ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

বুকারজয়ী জুলিয়ান বারনসের বইগুলো

আহমেদ জুয়েল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১১
বুকারজয়ী জুলিয়ান বারনসের বইগুলো

এবারের ম্যান বুকার প্রাইজ জিতেছেন ব্রিটিশ লেখক জুলিয়ান বারনস। সমকালীন ইংরেজি সাহিত্যের এই লেখকের জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৯ জানুয়ারি।

তার লেখা সর্বশেষ ‘দ্য সেন্স অব অ্যান এনডিং’ উপন্যাসের জন্য তিনি এ পুরস্কার পেয়েছেন। এর আগে ফ্লাউবার্টস প্যারোট (১৯৮৪), ইংল্যান্ড ইংল্যান্ড (১৯৯৮) এবং আর্থার অ্যান্ড জর্জ (২০০৫) বইয়ের জন্য তিনবার বুকার প্রাইজের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য বই সম্পর্কে পাঠকদের একটু ধারণা দেওয়ার জন্য কিছুটা চেষ্টা করা হলো-

মেট্রোল্যান্ড

Metrolandজুলিয়ান বারনসের প্রথম উপন্যাসের নাম ‘মেট্রোল্যান্ড’। বইটি তার নিজের জীবনেরই গল্প। লন্ডনের উপশহর এলাকায় তার বেড়ে ওঠার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে উপন্যাসটি লিখতে ৭ থেকে ৮ বছর সময় লেগেছিল। তিনটি অংশে এটি লেখা হয়েছে। প্রথম অংশে আছে ক্রিস্টোফার এবং টনি নামের দুটি চরিত্রের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব এবং তাদের বিস্বাদ বুর্জোয়া শৈশবের গল্প।

দ্বিতীয় অংশে আছে ১৯৬৮ সালে ক্রিস্টোফারের সঙ্গে প্যারিসে দেখা হওয়ার ঘটনা, যেখানে সে মত্ত ছিল যৌনতায়। আর শেষাংশে আছে ক্রিস্টোফারের লন্ডনে ফেরার গল্প, তার বিয়ে, সন্তান আর চাকরির কথা। আছে শৈশবের দর্শন নিয়ে বন্ধু টনির হা-হুতাশ, পারিবারিক সঙ্কট ইত্যাদি। এ উপন্যাসের জন্য তিনি সমারসেট মম অ্যাওয়ার্ড পান।

বিফোর সি মিট মি

http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2011October/Vintage_Before_She_Met_Me_15020111021210054.jpg

 

এটি বারনসের দ্বিতীয় উপন্যাস। গ্রাহাম হেন্ড্রিক নামের এক ব্যক্তি স্ত্রীকে তালাক দিয়ে নতুন বিয়ে করলেন। কিন্তু নতুন বউয়ের সাবেক প্রেম নিয়ে তার মধ্যে  শুরু হয়ে যায় ঝড়তুফান। তিনি ঈর্ষায় মরে যেতে থাকেন এবং সেই প্রেমের তদন্তে নেমে পড়েন। মনস্তাত্ত্বিক এ উপন্যাসটি অত্যন্ত শক্ত আর হৃদয়ে দাগা দেওয়ার মতো। উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র ধীরে ধীরে পরিবর্তনশীল।

 

 

 

http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2011October/Vintage_Parrot_15020111021210736.jpgফ্লাউবার্টস প্যারোট

প্রথম উপন্যাসের সাফল্যের পর দ্বিতীয় উপন্যাসে তেমন কোনো স্বীকৃতি না পেলেও তৃতীয় এই উপন্যাসটি পাল্টে দেয় বারনসের সাহিত্যিক জীবন। কারণ এটি ইংরেজি সাহিত্যে অভিজাত পুরস্কার ‘ম্যান বুকার প্রাইজ’ এর সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান পায়। উপন্যাসটিতে একজন ইংলিশ চিকিৎসকের ঘোর লাগা আবেশ তুলে ধরে তিনি যেন নিজের জীবনেরই কথা বলতে চেয়েছেন।

