ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

কবিতা

রাত উল আহমেদের ছয়টি কবিতা 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২, ২০১৭
রাত উল আহমেদের ছয়টি কবিতা  কবিতা

সুরম্য 
চলন্ত কবর, উড়ন্ত শ্মশান  আর মৃত 
মাইকেলকে জলে ভেসে দেয়ার  নিয়ম 

পোস্টারে জড়ো হলে- পরম ফুটে ওঠে 

নানাদিক হতে ঘটে আসা সংশ্লিষ্টতা 
নানাদিকে ছড়ায় খবরের ছাপে
রঙ থেকে চুবে ওঠা কাগজ রংবদলে 
ঘরে আসে, ঘুরে এসে, ঘরে যায়।  

সুরম্য সব নকশায় চলতে থাকা লাঙল, 
আগুনের গুলি, ফোঁপাতে থাকা পেশাগত টুপি  
পোস্টারে জড়ো হয়; বাহারি নকশার নীচে ওঠে
বিব্রত, উদ্ধত, না নেমে আসা চাঁদ।

মধুমাস শেষে
কথাভারাক্রান্ত নির্মল আষাঢ়ে নির্গত কটাক্ষ ভিড়ে 
ঝুলে আছি জট-স্থবির বাসে কুয়াশাঘৃত আমসন্তান।

ঋতু পরিবর্তনের এ সময় ছিল ছোঁয়াচে রোগের ভয়
স্পর্শের পর স্পর্শ মুছে এঁকে দিই আনন্দক্ষত-
যদিও মেঘের ভেতর যত মেঘ, বৃষ্টি, নৃত্যবাসনা
ততো ততো রোগ, আরোগ্য, বটিকা ।

বাচাল ডাক্তারের গুরুগম্ভীর ব্যবস্থাপত্র ভালো,
ওষুধ বিতানের বিক্রেতা দিতে পারলোনা যা।

আহা!
তবু পঙক্তিময় বমি, কনডম, জীববিষ্ঠার এঁদো নালা
তবু বাঙ্ময় পরিত্যাক্ত বীর্য, নার্সের ফেলা নষ্ট রক্তের সিরিঞ্জ
তবু বিড়িতাপিত ওষ্ঠ-অধরের আঠালো ভালবাসা।

দুর্মুষা সীমান্ত- বিস্তৃত, বিস্তৃত, বিস্তৃত...

মাথা ঠিক ঠিক, কেবল ব্যথারা পাশ ফিরে শোয়া
বিষ্ঠার তামাকে ঠোঁট ছাড়ে সূর্যপোড়া ধোঁয়ার কুণ্ডলী
রাঙা টেলিভিশন থেকে নেমে আসা পণ্যসুন্দরীর রঞ্জনে
গাইলো পঞ্চা কানাই-
‘আহ' থেকে বের হয়ে আসা যে সকল 'আহা'

রুটি সেলাইয়ের সুতো
রে বৃক্ষ, পাতার পড়শি, সঘন পাতা ঝরাও নিরবধি
এখানে তাপাবো দু-চার খানা শুকনো পাতার রুটি
হে দৃশ্য, নিরব সময়, বাড়াও সন্ধিদাবি
এখানে নাচাবো কালকেউটে, ঝড়ো সান্ধ্যবাতি
অবাধ্য চুলে দুর্বোধ্য চিরুনির দুস্তর অভিযান 
সে মঞ্চে গায়ক নামাই, গায় বাও-বাতাশী গান ।

করতাল হাতে নরম চোখে নায়িকানৃত্য দেখি
আমি তো সেদিন পড়েইছিলাম ভুলে থাকার রাখি
রুটির সেলাই খুলে খাওয়াবো টুকরো টুকরো মুখে
নির্বাসিনী, অন্তরঙ্গ কষ্ট ছড়াই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সুখে
ঘরের কোণে সুস্থ প্রদ্বীপ, বজ্রবিদ্যুৎ আনি
সবই হবে, রাশিলেখকের রাশিফল যা জানি ।

হে চিহ্ন, বর্ণলিপি, সিধা হয়ে আঁকো
এ নদী বাঁকা হলেও সোজা তাঁর সাকো।

পা ড়  ঘেঁ ষা পা ড়
তোকে আর তোর ছায়াকে 
পাখিরা  গুম করে
সকাল বিকাল
ভাড়াটে মেঘ দিয়ে কেনা সূর্য 
বালি ও বালিকার ওই পাড়।  

বালিকা পাথর ছদ্ম
বালিকা বলির ছদ্ম
বালিকা পলির ছদ্ম
বালিকা নদীর ছদ্মপথ

স্রোতের ছন্দে
ভাওয়া গই
কথা দেশে
চিঠি নাই
মুন্ডু মেরে মাথা দোলা
বালক কিশোর
মাথাঘোরা মোড়ে যায় 

আউলা পথের 
বাহারিয়া মসী
অপদ্যে খাঁচাবাস
আরাধ্যে আরতি
মেঘমালা, চুনকাম, দিনন্তর...

বাওয়ালের কৌতূহল
পাথরের আলখেল্লা বরফের ট্রাউজারের সঙ্গে সিরামিক টুপি পরে
গিয়েছি পোড়ামাটির হাঁড়ি-বাসন আর সৌখিনতার মেলায় 
সেখানে দর্শনার্থীরা ইস্পাতের জামাকাপড় পরিহিত
সুন্দরী মেয়েরা আবৃত তামা-সীসার ফ্রক-কামিজে।

উপকুলে- সমুদ্র বিভূঁইয়ে, তোমাকে কাঠের শাড়িতে দেখেছি
ওষ্ঠাধরে মাখা বধকৃত রয়েল-বাংলা-বাঘের রক্তলাল-ঠোঁটপলিশ
পায়ে স্যাজারু আর কাঁটাখুরা গাছের কণ্টকে
গা-ছমছম নিক্কন তোলা নূপুর
এবং ঘায়েলকৃত বনদস্যুর রক্তের আলতা।
চুল ছিল প্রত্যন্ত সুন্দরবনের জটিল লতাগুল্ম
সে কেশরাশি বেঁধেছিলে বিষধর কীটপোকা দ্বারা।

নিতান্তই বাওয়াল আমি, অনুরোধে আলগা করলে চুল
কৌতূহলবশত: সে চুলে আগুনের হাত বুলাতেই
গলে গলে অদৃশ্য হয়ে নরখাদক বৃক্ষ হয়ে দাঁড়ালে!

তখন মনে পড়লো,  পোড়ামাটির মেলায়
তোমার সঙ্গেও দেখা হয়েছিলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৭
এসএনএস


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।