ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

ধারাবাহিক উপন্যাস

মধ্যবিত্ত | কিঙ্কর আহ্‌সান (পর্ব- ৭)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩২ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০১৬
মধ্যবিত্ত | কিঙ্কর আহ্‌সান (পর্ব- ৭)

৭.

পরগাছা সাধনায় ফুল হয়,
কানের দুল হয়।

রোগীর নাড়ি বন্ধ হয়ে গেছে।


মায়ের পাশের বেড। গল্প করেছে আগেরদিন দুপুরবেলা। সুস্থ হয়ে উঠছিলো। হাসি হাসি মুখে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মাকে বলেছিলো, ‘দোয়া করবেন। তাড়াতাড়ি এই মরার হাসপাতাল ছেড়ে বাসায় যেতে চাই। কতো কাজ!’
কাউকে খুশি দেখলে নিজেরও মন ভালো হয়ে যায়। মায়ের মনটাও ভালো ছিলো। মনে হচ্ছিলো তিনিও একদিন সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু এসবের আশায় ছাই ঢেলে রাতের বেলা মারা গেলো পাশের বেডের নারী রোগীটা। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো শুরুতে। বারবার পানির পিপাসা পাচ্ছিলো। ‘পানি। পানি। ’ বলে চেঁচাচ্ছিলো। বড় বড় চোখ দেখে মনে হচ্ছিলো খুলে বের হয়ে আসবে।  
তারপর শেষ। মরে যাওয়ার জন্য এই এতোটুকুনই। মানে কী এসবের? কোথায় চলে যাওয়া? কেন? 
মায়ের মন খারাপ। মৃত্যু কখনই আনন্দ দেয় না। কষ্ট দেয়, দুঃখ দেয়, ভয় ধরায়।   
মা ভয় পায়। মৃত্যুর কাছাকাছি থেকেও, মৃত্যুর সঙ্গে প্রতিমুহূর্তে লড়াই করেও তিনি ভয় কমাতে পারেননি।
মৃত্যু আমাকেও ভাবায়। ডাক্তার বিশ্বজিৎ ক্রিটিকাল কেয়ার সেন্টারে নিয়ে গিয়েছিলো একদিন।  
সেদিন খুব কাছ থেকে দেখেছি সব। বিষাদে ভরা সময়। মাস্ক, অ্যাপ্রন, জুতোর ওপর প্যাচানো পলিথিনসহ আরও কী কী সব নিয়ে ঢুকেছি ঘরে। জীবাণুর ভয় নাকি অন্য কিছু? ডাক্তার বোঝালেন প্রত্যেক বেডের কাছে ছয়টা ক্যামেরা ফিট করা। অনেক রোগীই আওয়াজ করতে পারে না, কথা বলতে পারে না। তাদের ঠোঁটের ওঠানামা দেখে, ইশারায় বুঝে নেওয়া যায় তারা কী চাচ্ছে। অনেকগুলো সজাগ চোখ তৈরি থাকে তাদের প্রতিটা মুহূর্তের প্রয়োজন বোঝার জন্য, মেটানোর জন্য।
এক রোগীকে দেখিয়ে ডাক্তার বলছিলেন, ‘এই তো মারা যাবে কিছুক্ষণের ভেতরেই। চেষ্টা করেছি। হলো না’। রোগীর বয়স বড়জোর ত্রিশ কি বত্রিশ। কাচের দেয়ালের আরেক পাশ থেকে বুঝলাম, ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস পড়ছে। চোখ বন্ধ। কিন্তু একবার আমার দিকে তাকিয়ে চোখের পলক ফেলল যেনো! কেমন লাগবে এমন একজনের সামনে দাঁড়াতে যে আর কিছুক্ষণ পর পৃথিবীতে থাকবে না। সেদিন আর কিছু খেতে পারিনি। রাতে ঘুম হয়নি। মৃত্যু ভয় ধরিয়েছে। ভয় পেয়েছি।
একদিন মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখেই এই অবস্থা আমার। মায়ের না জানি কী হয়! প্রতিদিনই মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই। অপ্রত্যাশিত, ঠিক নেই কিছুই। অদ্ভুত। পৃথিবীর সবকিছু আমার এলোমেলো লাগে।