 

স্টেরিং অ্যাট দ্য সান

http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2011October/Vintage_Staring_at_the_Sun_15020111021210122.jpg

 

এ উপন্যাসটিতে একটি সাধারণ চরিত্রের শিশুকাল থেকে বৃদ্ধকাল পর্যন্ত রীতিমতো নীরিক্ষা চালিয়েছেন বারনেস। জ্যঁ সারজেন্ট নামের ওই চরিত্রের জন্ম ১৯২০ এর দশকে আর বৃদ্ধকাল ২০২১ সাল। চরিত্রটি জীবনের পথে চলতে চলতে প্রাত্যহিক জীবনের সৌন্দর্য আর অলৌকিকত্বের সন্ধান পায় আর তখন পৃথিবীর সত্য সম্পর্কে তার প্রখর ধারণা জন্মে।
 
 

 

http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2011October/History_15020111021205939.jpgএ হিস্টোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন টেন-হাফ চ্যাপ্টার

এটি বারনসের সর্বাধিক পঠিত ও আলোচিত উপন্যাসের একটি। সমুদ্রযাত্রা আর আবিষ্কারের সঙ্গে উপন্যাসটির মূল থিমের সংযোগ আছে। ফিকশনাল এবং ঐতিহাসিক ঘটনার মিশ্রনে এগিয়ে গেছে কাহিনী। এটি পড়তে পাঠকের মনে ইতিহাস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ার পাশিপাশি আনন্দ আর ইতিহাস শেখার, জানার আগ্রহ তৈরি করবে। অবজারভার পত্রিকায় উপন্যাসটি সম্পর্কে সালমান রুশদি বলেন, ‘এটি আলোকিত, মজার, চিন্তাময় আর আনন্দদায়ক। ’     
 
 

 

 

http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2011October/Vintage_Talking_It_Over_15020111021214330.jpgটকিং ইট ওভার

কিছুটা জাঁকালো আর সাড়ম্বরপূর্ণ অলিভার প্রেমে পড়ে শান্তশিষ্ট তরুণী গিলিয়ানের। অলিভার তাকে বিয়ে করতে চাইলো। কিন্তু সমস্যা উঁকি দিল মাঝখান থেকে। কারণ গিলিয়ান এরইমধ্যে কিছুটা জরাজীর্ণ কিন্তু স্থিতিশীল স্টুয়ার্টকে বিয়ে করে ফেলেছে। স্টুয়ার্ট অলিভারের সবচেয়ে ভালো এবং পুরনো বন্ধু। ত্রিমাত্রিক প্রেমের এই উপন্যাসটির প্রতিটি চরিত্রই মজার এবং মনে রাখার মতো।

 

http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2011October/Porcupine_15020111021213603.jpgদ্য পোরকুপাইন

পূর্ব ইউরোপে কম্যুনিজমের সমাপ্তি, ক্ষমতাচ্যুত দলের নেতা স্টোয়ো পেটকানোভ দেশদ্রোহীতার অপরাধে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে। কোনো অপরাধের জন্যই তিনি অনুতপ্ত নন। এই কাঠগড়াতেই চিফ প্রসিকিউটরের প্রশ্ন আর তার উত্তরের মধ্য দিয়েই বেরিয়ে আসে ইতিহাস আর জাতীয়তাবাদ।  


 

 

http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2011October/Letters_15020111021210008.jpgলেটার ফ্রম লন্ডন

বারনস ১৯৯০ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ‘নিউ ইয়র্কার’ এর লন্ডন করেসপন্ডেন্ট ছিলেন। তিনি সে সময় লেটার ফ্রম লন্ডন নামে একটি ধারাবাহিক কলাম লেখেন। ওই লেখাগুলোই এ বইয়ে স্থান পেয়েছে। এটাই বারনেসের প্রথম ননফিকশন।

