ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

নজরুল : একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশে

শান্তনু কায়সার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১১
নজরুল : একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশে

সকলেই জানেন, ১৯৪২ থেকে নজরুলের অসুস্থতার নানা লক্ষণ দেখা দিতে দিতে শেষ পর্যন্ত তিনি মূক হয়ে যান। তারপর থেকে ১৯৭৬-এ মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি যেভাবে বেঁচেছিলেন তাকে ঠিক বেঁচে-থাকা একজন কবি ও বোধবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের বেঁচে থাকা বলে না।

নজরুল কি কখনো নিজের ভবিষ্যত আন্দাজ করতে পেরেছিলেন? ১৩৪৩-এ ফরিদপুর জিলা মুসলিম ছাত্র-সম্মিলনে তিনি সভাপতির অভিভাষণ দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘কতদিন মনে করেছি আমার জানাজা পড়া হয়ে গেছে। তাই যারা কোলাহল করে আমায় নিতে আসে মনে হয় তারা নিতে এসেছে আমায় গোরস্তানে – প্রাণের বুলবুলির স্থানে নয়। কতদিক থেকে কত আহ্বান আসে আজও। যত সাদর আহ্বান আসে তত নিজেকে ধিক্কার দিয়ে বলি – ওরে হতভাগা, তোর দাফনের আর দেরি কত? কতদিন আর ফাঁকি দিয়ে জয়ের মালা কুড়িয়ে বেড়াবি?’

নিজেকে ‘মৃত’ মনে করার একটা প্রধান কারণ ছিল, নজরুল যে ‘নব-অভিযানে’র ‘তূর্যবাদক’ হতে, ‘সুন্দরের জগত’ ও ‘কল্যাণী পৃথ্বী’ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তা আজো ‘ফলল না’। তাঁর পরবর্তীকালের সুভাষ মুখোপাধ্যায় যেমন বলেছেন – ‘ফুল ফুটুক, না ফুটুক/ আজ বসন্ত’, তেমনি নজরুলের আশা না-ফললেও একবিংশ শতাব্দীতেও তিনি সেখানে আমাদের স্বপ্ন ও চেতনার সঙ্গে বসবাস ও তাকে অনুপ্রাণিত করছেন। তিনি যে ১৯৩৮-এ জন-সাহিত্যে বলেছেন, ‘তারা কওমের জন্যে চিৎকার করতে করতে হয়ে যান মন্ত্রী আর ত্যাগ করতে করতে বনে যান জমিদার। কওমের খেদমত করতে করতে কওম যাচ্ছে দরিদ্র হয়ে আর গড়ে উঠছে নেতাদের দালান-ইমারত’, তা মর্মগতভাবেই শুধু নয়, আক্ষরিকভাবে আজো সমান অথবা অধিকতর সত্য।

সুন্দর অথবা সৌন্দর্য কবির অন্বিষ্ট। রবীন্দ্রনাথের ‘অশীতি-বার্ষিকী’ উপলক্ষে লেখা তাঁর কবিতা ‘অশ্রুপুষ্পাঞ্জলি’তে অগ্রজ কবির আশীর্বাদ প্রসঙ্গে তিনি যা লিখেছেন, তাতে কবির স্বরূপ অথবা প্রকৃত অভিপ্রায় বোঝা যায় :

দেখেছিল যারা শুধু মোর উগ্ররূপ,
অশান্ত রোদন সেথা দেখেছিলে তুমি!
হে সুন্দর, বহ্নি-দগ্ধ মোর বুকে তাই
দিয়াছিলে ‘বসন্তে’র পুষ্পিত মালিকা।
একা তুমি জানিতে হে, কবি মহাঋষি,
তোমারই বিচ্যুত-ছটা আমি ধূমকেতু!
আগুনের ফুলকি হল ফাগুনের ফুল,
অগ্নি-বীণা হল ব্রজ-কিশোরের বেণু।

অন্য কবিতা ‘কিশোর রবি’তেও তিনি শুধু রবীন্দ্রনাথের প্রতিই শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেননি, নিজেরও আত্মানুসন্ধান করেছেন :

