ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

নেপালেও বিতর্কিত তসলিমা নাসরিন

আনোয়ারুল করিম, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০১ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১১
নেপালেও বিতর্কিত তসলিমা নাসরিন

বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন নেপাল নিয়েও বিতর্কে জড়ালেন। সোমবার নেপালে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও রোববারই আয়োজকরা তাকে নেপালে না যেতে অনুরোধ করেছেন।

যদিও তার সেখানে আমন্ত্রিত হয়ে যাওয়ার কথা ছিল।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম রোববার এ সংক্রান্ত তথ্য জানাতে থাকে।  

নেপালে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দিতে কয়েকদিন আগেই ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে যান তসলিমা নাসরিন। তিনি নেপালের কাঠমাণ্ডু যাওয়ার উদ্দেশ্যে শনিবার দিল্লি বিমানবন্দরে যান। তবে পাসপোর্ট সঙ্গে নিয়ে না যাওয়ায় তাকে স্বাভাবিকভাবেই কাঠমাণ্ডুগামী বিমানে উঠতে দেওয়া হয়নি।

বিমানবন্দর থেকে ফিরে আসার পর তিনি ট্যুইটার একাউন্টে স্টাটাসে লেখেন, ‘আমার নেপালি বন্ধুরা! আজ আমার কাঠমাণ্ডুর ফ্লাইট মিস হয়েছে। পাসপোর্ট নিয়ে যাইনি। কারণ, নেপাল আমার কাছে বিদেশি রাষ্ট্র বলে মনে হয় না। ’

তসলিমার এ ধরনের খামখেয়ালি বক্তব্য দেওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই ট্যুইটার ও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোর মাধ্যমে তা নেপালে ব্যাপক প্রচার পায়।

রোববার দুপুরের মধ্যেই কাঠমাণ্ডুতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখানো শুরু হয়। ওই সম্মেলনস্থলেও বিক্ষুব্ধরা গিয়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন এবং তসলিমাকে কাঠমাণ্ডুতে প্রতিহত করার ঘোষণাও দেন।  

এ রকম অবস্থায় রোববার আয়োজক কমিটি তসলিমাকে নেপাল সফর বাতিল করার অনুরোধ জানায়। যদিও তার আবারও রোববার বিকেলের দিকে একটি ফ্লাইট ধরে কাঠমাণ্ডু যাওয়ার কথা ছিল।      

ট্যুইটার ও ফেসবুকে প্রতিবাদকারীদের বক্তব্য হলো, ‘তাসলিমা ট্যুইটার বার্তায় নেপালকে স্বাধীন দেশ হিসেবে মনে না করে নেপালকে অপমান করেছেন। ’

নেপালের গণমাধ্যমগুলোতেও তসলিমার ওই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা হয়।

toslima nasrinনেপালের সংবাদমাধ্যম নেপালনিউজের খবরে বলা হয়, ‘বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ আয়োজকরা তাসলিমাকে নেপালে আসতে নিষেধ করেছেন। আয়োজকদের পক্ষ থেকেও তাসলিমার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। ’

উৎসবের অন্যতম আয়োজক অজিত বরাল গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে বলেছেন, ‘নেপালের জনগণের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ায় আমরা তাসলিমা নাসরিনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছি, এ কারণেই তাকে কাঠমাণ্ডু আসতে নিষেধ করেছি। ’

ট্যুইটার বার্তা নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধার পর রোববার তসলিমা অবশ্য নিজের আগের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন। ট্যুইটারে তিনি তার আগের বার্তার ব্যাখা দিয়ে লেখেন, ‘নেপালের সঙ্গে আমার সম্পর্কের গভীরতা বোঝাতেই আগের মন্তব্য করেছিলাম। নেপালকে আমি সত্যিই অনেক ভালোবাসি এবং নেপালের সৌন্দর্য দেখার জন্য অধীর অপেক্ষায় আছি!’

যদিও এ বিলম্বিত ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি নেপালের জনগণ।

উৎসবে তসলিমা নাসরিনের একটি বইয়ের ইংরেজি অনুবাদের মোড়ক উন্মোচন ও তার রচিত সাহিত্য সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল।

তাসলিমা ছাড়াও নেপালের ওই সাহিত্য উৎসবে ভারতে বিবিসির সাবেক ব্যুরো প্রধান মার্ক টালি ঔপন্যাসিক ইরা ত্রিবেদী বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৪ সাল থেকে বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত হন। এরপর পশ্চিমের বিভিন্ন দেশে বসবাস শেষে তিনি ২০০৪ সাল থেকে কলকাতায় বসবাস করা শুরু করেন। সেখানে তসলিমাবিরোধী আন্দোলন দানা বেঁধে উঠলে ২০০৭ সালের শেষ দিকে তিনি গোপনে কলকাতা ছাড়েন। ২০০৮ সাল থেকে তিনি সুইডেনে বসবাস করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০২৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।