ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

কবিপ্রতিভা ও কর্মগুণে বেঁচে থাকবেন কবি সুফিয়া কামাল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
কবিপ্রতিভা ও কর্মগুণে বেঁচে থাকবেন কবি সুফিয়া কামাল জাতীয় জাদুঘরে কবি সুফিয়া কামাল স্মরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ১৯৫৬ সালে শিশুদের সংগঠন ‘কচিকাঁচার মেলা’ প্রতিষ্ঠা করেন কবি সুফিয়া কামাল। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা হোস্টেলের ‘রোকেয়া হল’ নামকরণের দাবিও তিনিই জানান। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলনেও শক্তিমান এই কবি সক্রিয় ছিলেন।

একথা জানান ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে কবি সুফিয়া কামাল স্মরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা জানান।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন এ কবি। পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ইতিপূর্বে প্রদত্ত তমঘা-ই-ইমতিয়াজ পদক বর্জন করেন। ১৯৭০ সালে মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৭১ সালের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের মিছিলেও নেতৃত্ব দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও বিশিষ্ট সাংবাদিক দিল মনোয়ারা মনু  প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন।

সাংবাদিক দিল মনোয়ারা মনু বলেন, সুফিয়া কামাল ছিলেন একাধারে কবি, বুদ্ধিজীবী ও সমাজনেত্রী। যে সময়ে মুসলিম মেয়েরা শিক্ষাদীক্ষায় ছিল একেবারেই পশ্চাদপদ, সে সময়ে সুফিয়া কামালের মতো স্বশিক্ষিত ও সমাজপ্রগতি-সচেতন নারীর আবির্ভাব ছিল এক অসাধারণ ব্যাপার। সুফিয়া কামাল তেমন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেননি। তখনকার পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশে বাস করেও তিনি নিজ চেষ্টায় হয়ে ওঠেন স্বশিক্ষিত ও সুশিক্ষিত। বাড়িতে উর্দুভাষার চল থাকলেও নিজ উদ্যোগেই বাংলাভাষা শিখে নেন এই মহীয়সী নারী।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ১৯১৮ সালে কলকাতায় কবি সুফিয়া কামালের পরিচয় হয় রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের সাথে। তাঁর শিশুমনে রোকেয়া-দর্শনের সেই স্মৃতি অম্লান হয়ে থাকে; রোকেয়ার ব্যক্তিত্ব তাঁকে অবিরাম অনুপ্রাণিত করতে থাকে। ১৯২৯ সালে সুফিয়া কামাল বেগম রোকেয়া প্রতিষ্ঠিত মুসলিম মহিলা সংগঠন ‘আঞ্জুমান-ই-খাওয়াতিন-ই-ইসলাম’-এ যোগ দেন। এখানে নারীশিক্ষা ও সামাজিক সংস্কারসহ নারীদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হতো।

বেগম রোকেয়ার সামাজিক আদর্শ সুফিয়াকে আজীবন প্রভাবিত করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি রোকেয়ার ওপর অনেক কবিতা রচনা করেন এবং তার নামে ‘মৃত্তিকার ঘ্রাণ’ (১৯৭০) নামের একটি সঙ্কলন উৎসর্গ করেন। তিনি ‘রোকেয়া সাখাওয়াত স্মৃতি কমিটি’ গঠনে সহায়তা করেন, যার প্রস্তাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা হল বেগম রোকেয়ার নামে ‘রোকেয়া হল’ রাখা হয়। ১৯৩১ সালে সুফিয়া কামাল মুসলিম নারীদের মধ্যে প্রথম ‘ভারতীয় মহিলা ফেডারেশন’-এর সদস্য নির্বাচিত হন।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম বলেন, ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত হয় কবির ‘সাঁঝের মায়া’ কাব্যটি। এর ভূমিকা লিখেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এটি পড়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। এটির মধ্য দিয়েই সুফিয়া কামালের কবিখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৪৬ সালে কলকাতায় যখন হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বাঁধে, তখন দাঙ্গাপীড়িতদের সাহায্যের ক্ষেত্রে সুফিয়া সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

সভাপতির ভাষণে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে নারীজাগরণ আর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এই সংগ্রামী নারী উজ্জ্বল ভূমিকা রেখে গেছেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শরিক হয়েছেন। মুক্তবুদ্ধির পক্ষে ও সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদের বিপক্ষে আমৃত্যু সংগ্রাম করেছেন।

এছাড়া সুফিয়া কামালের প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ’ নারী অধিকার আদায়ের এক অনন্য প্রতিষ্ঠান। তিনি তার কবিপ্রতিভা ও কর্মের গুণে আমাদের মাঝে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।

বাংলাদেশ সময়:২০৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭

এইচএমএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।