ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

ধারাবাহিক অনুবাদ উপন্যাস

ব্যানকো [পর্ব-৪]

মূল : হেনরি শ্যারিয়ার, ভাষান্তর : আহ্সান কবীর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১১
ব্যানকো [পর্ব-৪]

[দুনিয়াজুড়ে সাড়া জাগানো এবং দীর্ঘদিন ধরে বেস্ট সেলার, জেলপালানো কয়েদির মনোমুগ্ধকর আর শিহরণ জাগানিয়া কাহিনী ‘প্যাপিলন’ফ্রান্সে জন্ম নেয়া হেনরি শ্যারিয়ার ওরফে প্যাপিলন লিখিত বাস্তব এই ঘটনা নিয়ে একই নামে হলিউডে সিনেমাও হয়েছে।

 

১৯৩১ সালের অক্টোবরে ফরাসি আদালত কর্তৃক বিনা অপরাধে (প্যাপিলনের দাবি মতে) খুনের আসামি হিসেবে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর থেকে ১৯৪৪ সালের জুলাই পর্যন্ত পরবর্তী ১৩টি বছর হেনরি শ্যারিয়ারের জীবন কেটেছে জেল পালানো এবং আবারো জেলে ফেরার মধ্যে দিয়ে। তবে সত্যিকারার্থে প্যাপিলন জেলমুক্ত হন ১৯৪৫ সালের ১৯ অক্টোবর। এদিন এল ডোরাডো কারাগার থেকে প্যারালাইসিস আক্রান্ত আরেকজন প্রতিবন্ধী কয়েদি পিকোলিনোসহ মুক্ত হন প্যাপিলন।

হেনরি শ্যারিয়ারের দীর্ঘ ১৩ বছরের ফেরারি এবং জেল-জীবনের  হৃদয়স্পর্শী, দুর্ধর্ষ, মানবিক আর আবেগমথিত অমানবিক সব অভিযানের কাহিনী লেখা হয়েছে প্যাপিলন-এ।

এরপরের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে শ্যারিয়ার রচিত দ্বিতীয় বই ‘ব্যানকো’ তে। স্পেনীয় দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে জন্মভূমির মুক্তি আনয়নকারী মহান নেতা সিমন বলিভারের দেশ এবং বর্তমান সময়ের আলোচিত নেতা হুগো শ্যাভেজের দেশ ভেনিজুয়েলা’একজন নাগরিক হিসেবে শুরু হয় তার নয়া জীবন। প্যাপিলনের শেষ পৃষ্ঠায় ছিল এল ডোরাডো পেনাল সেটলমেন্টের অফিসার প্যাপিলনকে ‘গুড লাক’ বলে বিদায় জানাচ্ছেন।

আর ব্যানকো’কাহিনী শুরু ঠিক এর পর থেকে। প্যাপিলনের মতই ব্যানকো-উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনায় জমজমাট, শ্বাসরুদ্ধকর আর এক নিঃশ্বাসে পড়ার মত। যারা প্যাপিলন পড়েননি তাদেরও নিরাশ করবে না এই কাহিনী। এখানে প্যাট্রিক ও’ব্রায়ান-এর করা ব্যানকো’ইংরেজি অনুবাদের সংক্ষেপিত বাংলা রূপান্তর করা হয়েছে। বিভিন্ন নামের উচ্চারণের ক্ষেত্রে ইংরেজিকেই অনুসরণ করা হয়েছে, যেমন- ফরাসী শব্দ ‘পাপিলঁ’-কে করা হয়েছে প্যাপিলন, আবার লেখক অঁরি শারিয়ারকে করা হয়েছে হেনরি শ্যারিয়ার। ]


bankoকিন্তু সমস্যা হলো যে জোজো নামের এই ছেলেটির ভিতরে একটি হৃদয় ছিল। হতে পারে এতে কঠিন আবরণ পড়ে গিয়েছিল, কিন্তু তারপরেও তখন পর্যন্ত সেখানে কিছু স্পর্শকাতর অংশ সক্রিয় ছিল। স্টেশনে দাঁড়ানো অবস্থায় সে দেখলো একটি প্যারিসগামী ট্রেন অপেক্ষা করছে। হঠাৎ মনে হলো তার ভিতরে থাকা হুকে আটকানো কোন স্প্রিংকে যেন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ গতিতে লাফিয়ে গিয়ে উঠে পড়লো সে ট্রেনে।

প্যারিসে পৌঁছানোর পর যখন স্টেশন থেকে বের হয়ে আসছিল তখন বৃষ্টি পড়ছিল। এ অবস্থায় সে একটি ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে ভাবছিলো কি করে নিজের গ্রামে পৌঁছানো যায়।

একই ছাউনির নিচে একটি মেয়েও দাঁড়িয়েছিল, সেও বৃষ্টিবন্দি। তার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টি নিয়ে মেয়েটি এক ঝলক তাকালো। এর আগে নারী সম্পর্কে তার যা জ্ঞান ছিল তা হলো অ্যাসে জেলের চিফ ওয়ার্ডেনের গাব্দাগোব্দা হস্তিনী কাঠামোর স্ত্রী আর তার চেয়ে বয়সে বড় দাগী ছেলেগুলো এতদ সম্পর্কিত সত্যমিথ্যার মিশেলে তাকে যে ‘জ্ঞান’ দিয়েছিল--- স্রেফ সেটুকুই। পাশে দাঁড়ানো মেয়েটির মত করে এর আগে কোন মেয়েই তার দিকে তাকায়নি বা বলা চলে সেরকম কোন সুযোগই তার জীবনে হয়ে ওঠেনি। বৃষ্টিবন্দি মুগ্ধতার আবেশে এক পর্যায়ে কথা বলা শুরু করলো দু’জনে।
‘তুমি কোথা থেকে এসেছো?’
: গ্রাম থেকে।
‘তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে যুবক। চলনা, আমরা কোন হোটেলে যাই। আমাকে তোমার খারাপ লাগবে না। দুজনেই কিছুটা গরম হয়ে নেওয়া যাবে এ সুযোগে। ’

জোজো সহসাই উত্তেজিত হয়ে উঠলো। তার কাছে মেয়েটিকে অত্যাশ্চর্যজনক মনে হল। আরও বেশি যে ব্যাপারটা ওকে মোহিত করল তা হল মেয়েটি তার মোলায়েম কোমল হাতে তার হাত স্পর্শ করে আছে।
অকস্মাৎ ভালোবাসার উন্মোচন ওর মাঝে স্বপ্নময় এক শিহরণমূলক অনুভূতি এনে দিল। মেয়েটি ছিল অল্প বয়েসি আর অত্যন্ত যৌন আবেদনময়ী।