ভুলাইলে জরা, ভুলালে মৃত্যু, অসুন্দরের ভয়
শিখালে পরম সুন্দর চির-কিশোর সে প্রেমময়।

উত্তরসূরি হিসেবে তাই তিনি তারুণ্যকেই ‘অভয়-সুন্দর’ ভেবেছেন, খুঁজে বেড়িয়েছেন তারুণ্যের প্রকৃত সংজ্ঞা :

এই কি তরুণ? অরুণে ঢাকিছে বৃদ্ধের ছেঁড়া কাঁথা
এই তরুণের বুকে পরম-শক্তি-আসন পাতা?
ধূর্ত বুদ্ধিজীবীর কাছে কি শক্তি মানিবে হার?
ক্ষুদ্র রুধিবে ভোলানাথ শিব মহারুহের দ্বার?
ঐরাবতরে চালায় মাহুত শুধু বুদ্ধির ছলে -
হে তরুণ তুমি জান কি হস্তী-মূর্খ কাহারে বলে?
অপরিমাণ শক্তি লইয়া ভাবিছ শক্তি-হীন -
জবারে সেবিয়া লভিতেছে জরা, হইতেছে আয়ু-ক্ষীণ।

তারুণ্যের অপচয় অথবা তার জরাগ্রস্ত হওয়ার যে-উদাহরণ নজরুল বিভাগপূর্বকালে দিয়েছেন তাকে এই একবিংশ শতাব্দীর প্রজাতন্ত্রে আমরা আদৌ অথবা কতোটা অস্বীকার করতে পারি?

যে হাতে পাইত শোভা খর তরবারি
সেই তরুণের হাতে ভোট-ভিক্ষা ঝুলি
বাঁধিয়া দিয়াছে হায়। – রাজনীতি ইহা।
(‘নতুন চাঁদ’, শিখা)

১৯৪০-এর ডিসেম্বরে কলকাতার ছাত্র-সম্মিলনে প্রদত্ত ভাষণেও কবি বলেছেন, ‘যে কণ্ঠের তকবির-ধ্বনি আল্লাহর আরশ কাঁপিয়ে তুলতে পারে, সেই কণ্ঠ আজ নেতার জয়ধ্বনিতে হলো কলঙ্কিত। ’ সেই তরুণের হাতে ‘আজ ভোট-ভিক্ষার ঝুলি। ’

http://www.banglanews24.com/images/PhotoGallery/2011August/nzrl0120110826140554.jpg‘অভয়-সুন্দরে’ কবি যে ‘ধূর্ত বুদ্ধি-জীবী’র কথা বলেছেন আমাদের বর্তমান বাস্তবতায়ও কি তারা তেমন দুর্লভ? পুত্রের কাছে যৌবনভিক্ষা করে যে যযাতি-বৃদ্ধরা, লোভ ও ভোগে যাদের দূষণ ছড়িয়ে যায়, তারা নিজেদের ঘোষিত মূল্যবোধের সঙ্গে তারুণ্য তথা সৌন্দর্যকেও হত্যা করে। নজরুল ‘বুদ্ধি-জীবী’ বানানের মধ্য দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, এরা বুদ্ধির বেসাতি করেন, পণ্য-মূল্যে, অর্থে ও প্রভাব বিক্রি করে তাদের অহং তৃপ্ত হয়। ‘নেতার জয়গান’কে যে-অর্থে নজরুল ‘কলঙ্কিত’ বিবেচনা করেন, সেই অর্থে বুদ্ধিজীবীরাও কম কলঙ্কিত নন। রাজনীতিকদের প্রকাশ্যে আসতে ও থাকতে হয় বলে তাদের বদনামটা যতো স্পষ্ট ও প্রত্যক্ষ, বুদ্ধিজীবীরা সাধারণত পর্দার আড়ালে কাজ করেন বলে বেশিরভাগ সময়ই তাদের ‘হোয়াইটকালার ক্রাইম’ ততোটা দৃশ্যগ্রাহ্য হয় না। কিন্তু  অন্ত অথবা তৃতীয় নয়ন রয়েছে সেহেতু তাঁর চোখকে ফাঁকি দেওয়া ততো সহজ নয়।

