ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

সদ্য ম্যানবুকারজয়ী জুলিয়ান বারনসের সাক্ষাৎকার

ভাষান্তর : শেরিফ আল সায়ার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১১
সদ্য ম্যানবুকারজয়ী জুলিয়ান বারনসের সাক্ষাৎকার

১৮ অক্টোবর ঘোষণা হলো ২০১১ সালের ম্যানবুকার পুরস্কারজয়ী হিসেব ব্রিটিশ লেখক জুলিয়ান বারনস-এর নাম। এর আগে তিনবার ম্যানবুকার পুরস্কার জয়ের সম্ভাব্য তালিকায় নাম থাকলেও পাননি এ পুস্কার।

সম্ভবত এ কারণেই হয়ত তিনি ম্যানবুকার পুরস্কার সম্পর্কে অভিমান নিয়ে বলেছিলেন ‘চটকদার জুয়া’ ।

২০০৫ সালে জুলিয়ান বারনসের  ‘Nothing to be Frightened of’ বইটি প্রসঙ্গে লন্ডনে তার একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন মাইক নামক এক ব্রিটিশ সাংবাদিক। ওই বছরও বুকার পুরস্কারের সংক্ষিপ্ত তালিকায় জুলিয়ান বারনসের নাম ছিল। বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো সেই সাক্ষাৎকার।

 

আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন

জুলিয়ান বারনস : ছয় ফিট দুই ইঞ্চি। নীল চোখ। চলবে এগুলোতে?

ফকনার লেখকদের নিয়ে একবার বলেছিলেন, “সে বই লিখলো, তারপর মরে গেল। ”  লক্ষ্য হিসেবে নামহীন একটা পরিচয়ের মতই। খারাপ না। কিন্তু বর্তমান সময়ে এটা অসম্ভব। যাইহোক। জন্মেছি Leicester-এ, পড়াশোনা করেছি মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজে। হলাম সঙ্কলক। তারপর হলাম সাংবাদিক এবং সাহিত্যিক। সবকিছুই খবর Leicester শহরের সহযোগিতায়।

 

আপনার কাছে আদর্শ রাত বলতে কী?

জুলিয়ান বারনস : আমি মাঝেমাঝে এমন রাত সম্পর্কে ভাবি। তবে রাতটা নির্ভর করে আদর্শ দিনের উপর। একটি আদর্শ দিন আপনার সন্তোষজনক কাজের উপর নির্ভর করবে। সন্তোষজনক দিনই একটি সুন্দর রাত দিতে পারে। বন্ধুদের সাথে রাতের খাবার একসাথে রান্না করে খাওয়া। কোনো কোনো দিন হয়ত ইতালি কিংবা ফ্রান্সের কোন গ্রামে হেঁটে শুরু হয়, শেষ হয় কোন এক অচেনা ছোট্ট গ্রামে। যেখানে কোন পর্যটক সহজে যায় না।  

আপনার পছন্দের বই কোনটি?

জুলিয়ান বারনস : এটা অসংখ্য, বিচিত্র--- শেক্সপিয়র থেকে শুরু করে ইংরেজি অভিধান কিংবা মিচেলিন গাইড থেকে শুরু করে ফ্রেঞ্চ ভাষার বিখ্যাত চিঠিপত্র বা জেন গিরিগসনের শাক-সবজি বিষয়ক বইও।

আপনার প্রথম উপন্যাসমেট্রোল্যান্ডপ্রকাশের ঘটনা কি বলবেন?

জুলিয়ান বারনস : আমি ১৯৭৪ সালের দিকে ভৌতিক গল্প লেখার প্রতিযোগিতায় অংশ নিই। এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল ‘দ্যা টাইমস’। প্রকাশক জনাথন কেইপ (Jonathan Cape) বিজয়ীদের বই প্রকাশের সুযোগ করে দেবেন বলে প্রতিযোগিতায় বলা হয়েছিল। সেসময়  কেইপ ছিলেন দেশের প্রথম সারির প্রকাশক। এরপর পাঁচ বছর পর হঠাৎ আমার হাতে সেই উপন্যাসটি দেওয়া হলো। বলা হলো, অনেক পরিবর্তন করা হবে। তবেই বইটি প্রকাশ হবে। আমি তাদের মতের সাথেই ছিলাম।

আমি জানি তুমি ফ্রান্স পছন্দ করো, তবে এমন আরো কোন জায়গায় তোমার ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে হয়?

http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2011October/nothing_to_be_15020111021213848.jpgজুলিয়ান বারনস : বছরের শুরুতে প্রথমবারের মতো চিলি এবং আর্জেন্টিনা গিয়েছিলাম। আমি ল্যাটিন আমেরিকা সম্পর্কে আরো ভালো মত জানতে চেয়েছিলাম। তারপর গেলাম রাশিয়া ( সেখানে শেষ গিয়েছিলাম ১৯৬৫ সালে)। এবং নিউজিল্যান্ডেও গিয়েছিলাম। এছাড়াও লিবিয়া, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড। আরো আরো অনেক জায়গায়

আপনার আত্মজীবনী নিয়ে কোন গল্প লেখার ইচ্ছা কি আছে?