একেবারে চূড়ান্তভাবে অবসন্ন হওয়া পর্যন্ত হোটেল কক্ষে পরস্পর পরস্পরের ভালবাসাবাসি উপভোগ করে ধূমপানের জন্য বিছানায় বসল। মেয়েটি তাকে জিজ্ঞেস করল, কোন মেয়ের সঙ্গে এই প্রথম তোমার বিছানায় আসা?
: হ্যাঁ। স্বীকার করল জোজো।
‘এ্যাদ্দিন অপেক্ষা করতে হলো কেন? ’
: আমি রিফরমেটরিতে ছিলাম।
‘দীর্ঘসময় যাবৎ?’
: খুবই দীর্ঘ।
‘আমিও এরকম রিফরমেটরিতে ছিলাম। তবে আমি পালাতে পেরেছিলাম। ’
জোজো জিজ্ঞেস করলো, তোমার বয়স কত?
: ষোল।
: ‘বাড়ি?’
: লা ভিলেতে।
‘কোন সড়ক?’
: রু ডি রুয়েন।

জোজোরও একই ঠিকানা। সে পুরো ব্যাপারটা হৃদয়ঙ্গম করতে গিয়ে আতংকিত হয়ে পড়ছিল। কিছুক্ষণ নির্বাক থাকার পর সে সজোরে চিৎকার দিয়ে জিজ্ঞেস করল, তোমার নাম কি?
: জিনেত্তে ডুবোইস!

এটা ছিল ওরই আপন বোন। তারা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়লো, দুজনেই চরম হতাশা আর লজ্জায় কাঁদতে লাগল। চোখের নোনা জলে মনের ক্লেদ কিছুটা লাঘব হওয়ার পর দু’জনেই দু’জনের অতীত বর্ণনা করল একে অন্যের কাছে। জানা গেল অন্যান্য বোনদেরও জোজোর ভাগ্যই বরণ করতে হয়েছে। বাড়ি থেকে রিফরমেটরি, রিফরমেটরি থেকে বাড়ি। ওদের মা সবেমাত্র একটি স্যানাটোরিয়াম থেকে ছাড়া পেয়েছে। বড় বোনটি লা ভিলেত্তিতে উত্তর আফ্রিকানদের জন্যে পরিচালিত একটি পতিতালয়ে কাজ করছে-- ঘাম ঝড়ানো কষ্টকর পেশা। তারা ঠিক করলো বোনকে দেখতে যাবে।

দ্রুত হোটেল থেকে বের হওয়ার পথে সামনে ইউনিফর্মধারী এক শূকর শাবকের উদয় হলো। পুলিশটি দাঁতমুখ খিঁচিয়ে মেয়েটিকে বললো-- এইবার! পিচ্চি ছিনাল, আমি তোকে বলিনি আমার এলাকায় ধান্ধা করতে আসবি না? কথা বলতে বলতে কয়েক কদম এগিয়ে এল পুলিশটি তাদের দিকে--এইবার আমি তোকে গারদে পুরবোই খানকির ঝি!’

বিষয়টা জোজোর সহ্যের অতীত ছিল। মাত্র কিছুক্ষণ আগে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেছে ঠিক তার পরপরই এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে সে আসলে সত্যিকারে কি করতে যাচ্ছিল সে সম্পর্কে জ্ঞানহীন হয়ে পড়ল। আর্মিতে ব্যবহারের প্রয়োজনে কেনা বহু ফলাওয়ালা ছোরাটা হঠাৎই বের করে শুয়োরটার বুকে বসিয়ে দিল।

জোজো গ্রেফতার হলো এবং বারোজন ‘অভিজ্ঞ’ জুরির রায় তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিল। তবে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট তার প্রাণভিক্ষা মঞ্জুর করেন। শেষমেষ তাকে পেনাল সেটেলমেন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

যাহোক, প্যাপিলন, সে ওখান থেকে পালাতে পেরেছিল এবং বর্তমানে কুমানা সমুদ্র বন্দর এলাকায় বসবাস করছে। জুতা প্রস্তুত করে সে জীবিকার্জন করছে। সে বিবাহিত এবং নয় সন্তানের জনক। এদের সবাই সযত্নে প্রতিপালিত হচ্ছে, লেখাপড়া করছে প্রত্যেকেই। বড় সন্তানদের একজন গত বছর ইউনিভার্সিটিতে ঢুকেছে। যখনি আমি কুমানা যাই, তাদের দেখে আসি। এটা একটা ভাল উদাহরণ নয় কি?

তাছাড়া বিশ্বাস কর, তারও ইচ্ছা ছিল সমাজের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার। তুমিই ব্যতিক্রম নও প্যাপিলন, বুঝতে চেষ্টা কর। আমাদের অনেকেরই প্রতিশোধ নেওয়ার মত যথেষ্ট কারণ আছে। কিন্তু যতদূর আমি জানি, আমাদের কেউই এযাবত প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দেশ্যে এই দেশ ত্যাগ করেনি। আমি তোমাকে বিশ্বাস করছি প্যাপিলন। তবে যেহেতু তুমি ক্যারাকাস যেতে চাইছো : আমি আশা করছি ওই শহরে বাস করতে গিয়ে আত্মহণনের কোনো চোরাবালিতে ফেঁসে না যাওয়ার মত জ্ঞানটুকু অন্তত তোমার আছে। ’
            
সেদিন বাউগ্রাট আমদের কাছ থেকে খুব দেরি করে বিদায় নিল। তার সঙ্গে কথা বলার পর থেকে আমি কঠিন এক দ্বৈরথে পড়ে গেলাম। সে আমার ওপরে এত প্রভাব ফেলে গেল কেন? কারণ পরিষ্কার। মুক্তির প্রথম দিনগুলোতে অনেক প্রাক্তন অপরাধীর সঙ্গে আমার আলাপ পরিচয় হয়েছে যারা নিজেদের নতুন জীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে এবং সুখী আছে; কিন্তু তারপরেও তাদের এই যাপিত জীবনে এমন কিছু উৎসাহজনক ব্যতিক্রম দেখিনি। বরঞ্চ এটা মনে হচ্ছে জীবনের সঙ্গে এক ধরনের সুবিধাবাদী সমঝোতা--- জীবনের কিছু ভগ্নাংশকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার মরিয়া চেষ্টা। তাদের জীবনযাত্রার মানের অবনয়ন হয়েছে--- কেউ কৃষক, কেউ শ্রমিক। এক্ষেত্রে অবশ্য বাউগ্রাট ব্যতিক্রম। এই প্রথম আমি একজন প্রাক্তন দাগীকে দেখলাম যে এখন অভিজাতদের কাতারে সামিল হয়েছে, একজন পরিপাটি ভদ্রলোক। আর এটাই সেই কারণ, যা আমার চিত্তচাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। আমিও কি এরকম একজন ভদ্রলোক হয়ে যেতে পারি না? আমি কি হতে পারবো? অবশ্য তার পক্ষে একজন ডাক্তার হিসেবে এ প্রক্রিয়াটা তুলনামূলকভাবে সহজ ছিল। বিষয়টা আমার জন্যে হয়ত অনেক কঠিনই হবে। যদিও জানি না কি করে এটা সম্ভব, তবুও আমি নিশ্চিত ছিলাম যে একদিন আমিও একজন নিপাট ভদ্রলোকে পরিণত হব।
             
