ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

ঈদ-উল-আযহায়—

মেহেদী উল্লাহর গল্প | শুষ্ক ঠোঁট তোমার, আহা

কবিতা ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৫
মেহেদী উল্লাহর গল্প | শুষ্ক ঠোঁট তোমার, আহা অলঙ্করণ : খেয়া মেজবা

ভাবছি একা একা
কথাগুলো তুলে আর কী হবে? যা হবার তা হয়ে যায়, ঘটার থাকলে ঘটে যায়। সমাজ-রাষ্ট্রকে এখন আর এ বাসি আলাপ শুনিয়ে কী হবে? এমন কিছু জিনিসপাতি থাকে, যার সমাধান নিজের কাছে নেই তো, পরের কাছেও নেই, তার রেজাল্ট বারোমাসি বাজারি বেগুনের মতো উঠে চলে, মনের খাতায় তার নির্দিষ্ট সময় ধরা নেই।

তবুও...।

পাতা: ১
চেইন খুলে ক্লচ ব্যাগটার ভেতরে হাত ঢুকিয়ে এধার-ওধার খুঁজে পেট্টোলিয়াম জেলির ছোট্ট কৌটাটা বের করলে তুমি। আঙ্গুলের মাথায় মেখে নিয়ে ছোঁয়াতে থাকলে ঠোঁটে। তোমার ব্যাগে সবসময় থাকে ওটা। সম্ভবত তোমার ঠোঁট সারা বছরই শুষ্ক থাকে—যেখানে অন্যদের বেশি শীতে, ঠিক বলিনি! এমন একটা চটানো ঝগড়াঝাটির পর কেউ ঠোঁটে জেলি মাখাতে পারে! ঘাড়টা বামপাশে একটু হেলিয়ে যথাস্থানে ফিরিয়ে দিলে কৌটাটা। এ অবস্থায় ঠোঁটে জেলি লাগাবার অভ্যেসটা মাথায় থাকল কিভাবে, আর তুমিই বা কেমন করে সায় দিতে পারলে কে জানে! হয়ত ততক্ষণে তোমার মেজাজ পড়ে এসেছে বসন্তের কোনো শাখা প্রশাখাময় বৃক্ষের মতো—দুপুরের রোদে তেঁতে পড়ন্তে আবার রোদ্র ঝেড়ে ফেলে, বিকেলে ছায়া ছড়িয়ে উদার হয়ে যাওয়ার ছবিটা! তবে বাইরে শান্ত ভাববার মতো কোনো লক্ষণ দেখলাম না তোমার মধ্যে। ক্লচ ব্যাগটা সাজটেবিলের ওপর রেখে তুমি ও ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে—কোথায় দেখিনি। অবশ্য যাওয়ার/লুকোবার/খুব বেশি আড়াল হওয়ার সুযোগ যে এ বাসায় আছে, তা নয়। দুটো বেড, একটা ড্রয়িং, আর সরু পথের কিচেন। ড্রয়িং রুম থেকে বেরুবার পথে বেশ চাপানো জায়গা নিয়ে খাবারে বসবার জন্য একটু বারাদ্দ। তাই তুমি গেলেও—রান্নায় না হয় আরেকটা বেডে। কারণ আমি তো আছি এখন—ড্রয়িং রুমে। রান্না ঘরে যদি তুমি যাও তবে পূর্বের ঘটনার পথে তোমাকে পাওয়া যাবে। যে এমন পরিস্থিতিতে ঠোঁটে পেট্টোলিয়াম জেলি মাখাতে পারে বা স্বচ্ছন্দে মাখায় সে রাঁধতেও পারে—এ আর অবাকের কী?

