লেটার প্রেস
বসে বসে ভাঙ্গা অক্ষরগুলো জোড়া লাগাচ্ছি
হাতগুলো ভিজে যাচ্ছে অবশিষ্ট কালি ও কাদায়
বানান না-জানা কম্পোজিটর আমি
ভারি চশমায় ভিজে ওঠে অক্ষর-শরীর
শব্দ শুধু ভুল হয়
অযোগ্য অক্ষরগুলো হাতে উঠে আসে
কিছুতেই শব্দসীমা বাড়ানো গেলো না
অন্ধকার ঘরে মেশিনের কান্নাগুলো
বাঁকাতেড়া ধাতব অক্ষর হয়ে পড়ে থাকে খোপে খোপে
লেটার প্রেসের সেই
শব্দ জোড়া-দেওয়া ক্ষীণদৃষ্টি যাদুকর হয়ে
দাঁড়িকমা জড়ো করছি দিনভর
মফস্বল শহরের ঘুপসি ঘরে
পাইকা অক্ষরগুলো বেঠিক নিয়মে জোড়া লাগাচ্ছি আমি।
টিপসই
ক্যারোসিনের আলোয় ধরে আছি পাতা
বড় যত্ন করে মাখিয়েছি তেল
প্রতীক্ষা প্রহর
আলোর শিখায় ধীরে ধীরে
কালো হয়ে উঠছে
কাঁঠালের পাতা
টিপসইয়ের কালি
কত কাল হলো
বুড়ি আঙ্গুলের কাছে জিম্মি হয়ে আছি
কিছুতেই যুৎসই হচ্ছিলো না দাগ
দস্তখত নয়
টিপসইয়ে বিশ্বাসী লোক আমি
এতো যে সময় গেলো
বুড়ি আঙ্গুলে বিশ্বাসী হতে
আজ আলোর শিখায় কালো হচ্ছে পাতা
তবু যেন যথাস্থানে টিপসই বসে না আমার!
শব্দবিস্তার/বংশবিস্তার
জানো তুমি
তৃতীয় বিশ্বের কন্যা দায়গ্রস্ত এক পিতা আমি
বড়োই বেকায়দায় আছি
এতো এতো সন্তানাদি নিয়ে
এতো এতো শ্রীহীণতা নিয়ে
সকলেই বলে
কেন আমি দ্বারস্থ করছি না ওদের
কেন আমি বাড়িয়ে চলছি
পুত্রকন্যা
শব্দঋণ
বংশের কালিমা...
কী করে বলি
এখনও মধ্যরাতে
আমি বড়ো চাষি হয়ে উঠি
আমি বড়ো হালতী শ্রমিক হয়ে উঠি
শব্দপুত্র আমি
কী করে অনাবাদী রাখি দিলের হালট
আত্মার জমিন...
রাত ঘন হলে
জ্বলে ওঠে বংশের বাতি
বাক্যঋণ
বংশের আওলাদ
একদিন তারাও দ্বারস্থ হবে কোনো এক বংশগরিমায়
এই ভেবে বিবাহযোগ্য শব্দগুলো তুলে রাখি গোপন সমাল্লে।
চন্দনচারা
সেই কবে লাগিয়েছি চন্দনের চারা
একদিন ফুটাবে সে ঘ্রাণ
এই মর্মে প্রতিদিন তিলে তিলে জাগ্রত হচ্ছে সে
-স্বজনেরা গালমন্দ করে
কেন আমি লাগাচ্ছি না সহজেই বেড়ে-ওঠা গাছ
কী দরকার এতো চন্দনের ঘ্রাণ
কী দরকার অপেক্ষা এতো
এক জীবনে না-দেখা ফল
কাজের অর্জন!
তবুও খায়েস বাড়ে
রুয়ে যেতে চন্দনের চারা তুচ্ছ করে নগদ ফলন
কোনো একদিন যদি বেড়ে উঠে ফোটায় সুঘ্রাণ
এই ভেবে রাত্রি জেগে Ÿজন হারাই, অপেক্ষা বাড়াই
রুয়ে রাখি ধীরে-বাড়া চন্দনের চারা, ক্ষয় করে সোনার তনাই।
তোমাকে নিয়ে ১ কিস্তি
এই বার বাড়ি এসে দেখি
তুমি স্বাস্থ্য পরামর্শ দিচ্ছ আর আমাদের শিশুগুলো হাসিখুশি হয়ে উঠছে
হাঁস-মুরগি পালন হচ্ছে খুব
মাছচাষ বেড়ে গেছে
সুদাসলে চারপাশ উন্নয়নে ভাসে...
উচ্চফলনশীল চাষবাস
জন্মহ্রাস
বাড়িঘর পয়পরিষ্কার
হাত ধোয়া
সকলেই শিখে গেছে
যে-শিশুটি রাতকানা রোগে হয়ে গেলো অন্ধকবিয়াল
যে-রমণী হয়ে গেলো ফতোয়া-শিকার
তার জন্য তোমার ভাবনা বড়ো যথাসাধ্য ছিলো
বড়ো দরকার ছিলো
বলে দেয়া তোমার ক্ষমতা
তোমার বন্ধন...
এতো কিছু
এতো আয়োজন
তবুও তো বেড়ে গেছে কিস্তি দিতে না-পারা নারীর বিষপান
অন্ধকার
অন্ধকার...
আর তুমি জানো
তোমার শাড়ির টানে বদলে যাচ্ছে গ্রাম
বদলে যাচ্ছো তুমি...
এই বার বাড়ি এসে দেখি চারপাশে তুমি বড়ো জ্যান্ত হয়ে আছো!
মুজিব ইরম
কবি, গদ্যকার
বাংলাদেশ সময় ১৬৪৫, জুলাই ৩১, ২০১১