http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2011October/vinejuela20111017202249.jpgখনিতে দ্বিতীয় গ্যালারির একেবারে তলায়, বেঞ্চে বসে পাম্পগুলোর দিকে তাকিয়ে আছি,  আজকে এগুলো কোন সমস্যাই করেনি। ইঞ্জিনের শব্দের ছন্দে ছন্দে আমি বাউগ্রাটের কথাগুলোর প্রতিধ্বণি করলাম, ‘আমি তোমাকে বিশ্বাস করছি প্যাপিলন! শহরের বিপজ্জনক চোরাবালি থেকে সাবধান থেকো। ’ সেখানে অবশ্যই কিছু উটকো ঝামেলা তৈরি হবেই হবে। এবং আমার নিজেরও যে দৃষ্টিভঙ্গিটা বর্তমানে ধারণ করছি তা সহসাই ত্যাগ করা সম্ভব হচ্ছে না। এর জ্বলন্ত প্রমাণও আছে--- মাত্র গতকাল রাতেই স্বর্ণের গুদামের চোখ ঝলসানো জৌলুস আমাকে সম্পূর্ণ কাবু করে ফেলেছিল। আমি ছাড়া পেয়েছি মাত্র দিন পনের হলো, অথচ এরই মধ্যে, গতকাল যখন খনি থেকে গ্রামের পথ বেয়ে উঠে আসছিলাম, তখন কিন্তু আমি হাতের কাছের ওই সহজলভ্য সম্পদের ধোঁকায় পড়ে গিয়েছিলাম, স্বর্ণগুলো কিভাবে হাতানো যায় তারই ফন্দি আঁটছিলাম। এবং সত্যিকারে বলতে গেলে এখনো আমি শান্তিতে ঘুমিয়ে থাকা ওই সোনাগুলো পাওয়ার ইচ্ছা মন থেকে পুরোপুরি ত্যাগ করিনি।
               
আমার চিন্তা ভাবনা সব তালগোল পাকিয়ে যেতে লাগলো। ‘প্যাপিলন, আমি তোমাকে বিশ্বাস করছি!’ কিন্তু আমি কি আমার এসব সঙ্গীদের মত জীবন যাপন করতে সক্ষম হব? আমারতো মনে হয় না। তাছাড়া সৎ পথে অঢেল টাকা কামানোর অন্য অনেক পন্থাও রয়েছে। আমার দৃষ্টিতে অধঃস্তন কোন জীবন যাপনে কেউ আমাকে বাধ্যওতো করছে না। আমি অভিযাত্রী হিসেবেও তো শুরু করতে পারি, স্বর্ণ অথবা হীরক অনুসন্ধানকারী বনে যেতে পারি, সহসাই জঙ্গলের ভিতরে হারিয়ে গিয়ে হঠাৎ করেই একদিন প্রাচুর্য বয়ে এনে নিজেকে পূর্ণ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, যার স্বপ্ন আমি লালন করে এসেছি বহুদিন যাবত।
            
বিপদের ঝুঁকি ছাড়া অন্য সুযোগ গ্রহণ করা আমার জন্য সহজতর হবে না। কিন্তু আমি ভাবছি, স্তুপীকৃত ওই সোনার নেশা ধরানো প্রলোভন সত্ত্বেও, তুমি এই কাজ অবশ্যই করবে না; এটা করার কোনই অধিকার নেই তোমার। এক মিলিয়ন ডলার... নিয়ে নিবে, প্যাপি? বিশেষত যখন কাজটা একেবারে তামার পকেটস্থই হয়ে আছে। তেমন কঠিন কিছুই করতে হবে না এজন্য-- এ সুযোগ কষ্মিকালেও হাতছাড়া করা যায় না।

ঈশ^রের কিরে, প্রলোভন! প্রভু সাক্ষী, কর্তৃপক্ষের কোনই অধিকার নেই দাগী একজন লোকের নাকের ডগায় স্বর্ণের তূজ জমা করে রেখে তাকে এ কথা বলা, ‘এই জিনিসে কক্ষনো হাত লাগাবে না। ’ এখানে জমা স্বর্ণের মাত্র এক দশমাংশ দিয়েই আমার অভিষ্ট লক্ষ্য হাসিল হয়ে যাবে, প্রতিশোধসহ--- যখন আমাকে জ্যান্ত কবর দেওয়া হয়েছিল সলিটারি কনফাইনমেন্টে তখনকার যন্ত্রণাদায়ক সহস্র সহস্র ঘণ্টায় আমি যে স্বপ্ন দেখেছি তার সবগুলোই বাস্তবায়ন করা যাবে।
            
আটটার সময় কপিকলে করে খনি থেকে উপরে উঠে এলাম। এবার আমি বাড়ির দিকে অনেক ঘোরানো পথে রওয়ানা হলাম। উদ্দেশ্য অপ্রতিরোধ্য লোভের উদ্রেককারী স্বর্ণগুদামের পাশ দিয়ে যাতে আমাকে যেতে না হয়। এ বস্তাটাকে নজরে যত কম আনা যায় ততই মঙ্গল। গ্রামের ভেতরের রাস্তাটুকু খুব তাড়াতাড়ি পার হলাম লোকজনের শুভেচ্ছার জবাব দিতে দিতে। এছাড়া যারা আমাকে কথা বলার জন্য থামাতে চেয়েছিল তাদের কাছে আমার তাড়া আছে বলে দুঃখ প্রকাশও করছিলাম। খুব দ্রুত বাড়িতে ফিরে এলাম। বরাবরের মত কালোর আলোয় আর উচ্ছ্বাসে পরিপূর্ণপাত্র কনচিটা আমার জন্য অপেক্ষায় ছিল।
            
‘তারপর, প্যাপিলন, কেমন কাটছে তোমার? শার্লট আমাকে বলে গেছে ডিনারের আগে তোমাকে কড়া এক পাত্র প্যাস্টিস গেলাতে। তোমাকে দেখে তার মনে হয়েছে তুমি কোন অসুবিধায় পড়েছো। সমস্যাটা কি, প্যাপি? আমকে বলতে পারো, তোমার বন্ধু- স্ত্রীকে। সেদিন পরিচিত হওয়া আমার বান্ধবী গ্রেসিয়াকে নিয়ে আসবো তোমার জন্যে, অথবা মার্সিডিজকে; যদি তাকে তোমার বেশি ভাল লেগে থাকে? তোমার কি মনে হচ্ছে না এটা একটা চমৎকার আইডিয়া?