জুলিয়ান বারনস : আমি এটা নিয়ে ভাবছি। তবে এর জন্য গল্প দরকার। যদি না হয় তবে আত্মজীবনী লেখা নিয়ে আমি সংশয় প্রকাশ করছি।

লেখক এবং জনপ্রিয় ব্যক্তিদের আত্মজীবনী লেখার বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন? আপনি নিজের অটোবায়োগ্রাফি  লেখা নিয়ে সংশয়  প্রকাশ করছেন কেন?

জুলিয়ান বারনস : আমি জনপ্রিয় ব্যক্তিদের আত্মজীবনী নিয়ে কিছু বলতে চাই না। কারণ, আমি জনপ্রিয় কেউ নই। আমি বলেছি, লেখক হিসেবে আমি নিজের আত্মজীবনী লেখা প্রসঙ্গে। আমি সংশয় প্রকাশ করেছি বিভিন্ন কারণে। কারণগুলো হলো, ১) আমার জীবনে সুখ বলে কিছু নেই; এ বিষয়গুলো আমার পাঠকদের খুব একটা আগ্রহ দিতে পারবে না। ২) যদিও বা কিছু থেকে থাকে তাও সেটা আমার ব্যক্তিগত বিষয়। এগুলো একান্ত ব্যক্তিগত। আপনি আত্মজীবনী লিখতে বসে নিজের জীবনের ঘটনা ছাড়া তো লিখতে পারবেন না। ৩) আমি মনে করি, পাঠকরা আমি কেমন মানুষ সেটার চেয়ে আমার গল্প পড়তে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করবে। ৪) আত্মজীবনী আকারে কিছু প্রকাশ করতে গেলে সেটা অনেক নিয়ন্ত্রিত থাকে। সেই প্রথাগত বিষয়ের বাইরে আসা যায় না। তাই আমার পক্ষে আত্মজীবনী লেখা নিয়ে একটা সংশয় কাজ করে।

লেখালিখি নিয়ে আপনার পরিবারের মন্তব্য কী?

জুলিয়ান বারনস : আমার পরিবার খুব রেস্ট্রিক্টেড। তবে আমার বইয়ের অধিকাংশ চরিত্রই মৃত। যেমন, আমার বাবা-মা, দাদা-দাদী। একমাত্র জীবত চরিত্র হচ্ছে আমার ভাই। সে একজন দার্শনিক। তার ছেলেমেয়েরা খুব মজা পায় তাকে লেখায় পেয়ে।

আপনার কি মনে হয়, বর্তমানের উপন্যাসগুলো আমাদের সমাজকে পাল্টে দেবে?

জুলিয়ান বারনস : এটা সবসময়েই হয়ে এসেছে। প্রতিটি গল্পের মধ্যেই সত্যি আছে। পরিবর্তন, সমাজের বাস্তবতা সবই থাকে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে কোন কিছুকে বদলে দেওয়াটা খুব কম হয়।

নতুন লেখকদের প্রতি আপনার পরামর্শ কি?

জুলিয়ান বারনস :  এমন কিছু করো না যা তুমি চাও না। লেখালিখি করে কিছু আয় করবে এমন আশাও করো না। পুরস্কার পাবার আশাও করো না। এমনকি তোমার জীবনের সমস্যা সমাধানের চেষ্টাও লেখার মধ্যে দিয়ে করো না। এমন ধারণা নিয়ে বেঁচে থেকো না যে, একদিন তুমি তোমার দেশের সংস্কৃতি পাল্টে দিতে পারবে। যতক্ষণ পর্যন্ত মনে করো না যে তুমি তোমার ভাষা এবং অস্তিত্বকে ভালোবাসো; ততক্ষণ পর্যন্ত লেখা শুরু করো না। এবং অন্যের পরামর্শও নিও না। তুমি নিজেই তোমার রাস্তাটি খুঁজে নাও।

[সংক্ষিপ্তাকারে]

 

বাংলাদেশ সময় ২১২৬, অক্টোবর ২০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।