আগুনে বিড়ি দিলাম, অ্যাশট্রেটা খুঁজে পাচ্ছি না। অ্যাশ ফেলছি জানলা দিয়ে; জানলার ফ্রেমে জামাচ্ছি, পরে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেব। তুমি কই? কোনো সাড়া পেলাম না—কোন ঘরে জানি না।

পাতা: ২
বিকেলে; অনেক দিন পর ছুটি পেয়ে গেছিলাম কেএফসিতে, শাখাটা আমাদের বাসার ধারে। ধানমণ্ডি, ঝিগাতলার দিকে মোড় নিতে রাস্তার ডানে। মাস তিন পরে তুমি আর আমি গেছিলাম—চিকেন ফ্রাই, তোমার বেশ পছন্দ। আমারও, তবে না হলেই নয়—এমন নয়। আমাদের দুজনের দুটো অর্ডার নিয়ে গেছে বয়। আমি ওটাকে গরম থাকতে থাকতে ভালো খাই। তুমি আবার ঠাণ্ডাভাব পুরোপুরি জমার আগে খাও—সবসময় এ অভ্যাসে দাঁড়িয়েছি আমরা। মুখে তুলতে তুলতেই বললে, “অনেকদিন পরে এলাম, না?”
“অনেকদিন কই? মাত্র তো মাস তিন। তবে অনেক ধরলে অনেকই। ”
আমাদের আশপাশে টেবিলগুলো খালি ছিল এতক্ষণ, এখন পূর্ণ—খাবারে আর জনে জনে। দুজন অথবা হোল ফ্যামিলি বেশি। দুজন বলতে আমাদের মতো—স্বামী আর স্ত্রী। ফ্যামিলিতে যোগ হয়েছে দুয়েকটি বাচ্চা। ওদের বয়েস বেশি দেখলাম না। খুব পুচ্চিও না আবার দশ-বারোও হবে না। মুখে তুলে দিতে হচ্ছে। রং-চং কথা বলছে দুজনে। নানা কথায়, নানা হাসাহাসিতে জীবনে ভরপুর কেএফসি। প্রতিটি মানুষের আলাদা আলাদা গল্প। কোনোটির সঙ্গে কারোটির মিল নাই, কদাচিৎ মিলে গেলেও পার্থক্য বলায়, সময়ে, মানুষে, ঘটনার কারণে।

আমাদের বাঁপাশের একটা টেবিলে দুই বন্ধু কিছুক্ষণ চেঁচাচ্ছে, আবার থামছে। একজন আরেকজনের কথায় মেনে উঠছে না। গল্প-অগল্পের গৎবাঁধা নিয়মের বাইরে গিয়ে এরা পার করছে বেলা। এদের একজন চেঁচিয়ে উঠল—“তুমি বেশি বুঝো, আমি হুদাই”...

আমাদের খাওয়া মাঝামাঝিতে। অবশ্য আমাদের বললে ভুল হবে—আমার একটু বেশিই। হাড্ডিটা পর্যন্ত নিয়ে এসেছি—দুয়েক জায়গায় মাংস লেগে আছে। তাও ফ্যাসফ্যাসে লাগবে খেলে—এমন। তুমি খানিক বিরাম নিচ্ছো। সম্ভবত মুড চেঞ্জের জন্য। উপরের বেশি ঝলসানো মাংস খাওয়া শেষে এখন ধরবে ভেতরের সেদ্ধটা। ফ্রাইটাকে প্লেটে রেখে টিস্যু দিয়ে আঙুল মুছে নিয়ে বললে “তোমাকে একটা মজার ঘটনা শোনাই—পরশু দিনের আগের দিনের। ওই যে মেঝপার বাসায় গেলাম না—তখন। ”