‘কনচিটা, তুমি আমার এল ক্যালাওয়ের ছোট্ট কালো মুক্তা। তুমি অপূর্ব একজন মানবী, আমি বুঝতে পারছি শার্লট কেন তোমার পূজা করে। হয়তো তুমি ঠিকই বলছো-- হয়তো আমার স্থিরতার জন্যে পাশে একজন নারীর উপস্থিতি জরুরী। ’


: তাই তো উচিৎ। অবশ্য যদি শার্লটের ধারনা ঠিক না হয়।  
‘কি বলতে চাচ্ছো?’
:  বলছি, আমি শার্লটকে বলেছিলাম যে তোমার এখন যা প্রয়োজন তা হচ্ছে ভালোবাসা দেওয়া এবং ভালোবাসা পাওয়া। আমি যখন তোমার বিছানায় কোন মেয়ে নিয়ে এসে দিতে চাইলাম, শার্লট বললো ‘অপেক্ষা কর, মনে হয় অন্য কোন ব্যাপার আছে। ’
‘অন্য কোন ব্যাপার বলতে তুমি কি বোঝাতে চাইছো?’
সে মুহূর্তখানেক ইতস্তত করে সহসাই মুখ খুললো, তুমি যদি শার্লটকে এ কথা বলে দাও আমি এজন্যে ভাবি না; তবে এজন্যে সে আমার কান ফাটিয়ে দেবে।
‘আমি তাকে কিছুই বলবো না। ’
:  ঠিক আছে। শার্লট বলছিল, সে এবং এখানকার অন্যান্য ফরাসিদের মত তুমি একই ধাতুতে গড়া নও।
‘তারপর? কনচিটা; পুরো কাহিনী বল আমাকে। ’

: সে আরও বললো যে তুমি অবশ্যই চিন্তা করবে যে খনির গুদামে প্রচুর পরিমাণে অপ্রয়োজনীয় সোনা পড়ে আছে এবং এগুলোর উপযুক্ত কোন ব্যবহারের কথা ভাবতে পারো। তারপর সে বলেছে যে তুমি এমন লোক যে প্রচুর খরচাপাতি না করে থাকতে পারো না। তোমার একটা প্রতিশোধ নেওয়ার ব্যাপার আছে যা তুমি ভুলতে পারনি। আর সেজন্যেই তোমার প্রচুর পরিমাণে টাকা দরকার।

আমি সরাসরি তার চোখের দিকে তাকালাম। ‘কনচিটা, তোমার শার্লট ভুল বুঝেছে, ভুল, ভুল। তোমার ধারণাটাই ঠিক ছিল। আমার ভবিষ্যত নিয়ে কোন সমস্যাই নেই। তুমিই ধরতে পেরেছো আমার প্রয়োজনটা। আমার যা দরকার, তা হলো ভালোবাসার জন্যে একজন নারীর সান্নিধ্য। আমি একটু লাজুক প্রকৃতির তো, তাই মুখ ফুটে বলতে পারিনি। ’

: আমি অন্তত তা বিশ্বাস করি না, প্যাপিলন।
‘ঠিক আছে, যাও, স্বর্ণকেশী মার্সিডিজকে নিয়ে আস এবং তারপর দেখি, নিজের বাহুতে একজন নারীকে পেয়ে আমি সুখী হই কী-না। ’
: এখনি যাচ্ছি,’ পোশাক পাল্টাতে শোওয়ার ঘরের দিকে যেতে যেতে কনচিটা বললো। ‘ইস, মার্সিডিজ কী খুশিই না হবে। ’ সে আপন মনে বলে যাচ্ছে। কনচিটা ফিরে আসার আগেই দরজা খটখটানোর শব্দ শোনা গেল। ‘ভেতরে আস’ কনচিটা বললো। দরজা খুলে গেল এবং দেখা গেল মারিয়া দাঁড়িয়ে আছে। তাকে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত মনে হল।
‘তুমি, মারিয়া, এত রাতে? কী আশ্চর্যজনক চমক! কনচিটা, এ হচ্ছে মারিয়া, সেই মেয়েটিই এল ক্যালাওয়ে আমাকে আর পিকোলিনোকে আশ্রয় দিয়েছিল। ’
: আগে তোমাকে চুমু খেয়ে নেই, কনচিটা বললো। প্যাপিলন যেমন বলেছিল তুমি ঠিক সেরকমই সুন্দরী।
‘প্যাপিলনটা কে?’
আমি। এনরিক অথবা প্যাপিলন, একজনই। বিছানায় এসে আমার পাশে বস এবং সব কথা জানাও।
কনচিটা একটা সবজান্তার হাসি দিল। ‘আমি মনে করছি না যে এখন আর আমার বাইরে যাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে,’ সে বললো।

http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2011October/AngelWings20111017201817.jpgমারিয়া সারা রাত থাকলো। প্রেমিকা হিসেবে সে ছিল লাজুক। কিন্তু আমার প্রতিটি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভালোবাসার ছোঁয়া আর আঘাতের সমূচিত পাল্টা জবাব দিয়ে যাচ্ছিল।
আমিই তার প্রথম পুরুষ। এখন সে ঘুমুচ্ছে। কৃত্রিম বৈদ্যুতিক বাতির বদলে আমার জ্বালানো মোম দুটোর হাল্কা অস্পষ্ট আলোর স্রোত বয়ে যাচ্ছে ঘরময়। এতে ওর তরুণী দেহ সুষমা আরও শিল্পিত, উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে। ওর স্তন দুটোয় আমাদের ভালোবাসাবাসির চিহ্ন ফুটে আছে। ওর রমনতৃপ্ত সুখনিদ্রায় ব্যাঘাত না ঘটিয়ে আমি আস্তে করে উঠে এলাম সময় কত তা দেখতে আর নিজের জন্যে একটু কফি বানাবার জন্যে। চারটে বাজছে। আমার হাত লেগে একটা সসপ্যান শব্দ করে উঠতেই কনচিটা জেগে উঠলো। ড্রেসিং গাউন পরে সে তার ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
‘তোমার কি কফি দরকার?’
‘ঠিক তাই। ’
আমি নিশ্চিত, শুধুমাত্র তোমার জন্যই। কারণ তুমি যে নৈঃসর্গিক স্বপ্নগুলো মারিয়াকে উপহার দিয়েছ এতক্ষণ, তাদের নিয়ে সে এখন নিশ্চিত ঘুমের স্বর্গে বসবাস করছে।
‘তুমি এ ব্যাপারে অভিজ্ঞা, কনচিটা। ’
‘আমাদের লোকদের শিরা-উপশিরায় আগুনের উত্তাপ ছড়ানো। আজ রাতে নিশ্চয়ই তোমার তা হৃদয়ঙ্গম হয়েছে। মারিয়ার রক্তে যে পরিমাণ নিগ্রো স্বাদ তার দ্বিগুণ পরিমাণ হচ্ছে ভারতীয় আর বাদবাকি হচ্ছে স্পেনীয়। যদি তুমি এ ধরনের একটা চমৎকার চাটনিতে সুখী না হয়ে থাকো তাহলে আমি বলবো-- এখনি গিয়ে গলায় দড়ি দাও’ সে হাসতে হাসতে বললো।

