ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

শিল্প দিয়েই গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিনি

মনোয়ারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০১১
শিল্প দিয়েই গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিনি

ঢাকা: শিল্পই আমার জীবন। শিল্পই আমার সব।

শিল্পীর জীবনে তুমি কি অনুপ্রেরণা হতে পারবে? বিয়ের প্রথম দিন স্ত্রী নূরজাহান ইসলামকে ঠিক এভাবেই প্রশ্ন করেছিলেন আমিনুল ইসলাম।

নূরজাহানের ভাষায়, ‘আমি সে চেষ্টা করেছি। কিন্ত এখন সে আর আমাদের মাঝে নেই। আছে শুধু তার শিল্পকর্ম। ’ তার কাছ থেকেই জানা যায়, ‘তার কোনো বিষয়ে অভিযোগ, চাওয়া-পাওয়া ছিল না। তিনি অল্পতেই তিনি তৃপ্ত ছিলেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি বিনয়ী স্বভাবের ছিলেন। ’

বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পকলা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ এই শিল্পীর জন্ম ৭ নভেম্বর, ১৯৩১ সালে, ঢাকায়। তার শিল্পকর্ম দেশে ও বিদেশে ব্যাপক সমাদৃত৷

তৎকালীন ঢাকা সরকারি আর্ট ইনস্টিটিউটের (বর্তমানে চারুকলা অনুষদ) প্রথম ব্যাচের ছাত্র হিসেবে ভর্তি হন তিনি।

১৯৫৩ সালে ঢাকার চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে চারুকলার উপর ডিগ্রি লাভের পর ইতালিতে পাড়ি জমান। ১৯৫৩-১৯৫৬ এই ক’বছর তিনি ফ্লোরেন্স একাডেমী অব ফাইন আর্টস অ্যান্ড দ্য স্কুল অব মোজাইক থেকে উচ্চতর শিক্ষা নেন। এরপর মা ও মাটির টানে দেশে ফেরেন।

তিনিই প্রথম বাংলাদেশে মোজাইক মাধ্যমে ম্যুরালের (দেয়ালভাস্কর্য) কাজ শুরু করেন৷ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় তাঁর ম্যুরাল দৃশ্যমান৷ বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন, জনতা ব্যাংক ও ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন ভবনের দেয়ালের ম্যুরাল আমিনুলের অন্যতম শিল্পকর্ম৷

বাংলাদেশে ম্যুরালের পথিকৃৎ আমিনুল ইসলাম সম্পর্কে চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সবার প্রিয় আমিনুল ইসলাম বিমূর্ত ঘরানার শিল্পী ছিলেন। রেখা ও জ্যামিতিক আকারের মধ্য দিয়ে তিনি বিস্তার করেছেন পরিধি। আঞ্চলিকতার ভেতরে আটকে না থেকে তিনি তার পরিধিকে, ভাবনাকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্বব্যাপী। তিনি শিল্পের মধ্য দিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছেন। তিনি একজন অমর শিল্পী। ’

আমিনুলের ছাত্র অধ্যাপক ড. হামিদুজ্জামান খান বলেন, ‘স্যারের লেখা বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর বইয়ে তিনি লিখেছিলেন, শিল্প দিয়ে আমি চাই গল্প বলতে। গল্প হতে হবে জাদুময়। তাতে থাকবে আন্দোলিত হওয়ার ভাষা। সেই ভাষা যদি দোলা দেয়, আলোড়িত করে, তবেই আমার প্রয়াস সার্থক হবে। তিনি একজন সার্থক শিল্পী ও আমাদের পথ প্রদর্শক। ’

শিল্প সমঝদার সুবীর চৌধুরী বলেন, ‘সবদিক বিবেচনায় শিল্পী আমিনুল ইসলামের শিল্পকর্ম ও ক্যালিগ্রাফি আমাদের চারুশিল্পে এক নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে। তিনি তাঁর শিল্পকর্মের মধ্যে বেঁচে থাকবেন চিরকাল। ’

চারুকলা শিল্পে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি অনেক পুরস্কার পান এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ১৯৫৭ সালে পাকিস্তানের করাচিতে আয়োজিত জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে প্রথম পুরস্কার, ১৯৬৫ সালে ঢাকায় দ্বিতীয় পুরস্কার।

১৯৭৫ ও ১৯৭৬ সালে প্রথম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী পুরস্কার’। ১৯৮১ সালে আমিনুল একুশে পদক লাভ করেন ।

বাংলাদেশের চারুকলা শিল্পের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে তার উজ্জ্বল ও প্রশংসনীয় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার-১৯৮৮ দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪০, জুলাই ০৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।