 

 

 

http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2011October/Cross_Channel_15020111021205947.gif

 

ক্রস চ্যানেল

এটি ছোট গল্পের সংকলন। এই গল্পগুলোর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে যোগাযোগ, সাদৃশ্য এবং পার্থক্যের নানা বিষয়।

 

 

 

 

ইংল্যান্ড, ইংল্যান্ড

http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2011October/England_15020111021205929.jpgইংল্যান্ডের বিভিন্ন ট্যুরিস্ট স্পটের আদলে ইজেল অব উইটে একটি থিম পার্ক স্থাপন করেছেন স্যার জ্যাক পিটম্যান। সেখানে হাঁটার দূরত্বেই দেখতে পাওয়া যায় বিগ বেন, প্রিন্সেস ডির সমাধি, হ্যারোডস, স্টোনহেঞ্জ এবং হোয়াইট ক্লিফস অব ডোভার। একই সঙ্গে স্যার জ্যাক মার্থা নামের হতাশাবাদী এক নারীকে অফিসিয়ালি ভাড়া করেন তার মনস্তাত্ত্বিক বিষয় নিয়ে গবেষণার জন্য। উপন্যাসটিতে ওই নারীর শিশুকাল থেকে অবসরে যাওয়া পর্যন্ত একটি জাতি যেভাবে তার সংস্কৃতি রক্ষার সংগ্রাম করে, ঠিক সেভাবে তার উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এটা বারনসের একটি অন্যতম মজার উপন্যাস। তবে এই উপন্যাসের রেপ্লিকার আইডিয়া, সত্য ও ফিকশন, বাস্তবতা ও শিল্প, মহাজাতিতত্ত্ব, মিথ এবং আত্মবিশ্লেষণ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা-সমালোচনাও হয়েছে।  

 

http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2011October/Vintage_Love_15020111021213126.jpgলাভ, ইটিসি

বারনসের ‘টকিং ইট ওভার’ উপন্যাসের মধ্যে স্টুয়ার্ট ও অলিভার এক নারী গিলিয়ানের ভালোবাসা জয় করার জন্য যুদ্ধ করে। তাদের মধ্যে একজন জয়ী হয়। কিন্তু তারপর? লাভ, ইটিসি উপন্যাসের মধ্যে ১০ বছর পর এই ত্রয়ীর বিভ্রান্তি আর জীবনের বিশৃঙ্খলা খুঁজে পাওয়া যায়। পাঠককে টানতে উপন্যাসটির মধ্যে একই স্টাইলে চরিত্রগুলোর বিস্তার করা হয়েছে।    


 

http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2011October/Something_15020111021213153.gifসামথিং টু ডিকলার

ফ্রান্স ও ফ্রান্সের সংস্কৃতি নিয়ে লেখা এটি একটি গদ্যসমগ্র। গত বিশ বছর ধরে বারনস এই এগুলো লিখেছেন। গদ্যের বিষয়গুলো হলো-- ফ্রান্স ভ্রমণ, সেখানকার খাদ্য এবং অবশ্যই সেখানকার লেখক গুস্তাভ ফ্লাউবার্ট।  

 

 

 