বেলা বেশ চড়ে যাওয়ার পর মারিয়া বিছানায় উঠে বসলো, আমি কফি নিয়ে ওর সামনে গেলাম। ইতিমধ্যে আমার ঠোঁটে প্রশ্ন এসে গেছে, ‘তোমাকে বাসায় না পেয়ে ওরা কি দুশ্চিন্তায় ভুগবে না?’
‘আমার বোনেরা জানে আমি এখানে আসবো। তাই বাবা ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই জেনে গেছে। তুমি নিশ্চয়ই আজই আমাকে বিদায় দিচ্ছ না?’
‘না, সোনা আমার। আমি তোমাকে আগে বলেছি যে, আমি ঘর বাঁধতে চাই না, কিন্তু সেই কথা আর তোমাকে এখান থেকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়ার মধ্যে অনেক ফারাক। যদি তোমার কোন অসুবিধা না হয় তাহলে যতদিন ইচ্ছা তুমি এখানে থাকতে পারো। ’
আমাকে এখনি খনিতে রওয়ানা দিতে হবে। মারিয়া কোন ট্রাকে লিফট নিয়ে বাসায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল এবং জানালো বিকেলেই চলে আসবে।

‘হেই, কি খবর,’ শার্লট ডাক ছাড়লো। পায়জামা পড়ে ওর ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। সে আমার সঙ্গে ফরাসিতে কথা বলছে। তারপর, তুমি নিজেই তোমার মেয়ে মানুষ খুঁজে নিয়েছো! রসালো মাল বটে একখান: আমি এই সাফল্যে অভিনন্দন জানাচ্ছি তোমাকে, মদন কোথাকার। ’ সে বললো যে, আগামীদিন যেহেতু রবিবার তাই আমাদের বিয়ে উপলক্ষে একটু খানাপিনার আয়োজন করা যেতে পারে।
‘মারিয়া তোমার বাবা এবং বোনদেরকে বলবে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে, রবিবারটা আমাদের এখানেই যেন কাটিয়ে যায়। আর তুমি যখনি ইচ্ছা চলে আসবে--- এটা তোমারই বাড়ি। তোমার দিন ভাল কাটুক, প্যাপি। তিন নম্বর পাম্পটার দিকে খেয়াল রেখো। আর কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর সাইমনের ওখানে দেখা করতে যাওয়ার দরকার নেই। তুমি ওর পাহারাধীন স্বর্ণের তুজে যত নজর কম বুলাবে ততই ওই সম্পর্কে তোমার উৎসাহ কমবে। ’ একনাগারে বলে শার্লট থামলো।
‘শালা অসভ্য, শয়তানের ধাড়ি। না, আমি সাইমনকে চেহারা দেখাতে যাবো না। ঘাবড়াও মাৎ, বন্ধু সিয়াও। ’

মারিয়া আর আমি বাহুতে বাহু জড়িয়ে সারা গ্রামময় হেঁটে বেড়ালাম, গ্রামের সমস্ত মেয়েকে এটা বোঝানোর জন্য যে এখন থেকে এটা আমার মেয়ে মানুষ।
পাম্পগুলো সুন্দর কাজ করে যাচ্ছে। এমনকি তিন নম্বরটিও। কিন্তু ওখানকার গরম হাওয়া বা মোটরের বিরক্তিকর শব্দ কিছুই আমাকে শার্লট নিয়ে ভাবনা-চিন্তা থেকে বিরত করতে পারলো না। আমি এ কয়দিন কিসের উদ্বিগ্নতায় ভুগছিলাম, শালা ঠিক ধরে ফেলেছে। ভাল কথা, তার মত পুরনো পাপীর পক্ষে এটা বুঝতে খুব একটা কষ্ট হয়নি, বিশেষ করে সোনাগুলো যেভাবে মুখ ভেটকে পড়ে আছে সবার নাকের ডগায়। সাইমনের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে; এবং সাইমন নিশ্চিতভাবেই তার সঙ্গে আমার কথোপকথনের বিষয় শার্লটকে জানিয়েছে। এরাই হচ্ছে সেই ধরনের বন্ধু যেই ধরনের বন্ধু প্রত্যেকের থাকা উচিত। শিশুদের মত উচ্ছল আনন্দে উদ্ভাসিত একদল নিখাদ বন্ধু। যেহেতু তাদের একজন বন্ধু নিজের জন্য একজন নারীকে আপন করে নিয়েছে তাই তারা আশা করছে যে এই কৃষ্ণকেশী বেহেস্তী মেওয়াই আমাকে সোনার তুঝের লালচ ভুলিয়ে দিবে।

বিষয়টা নিয়ে ভাবতে ভাবতে সহসাই পুরো ব্যাপারটা আরও পরিষ্কারভাবে দেখতে পেলাম। এই মানুষগুলো এখন মোমবাতির মতই সরল-সিধা হয়ে গেছে, তারা নিষ্কণ্টক জীবন-যাপন করছে। অথচ নিপাট ভদ্রলোকের জীবন-যাপন সত্ত্বেও তারা অপরাধজগতের স্বভাবসুলভ দৃষ্টিভঙ্গিটা ত্যাগ করেনি, আবার একইসঙ্গে পুলিশকে নিজেদের কারও ব্যাপারে সজাগ করে দেয়ার ব্যাপারেও নীতিগত কারণে অক্ষম।
এমনকি যদি তারা বুঝতেও পারে, যে লোকটি কি মারাত্মক কাজ করতে যাচ্ছে তাহলে নির্ঘাৎ তাদেরকে মহাসঙ্কটে পড়তে হবে। যদি সেরকম কোন ঘটনা ঘটেই যায়, তাহলে পয়লা নম্বরে যে দু’জন ফাঁসবে তারা হলো সাইমন আর আলেকসান্দ্রে, যারা সোনার গুদাম পাহারায় নিয়োজিত। একই গোয়ালের গরু হিসেবে এরপর শালর্টকে ফাঁসতে হবে এবং তখন আমাদের সমস্ত প্রাক্তন জেলখাটা দাগীকেই আবার গারদে পোরা হবে। অতঃপর শুভ বিদায়। শুভ বিদায় শান্তি, শুভ বিদায় সুখ, শুভ বিদায় ঘরদোর, সবজি বাগান, স্ত্রী, বাচ্চা, ছাগল, মুরগি, শূকর-- সবাইকে। তাই নতুন করে আমি অনুভব করতে থাকলাম প্রাক্তন এই অপরাধীরা কতটা দুর্ভাবনায় পড়ে গেছে, নিজেদের জন্যে নয়, প্রধানত তাদের পরিবার-পরিজনদের নিয়ে। যখন তারা ভাবছে যে, আমার পরিকল্পনা কিভাবে তাদের সাজানো ফুলের বাগান তছনছ করে দিতে যাচ্ছে। ‘কিভাবে আমরা আশা করতে পারি যে সে আমাদের সবার সর্বনাশ করতে যাচ্ছে না’, নিশ্চয়ই তারা এ কথা বলাবলি করেছে নিজেদের মধ্যে। বুঝতে পারছি তারা এ নিয়ে একটা যুদ্ধ মন্ত্রণাসভায় বসেছে।