মন খারাপ করা মা রাতের খাবার খায়। এরপর আমি বের হই। বাড়ি ফিরতে হবে। রুবি অপেক্ষা করে আছে।  
রাত। বাইরে চাঁদ উঠেছে। মুগ্ধ হয়ে মরে যাওয়ার ইচ্ছে জাগার মতন চাঁদ। আমার নানুর ভাত খাওয়ার থালার মতো চাঁদটা। অনেক বড়। অনেকটা বড়। মাটির পৃথিবীর কাছাকাছি খুব।  
কলকাতার চাঁদ সুন্দর। তবে ‘আপন ভিলা’র ধারে-কাছেও যায় না এর সৌন্দর্য। দেশে রাত হলেই বাসার সামনে প্রায়ই জড়ো হতো
একরত্তি চাঁদের আলো। টলমলে জল, রূপোর গহনা যেনো। এমন মায়া মায়া আলো মাহবুবার চোখে দেখেছি। এই এক্ষুণি নেমে আসবে ঝরনাধারা এভাবে। বড় আদর লাগে। এসব সময়ে মাহবুবাকে বকি। চাই একটু কাঁদুক। চোখ ভিজুক, গাল ভিজুক। চোখের জলের রেখা গালে শুকাক। সুন্দর। অপার্থিব সুন্দর।  
আমাদের বাড়ির সামনে চাঁদের এই আলোতে জোনাকি পথ হারাতো। জ্বলা-নেভা না থাকলে মনে হয় তাদের আলাদা করে ঠাওর করাটাই কঠিন হতো। দুই আলো একই রকম যে!
কোটারি হাসপাতালের সামনের রাস্তা দিয়ে আমি অযথাই হাঁটতে থাকি। ব্যস্ত কলকাতার এই রাস্তা এখন কেন জানি থমকে রয়েছে। কারণ, চাঁদের আলো কি? সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য, ছুঁয়ে দেখার জন্য মানুষকে কি থমকে যেতে হয়? শহরের সমস্ত মানুষকে কি এই আলো সমানভাবে ছুঁয়ে যাচ্ছে? মনে হয় না।
জীবন তো এখন ধার করা। আমরা মুগ্ধ হওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি। সব শিখিয়ে, পড়িয়ে দেয় টিভি, সিনেমা, নাটক, বিজ্ঞাপন। কীভাবে ভালোবাসি বলতে হবে, কীভাবে বুলাতে হবে মমতার পরশ, কীভাবে দুঃখ পেতে হবে, আনন্দের সময়ে দু’-হাত ছড়িয়ে দিতে হবে আকাশে সব, সব আমরা শিখে নিচ্ছি, বুঝে নিচ্ছি। মেকি লাগে। পরিমিত সব। ভালোবাসার সেই তীব্রতা কই? দুঃখের সেই গভীরতা আজ আর হাহাকার তৈরি করে না বুকে। সব যেনো জানা। অপরকে জানানোর জন্য। ছোট করার জন্য। বড় হবার জন্য। ‘শো অফ’ যাকে বলে। কথা বলার ক্ষমতাও নেই। শিশু মন বুড়ো হয়ে যাচ্ছে। চাঁদের আলোর চেয়ে দামী কোনো শো-পিস, ঝাড়বাতির আলো জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রেয়সীকে আলিঙ্গন, কাছে টেনে নেওয়া, স্পর্শ করা সব যেনো নিয়মমাফিক। বড্ড তাড়াহুড়ো। ফুরিয়ে যাবে এমন। সব সম্পর্কেই হিসেব-নিকেশ। লোকসান করা যাবে না। প্রাণ নেই। পৃথিবীতে প্রাণ নেই।
অনেকক্ষণ পর পর এক একটা গাড়ি দেখা যায়। কলকাতায় লোডশেডিং নেই বললেই চলে। রাস্তাঘাটে আলোর কারসাজি সারারাত। তবুও আজ যেখানটায় হাঁটছি সেখানটা অন্ধকার লাগে। ছমছমে, নীরব। একটা বড় গাছের নিচে শাড়ি পরা একটি মেয়ে। শাড়ি পরে আজকালকার মেয়েরা? এখনকার মেয়েরা? কারও জন্য অপেক্ষা করছে এই মেয়ে। আমি একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেই। মেয়েটার খারাপ না লাগুক। ভয় না পাক এই রাতে। পাশ কাটিয়ে যাই তাই তাড়াতাড়ি।  