ও, হ্যাঁ। এর মধ্যে তুমি তো আবার তোমার মেঝো বোনের বাসায় গিয়েছিলে। মাঝেমাঝেই তো যাও—মিরপুরে। ওখানে রাতে ও দিনের অর্ধেক থেকে বিকেলে চলে আসো। বলা যায় একটা ছোটখাট বেড়ানো। এ শহরে তোমার তেমন যাওয়ার জায়গা নেই। গেলে ওই—বোনের বাসা পর্যন্ত দৌড়। আমিও বারণ করি না। যেতে চাও যাও—আমাদের সংসার এক বছরের প্রান্তে। বাচ্চা-কাচ্চার ঝামেলা নেই, আমি থাকি দিনমান আফিসে। বেড়ালে—আসলে মন ভালো পাই তোমার। বাসার দুটা চাবি দুজনের কাছে। যখন যে—যে দিকে যাই একজন আরেকজনের জন্য বসাবসি নেই—যার যার মতো সে সে। এমনকি আমার জন্য আমার পছন্দে তুমি কখনো সাজো না—আমিও না। বিয়ের প্রথম দিকে, কোথাও ঘুরতে বা বন্ধুদের বাসায় যাওয়ার সময় তোমাকে বললতাম, শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ-থ্রিপিস যাই পরো—অন্তত আমার জন্য কপালে বড় একটা লাল টিপ দিও। ওটা আমার বেশ পছন্দের। ধমকে উঠতে—“পাগল নাকি তুমি। যে কপালে যে টিপ মানায়। বড় টিপ আমায় মানাবে না। ওটার জন্য কপালের  উঁচুতে চুল দরকার। আমার কপালটাতো ছোট, দেখছো না। তোমার পছন্দ তোমার কাছেই থাক। কপালে বড় টিপ তুলে তোমার পছন্দকে বেমানান করার দরকার কী?” এ ধরনের দীর্ঘ বাক্য বিনিময়ের পর আমার আর কিছুই বলার থাকত না। একথা বললেও ভুল হয়, আসলে আমি বলতে পারতাম না। কেন জানি না! তখন জানতে চাইতাম, “কেমন আছো তুমি। ”

এখন তোমার কপালটা খালিই আছে। পরেছো সালোয়ার কামিজ। হাফ স্লিভ কামিজটার গলার দিকটা বেশ ছড়ানো। বুকের ওপর পাখির ডানা ছড়ানো এমব্রয়ডারির কারুকাজ। একটা ছোট ওড়না গলার ওপর দিয়ে ইউ হয়ে গেছে। ওটা বুকের ওপর দিয়ে নাভিতে নেমেছে। এ ওড়নাটা গাউছিয়া থেকে কেনা। নতুন বেরিয়েছে নাকি। এর সুবিধা—কম বিরক্ত করে। তোমার চুল নিয়ে বললে অনেক কথা। কোনো উপায়েই ওটাকে সোজা করা যাচ্ছে না। কেমন যেন নারকেল গাছের শিকড়ের মতো পাকিয়ে পাকিয়ে আছে। মাথায় ক্লিপের চাষ করেছো মনে হচ্ছে। সাত আটটা ক্লিপ মিলে মাথার চুলগুলোকে খামছে খামছে ধরেছে। চুল ফাঁপা তোমার, তাই এ ব্যবস্থা।

পাতা: ৩
তুমি শুরু করলে ঘটনাটা। আমি এরই মধ্যে পানি নিলাম গলায়। বলে যাচ্ছো—“আপার সামনের ফ্ল্যাটে এক ভদ্রলোক থাকেন, বউ সমেত। বউটা ভালোই, লোকটাকে খুব একটা চড়ায় না মনে হলো। ভদ্রলোক আপার বাসায় আসেন প্রায়ই। বেশ রসিক। সকালের নাস্তা এক রকম খেতে খেতে নাকি তার এক ঘেঁয়েমি ধরে গেছে। আমাকে বলল ‘আপু কী করি বলো তো’?” আমি মন দিয়ে শুনছিলাম। বেশ রসিয়ে বলছো তুমি।


আমি লক্ষ্য করলাম কেমন জানি রেগে যাচ্ছি। কারণ জানি না। কোথায় যেন ব্যথা অনুভব করলাম, কিন্তু ধরতে পারছি না। কেন! ব্যথা মাখানো স্বরেই বললাম “তা ওই গাধাটার বউ কোথায় ছিল তখন, যখন রশে বশে খাওয়ায় লেগেছিলে?”