মনস্থির করে ফেললাম। বিকেলেই সাইমনের সঙ্গে দেখা করে তাকে আর তার পরিবারকে আগামীদিনের পার্টিতে আমন্ত্রণ জানিয়ে আসবো এবং তাকে বলবো আলেকসান্দ্রেকেও যেন ও দাওয়াত করে। যদি ও আসতে সক্ষম হয়, তাহলে আমাকে অবশ্যই তাদের সবাইকে এই ধারণা দিতে হবে যে, আমার পক্ষে মারিয়ার মত একটি মেয়ে পাওয়া হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম প্রাপ্তি।

লিফটে করে খোলা হাওয়ায় উঠে এলাম। শালর্টকে রাস্তায় থামিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, পার্টি হচ্ছে তো, দোস্ত?
‘অবশ্যই হচ্ছে, প্যাপিলন, কোন সন্দেহেরই অবকাশ নেই। ’
‘আমি সাইমন আর তার পরিবারকে নিমন্ত্রণ করতে যাচ্ছি। এবং আলেকসান্দ্রেকেও, যদি তার পক্ষে সম্ভব হয়। ’
ওল্ড শালর্ট গভীর জলের মাছ, সে সরাসরি আমার চোখের ভিতর দিয়ে তাকালো এবং বেশ উত্তেজিত কণ্ঠে বললো, কেন, ‘এটা চমকপ্রদ কোন আইডিয়া নাকি, দোস্ত। ’ আর কোন কথা না বলে সে লিফটে ঢুকে গেল এবং লিফট যেখান থেকে এইমাত্র উঠে এসেছিল সেখানে নামিয়ে নিয়ে গেল তাকে। আমি গুদামে গিয়ে সাইমনকে খুঁজে বের করলাম।
‘সব ঠিক তো, সাইমন?’
‘ভাল। ’
‘প্রথমত আমি এসেছি তোমার কুশল জানতে। দ্বিতীয়ত আগামী রোববার তোমাকে লাঞ্চের দাওয়াত দিতে। তোমার পরিবারকে নিয়ে আসবে, অবশ্যই।
‘চমৎকার হবে। তা পার্টি কিসের জন্যে? তোমার বের হওয়া উপলক্ষে?’
‘না, আমার বিয়ে উপলক্ষ্যে। আমি একজন নারীকে খুঁজে পেয়েছি। এল ক্যালাও-এর অধিবাসী জোসের মেয়ে মারিয়া। ’
‘হৃদয় উজাড় করা অভিনন্দন গ্রহণ করো আমার। আমি আন্তরিকভাবে আশা করছি তুমি সুখী হবে। বন্ধু, শপথ করে বলছি। ’ সে আমার সঙ্গে জোরেশোরে উষ্ণ করমর্দন করলো। তার কাছ থেকে বিদায় নিলাম। বাড়ির পথে আধাআধি এসে মারিয়াকে পেলাম, ও আমার কাছেই আসছিল। একজন আরেকজনের কোমর জড়াজড়ি করে ধরে আমরা শ্যাঁতোয় ফিরে আসলাম। ওর বাবা আর বোনেরা আগামী দিন সকাল দশটায় চলে আসবে।
আমি বললাম, ‘ভালই হবে, কারণ আমরা যেমন হিসাব করেছিলাম লোকজন তারচেয়ে বেশি হবে। আর তোমার বাবা কি বললেন?’
‘সে বলেছে, “সুখী হও, মা, কিন্তু ভবিষ্যৎ বিষয়ে কোন ছেলেমানুষী কোর না। কোন মানুষের চরিত্র, তার দিকে শুধু একবার তাকিয়েই আমি পড়ে ফেলতে পারি। তুমি যাকে পছন্দ করেছো সে একজন ভাল মানুষ, কিন্তু সমস্যা হলো সে এখানে স্থায়ী হবে না। সে আমাদের মতো সাধারণ জীবন-যাপনের পাত্র না। ”
‘এর জবাবে তুমি কি বললে?’
‘আমি বলেছি--- তোমাকে যত বেশি সময় ধরে রাখা যায় সে জন্যে আমি সব কিছুই করব। ’ ‘আস তোমাকে চুমু খেয়ে নিই; তুমি একজন হৃদয়বতী রমণী, মারিয়া। চল এখন আমরা বাস্তবে অবগাহন করি। ভবিষ্যৎ নিজেই ভবিষ্যতের দেখাশোনার জন্যে রয়েছে। ’

কিছু মুখে গুঁজে আমরা বিছানায় চলে গেলাম; সকালে আমাদেরকে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে কনচিটাকে খরগোশ মারা, বিয়ের কেক তৈরি, মদ আনাসহ অন্যান্য কাজে সাহায্য করার জন্য। আমাদের এই রাতটা আগেরটার চেয়ে উষ্ণ, উত্তেজনাকর আর আবেগমথিত ছিল। মারিয়ার শিরায় শিরায় আসলেও আগুন পোরা রয়েছে। আমার সঙ্গে সমানতালে ঝুলে যাওয়া এবং আনন্দ আর পুলককে চরম শিখরে নিয়ে যাওয়ার কায়দা সে সঙ্গে সঙ্গে আয়ত্ত্ব করে নিয়েছে। ভালোবাসার উগ্র উন্মাদনায় আমরা দীর্ঘতর সময় প্রেমে মত্ত রইলাম ততক্ষণ, যতক্ষণ না রমণ ক্লান্তির অবসন্নতা আমাদের নিদ্রার কোলে সমর্পণ করলো...এবং পরস্পরকে প্রাণপণ কঠিনভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লাম।