মাহবুবাকে শাড়ি পরলে দারুণ লাগে। একবারই দেখেছি। মেয়েরা শাড়ি পরলেই মেয়ে থেকে নারী হয়ে ওঠে। পূর্ণতা পায়। কেমন লজ্জাবতী লতার মতো ধীরপায়ে সেদিন এসেছিলো। পায়ে আলতা দেওয়া। হাতে ইমিটিশানের গোটা দুই চুড়ি। আকাশি রঙের সিল্কের শাড়িটা সামলানো সেকি কঠিন। শাড়ির পাড়ের নিচ ঘেষে যাওয়া সাদাটে সায়া। গায়ের রঙের সঙ্গে মিশে যেতে চায়। শরীরটা বাঁকিয়ে এই এতোটুকুন হয়ে যাওয়ার চেষ্টা। কোমরে অযথা মেদ নেই। ছবি আঁকতে ব্যস্ত মাহবুবাকে দেখেছি গোপনে। অনেকক্ষণ ধরে। এটা অপরাধ জেনেও থামতে পারিনি। জানি মেয়েটা সাধারণ সুন্দর। কিন্তু শাড়ি পরে অপরূপা হয়ে উঠবে সেটা জানা ছিলো না।  


‘আরে তুমি?’ অন্ধকারে পাশ থেকে বলে একজন। ট্যাক্সির ভেতর। বসে ছিলো। চাঁদ এখন মেঘের আড়ালে। হুট করেই আলো গায়েব হয়ে অন্ধকার ভর করে। আর এদিকটায় গাছ গাছালি বেশি। ভাবি, এই লোকের অন্ধকারে কী? ভয় পাই।  
‘জ্বি’। আমি না চিনে, না বুঝে বলি।
‘আমি রানা। অন্ধকারে বুঝতেছ না। ’ বলেই লাইটারের আগুন জ্বালায় লোকটা। আগুনের আলোতে চিনতে পারি। পরিচিত রানা ভাই। বন্ধুর বড়ভাই। কলকাতায় কি? দেশের বাইরে আসলে জানার তো কথা আমার। বন্ধু বলেনি।  
‘আমার বোনের হাসব্যান্ড অসুস্থ। মাথায় রক্ত উঠছে। ব্রেন স্ট্রোক-ফেসট্রোক মনে হয়। মরার মতোই। বোনের জোরাজুরিতে কলকাতা আসছি। গতকালই। তোমার মায়ের কী অবস্থা?’ একসঙ্গে অনেক কথা বলে ফেলে রানা ভাই। ট্যাক্সি থেকে বের হয়ে সিগারেট ধরায়।  
আমি সিগারেট খাই না সেটা জানে। তাই সাধাসাধির ঝামেলায় যায় না।
‘আছে আর কী মা। আপনার সঙ্গে কে কে আসছে?’ বলি আমি। কৌতুহলী হই। কাছের মানুষ, দেশের মানুষ পেয়ে ভালো লাগে।
‘আমি আর দুলাভাই। আর আইনা লাভ কী? অযথা খরচ। রেজাল্ট তো জানা। বাঁচবে না। ’
‘ও। ’ আমি বলি।
‘কলকাতায় আইসা দেখি দুনিয়ার দেশের মানুষ। এতো মানুষ অসুস্থ দেশের কে জানতো। এই শহর তো চিকিৎসা দিয়া বহুত পয়সা কামায় কি বলো?’
‘তা সত্যি’ স্বীকার করে নেই।
‘দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো হইলে কি আর এতদূর আসা লাগে? উঠছো কই তোমরা?’
‘পরিচিত এক বন্ধুর বাসায়। ’
‘বন্ধু? এইখানে বন্ধু কই পাইলা? হে হে। ’ এই কথা বলতে না বলতেই ট্যাক্সি ক্যাবের ড্রাইভার চলে আসে। কাছাকাছি কোথাও ছিলো মনে হয়। এসে রানা ভাইকে জানায় পেয়েছে। পেপারে মোড়ানো একটা বোতল দেয় রানা ভাইয়ের হাতে। দেখি রানা ভাই খুশি হয়ে উঠেছে। তারপর সে আমাকে জোরাজুরি করে ওঠায় ট্যাক্সিতে। আমি না করলেও শোনে না। বলি, বাড়ি যেতে হবে। অপেক্ষা করে আছে সবাই। রানা ভাই শোনে না। নাছোড়বান্দা। বলে, রাতে খাওয়ার পর ট্যাক্সিতে পৌঁছে দেবে। বাধ্য হয়ে যেতে হয়। দেশের বড়ভাইকে না করতে পারি না।  
পথে যেতে যেতে এই কদিনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর কথা শোনে রানা ভাই। সব বলি। মায়ের অসুস্থ হওয়া, আকাশ নামের লোকটার কথা। বলি যে টাকা নেওয়ার পরেও এক জায়গায় দেখেছি তাকে। কিন্তু পুলিশের ঝামেলা কারণে ধরতে পারিনি। লোকটাকে পেলে শাস্তি দেওয়ার ইচ্ছে নেই। টাকা ফেরত পেলেই হলো। এটাও জানাই।  
দেখি, অনেক কিছুই জানে রানা ভাই। কীভাবে জানলো জিজ্ঞেস করি না।  
