ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

‘কেড়ে নাও এ যৌবন ফিরিয়ে দাও শৈশব’ : জগজিৎ সিং

আহ্সান কবীর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১১
‘কেড়ে নাও এ যৌবন ফিরিয়ে দাও শৈশব’ : জগজিৎ সিং

ইউরোপের এক পাঁচতারা হোটেলে আয়োজিত গজল সন্ধ্যায় গায়েকের সাঙ্গীতিক ইন্দ্রজালে মন্ত্রমুগ্ধ শ্রোতা-দর্শকের অনেকেরই চোখ মুদে এসেছে। তাদের সিংহভাগই ভারতীয় উপমহাদেশের।

অসাধারণ এই গায়ককে দূর প্রবাসের ওই অনুষ্ঠানে আনতে পেরে তারা আনন্দিত এবং তৃপ্ত। অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি গায়ক তার পরিবেশনা থামিয়ে কথা বলা শুরু করলেন: আমি এ জীবনে দুনিয়ার অনেক নামি-দামি শহরে গান গেয়েছি। কিন্তু কোথাও এখানকার মত সম্মান আর ভালোবাসা পাইনি। আপনাদের আপ্যায়ন আর মেহমানদারিতে আমি ধন্য!

September
প্রশংসা ঈশ্বরেরও পছন্দ। গায়কের কথা শেষ হওয়ার আগেই করতালিতে ফেটে পড়লো এতক্ষণকার মন্ত্রমুগ্ধ দর্শকমণ্ডলী। হাততালি আর আনন্দ ধ্বনি থামছেই না। হঠাৎ গায়ক সবাইকে থামতে অনুরোধ করলেন। বললেন, `আমার এ কথায় এত উৎফুল্ল হওয়ার কিছুই নেই। `

দর্শকরা কিছুটা হতোদ্যম আর কিংকর্তব্যবিমূঢ়। এ কেমন কথা!

এবার গায়ক বললেন, `আমার কথাতে এত উৎফুল্ল হওয়ার কারণ নেই। কারণ, এর আগে যে যে শহরেই গিয়েছি, সেখানে আমি এই একই কথাই বলেছি। `

অসাধারণ রসিকতাটা ধরতে পেরে আবারও দর্শক ফেটে পড়লেন হল ফাটানো হাসি আর করতালিতে।

রসিক এ শিল্পীর নাম জগজিৎ সিং। ভালোবেসে অনেকে বলেন- গজলসম্রাট। বন্ধুরা বলতেন মহারাজ। তিনি তার কনসার্টগুলোতে গান গাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে অসাধারণ সব কৌতুক পরিবশেনের জন্য বিখ্যাত ছিলেন।

lata-jagjitঢাকার শেরাটন হোটেলের (এখনকার রূপসীবাংলা) বলরুমে ১৯৯২ সালে (এক বছর আগে-পিছে হতে পারে) জগজিতের এক কনসার্ট উপভোগ করার সৌভাগ্য হয়েছিল এই লেখকের। সাংবাদিক হিসেবে আমি একেবারে সামনের সারিতে ছিলাম। জগজিতের সঙ্গীদের (বাজানেওয়ালাদের) একজন ছিলেন বেশ তরুণ এবং তার যন্ত্রটি বাজানোয় বেশ উৎসাহ দেখা যাচ্ছিল। ওদিকে একের পর এক `ইয়ে দৌলত ভি লে লো, আপনিহি আপকো জিন্দা রাখনা কিতনা মুশকিল হ্যায়, পাত্থার বিচ আইনা রাখনা যিতনা মুশকিল হ্যায় (নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা এতটা মুস্কিলের কাজ যতটা পাথরের মাঝখানে আয়না রাখা), হোঁটোসে ছুলো তুম মেরা গীত অমর কার দো` (তোমার ঠোঁটের ছোঁয়া পেলেই আমার এ গীত অমর হয়ে যাবে), `মেরা কাতিল মেরা মুন্সিফ হ্যায় কেয়া ইন্সাফ ও মুঝ্সে কারেগা` (আমার হন্তারকই আমার বিচারক সেজে বসে আছেন, সুতরাং কী ন্যায় তিনি করবেন আমার পক্ষে!) সহ জগজিৎ তার তখন পর্যন্ত সেরাগুলো পরিবেশন করছিলেন। দর্শকরা সব মাতোয়ারা। হঠাৎ জগজিতের ইশারায় অন্য বাদকরা সব থেমে গেলেন এবং জগজিৎ নিজেও। কিন্তু ওই তরুণ চোখ মুদে তার বাজনা (সম্ভবত গিটার) বাজিয়েই যাচ্ছেন। এ ঘটনায় পুরো হলরুম হেসে উঠলো। তরুণ চোখ খুলে বিষয়টা বুঝতে পেরে লজ্জায় মরি মরি। ওদিকে সিং সাহেব চোখ মটকে দর্শকদের বললেন- `বাচ্চা হ্যায় না, জোশমে আ গিয়া...হাহ হাহ হা!`
jagjit-gulam-ali   
এত বড় মাপের এবং বিশ্বখ্যাত একজন শিল্পী যে এতটা লঘু তারে আসর মাতাতে পারেন, নিজ দলের কনিষ্ঠতম সদস্যের সঙ্গেও এতটা ইয়ারি-দোস্তি দোখতে পারেন- তা সামনে না থাকলে বিশ্বাস করা কঠিন ছিল।

