন্দঅভিসারে
পুনরায় হয়ে পড়ে এক বিমুগ্ধ-- অভিমানে।
স্টেশন রোড
যে চোখ বিদ্রুপ করে সে আমাকে পথও দেখায়
যা দিয়ে দিনের শেষে আমিও তো যাই
ধূসর এ-পথ আর তার বেগুনি সংকেত মুহূর্ত
ঘনিষ্ঠ অভিসারে মাতামাতি করে নক্ষত্র
আহা দুষ্ট আর বেদনার তারা!
আসে না ফিরে মহান হৃদয়ের যৌবনধারা
না পারে জানতে পুরোনো মনের জ্ঞান
যে চোখ বিদ্রুপ করে আমাকে সমান।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২০৪০, অক্টোবর ২৩, ২০১১