ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

ইতালো ক্যালভিনোর অনুবাদ প্রসঙ্গে মহীবুল আজিজ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৮
ইতালো ক্যালভিনোর অনুবাদ প্রসঙ্গে মহীবুল আজিজ মহীবুল আজিজের অনুবাদে ক্যালভিনোর গল্প

‘ইতালো ক্যালভিনো’ (১৫ অক্টোবর ১৯২৩-১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৮৫) হলেন সেই লেখক, যার মৃত্যুর পর ইতালির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট তার মরদেহ বয়ে আনবার জন্য একটি বিশেষ বিমান পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। মস্কোয় ইতালীয় ভাষায় লেখাপড়া করার একটি স্কুলের নাম তার নামে, ‘স্কুলা ইতালিয়ানা ইতালো ক্যালভিনো’।

মঙ্গল-বৃহস্পতি গ্রহের মাঝখানকার একটি স্থায়ী গ্রহাণুর নাম ‘২২৩৭০-ইতালো ক্যালভিনো’ এবং বুধ গ্রহের একটি আগ্নেয়গিরির নামকরণ করা হয়েছে তারই নামে। অথচ তিনি জন্মসূত্রে ইতালীয় নন, ছিলেন দূরতম লাতিন আমেরিকার কিউবান।



চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সভাপতি, বহুপ্রজ লেখক মহীবুল আজিজ (জন্ম ১৯ এপ্রিল, ১৯৬২) সমকালীন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাশিল্পী ইতালো ক্যালভিনোর ষোলটি গল্পের অনুবাদ করেছেন। ‘ইতালো ক্যালভিনোর গল্প’ শিরোনামে অনুবাদ-কর্মগুলো গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেছে বেঙ্গল পাবলিকেশনস। কেন এবং কীভাবে এই অনুবাদের সঙ্গে নিজেকে জড়ালেন, সেসব কথা তিনি বাংলানিউজকে জানিয়েছেন সবিস্তারে।

১৯৯২ সালের গ্রীষ্মকালে ক্যামব্রিজে অবস্থানকালে ফিনিশ বন্ধু অ্যান ফিনেল মহীবুল আজিজকে জন্মদিনের উপহার দেন একটি গ্রন্থ। নাম ‘অ্যাডাম, ওয়ান আফটারনুন’। বইটির রচয়িতা ইতালো ক্যালভিনো। ইস্টারময় সেই এপ্রিলে তিনি ক্যামব্রিজের অধিভুক্ত ক্লেয়ার হলের কেইন্সসাইড হাউস-এ বসে বইটি পড়তে শুরু করেন। সেটি ছিল তার জন্য মাধুয্যভরা পাঠের অভিজ্ঞতা।

পড়তে পড়তে মহীবুল আজিজ হারিয়ে যান গল্পের ঘটনাপ্রবাহে, চরিত্রগুলোর ভেতরে। জাদুকরী গল্পগুলো পড়েন আর তিনি শিহরিত হন আখ্যানের স্পর্শে স্পর্শে। তার সামনে দিয়ে বয়ে যায় ক্যামব্রিজের বিখ্যাত সামার, রোদেলা মাঠ, ফুল ও প্রজাপতির নৃত্য, গাছে গাছে গুচ্ছ গুচ্ছ চেরি, বেরি আর দ্রাক্ষা ফলের বাহার। তিনি তখনই গল্পগুলোতে বাংলায় রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেন এবং অনেক বছরে ধীরে ধীরে অনুবাদ শেষ করেন।

মহীবুল আজিজের অনুবাদে ক্যালভিনোর বিখ্যাত গল্পগুলোই স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, এক বিকেলে অ্যাডাম, সদর দফতরের পথে, হৈম, পুত্রকে পিতা, গ্রন্থাগারে এক জেনারেল, আকাশমুখো নৃ-গোষ্ঠী, বিড়াল এবং পুলিশ, অকম্মার ঢেঁকি, বিবেক, শত্রুর চোখ, পথভ্রান্ত সৈন্যদল, নিয়ানডার্থাল মানব, আবার শীঘ্র বেরিয়ে পড়া, যে লোকটা ‘তেরেসা’ বলে চিৎকার করেছিল, কালো ভেড়া, একটা কিছু করো।

ইতালীয় ভাষাকে মনন আর আবেগের রসায়নে এমন জাদুময় সমন্বয়ে ক্যালভিনো একাই উপস্থাপন করেন, যা বহু লেখকের যৌথ প্রচেষ্টায়ও সাধ্য হওয়ার নয়। তাকে দিয়েই ইতালীয় কথাশিল্পে নব্য-বাস্তবতাবাদী ধারার সূচনা হয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়। শুধু ইতালিতেই নন, তিনি তার গল্পগুলোর মাধ্যমে বিশ্বের সর্বকালের সেরা লেখকদের কাতারভুক্ত হয়ে যান। সমকালীন বিশ্বে তার গল্প সবচেয়ে বেশি অনূদিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তার সম্পর্কে বলা হয়, ‘তিনি আর কারো মত নন। তার নিজের পর্যবেক্ষণ এতটাই স্বতন্ত্র ও প্রখর যে, সেগুলোকে ‘অনতিক্রান্ত শিল্পকর্মের মতো’ মনে হয়। ’

কিউবার সান্তিয়াগো শহরের দে লাস ভেগাসে জন্মগ্রহণকারী ইতালো ক্যালভিনো বহু বিচিত্র অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ জীবনযাপন করেছেন। সাংবাদিকতা ও লেখালেখিই ছিল তার মূল পেশাগত কর্তব্য। পাশাপাশি বিশ্বের প্রায় সব দেশেই সাহিত্য ও দর্শন বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। নানা পুরস্কারের সম্মানিত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান, অস্ট্রিয়া ছাড়াও ইউরোপের নানা দেশের নানা পুরস্কারে। চলচ্চিত্রের তিনি ছিলেন একজন বোদ্ধা ও বিশিষ্ট জুরি। একদা সমাজতন্ত্রী মনোভাবাপন্ন হলেও তিনি শেষ পর্যন্ত ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবাদী মতাদর্শের কাছাকাছি অবস্থান করেন এবং শিল্প ও সাহিত্যের স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্তভাবে কোনও আদর্শিক দাসত্বকে অস্বীকার করেন। সন্দেহ নেই, বাংলা ভাষায় ইতালো ক্যালভিনোর মতো কালজয়ী কথাকারের গল্প অনূদিত হয়ে সাধারণ পাঠকের পাঠের আওতাভুক্ত হওয়া বড় ধরনের একটি সুসংবাদ।

**মহীবুল আজিজের অনুবাদে ক্যালভিনোর গল্প
বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৭
এমপি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।