ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ মে ২০২৪, ০০ জিলকদ ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

প্রতিদিনের ধারাবাহিক

১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ৩ কিস্তি ১৭) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

অনুবাদ উপন্যাস ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৫
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (খণ্ড ৩ কিস্তি ১৭) || অনুবাদ: মাহমুদ মেনন

George_Orwell_inner১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

২০০৪ সালে ‘দি গার্ডিয়ান’র জরিপে উপন্যাসটি বিশ্বের চিরায়ত গ্রন্থের তালিকায় উঠে আসে সবার উপরে। ইংরেজি ভাষার এই উপন্যাসটি কালজয়ী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। যাতে ফুটে উঠেছে সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, যুদ্ধ, শান্তির প্রেক্ষাপট। বাংলানিউজের জন্য বইটি বাংলায় অনুবাদ করছেন মাহমুদ মেনন। উল্লেখ্য, জর্জ অরওয়েলের মূল নাম এরিক আর্থার ব্লেয়ার। ১৯০৩ সালের ১৫ জুন ব্রিটিশ ভারতের বিহার রাজ্যের মথিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন লন্ডনে ১৯৫০ এর ২১ জানুয়ারি। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘দি রোড টু উইগ্যান পাইয়ার’, ‘হোমেজ টু ক্যাটালোনিয়া’, ‘এনিম্যাল ফার্ম’।

___________________________________

শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন

তৃতীয় খণ্ডের ১৬ম কিস্তি
___________________________________


তার শরীর জুড়ে ব্যথার ধমক বয়ে গেল। এবার ডায়ালের কাঁটা সত্তর কিংবা পঁচাত্তর ছুঁয়েছে নিশ্চয়ই। এবার সে চোখ বন্ধ করে ফেলল। সে জানে আঙুলগুলো তখনও সেখানে ধরে রাখা, আর চারটিই আঙুল। যতক্ষণ এই খিঁচুনি চলবে ততক্ষণ বেঁচে থাকতে পারার চিন্তাটাই এখন তার কাছে মুখ্য। চিৎকার করে উঠছে কি উঠছে না সে নিয়ে ভাবনা এবার সে ছেড়ে দিয়েছে। ফের ব্যথা কমে এলো। সে চোখ খুলল। ও’ব্রায়েন হাতলটি পেছনে ঘুরিয়ে দিলেন।

‘কয়টি আঙুল, উইনস্টন?’
‘চারটি। আমার ধারণা চারটি। তবে আমি চাই পাঁচটি দেখতে। পাঁচটি দেখতে পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ’
‘তুমি আসলে কোনটা চাইছো, আমাকে প্রভাবিত করতে, যেন আমি ভাবি তুমি পাঁচটি দেখছো, নাকি আসলেই তুমি পাঁচটি দেখতে চাইছো।
‘সত্যিই পাঁচটি দেখতে চাই। ’
‘আবার’—বললেন ও’ব্রায়েন।



না হে, কেবলই তোমার স্বীকারোক্তি নিতে নয়, তোমাকে সাজাও দিতে নয়। বলব, কেন আমরা তোমাকে এখানে এনেছি? তোমার নিরাময়ের জন্য! তোমাকে পরিশুদ্ধ করে তোলার জন্য! বুঝেছো হে, উইনস্টন, এখানে আমরা যাকেই নিয়ে আসি তার রোগের নিরাময় না করিয়ে ছাড়ি না। ওইসব ফালতু যে অপরাধ তুমি করেছো তাতে থোড়াই পাত্তা আমরা দেই। কারো বাড়াবাড়িতেও পার্টির নেই সামান্য আগ্রহ, আমাদের কাজের স্থান একটাই তোমার চিন্তা। আমরা আমাদের শত্রুদেরও ধ্বংস করি না, আমরা তাদের পাল্টাই।



হতে পারে কাঁটা এবার আশির ঘরে—নব্বুইও হতে পারে। উইনস্টন তৎক্ষণাৎ ভুলে গেল কেন এই ব্যথার ব্যবস্থা। তার বুঁজে থাকা চোখের পাতার পেছনে এক দঙ্গল আঙুল যেন নাচানাচি করছে, দোল খাচ্ছে, একটি পেছনে অন্যটি এই লুকোচ্ছে, এই বেরিয়ে আসছে। সে ওগুলো গোনার চেষ্টায় রত, কিন্তু সে মনে করতে পারছে না কেন এই গণনা। সে শুধুই জানে এই গণনার চেষ্টা বৃথা, আর তা হয়ত হতে পারে, চার আর পাঁচের রহস্যময় পরিচিতির কারণেই। ফের উবে গেল ব্যথা। যখন সে চোখ খুলল, তখনও তার একই জিনিস দেখার কথা। অসংখ্য আঙুল, ঘুর্ণায়মান গাছেদের মতো তখনও হেলছে দুলছে, এবার এদিক থেকে ওদিকে আরবার ওদিক থেকে এদিকে যাচ্ছে। ফের চোখ বন্ধ করে ফেলল সে।

