ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

বৃটেনে কবিতা মরে যাচ্ছে, কবিতার দেশ বাংলাদেশ

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১১
বৃটেনে কবিতা মরে যাচ্ছে, কবিতার দেশ বাংলাদেশ

২০০৩ এর জুনে আমি প্রথমবারের মতো সিঙ্গাপুর হয়ে বৃটেন যাই। খুবই বিস্ময়কর ব্যাপার, সিঙ্গাপুরে কবি ও কবিতা নেই।

সেখানকার প্রবাসী কবি দুলাল মাহমুদকে বললাম, চলো না কোনো সিঙ্গাপুরী কবির সাথে দেখা করি। সে জানালো, সিঙ্গাপুরে তেমন কোনো কবি নেই, এখানে খুব একটা কবিতাচর্চা হয় না। খোঁজখবর নিয়ে জেনেছে একজন সাংবাদিক এবং একজন শিক্ষক কবিতা লেখে।

 কিন্তু তাদের তেমন জনসংযোগ বা জনপ্রিয়তা নেই। কারণ কবিতার প্রতি সিঙ্গপুরবাসীদের আগ্রহ নেই। তারা এখন কল্পিত আবেগ বাদ দিয়ে বেগ অর্থাৎ বাস্তবতা আর প্রযুক্তিতে ব্যস্ত, এক্ষেত্রে বৃটেন ব্যতিক্রম। বার্মিংহামের শেক্সপিয়র জগৎবিখ্যাত কবি। এবং এখনও শেক্সপিয়রের দেশে কবিতার চর্চা হয়, কবিরা সম্মানিত হন। সেখানে রাজকবিও রয়েছেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়, পৃথিবীতে যা বিরল। তারপরও অবাক লাগে, বৃটেনেও কবিতা মরে যাচ্ছে! কমে যাচ্ছে কবিতার পাঠক। বিভিন্ন বুকস্টলে দেখলাম কাব্যগ্রন্থের বিক্রিই সর্বনিম্নে। তবে কবিতার প্রসার এবং কবিতার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ করে বৃটেনে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তার কিছু দৃষ্টান্ত চোখে পড়লো।

যেমন--  সাবওয়ে পাতাল ট্রেনের বগিতে বগিতে যাত্রীদের জন্য কবিতার পোস্টার সেঁটে দেয়া হয়। তা নিয়ে ইতিমধ্যে  Gerard Benson  সম্পাদিত ‘Poems on the underground’ শীর্ষক কবিতা সংকলন বের হয়েছে। (Poems on the Underground was launched in 1986. The programme was the idea of American writer Judith Chernaik, who wanted to bring poetry to a wider audience....Poems are displayed on posters in 3,000 advertising spaces in train carriages across London, and are usually changed three times a year. They are selected by Judith Chernaik, together with poets Cicely Herbert and Gerard Benson.) আর অটোয়াতেও দেখেছি ‘ওসিটি’ অর্থাৎ সরাসরি বাসে কবিতা। ফেব্রুয়ারি ২০০৬-এ আমার একটি ভ্রমণ বিষয়ক কবিতা  সেখানে স্থান পেয়েছিলো।

http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2011August/poetry--BG-220110828160743.jpgযাহোক, লন্ডনস্থ নাট্যপাড়ার কাছেই রয়েছে Poetry Place, সেখানে কবি ও কবিতা প্রেমিকরা কফি খাচ্ছে, আড্ডা দিচ্ছে, প্রেম করছে তরুণ-তরুণীরা, কাউন্টারে পয়সা পে করে (কাস্টমারদেরকে) কবিতা পড়ে শোনাচ্ছেন কবিরা। মাত্র ৫০ পেনিতে বিক্রি হচ্ছে কবিতার বই।

এছাড়াও পোয়েট্রি সেন্টার কবিতা বিষয়ক নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করছে। Poetry Society বের করছে পাক্ষিক Poetry News ম্যাগাজিন। এ ছাড়াও রয়েছে Poetry Cafe। কফি আর কবিতা নিয়ে আড্ডা দেয়ার চমৎকার জায়গা।

কবিতা উৎসব, কবিতা স্কুল, কবিতা দিবস, কবিতা সংকলনপ্রকাশ, কবিতা ওয়ার্কশপ, কবিতা রিভিউ প্রভৃতি চলছে সারা বছরব্যাপী। বাঙালি কবি শামিম আজাদ তো রীতিমত কবিতা নিয়ে নিরীক্ষা করছেন। মঞ্চ মাতিয়ে নেচে-গেয়ে-অভিনয় করে কবিতাকে performing poetry-তে পরিণত করেছেন।

কবিতা প্লেসে দেখা হলো ইতালিয়ান কবি স্টিফেন ওয়ার্টের সাথে। তিনি স্থায়ীভাবেই লন্ডনে বসবাস করেন। বাংলা কবিতা এবং বাংলার কবিতার প্রতি প্রচুর আগ্রহ। তার হাতে দেখলাম জীবনানন্দ দাশের ইংরেজিতে অনূদিত ‘বনলতা সেন’। ২২জন বন্ধু অনুবাদক ২২ ভাবে অনুবাদ করেছেন বনলতা সেন। তার মধ্যে কবি কর্তৃক অনুবাদও রয়েছে। মি.স্টিফেন ধানসিঁড়ি নদী দেখতে যাবেন, বরিশালে। তাই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আলাপের এক পর্যায় জানলাম, শামীম আজাদ তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। জানতে চাইলেন, নাসির আলী মামুনের কথা। মামুনকে তিনি একটি ছোট্ট চিঠিও দিলেন।

কবিতা নিয়ে এতো কিছু হচ্ছে। তারপরও শেক্সপিয়রের দেশে কী কবিতা মরে যাচ্ছে? আড্ডার এক ফাঁকে সেই আক্ষেপই করলেন স্টিফেন। বললেন, বৃটেনে এখন আর কবিতা নেই; কবিতার দেশ বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ সময় ১৫৪৫, আগস্ট ২৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।