আর্থার অ্যান্ড জর্জ

http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2011October/Arthur_&_George_15020111021205920.jpg১৯ শতকের শেষের দিকে ব্রিটেনে বেড়ে ওঠে আর্থার ও জর্জ। আর্থার বেড়ে ওঠে এডিনবার্গে আর জর্জ স্ট্যাফোর্ডশায়ারের একটি গ্রামে। আর্থার হয়ে ওঠে তার সময়ে বিখ্যাতদের একজন আর জর্জ বার্মিংহামের আইনজীবী। দু’জনেই কঠোর পরিশ্রম আর দুর্বোধ্যতার মধ্যে সুখী। কিন্তু যখন নতুন শতক শুরু হলো, তখন তারা দু’জনে মিলে এমন কাজ করলো যা হইচই ফেলে দিল চারিদিকে। জুলিয়ান বারনস এই দু’জনের সেই অবিস্মরণীয় ঘটনা আর আন্তরিক গবেষণা এবং তাদের ভেতরের ক্রিয়াকা- নিয়ে লিখেছেন। উপন্যাসটি শত বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোরই যেন প্রতিধ্বনি। এটি কম অপরাধ আর উচ্চমাত্রার আধ্যাত্মিকতা, অপরাধবোধ ও নিষ্কলুষতা, পরিচয়, জাতীয়তা ও জাতি এবং অল্প আবেগের একটি উপন্যাস। এতে আর্থার এবং জর্জ চরিত্রের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে--- আমরা কি চিন্তা করি, আমরা কি বিশ্বাস করি আর আমরা কি জানি।


নাথিং টু বি ফ্রাইটেন্ড অব

http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2011October/nothing_to_be_15020111021213848.jpg‘আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না, কিন্তু তাকে অনুভব করি’ লেখকের এই নতুন বইয়ের মধ্যে এরকম অনেক চিন্তার খেলা আছে। আছে একটি পরিবারের স্মৃতি কথা, দার্শনিক ভাইয়ের সঙ্গে মতবিনিময়, মানবজাতি সম্পর্কিত ধ্যান ধারণা, মৃত্যুভয়, শিল্পের অভিবাদন, ঈশ্বর সম্পর্কে যুক্তি এবং ফরাসি লেখক জুলেস রেনার্ডের প্রতি সম্মান। তবে লেখক পাঠকদের জানিয়ে দিয়েছেন, এটা তার আত্মজীবনী নয়। এটা মেধাবী এই লেখকের একটা মনস্তাত্ত্বিক ভ্রমণ।

 

 

 


http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2011October/pulse_20020111021210017.jpgপালস

বারনসের দীর্ঘ প্রতিক্ষীত এই গল্পসংকলনে ভালোবাসা, যৌনতা, অসুস্থতা এবং মৃত্যুর সংযোগ নিয়ে একটা ছন্দময় গতি আছে। এর প্রতিটি চরিত্রই সাফল্য ও ক্ষতির দ্বারা তাড়িত হয় নতুন কিছু শুরু আর শেষ করার মধ্য দিয়ে।

 

 

 

দ্য সেন্স অব অ্যান এনডিং

http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2011October/Sense_Cape_20020111021210034.jpgটনি ওয়েবস্টার এবং তার সঙ্গীদের সঙ্গে আদ্রিয়ান ফিন নামের একটি মেয়ের প্রথম দেখা হয় একটি স্কুলে। যৌনতা আর বইয়ের পাগল তারা। হাসি-তামাশা আর আলাপের মাধ্যমে তারা আবিষ্কার করে মেয়েটি একই সঙ্গে কিশোরী এবং লাজুক। সম্ভবত আদ্রিয়ান অন্যদের চেয়ে একটু বেশি গুরুত্বের, একটু বেশি বুদ্ধিমতী। তারা শপথ করে, চিরকাল বন্ধু হিসেবে থাকার। কিন্তু একটি ট্রাজেডির মাধ্যমে আদ্রিয়ানের জীবনের মোড় ঘুরে যায়। এরপর সবাই ছিটকে পড়ে। বিশেষ করে টনি সবকিছু ভুলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে দেখা যায়, টনি মধ্যবয়সী। তার একটি চাকরি আছে। বিয়ে করে আবার নাকি তালাকও দিয়েছে। সে সাবেক স্ত্রী আর কন্যা সন্তানের কথা ভাবে। কাউকে কোনোভাবেই আঘাত দিতে চায় না। স্মৃতি দুর্বল হয়ে গেছে। এভাবে ভাবতে ভাবতেই সময় কাটে তার।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।