ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

জয়ন্ত মহাপাত্রর কবিতা

ভূমিকা ও অনুবাদ : আহমদ বুলবুল ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৩ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০১১
জয়ন্ত মহাপাত্রর কবিতা

ইংরেজি ভাষায় লিখেছেন এমন তিনজন ভারতীয় কবি, যাদের স্তম্ভ বলে ধরা হয়, জয়ন্ত মহাপাত্র তাঁদেরই একজন। তিনি তাঁর সমসাময়িক বোম্বে ঘরানার কবিদের থেকে ছিলেন সম্পূর্ণ আলাদা।

ধীরে ধীরে তিনি আয়ত্ত করেছেন প্রশান্তিময় নিজস্ব এক কাব্যিক কণ্ঠ, যা তার সমসাময়িকদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তাঁর শাব্দিক কাব্যময়তা একান্ত ভারতীয় বিষয়কে ধারণ করে তাঁকে দিয়েছে এক আলাদা মর্যাদা।

জয়ন্ত মহাপাত্র ২২ অক্টোবর ১৯২৮ সালে ভারতের কট্টকে জন্মগ্রহণ করেন। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। কটকের সিওয়ার্ট স্কুলে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা। পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর ১৯৪৯ সালে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। কর্মজীবনে তিনি উড়িষ্যার বিভিন্ন কলেজে পদার্থবিদ্যা শিক্ষাদান করেন। ১৯৮৬ সালে অবসর ননে।

যদিও তাঁর মাতৃভাষা উড়িয়া, কিন্তু জয়ন্ত মহাপাত্র লিখেছেন ইংরেজিতে। তাঁর ১৮টি কাব্যগ্রন্থ রয়েছে। ৩৮ বছর বয়সে কবিতা লিখতে শুরু করেন। চল্লিশের প্রথমার্ধে তাঁর প্রথমদিককার কবিতাগুলি প্রকাশিত হয়। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘স্বয়ম্ভরা এবং অন্যান্য কবিতাগুচ্ছ’ ১৯৭১ সালে প্রকাশিত হয়। এর পরপরই প্রকাশিত হয় Close the Sky এবং Ten by Ten। তাঁর কাব্যসংগ্রহের মধ্যে আছে Rain of Rites, Life Signs এবংA Whiteness of Bone। তাঁর সাম্প্রতিক কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে Shadow Space, Bare Face এবং Random Descent

 দীর্ঘকবিতাRelationship তার একটি উল্লেখযোগ্য কাজ। এর জন্য তিনি ১৯৮১ সালে ভারতের সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। জয়ন্ত মহাপাত্র হচ্ছেন ভারতের প্রথম ইংরেজি-ভাষার কবি, যিনি এই সম্মান লাভ করেন। এছাড়া তিনি তাঁর প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি।

কবিতা ছাড়াও তিনি গদ্যে বহুপ্রজ আঙ্গিকের নিরীক্ষা করেছেন। তাঁর প্রকাশিত গদ্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে The Green Gardener নামে একটি ছোটগল্পের বই।

জয়ন্ত মহাপাত্র অনেক বছর ধরে কটক থেকে প্রকাশ করে আসছেন একটি সাহিত্য পত্রিকাChandrabhaga। উড়িষ্যার শুকিয়ে যাওয়া সুবিখ্যাত নদী ‘চন্দ্রভাগা’র নামে এই পত্রিকা।

তাঁর কবিতা বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘My Poems deal with the life within myself where the mind tries to find a short of coherence from the mass of things in the world outside it’  (Sunday Observer, ২৭ মে, ১৯৮৪)।  

জয়ন্ত মহাপাত্রর বিখ্যাত একটি কবিতা Hunger-এর অনুবাদ পাঠকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া হলো । এটি ইংরেজি থেকে অনূদিত।

ক্ষুধা

এটা ছিল অবিশ্বাস্য যে
আমার দেহ হয়ে উঠল বোঝার মতো ভারী
 জেলেটি বলল : তুমি তাকে পেতে চাও, আনমনাভাবে
তার জাল আর স্নায়ু নাড়াচাড়া করতে করতে
 যেন তার কথা নিষ্কলুষ করল প্রয়োজন
যার মুখোমুখি সে নিজেই
আমি দেখলাম
 চোখে তার  তোলপাড় করা শাদা হাড়

আমি তাকে অনুসরণ করলাম
ছড়ানো বালির উপর দিয়ে
আমার হৃদয় আঘাত করল দেহজ তীরের ফলায়
আশা হয়তো পুড়ছে আমার জ¦লন্ত ঘরে
নিস্তব্ধতা শক্ত হাতে
আঁকড়ে ধরলো জামার আস্তিন
তার শরীর হয়ে উঠলো আঠালো, ফেনায়
সমুদ্র থেকে টেনে তুললো শুধু তার জীর্ণ জাল

কম্পমান অন্ধকারে তার সাগ্রহ চেষ্টা
উন্মুক্ত  হলো এক ক্ষতের মতো
আমি ছিলাম সেই বাতাস
দিন ও রাত্রির সমুখে
তালপাতা আমার চামড়া আঁচড়ে দিলো
ঝোলার ভেতরে একটি প্রদীপ
সময়কে গুচ্ছবদ্ধ করলো ওই দেয়ালে
বার বার ধোঁয়ার আঁঠালো কালি
অতিক্রম করলো আমার মনোভূমি

 সে বললো : আমার কন্যা, সে পনেরোয় রেখেছে পা
তার স্বাদ নাও, আমি শীঘ্রই ফিরবো
ন’টায় তো তোমার বাস
আমার মাথার উপর ভেঙ্গে পড়লো আকাশ
এবং একজন পিতার ক্লান্ত কূটকৌশল
দীর্ঘ ও অনুৎপাদনশীল তার বছরগুলো ছিলো
রাবারের মতো শীতল
 সে প্রসারিত করলো তার জীর্ণ ঊরুযুগল
আমি অনুভব করলাম তার ক্ষুধা
অন্যটি, পিছলে যাওয়া এক মাছ
ঘুরছে গভীরে।

বাংলাদেশ সময় ১৯০৯ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।