bankoপরদিনই ছিল রবিবার এবং অনুষ্ঠানটা চূড়ান্ত সাফল্য লাভ করলো। জোসে আমাদের অভিনন্দিত করলো পরস্পর পরস্পরকে ভালবাসার জন্যে আর মারিয়ার বোনেরা ঔৎসুক্যে ভরা নানান প্রশ্ন করছে ওর কানে কানে ফিসফিসিয়ে। সাইমন ও তার চমৎকার পরিবার এসেছে। আলেকসান্দ্রেও এসেছে তার জায়গায় একজনকে দায়িত্ব দিয়ে। তার সঙ্গে তার নজরকাড়া স্ত্রীও এসেছে। সঙ্গে আরও এসেছে পরিপাটি পোশাকে সাজগোজ করা একজোড়া ছেলেমেয়ে। খরগোশ খুব সুস্বাদু হয়েছিল আর হার্টের ডিজাইনে বানানো বিশাল কেকটা নিমিষে খালাস হয়ে গেল। আমরা রেডিও  আর গ্রামোফোনের সঙ্গীতের তালে তালে একটু নেচে নিলাম সবাই। আর আমাদের এক স্যাঙ্গাৎ প্রাক্তন কয়েদী এ্যাকর্ডিয়ন বাজিয়ে শোনালো।

পেটভরে মদ গিলে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে আমি পুরনো সাথীদের উদ্দেশ্যে ফরাসিতে বক্তব্য দিলাম। ‘ধন্যবাদ বন্ধুরা, এখন বল তোমরা কি ভাবছিলে এ্যাদ্দিন? তোমরা কি মনে করেছিলে যে, সত্যি সত্যি আমি কিছু হাতাতে যাচ্ছিলাম?’
‘হ্যাঁ, বন্ধু’ শার্লট বললো। আমরা এ বিষয়ে একটা কথাও তুলতাম না যদি না তুমি নিজেই এটা সামনে নিয়ে আসতে। কিন্তু এটাও তো নিশ্চিত সত্য যে তুমি ওই স্বর্ণ লুট করার পরিকল্পনা করছিলে, ঠিক? খোলাসা করে জবাব দাও, প্যাপিলন। ’
‘তোমরা জান যে, বিগত তেরটি বছরের প্রতিটি ক্ষণ আমি আমার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যে কিভাবে তড়পাচ্ছিলাম। তের বছরকে তিনশ’ পঁয়ষট্টি দিন দিয়ে গুণ কর এরপর চব্বিশ ঘণ্টা দিয়ে এবং প্রতি ঘণ্টাকে ষাট মিনিট দিয়ে--- এরপরও তোমরা সত্যিকারের সংখ্যাটা জানবে না। আমি যাদের জন্যে এই চরম লাঞ্ছনা আর জিল্লতি ভোগ করেছি তাদের পাওনা কড়ায়-গণ্ডায় মিটিয়ে দেয়ার জন্যে কতবার শপথ করেছি! তাই যখন আমি ওই সোনার ডিপো দেখলাম, সত্যি কথা, আমি ওখানে হাত লাগানোর চিন্তা করি। ’

তারপর? সাইমন শুধালো।
‘তখন সমস্ত দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টা পর্যালোচনা করতে গিয়ে লজ্জিত হলাম। আমি তোমাদের সকলের সুখ-শান্তি ধ্বংস করে দেয়ার ঝুঁকি নিতে যাচ্ছিলাম। আমি হৃদয়ঙ্গম করলাম, এই যে তোমাদের সুখী জীবন-- যে সুখ আশা করি আমারও একদিন হবে-- তা আমার নিজের ধনী হওয়ার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান। তখন সোনা হাতানোর লোভ অনেকটা প্রশমিত হয়ে গেল। তোমরা এখন নিশ্চিত হতে পারো এ ব্যাপারে, এবং আমি তোমাদের কাছে ওয়াদা করছি! আমি এখানে সেরকম কিছু করবো না। ’
‘এইতো বাছা, লাইনে এসেছো এতক্ষণে’ শার্লট তার সবগুলো দাঁত কেলিয়ে বললো। ‘সুতরাং এখন আমরা সবাই নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবো। ’ আমরা এখন নিশ্চিত আমাদের সাঙ্গপাঙ্গদের কেউ কখনো লোভের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না।

প্যাপিলন দীর্ঘজীবী হোক! মারিয়া দীর্ঘজীবী হোক! দীর্ঘজীবী হোক ভালবাসা আর শান্তি! আর দীর্ঘজীবী হোক মানুষের সুকুমারবৃত্তি। আমরা যেমন ছিলাম কঠিনপাত্র, এখনো তেমনি কঠিনপাত্রই আছি। কিন্তু তা শুধুমাত্র বরাহ নন্দনদের ক্ষেত্রেই। এখন আমরা সবাই একাত্ম, প্যাপিলনসহ। ’
ছয়মাস আমি এখানে কাটিয়ে দিলাম এবং সবার ঋণ শোধ করায় প্রয়োজনীয় রসদ জোগানোর একাগ্রতায়।

বুম-বুম, বুম-বুম, বুম-বুম : গ্যালারিতে জমা হওয়া পানিগুলো সারাক্ষণ একঘেয়ে শব্দে আমার পাপগুলো শুষে নিয়ে যাচ্ছে উপরে। তাপমাত্রার চূড়ান্ত অবস্থা। প্রতিদিন আমাকে আট ঘণ্টা সময় কাটাতে হয় খনির গভীরতম তলায়। বর্তমানে আমি ভোর চারটা থেকে মধ্যাহ্ন পর্যন্ত সময়কালের ডিউটি দিচ্ছি। কাজ শেষ করে সাধারণত এল ক্যালাও-এ মারিয়াদের বাসায় চলে যাই। গত একমাস যাবত পিকোলিনো ওদের ওখানেই আছে, কারণ, এল ক্যালাওয়ের ডাক্তার প্রতিদিন তাকে চেক করতে পারছিল। বর্তমানে ওর একটি নির্দিষ্ট কোর্সের চিকিৎসা চলছে এবং মারিয়া আর তার বোনেরা তাকে পরম যত্নে দেখভাল করছে। তাই আমি নিয়মিত তাকে দেখার জন্যে এবং মারিয়ার সঙ্গে মিলিত হতে ওখানে যেতাম। তবে আজ এক সপ্তাহ হয়ে গেছে মারিয়া বিহনে এবং এখন আমি তাকে কামনা করছি, শারীরিক এবং মানসিক দুইভাবেই।
একটা লরীতে লিফট পেলাম। আমি যখন মারিয়াদের দরজা খুলে বাড়িতে প্রবেশ করলাম তখন একটা বাজে, বৃষ্টি পড়ছে বাইরে। সবাই গোলটেবিল ঘিরে বসে আছে, ওদের থেকে মারিয়া একটু বিচ্ছিন্ন, দরজার পাশে বসে আছে, মনে হচ্ছে অপেক্ষা করছিলো। ‘আরও আগে আসলে না কেন? এক সপ্তাহ কত দীর্ঘ, দীর্ঘতর সময়। তুমি তো পুরো ভিজে গেছ। এখনি কাপড় বদলাবে চল। ’