শুনে রাগলে তুমিও। এমন কথায় রাগাটা স্বভাবের। বললে, “ছোটলোক দেখেছি তোমার মতো দেখিনি। এত ছোট মন কেন তোমার?”
ওই লোকটাকে কখনো দেখিনি, শুনিনি। অথচ এমন বর্ণনায় এলোমেলো হয়ে গেলাম। ধমকে উঠলাম এবার—শুধু টেবিলটা পর্যন্ত শুনিয়ে—“লজ্জা করেনি তোমার, পর পুরুষের...। আর গাধাটার বউটাই বা কেমন? কার সঙ্গে ধামড়াটা কি করছে একটু দেখবে না। ”
“সবাইকে নিজের করে ভেবো না, ছি! তোমার মানসিকতা, আর ছোট্ট একটা বিষয় নিয়ে এত কথা বলার কি আছে!” উত্তেজিত হয়ে পড়লে তুমি।
আমি রাগারাগি আরো বাড়িয়ে নিয়ে চললাম—“এসব করো, না! ওখানে গিয়ে এইসব হয় তাহলে!” এবার তুমি বেশ রেগে গেলে—“চুপ। আর একটা কথাও বলবা না। ”



বাম হাত ঢুকালাম তোমার কথার ভেতর, “আচ্ছা! তা তুমি কী সমাধান দিলে?”
“আহা শুনো-ই না। আমি তাকে বললাম, ‘আপনার কি ডিম ভাজি খাওয়ার অভ্যেস আছে?’ ভদ্রলোক নাকি ওটায় অভ্যস্ত। আমারও ইচ্ছা ছিল। তাকে নিয়ে বিশটা ডিম একসঙ্গে ভেজে বানালাম নতুন এক আইটেম। সঙ্গে হালকা পেঁয়াজ ছিটিয়ে দিলাম। কুসুমগুলো স্থানে স্থানে হলুদ রঙ বজায় রেখেছে। বেশ খানিক ভেজে তারপর নামিয়ে জন্মদিনের কেকের মতো কেটে খেলাম আমরা—ভালোই লাগল। ভদ্রলোক তো অবাক। বেশ প্রসংশা তার—‘আপু, জাক্কাস। এক পথ্যেই রুচি ফিরে পেলাম’। ”

আমি লক্ষ্য করলাম কেমন জানি রেগে যাচ্ছি। কারণ জানি না। কোথায় যেন ব্যথা অনুভব করলাম, কিন্তু ধরতে পারছি না। কেন! ব্যথা মাখানো স্বরেই বললাম “তা ওই গাধাটার বউ কোথায় ছিল তখন, যখন রশে বশে খাওয়ায় লেগেছিলে?”

শুনে রাগলে তুমিও। এমন কথায় রাগাটা স্বভাবের। বললে, “ছোটলোক দেখেছি তোমার মতো দেখিনি। এত ছোট মন কেন তোমার?”

ওই লোকটাকে কখনো দেখিনি, শুনিনি। অথচ এমন বর্ণনায় এলোমেলো হয়ে গেলাম। ধমকে উঠলাম এবার—শুধু টেবিলটা পর্যন্ত শুনিয়ে—“লজ্জা করেনি তোমার, পর পুরুষের...। আর গাধাটার বউটাই বা কেমন? কার সঙ্গে ধামড়াটা কি করছে একটু দেখবে না। ”
“সবাইকে নিজের করে ভেবো না, ছি! তোমার মানসিকতা, আর ছোট্ট একটা বিষয় নিয়ে এত কথা বলার কি আছে!” উত্তেজিত হয়ে পড়লে তুমি।
আমি রাগারাগি আরো বাড়িয়ে নিয়ে চললাম—“এসব করো, না! ওখানে গিয়ে এইসব হয় তাহলে!” এবার তুমি বেশ রেগে গেলে—“চুপ। আর একটা কথাও বলবা না। ”
“বললে কী করবে, এই তুমি আঙ্গুল উঁচিয়ে কথা বললে কেন?”