জ্ঞানকে কবি স্বীকার ও শ্রদ্ধা করেন কিন্তু ‘জ্ঞানের মুখোশ’ বা এর ‘সংযম-আবরণ’ তাঁর দুই চক্ষের বিষ। ‘দুর্বার যৌবনে’ তাই তাঁর প্রশ্ন, ‘কা না পুড়ায়ে আগুন জ্বালাবে বলে কোন অজ্ঞান?’ অভিভাষণে বলেছেন, ‘…কা পুড়ছে বলে যে শুধু কার ধ্বংসই দেখল, আগুনের সৃষ্টি দেখল না, তার দৃষ্টি পরিচ্ছন্ন নয়। ’ তবে কবি মনে করেন, জ্ঞান এবং জ্ঞানের ভান ও মুখোশের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে, প্রথমটি ‘আলো দেয়’, দ্বিতীয়টি ‘ঘর পোড়ায় বেশি’।

দুই
নজরুলের বিবেচনায় সত্য ও মিথ্যার মধ্যেও মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। মিথ্যার চেয়েও মন্দ ও ক্ষতিকর ‘সত্য-কথন ছল’। ‘মিথ্যাবাদী’ কবিতায় কবি বলেছেন, সত্যের পিসি-মাসি যতই বাটখারা ও রশি নিয়ে আসুক, ‘গোটা সত্যটা শুধু’ ‘সত্য কথা বলাতেই নেই’। সত্য চাল ডাল বা ‘ব্যাপারী’র কোনো বিষয় নয়, কিংবা মুদিদোকানেও তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

বাংলাদেশ এইরকম একটি সত্য, সংকীর্ণতামুক্ত ও সম্পূর্ণ। নজরুলের ‘নারী’ কবিতার দুটি  পঙ্‌ক্তি উদ্ধার করা যাক :

জ্ঞানের লক্ষ্মী, গানের লক্ষ্মী, শস্য-লক্ষ্মী নারী,
সুষমা-লক্ষ্মী নারীই ফিরিছে রূপে রূপে সঞ্চারি।

কিন্তু আমরা কী দেখছি? নারীর প্রতি অবজ্ঞা, অবহেলা ও সহিংসতা। নারীর প্রতি এই আচরণ থেকেই বোঝা যায়, বাংলাদেশের যা হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। তাই শুধু নয়, একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশক অতিক্রমের সময়ও বাংলাদেশ বাংলাদেশ হওয়া থেকে যথেষ্ট দূরে অবস্থান করছে।

প্রতিক্রিয়াশীলরা তাদের নিজেরই ভাষায় কৌশলগত অবস্থানের কারণে কোনো নারী নেতৃত্বকে আপাতত মেনে নিয়ে তার প্রতি বশংবদ হলেও নারীর প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গির কোনো পরিবর্তন হয়নি। ধর্মের নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করা সহজ বলে তারা ধর্মের কথা বলে বটে, কিন্তু তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য দেশ ও জনগণকে ক্রমাগত পেছনের দিকে টেনে দেওয়া। সে-কারণে যারা একসময় ভৌগোলিক জাতীয়তার অজুহাত তুলে পাকিস্তানকে সমর্থন করেনি ১৯৭১-এ স্বার্থের কারণে তারাই আবার তার সবচেয়ে বড় সমর্থক হয়ে ওঠে। ‘ভারতীয় আগ্রাসন’ যদি প্রকৃতই তাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে থাকতো তাহলে তারা জনগণের বিরুদ্ধে না গিয়ে তাদের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করতো। যে-শক্তি জনগণকে হত্যা, লুণ্ঠন ও ধর্ষণ এবং তাদের গৃহে অগ্নিসংযোগ করেছে ১৯৭১-এ তাদের পক্ষে থাকার মানে কী? যারা সৎ নাগরিকদের তীব্র ঘৃণা ও বিদ্বেষ থেকে দেশ ও রাষ্ট্রদ্রোহী বলেছে এবং তাদের ওই আচরণ থেকে