সে আমাকে শোয়ার ঘরে টেনে নিল, আমার সব কাপড় খুলে নিল এবং বড় একটি তোয়ালে দিয়ে সমস্ত গা মুছিয়ে দিল। ‘বিছানায় শুয়ে পড়। ’ সে নির্দেশ দিল। এবং এখানে আমরা মিলিত হলাম। দরজার ওপাশে যারা আমাদের জন্যে অপেক্ষা করে আছে তাদেরকে বিস্মৃত হয়ে, তারা কি ভাবছে তা না ভেবেই। আমরা নিদ্রায় ডুবে গেলাম। শেষ বিকেলে মারিয়ার সবুজ চোখা কোন এসমারেল্ডা এসে আমাদেরকে আস্তে করে ডেকে তুললো, ততক্ষণে সন্ধ্যা ঘনায়ে এসেছে।
সবাই একত্রে ডিনার সারার পর জলদস্যু জোসে আমাকে সঙ্গে নিয়ে একটু বাইরে হাঁটাহাটি করতে চাইলো।
‘এনরিফ, তুমি চিফ এ্যাডমিনিস্ট্রেটরকে চিঠি লিখেছিলে তোমার বাধ্যতামূলক আবাসন শেষ হওয়ার পর ক্যারাকাসে থানার অনুমতি চেয়ে,  এটা কি ঠিক?’
‘হ্যাঁ, জোসে। ’
‘সে ক্যারাকাস থেকে এর উত্তর পেয়েছে। ’
‘ভাল না খারাপ?’
‘ভাল। তোমার কনফিগামেন্টো (বাধ্যতামূলক আবাসন) শেষ হয়েছে।
‘মারিয়া জানে?’
‘হ্যাঁ’।
‘সে কি বলেছে?’
‘বলেছে--- তুমি সর্বদাই বলেছো এল ক্যালাওয়ে স্থায়ীভাবে থাকবে না। ’ একটু থেমে সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘কখন রওয়ানা হতে চাচ্ছ?’
এই খবরে যদিও আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম, কিছুক্ষণ ভেবে জবাব দিলাম, ‘আগামীকাল। যে ট্রাক ড্রাইভার আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে সে বলেছে আগামীদিন সে সিঁউদাদ বলিভারের দিকে যাচ্ছে। ’ জোসে তার মাথা ঝাঁকালো। ‘এ্যামিগো মিয়ো, আমার উপর কি তুমি ক্ষুব্ধ?’
‘না, এনরিক, তুমিতো সব সময়েই বলেছো যে, তুমি এখানে থাকবে না। তবে এটা মারিয়ার জন্য দুঃখজনক এবং আমার জন্যও। ’
‘যদি ড্রাইভারকে খুঁজে পাওয়া যায় তাহলে তার সঙ্গে কথা বলতে হবে আমাকে। ’

আমি তাকে খুঁজে পেলাম। আগামী দিন সকাল নয়টায় আমরা রওয়ানা দেব। এর মধ্যেই সে আরেকজন প্যাসেঞ্জার নিয়ে নিয়েছে তাই পিকোলিনো তার সঙ্গে ক্যাবে বসে যাবে আর আমি পিছনে খালি লোহার ব্যারেলগুলোর ওপর। আমি চিফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের ওখানে ছুট লাগালাম, সে আমার কাগজপত্র হস্তান্তর করলো, সজ্জনসুলভ কিছু উপদেশ দিলো এবং আমার শুভ কামনা করে বিদায় জানালো। এরপর যারা আমাকে এখানে তাদের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা দিয়ে কৃতজ্ঞ করেছে তাদের খোঁজে বের হলাম।

প্রথমে ক্যারাটাল, সেখান থেকে আমি আমার ব্যক্তিগত যৎসামান্য জিনিসপত্র তুলে নিলাম। শার্লট আর আমি আবেগাপ্লুত হয়ে দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরলাম। ওর কৃষ্ণকলির গাল বেয়ে পানি পড়ছে। আমি তাদের অনবদ্য আতিথেয়তার জন্যে উভয়কেই ধন্যবাদ জানালাম।
‘এটা তেমন কিছুই না, বন্ধু। আমার ক্ষেত্রেও তুমি এরকমই করবে। ভাগ্য তোমার সহায় হোক। আর প্যারিসে গেলে মঁমার্তেবাসীকে আমার সালাম (শুভেচ্ছা) পৌঁছে দিও...
‘আমি লিখবো তোমাকে। ’
এরপর দেখা করলাম অন্যান্য প্রাক্তন কয়েদী, সাইমন, আলেকসান্দ্রে, মার্সেল, আন্দ্রের সঙ্গে। শেষে দৌড় লাগালাম এল ক্যালাও-এ। সেখানে আমি সকল মাইনারকে, অন্যান্য হীরক আর স্বর্ণ অনুসন্ধানকারী আর আমার সহকর্মী-বন্ধু সবাইকে বিদায় জানালাম। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে তাদের সবাই হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে আমার শুভকামনা করে কিছু না কিছু বক্তব্য রাখলো। এই পরিস্থিতি আমাকে গভীরভাবে নাড়া দিল, এবার আমি আরও পরিষ্কারভাবে অনুভব করলাম যদি আমি মারিয়াকে নিয়ে এখানে থেকে যেতাম তাহলে শার্লট ও অন্যান্যদের মতই সুখী হতে পারতাম। আমি কখনোই এই স্বর্গ থেক নিজকে বিচ্যুত করতে সক্ষম হতাম না।

আমার এই বিদায়পর্বের সবচেয়ে কঠিন পর্যায়টি ছিল মারিয়ার কাছ থেকে বিদায় নেওয়া। আমাদের শেষরাত, যা ছিল ভালবাসা আর চোখের পানি-- এ দু’য়ের এক অদ্ভুত মিশ্রণ। এটা আমাদের জানা যে কোন হৃদয়বিদারক ঘটনার চেয়ে বেশি মর্মান্তিক ছিল। এমনকি ভালবাসার প্রতিটি ছোঁয়া যেন হৃদয়কে চূড়মার করে ভেঙে দিচ্ছিল। আমার পক্ষে সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক ব্যাপারটা ছিল ওকে একথা বোঝানো যে, আমার আর তার কাছে ফিরে আসার কোন সম্ভাবনাই নেই। কে বলতে পারে আমি যখন আমার পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু করবো তার পরিণতি কী হবে।

[চলবে]

ব্যানকো [পর্ব-১], ব্যানকো [পর্ব-২], ব্যানকো [পর্ব-৩]


বাংলাদেশ সময় ১৯৩০, অক্টোবর ১৭, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।