যে গানটি তাকে জনমানুষের কাছে চিরচেনা আর স্মরণীয় করে রেখেছে তা হলো-
ইয়ে দৌলতভি লেলো/ ইয়ে শোহরতভি লে লো/ ভালে মুঝ সে ছিন লো মেরি ইয়ে জওয়ানি/মাগার মুঝকো লওটা দো বাচপান কা সাওয়ান/ ও কাগাজ কি কাশ্তি ও বারিশ কি পানি...

(আমার  ধন-সম্পদ-মর্যাদা সবই নিয়ে নাও, চাও তো আমার এ সোনালি যৌবনও কেড়ে নাও। কিন্তু এর বিনিময়ে আমাকে ফিরিয়ে দাও শৈশবের সেই বর্ষণমুখর শ্রাবণের দিনগুলো, সেই যে উঠোনে জমে যাওয়া বৃষ্টির পানিতে কাগজের নৌকা ভাসানোর আনন্দভরা ক্ষণগুলো...)  
 
পূর্ব পাঞ্জাবের উর্দু কবি সুদর্শন ফকির রচিত এই অসাধারণ গানটি গেয়ে দুনিয়া জুড়ে সঙ্গীত ভক্তদের হৃদয়মন্দিরে স্থায়ী আসন করে নিয়েছিলেন ভারত সরকারের পদ্মভূষণ খেতাবপ্রাপ্ত গজলশিল্পী জগজিৎ সিং। ৭০ বছর বয়সে ১০ অক্টোবর সোমবার সকাল ৮টা ১০ মিনিটে মুম্বাইর লীলাবতী হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
jagjit-chitra
সত্তরের দশক পর্যন্ত উপমহাদেশের সঙ্গীত ঐতিহ্যের অন্যতম শাখা উর্দু গজলের জগৎটা ছিল রাজা-মহারাজা আর অভিজাতদের বৈঠকখানার বিশেষ আয়োজনের ঘেরাটোপে বন্দি। তখন উপমহাদেশীয় ঘরানার গজল সাম্রাজ্য শাসন করছিলেন নূরজাহান, মালিকা পোখরাজ, বেগম আখতার, তালাত মাহমুদ আর মেহেদি হাসানের মত ওস্তাদ গায়করা। এর পরবর্তী ধাপে জগজিৎ সেইসব গজল গায়কদের নেতৃত্বে ছিলেন যারা গজলকে অভিজাতদের বৈঠকখানা থেকে সাধারণ মানুষের নাগালে নিয়ে আসেন।

জগজিতের প্রথম দিককার অ্যালবামগুলোর নাম প্রায় সবক`টিই ছিল ইংরেজি। পরবর্তী প্রায় সব অ্যালবামের নামে স্থান করে নেয় উর্দু। গানের কথা বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও পরবর্তী সময়ে জগজিৎ অনেক সচেতন হয়ে ওঠেন। তার গাওয়া গানগুলোর পর্যালোচনায় বোঝা যায় ক্রমশ আধ্যাত্মিকতার আবহে তিনি বুঁদ হয়ে যাচ্ছিলেন।