জনগণ তাদের চিনেছে দেশপ্রেমিক বলে তারা নিজেদের যতই সাফাই গাইতে থাকুক, ইতিহাস ও জনগণ কোনোদিন তাদের ক্ষমা করবে না।

১৯৭১-এ নজরুল তাদের দেখেননি, সেটা বোঝার ক্ষমতাও তাঁর ছিল না। কিন্তু বিভাগ-পূর্বকালে তিনি এমনসব কবিতা ও সম্পাদকীয় লিখে রেখে গিয়েছেন যে, আজ একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকের শেষে এসেও প্রতিক্রিয়াশীল ওই চক্রকে

চিনতে কোনো অসুবিধে হয় না। ‘গোঁড়ামি ধর্ম নয়’-এর

কয়েকটি পঙ্‌ক্তি :

যাহারা গুণ্ডা, ভণ্ড তারাই ধর্মের আবরণে
স্বার্থের লোভে খ্যাপাইয়া তোলে অজ্ঞান জনগণে।
জাতিতে জাতিতে ধর্মে ধর্মে বিদ্বেষ এরা আনি
আপনার পেট ভরায়, তখত চায় এরা শয়তানি।
ধর্ম আন্দোলনের ছদ্মবেশে এরা কুৎসিত,
বলে এরা, হয়ে মন্ত্রী, করিবে স্বধর্মীদের হিত।
ধর্ম জাতির নাম লয়ে এরা বিষাক্ত করে দেশ,
এরা বিষাক্ত সাপ, ইহাদের মেরে কর সব শেষ।
নাই পরমতসহিষ্ণুতা, সে নহে কভু ধার্মিক,
এরা রাক্ষসগোষ্ঠী ভীষণ-অসুর দৈত্যাধিক।
উৎপীড়ন যে করে, নাহি তার কোনো ধর্ম ও জাতি
জ্যোতির্ময়েরে আড়াল করেছে, এরা আঁধারের সাথী।

উল্লেখ্য, ১৯৭১-এর মালিক-মন্ত্রিসভায় প্রতিক্রিয়াশীল এ-গোষ্ঠীরও প্রতিনিধিত্ব ছিল। নজরুল বলেছেন, ‘এরা বিষাক্ত সাপ। ’ এদের কী করতে হবে সেটাও তিনি বহু আগেই বলে গেছেন। একবিংশ শতাব্দীর এ-দশকের শেষ অথবা আগামী দশকের শুরুটাই হচ্ছে তা কার্যকর করার শ্রেষ্ঠ সময়।

Nazrulতিন
নজরুল সম্পর্কে মুজফ্‌ফর আহমদ তাঁর কাজী নজরুল ইসলাম : স্মৃতিকথায় উল্লেখ করেছেন, ‘যে ছেলের বাপ-মা-র পয়সা আছে, সে ছেলেই শুধু স্কুল পালাতে পারে। নজরুলের মা-র পয়সা ছিল না। পড়ার আগ্রহ নিয়ে নিজেই সে স্কুল খুঁজে বেড়াচ্ছিল, পয়সা নেই বলে স্কুলগুলিই তার নিকট হতে পালিয়ে যাচ্ছিল। ’ ক্লাসে তিনি ছিলেন ফার্স্ট বয়, প্রধান শিক্ষকেরও তাঁকে নিয়ে অনেক আশা ছিল। কিন্তু প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষায় প্রথম হয়েও শিকল পরেই শিকল তোদের করবরে বিকল – ব্রত, প্রক্রিয়া ও প্রতিজ্ঞা নিয়ে ৪৯ বাঙালি পল্টনে যোগ দেন। কিন্তু শিক্ষা বিষয়ে তাঁর আগ্রহ মোটেই কম ছিল না। বরং সংস্কৃতির একজন মৌলিক প্রতিনিধি হিসেবে এক্ষেত্রে তাঁর আগ্রহ ও আশা ছিল সুদৃঢ়।