একটা সস্তা হোটেলে এসে পৌঁছায় ট্যাক্সিটা। ট্যাক্সিওয়ালাকে বকশিস দিয়ে বিদায় করেন রানা ভাই। হোটেলের নিচেই খাবার দোকান। সেখান থেকে বাটার দেওয়া মোটা রুটি, মুরগির মাংসের গ্রিল আর গুর্দা কাবাব নেওয়া হয়। রানা ভাই আরও কিছু কেনাকাটা করেন। বাদাম, ছোলা, চানাচুর আর সোডা।
হোটেল রুমে ঢুকে তিনি বয়কে আইস আনতে বলেন। পেপার খুলে মদের বোতল বের করেন। আমাকে সহজ করার জন্য বলেন, কাবার আর রুটি খেতে। শিল্পীর মতো যত্নের সঙ্গে লেবুর রস, পেয়াজ, কাঁচা মরিচ, ছোলা, চানাচুর আর বাদাম মেশান একসঙ্গে। সোডা ঢেলে নেয় গ্লাসে, সঙ্গে মদ। সব কাজ শেষ হলে একটু গুছিয়ে বসেন। তারপর গ্লাসে চুমুক দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘টেস্ট করবা নাকি একটু?’
‘না। না। খাই না। ’ আমি একটু জোর গলায়ই বললাম।
‘আরে বিদেশ বইসে এসব করলে দোষ নাই। ইবাদত বন্দেগিতে এফেক্ট করে না। দেশে হইলেই সমস্যা। টেস্ট করো। ভালো লাগবে গ্যারান্টি। ’ এই বলে রানা ভাই মুখের কাছাকাছি গ্লাস নিয়ে আসে। উৎকট গন্ধ। ঢেকুর দিলে এমন ঝাঁঝওয়ালা ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
‘আমি না। দিবেন না রানা ভাই। খাই না। ’ বলে মুখ সরিয়ে নেই দ্রুত। অপুদাও দেখেছি মদ একা খেতে পারে না। সঙ্গী থাকলে আরাম পায়। আমাকে সেকি জোর করেছিলো একদিন! অপুদাকে না করেছি। এরপর আর কিছু বলেনি।
আমার আচরণে রানা ভাই হাসে। জোরে শব্দ করে। হা হা হি হি। এক পেগেই ধরেছে।  
‘তুমি তো কচি মিয়া। ধুর। মদে একলা হইলে মজা নাই। সাথী লাগে। তোমারে তো এই জন্যই আনলাম। ’ এই কথা বলে সে কান্না শুরু করে। কান্নার কারণ জানি না। জানতেও চাই না। আমার বাসায় যাওয়ার তাড়া। কই এসে ফাঁসলাম!
‘রানা ভাই, আমার যাইতে হবে। ’
‘আরে ওয়েট। কই যাবা? আমি একলা থাকবো? তুমি তো পাষাণ। শোনো, বোনটারে নিয়া দুঃখে আছি। কী হবে জানি না। দুলাভাইয়ের কঠিন রোগ! বয়স তো অল্প তারপরও। লোকটাও ভালো। ওপরওয়ালা দুনিয়াতে ভালো লোক রাখে নারে ভাই। লোকটা মরলে বোন কই থাকবে? টেনশন। টেনশন। ’ 
‘শান্ত হন রানা ভাই। ’
‘আর শান্ত, শান্ত। বোনটা এমন পোড়াকপালি ক্যান আমার?’ কথা বলে মাথার চুল টানতে থাকে রানা ভাই। তার চোখ লাল হয়ে উঠেছে। পাগলামি করে নিজেই আবার শান্ত হয়ে যায়। নেশায় মনে হয় তার এমনই হয়। আমার ভয় লাগে।  
‘আমি যাই রানা ভাই। সবাই টেনশনে পড়বে নইলে। ’
‘আরে থামো না। তোমার বড়ভাই আমি থাকতে বলতেছি আর তুমি খালি যাও যাও লাগাইছো। রেসপেক্টই করো না আমারে। যাবা তো। আমি আটকাইছি? কথা আছে। কথা শেষে যথায় ইচ্ছায় তথায় যাও আটকাবো না। শোন, তোমার বাবার ব্যাপারটা নিয়া কথা বলা হয় নাই। চাকরি নাকি নাই উনার। খোলাসা করো তো বিষয়টা শুনি। ’
রানা ভাইয়ের কথা শুনে আমি বোকা হয়ে যাই। কীভাবে চাকরি যায়? কী হচ্ছে? কী হবে? নেশাগ্রস্ত মানুষ তিনি। ভুল বলতে পারেন। আমি কথা বলি না। বলার মতো কী আছে? জানি না তো কিছু। আমি অপেক্ষা করি। রানা ভাই বলুক। তার কথা শোনা দরকার।
‘সাসপেন্ড হইছে শুনলাম। পত্রিকায় আসছে। এলাকায় তো হাসাহাসি মিয়া। ঘুষ-টুস এর ব্যাপার নাকি? তোমার বাবা তো লোক ভালো শুনছি। অফিসের পলিটিকস্ থেকেও হইতে পারে। ফাঁসায় দিছে। কী বলো?’ রানা ভাই বলে। আমার মুখ থেকে কিছু শুনবে এই আশায় আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।  আমার কিছু বলার নেই।  