ভারতের জীবন্ত কিংবদন্তী লতা মুঙ্গেশকরের সঙ্গে জগজিৎ সিংয়ের অ্যালবাম সাজদা ক্ল্যাসিক গজল অ্যালবাম হিসেবে স্বীকৃত। এ অ্যালবামের আদমি আদমি কো কেয়া দেগা (মানুষ মানুষকে কী দিতে পারে), হার তারাফ হার জাগা বেশুমার আদমি ফেরভি তানহাই কা শিকার আদমি (আশপাশে চতুর্দিকে অসংখ্য অগণন মানুষ তারপরও মানুষ নিঃসঙ্গতায় ভোগে) গানগুলো ঊঁচু মানের গজল-রুচির পরিচায়ক।
jagjit-chitra
উর্দু ছাড়াও জগজিৎ গান গেয়েছেন মাতৃভাষা পাঞ্জাবি, বাংলা, হিন্দি, গুজরাটি, সিন্ধি ও নেপালি ভাষায়। বাংলায় তার অ্যালবাম তৃষ্ণা বাঙালি শ্রোতাদের আপ্লুত করেছে। এ অ্যালবামের গানের মধ্যে আছে, চোখে চোখ রেখে আমি সুরা পান করি, বেশি কিছু আশা করা ভুল, তোমার চুল বাঁধা দেখতে দেখতে প্রভৃতি।

আর গজল ছাড়াও গেয়েছেন ভজন আর গুরবাণী (হিন্দু ও শিখ ধর্মীয় বন্দনাগীতি)। এ ধারায় তার অ্যালবামের মধ্যে আছে মা, হরে কৃষ্ণ, হে রাম, ইচ্ছাবল, মান জিতাই জগজিৎ প্রভৃতি। এসব কীর্তি তাকে মুকেশ, হরি ওম শরণ, ইয়েসুদাস, অনুপ জালোটাদের মত শীর্ষ ভজন গায়কদের কাতারে স্থান দিয়েছে।  

১৯৭৬ সালে এইচএমভি প্রকাশিত জগজিতের অ্যালবাম আনফরগেটেবল তাকে শ্রোতাদের হৃদয়ে সত্যি সত্যি অবিস্মরণীয় করে তোলে। তার তরতাজা মখমলি গলায় গাওয়া গজল ও গীতগুলো বিরাজমান গজল গায়কদের চেয়ে ভিন্নতার স্বাদ নিয়ে আসে। একইসঙ্গে ক্লাসিক ও সেমি ক্লাসিকের মিশ্রণে জগজিৎ গজলকে সাধারণের কাছে জনপ্রিয় করে তোলেন। পরবর্তী সময়ে জগজিতের পথ ধরে পংকজ উদাস, অনুপ জালোটা, ভূপিন্দর সিং, অশোক খোসলা, রূপ কুমার রাঠোর, চন্দন দাস, বিজয় সিং, পিনাজ মাসানি, অনুপ জালোটার সাবেক স্ত্রী সোনালি জালোটা (পরে সোনালী রাঠোর) প্রমুখ শিল্পী গজলের সঙ্গে গীতের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে একে সাধারণের একেবারে কাছে নিয়ে আসেন।

`আনফরগেটেবল` প্রকাশের পর সঙ্গীতের কুলীন আর শুদ্ধবাদীরা অনেকটাই ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন জগজিৎ সিংকে। অন্যান্য স্তরের পণ্ডিতরাও ‘গেল গেল’ শোর তোলেন। তবে সাধারণ শ্রোতা-দর্শকের মাঝে তার কোনও প্রভাব পড়েনি। তারা গজলরাজ (গজল কিং) হিসেবে এ তরুণ গায়ককে শ্রদ্ধার আসনে বরণ করে নেন।    
jagjit-chitra
পাঞ্জাবের দাল্লা এলাকার বাসিন্দা সরকারি চাকুরে অমর সিং ধীমান ও বচন কাউরের ঘরে ১৯৪১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগরে জন্ম নেন জগজিৎ সিং।