কবির ‘সত্য-শিক্ষা’, ‘জাতীয় শিক্ষা’ ও ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রভৃতি প্রবন্ধের কথা মনে করা যেতে পারে। একটি প্রবন্ধে তিনি বলেছেন, ‘যাহাতে এই জাগরণ-যুগের স্মৃতিচিহ্নস্বরূপ এই জাতীয় বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা বাহিরে না হইয়া ভিতরে হয় সেজন্যেই আমরা এ-সম্বন্ধে কিঞ্চিৎ আলোচনা করিতেছি। আজ ইংরেজের সহযোগিতা বর্জন করিতেছি বলিয়াই যে রাগের মাথায় যেনতেন প্রকারের দুই একটা ঠাটকবাজী জাতীয় স্কুল-কলেজ দাঁড় করাইয়া সরিয়া পড়িতে হইবে, তাহা নয়। ’ তিনি আরো বলেছেন, ‘শুধু হুজুগে মাতিলে চলিবে না; গলাবাজির চোটে স্টেজ ফাটাইয়া তুলিলে চলিবে না– আমরা দেখিতে চাই, কোন্‌ নেতার চেষ্টায়, কোন্‌ দেশসেবকের ত্যাগে কতটি জাতীয় বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা হইল। ’ তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘যাঁহারা জাতীয় বিদ্যালয়ে প্রফেসর বা অধ্যাপক নিযুক্ত হইতেছেন, তাঁহারা সকলেই কি নিজ নিজ পদের উপযুক্ত? কত উপযুক্ত লোককে ঠকাইয়া শুধু দুটো বক্তৃতা ঝাড়ার দরুণ ইহারা অনেকে নিজের রুটি রুজির যোগাড় করিয়া লইয়াছেন ও লইতেছেন। … পবিত্রতার নামে, মঙ্গলের নামে এমন জুয়াচুরিকে প্রশ্রয় দিলে আমাদের ভবিষ্যৎ একদম ফর্সা। ’

তাঁর সেই ভবিষ্যদ্বাণীর ফল আমরা এখন স্বাধীন এই বাংলাদেশেই পাচ্ছি। নারীর প্রতি অসম্মান ও সহিংসতা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও কম নেই। দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এ-দূষণ থেকে মুক্ত নয়। সম্প্রতি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো একটি বিভাগের প্রধান ও অন্যদের সম্পর্কে সংঘবদ্ধভাবে মহিলা শিক্ষকরা স্মারকলিপি দিয়েছেন। Nazrulশতাধিক শিক্ষক এ অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন। মূল অভিযুক্ত অধ্যাপক বলেছেন বলে, সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছে যে, তিনি একটি প্রধান দল করেন আর অভিযোগকারিণী করেন ভিন্ন দল। সে-কারণেই…। তাঁর কথাকে সত্য বলে ধরে নিলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে পরিস্থিতিটি কী ভয়াবহ নয়? দুটি বিপরীত ‘বিশ্বাসে’র (স্বার্থ?) অধ্যাপকমণ্ডলীই যদি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সহাবস্থান করতে না পারেন তাহলে দেশের বাকি অংশে কীভাবে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশ সম্ভব?

এই সংকটের মূল কারণ নজরুল যা বলেছেন তা-ই : ‘আমরাই নিত্য-নিতুই মঙ্গলের নামে দেশের নামে নিজের স্বার্থ বাগাইয়া লইতেছি। এই ভণ্ডামি আর মোনাফেকিই ত সর্বনাশের মূল। ’ তিনি ‘ত্যাগের’ দোহাই দিয়ে স্বার্থোদ্ধারের প্রবল বিরোধী।

কিন্তু হায়, কবির কথা কে শোনে? শুনি বা না শুনি, এই একবিংশ শতাব্দীতেও তিনি আমাদের অনুপ্রাণিত করে চলেছেন। তাঁর বাণীকে যতটাই অবহেলা করবো ততোটাই আমাদের জাতীয় ক্ষতি।

বাংলাদেশ সময় ১৩৩০, আগস্ট ২৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।