আমি রানা ভাইয়ের কথা বিশ্বাস করতে চাই না। আমি জানি এই কথা সত্যি নয়। সত্যি হলে আমাদের অনেক বিপদ। সে বিপদ সামাল দেওয়ার সার্মথ্য আমাদের নেই বলেই মনে হয়।
‘আমি যাই রানা ভাই। আটকায়েন না। আরেকদিন কথা হবে। গেলাম। ’ এই বলে বের হই। রানা ভাই কী বললো, আটকানোর চেষ্টা করলো কিনা এসব দেখি না। জাস্ট বের হয়ে যাই।
রাত হয়েছে। পথঘাট অচেনা। বুনোর ঠিকানাটা খেয়াল আছে। পকেটে টাকাও আছে। ট্যাক্সি করলেই হয়ে যায়। পৌঁছে দেবে। ঝামেলা নেই। এই শহরে রাতে অনেক মানুষ চলাফেরা করে। ভয়ের কী?
আমি ট্যাক্সি করি না। হাঁটতে থাকি। চুপচাপ। কোনোকিছু না ভেবে কোনো এক দিকে।
হাঁটতেই থাকি। যেনো অন্ধকারে মিলিয়ে যাবো আজ আমি। অন্ধকার হবো।
ভালো লাগে না। মাথার ভেতর রানা ভাইয়ের কথাটাই বেজে যাচ্ছে বারবার। যন্ত্রণা দিচ্ছে।
‘চাকরি নাই উনার। চাকরি নাই উনার। চাকরি নাই উনার। চাকরি নাই...। ’
সত্যি? 

চলবে…

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৮ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৬
এসএনএস

আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন-
**মধ্যবিত্ত | কিঙ্কর আহ্‌সান (পর্ব- ১)
** মধ্যবিত্ত | কিঙ্কর আহ্‌সান (পর্ব- ২)
** মধ্যবিত্ত | কিঙ্কর আহ্‌সান (পর্ব- ৩)
** মধ্যবিত্ত | কিঙ্কর আহ্‌সান (পর্ব- ৪)
** মধ্যবিত্ত | কিঙ্কর আহ্‌সান (পর্ব- ৫)
** মধ্যবিত্ত | কিঙ্কর আহ্‌সান (পর্ব- ৬)

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।