‘কয়টি আঙুল আমি তুলে ধরেছি, উইনস্টন?’
‘আমি জানি না। আমি জানি না। আপনি যদি আবারও একই কাজ করতে চান তো আমাকে মেরে ফেলেন। চার, পাঁচ, ছয়—সত্যি বলছি, সততার সাথে বলছি আমি জানি না। ’
‘কিছুটা ভালো’—বললেন ও’ব্রায়েন।

উইনস্টনের বাহুতে একটি সূঁচ ঢোকানো হলো। ঠিক তখনই একটি সুখময়, প্রশান্তির উষ্ণতা শরীরের ভেতর দিয়ে বয়ে গিয়ে সবকিছুর উপশম করে দিল। ব্যথার কথা ততক্ষণে আধাটা ভুলেই গেছে সে। চোখ খুলল আর কৃতজ্ঞতার চাহনিতে তাকাল ও’ব্রায়েনের দিকে। ভারী, দাগভর্তি, কদাকার আর বুদ্ধিদীপ্ত মুখখানি দেখে তার হৃদয় যেন গলে গেল। সে যদি নড়তে পারত একটি হাত ও’ব্রায়েনের বাহুতে রাখত। এই মুহূর্তে যতটা লাগছে, এতটা ভালো ও’ব্রায়েনকে আর কখনোই লাগেনি তার, কারণ তিনিই তার ব্যথা থামিয়েছেন। পুরনো ভাবনাটি, ও’ব্রায়েন আসলে বন্ধু, নাকি শত্রু, ফের এসে ভর করল তার মনে। ও’ব্রায়েন এমন একজন যার সঙ্গে কথা বলা চলে। কেউ কারো কাছে যতটা ভালোবাসা চায় তার চেয়ে হয়ত বেশিই চায় তাকে বুঝতে পারুক। ও’ব্রায়েন তার ওপর পাগলের মতো নির্যাতন চালিয়েছেন। কিছু সময়ের জন্য সে নিশ্চিতই হয়ে গিয়েছিল, তিনি ওকে মেরে ফেলতে চান। এতে কিছুই যেয়ে আসে না। অন্য কিছু রয়েছে যা তাকে বলে দেয় তাদের মধ্যে বন্ধুতার চেয়ের গভীর কিছু রয়েছে, তারা একে অপরের ঘনিষ্ঠ: কোথাও বা অন্য কোনোখানে, যদিও সঠিক শব্দগুলো কখনোই হয়ত বলা হবে না, একটি স্থান মিলে যাবে যেখানে তাদের দেখা হবে, কথা হবে। একটি অভিব্যক্তি দিয়ে ও’ব্রায়েন তার দিকে তাকিয়ে, যা বলে দেয়, ঠিক একই ভাবনা তারও মন জুড়ে। যখন কথা বললেন তখন তা সহজ, কথোকথনের ভঙ্গিমায় কাজে বাজল।

‘তুমি কি জানো তুমি এখন কোথায়, উইনস্টন?’—বললেন তিনি।
‘জানি না। তবে ধারণা করছি ভালোবাসা মন্ত্রণালয়েই হবে। ’
‘তুমি কি জানো কতদিন ধরে তুমি এখানে?’
‘জানি না। কয়েক দিন, কয়েক সপ্তাহ, কয়েক মাস—আমার ধারণা কয়েক মাসই হবে। ’
‘তুমি কি বুঝতে পারো কেন আমরা মানুষদের এখানে আনি?’
‘স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য। ’
‘নাহ! ওটা কারণ নয়। ফের চেষ্টা করো। ’
‘তাদের শাস্তি দিতে। ’
‘নাহ!’—বিস্ময়ের উচ্চারণ ও’ব্রায়েনের। তার কণ্ঠ অস্বাভাবিকভাবে বদলে গেল। আর তার চেহারাটি হঠাৎই একইসঙ্গে কঠোর আর চঞ্চল হয়ে উঠল। ‘না হে, কেবলই তোমার স্বীকারোক্তি নিতে নয়, তোমাকে সাজাও দিতে নয়। বলব, কেন আমরা তোমাকে এখানে এনেছি? তোমার নিরাময়ের জন্য! তোমাকে পরিশুদ্ধ করে তোলার জন্য! বুঝেছো হে, উইনস্টন, এখানে আমরা যাকেই নিয়ে আসি তার রোগের নিরাময় না করিয়ে ছাড়ি না। ওইসব ফালতু যে অপরাধ তুমি করেছো তাতে থোড়াই পাত্তা আমরা দেই। কারো বাড়াবাড়িতেও পার্টির নেই সামান্য আগ্রহ, আমাদের কাজের স্থান একটাই তোমার চিন্তা। আমরা আমাদের শত্রুদেরও ধ্বংস করি না, আমরা তাদের পাল্টাই। বুঝেছো আমি কী বলতে চাইছি?

তৃতীয় খণ্ডের ১৮ম কিস্তির লিংক



বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।