১৯৬৫ সালে ভাগ্যের সন্ধানে মুম্বাই (তৎকালীন বোম্বে) আসা শিখ যুবক জিৎ (পরিবারে এ নামেই ডাকা হতো তাকে) বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল গাওয়া দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন। তবে এর আগে ১৯৬১ সালেও তিনি মুম্বাই এসেছিলেন। কিন্তু সেবার ব্যর্থ হয়ে ফিরে গিয়েছিলেন। সঙ্গীত পরিচালক জয়কৃষ্ণ (জয়কিষেণ) জগজিতের গলায় মুগ্ধ হলেও তাকে ব্রেক দিতে পারেননি। ব্যর্থতার গহ্বরে পড়ে তার অবস্থা এমন হল যে খাওয়া-পড়া তো পরের কথা- ধোপাবাড়ি থেকে কাপড় আনার পয়সাটুকুও সঙ্গে নেই। সব আশা জলাঞ্জলি দিয়ে বাড়ি ফিরে আসবেন? কিন্তু ট্রেনের টিকেট কেনার পয়সা নেই! ওই সময়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে জগজিৎ বলেছেন- ‘বোম্বে থেকে পাঞ্জাবের জলন্ধর পর্যন্ত আমি বিনা টিকেটে ভ্রমণ করেছি, ট্রেনের বাথরুমে লুকিয়ে। ’

জগজিৎ সিংয়ের জন্ম হয়েছিল দরিদ্র পরিবারে। তার ভাষায়, ‘আমরা ছিলাম একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার.. এতটাই গরিব যে একটি ঘুড়ি কেনাও ছিল বিলাসিতা... বেতারযন্ত্র থাকাটাও ছিল আমাদের জন্য বিলাসিতা। ’

ক্লাস নাইনে পড়ার সময়ে প্রথম পাবলিক পারফরম্যান্স করেন। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত মুগ্ধ শ্রোতারা কেউ পাঁচ রুপি, কেউ দুই রুপির নোট হাতে গুঁজে দিয়ে তাকে সম্মান জানান। এ ঘটনা তাকে অনুপ্রাণিত করে।
jagjit
শ্রীগঙ্গানগর কলেজে ৪হাজার শ্রোতার এক অনুষ্ঠানে গাইছিলেন। হঠাৎ বিদুৎ চলে গেল। তবে সেখানকার সাউন্ড সিস্টেম ছিল ব্যাটারিচালিত। জগজিৎ গেয়ে চললেন এবং শ্রোতারা স্থানুর মত বসে তাকে শুনতে থাকলেন। কেউ নড়লেন না। ওই ঘটনা সম্পর্কে জগজিৎ বলেন, ‘আমি গেয়ে চলছিলাম, কেউ নড়ছে না, সব নিশ্চল... এ ঘটনা আর দর্শকদের প্রতিক্রিয়া আমাকে এটা জানান দিয়ে দিল যে আমার গানের দিকেই মনোযোগ দেওয়া উচিৎ। ’

এরপর থেকে রেডিওতে ওই সময়ের ক্ল্যাসিক গায়কদের গান আরও বেশি করে শোনা শুরু করলেন তিনি। তালাত মাহমুদ, আব্দুল করিম খাঁ, বড়ে গুলাম আলী খাঁ, আমির খাঁ প্রমুখ গায়কদের গান শুনতে থাকলেন। আর উর্দু কবিতার ভক্ত জগজিৎ নিজে গাওয়ার ক্ষেত্রে বাণীপ্রধান গানের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠলেন।  

বাণিজ্যিক সাফল্যের বিচারে জগজিৎকে ভারতের সর্বকালের সেরা গজল গায়ক ও সঙ্গীতকার হিসেবে মানা হয়।

ধর্ম-বর্ণ দলমত ভেদে সবশ্রেণীর লোকের সঙ্গেই ছিল তাঁর বন্ধুত্ব। দুনিয়াজুড়ে লাখো-কোটি ভক্তের মধ্যে আছেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও তার স্ত্রী গুরশরণ কাউর। এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপাইর সঙ্গেও তার হৃদ্যতা ছিল। বাজপাইর দু’টি কাব্যগ্রন্থের কবিতা নিয়ে জগজিৎ নিজে সুরারোপিত বের করেছেন দু’টি অ্যালবাম `নই দিশা` ও `সমবেদনা। `

জগজিতের সঙ্গীতচর্চার শুরু ছেলেবেলা থেকেই। হরিয়ানার কুরুক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে গ্রাজুয়েট জগজিৎ গঙ্গানগরের অন্ধ সঙ্গীতশিক্ষক পণ্ডিত ছগনলাল শর্মার কাছে দু’বছর তালিম নেন। এর পরের ছয় বছর ভারতীয় ক্ল্যাসিক সঙ্গীতে সাইনিয়া ঘরানার গুরু জামাল হোসেনের কাছে শেখেন খেয়াল, ঠুমরি আর ধ্রুপদ।    

১৯৬৭ সালে কোলকাতার বাসিন্দা বাঙালি গায়িকা চিত্রা দত্তের সঙ্গে মুম্বাইয়ে (বোম্বে) পরিচয়ের পর দু’বছরের প্রণয় শেষে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। তবে চিত্রা ছিলেন ডিভোর্সি। যাহোক, জগজিৎ-চিত্রা বিশ্বে সফলতম গায়কজুটি-দম্পতির গৌরব অর্জন করেছেন। তাদের দ্বৈত অ্যালবাম এক্সটেসিস, অ্যা সাউন্ড অ্যাফেয়ার ও প্যাশন্স শ্রোতারা সাদরে গ্রহণ করেন। এ জুটির সাড়া জাগানো অ্যালবাম গত শতাব্দীর নব্বই দশকের শুরুতে প্রকাশিত বেউন্ড টাইম।

তবে সাফল্যের শিখরে আরোহণের মাহেন্দ্রক্ষণে সিং দম্পতির জীবনের চরম শোকাবহ ঘটনাটি ঘটে। ১৯৯০ এর ২৮ জুলাই তাদের একমাত্র সন্তান বিবেক (২১) সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। এ ঘটনা অনেকটাই স্থবির করে দেয় তাদের। এর ধারাবাহিকতায় চিত্রা সিং গানের জগতকে বিদায় জানান অর্থাৎ প্রকাশ্যে গান গাওয়া ত্যাগ করেন। তবে তার আগে পুত্রের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত তাদের শেষ অ্যালবামটির (সামওয়ান সামহোয়ার) কাজ তারা শেষ করে নেন।

jagjitগত শতাব্দীর আশির দশকের হিন্দি সিনেমা আর্থ, প্রেমগীত, সাথ সাথ থেকে নিয়ে হালের দুশমন, সারফারোশ, তুম বিন, তারকিবসহ তার গাওয়া সবগুলো ফিল্ম সঙ্গীতই পেয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা।

১৮৫৭ সালের ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের (সিপাহী বিদ্রোহ) দেড়শত বছর পূর্তি উৎসব উপলক্ষে ২০০৭ সালের মে মাসে ভারতের জাতীয় সংসদের সেন্ট্রাল হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে শেষ মুঘলসম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর রচিত ‘লাগতা নাহি দিল মেরা’ (মন বসে না আমার) গেয়ে শোনান জগজিৎ সিং। এসময় দর্শক সারিতে ছিলেন ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, উপ-রাষ্ট্রপতি ভাইরণ সিং শেখাওয়াত, লোকসভা স্পিকার সোমনাথ চ্যাটার্জি, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা, সংসদ সদস্যবৃন্দ, বিদেশি রাষ্ট্রদূতগণ এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।

সব সঙ্গীতেরই এক ধরণের প্রভাব আছে। বলা হয়, জগজিৎ সিংয়ের গায়কীতে এক ধরণেরর নিরাময়কারী আবেশ অর্থাৎ প্রভাব আছে যা অস্থির বা অশান্ত স্নায়ুকে স্বাভাবিক করে তোলে। এ ধারণার ওপর ভিত্তি করে ভারতের বড় বড় শহরে মনোচিকিৎসকরা আজকাল রোগীদের মানিসক চাপ-উদ্বেগ কমিয়ে মনে শান্তি আর স্বস্তি আনার জন্য জগজিতের গান শোনার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

জগজিৎ সিংয়ের বিদেহী আত্মাও সে ধরণের শান্তির রাজত্বে অবগাহন করুক যে রকম শান্তির বাতাবরণ তিনি তার শ্রোতাদের মনে তৈরি করতে পেরেছেন তার গাওয়া গানের মাধ্যমে। সেই  শৈশবের বর্ষণমুখর শ্রাবণ, বৃষ্টির পানি-জমে-যাওয়া উঠোনে কাগজের নৌকা ভাসানোর সুখ তার সঙ্গী হোক।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৬ ঘণ্টা, ১০ অক্টোবর, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।