দুজনের ঝগড়ার মধ্যে পড়ে ফ্রাইরা হেলায় ঘুমিয়ে গেল প্লেটে। আমরা সেদিকে তাকাবার সময়ও পেলাম না।

আমি এবং তুমি একটা রিকশা নিয়ে সোজা চলে এলাম বাসায়। রিকশায় দুজনে আর কথা হয়নি—মুখ দেখাদেখিও না। বাসার সামনে এসে ভাড়া মিটাবার সময় তুমি দ্রুত আমার আগে বাসায় ঢুকে পড়লে। আমি পরে অতিথির মতো এসে বসলাম ড্রয়িংরুমে, একখানা সোফা কাম বেড পাতা এখানে। আর তখনই লক্ষ করলাম তুমি ঠোঁটে জেলি মাখাচ্ছো। শুষ্ক ঠোঁট তোমার, আহা! সম্ভবত অতিরিক্ত রাগারাগি আর উত্তেজনার কারণে তোমার ঠোঁটটা অন্যদিনের চেয়ে আজ শুষ্ক হয়ে পড়েছে বেশি। আমার সিগারেট শেষ হওয়ার আগেই জেলি মাখানো ঠোঁট নিয়ে তুমি চলে গেলে অন্যকোনো ঘরে। ড্রয়িংরুম থেকে আর আমি দেখিনি তোমাকে।

পাতা: ৪
বসে একটার পর একটা সিগারেট ভাঙছিলাম। শেষ করছি জোরে টেনে মুখ থেকেই ধোঁয়া ছেড়ে। এই সিগারেট নিয়েও তোমার সঙ্গে বাঁধে আমার। তুমি বলো ছেড়ে দিতে। কিন্তু এ অনুরোধটা আমার মনে ধরে না। এটা নিয়ে আমার কোনো ভাবনা নেই। যেমনি হঠাৎ ধরেছি একদিন, হয়ত তেমনি ছেড়ে যাবে সিগারেটই, আরো হঠাৎ। সিগারেটের রাগারাগি আমাদের নিয়মিত।

একসঙ্গে আট-দশটা খেয়ে ধরেছে, চোখ বুঁজে হেলান দিয়ে বসে আছি। খানিক বাদে হঠাৎ তোমার নিঃশ্বাস পেলাম, গন্ধও। ড্রয়িংরুমে ঢুকলে তুমি। বললে, “চোখ খোল, দ্যাখো কী এনেছি তোমার জন্য!”

আমি চোখ মেলে হতবাক। তোমার হাতে মেলামাইনের থালা, ওতে হলুদ বর্ণের কিছু একটা। থালাটা সামনে এলো। তাকিয়ে দেখি ডিমের আইটেম একটা। পাশে বসলে তুমি। কেমন আদুরে ভাব। বললে, “বারোটা ডিম দিয়ে বানিয়েছি—এবার খাও। সেকেন্ড টাইম তো, প্রথমবারের চেয়ে নিশ্চয়ই ভালো হয়েছে। ”

একটা অচেনা গন্ধ পেলাম। কোনো দিন কোনো খাবারের আয়োজনে পাইনি আগে, ডিমটা ছড়াচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই কেন যেন মেজাজটা পড়ে এলো। সামনে রাখা ভাজা ডিমটা যতই ঠাণ্ডা হতে লাগল মেজাজটাও তার সঙ্গে সঙ্গে গরম থেকে ঠাণ্ডার স্কেলেই নামছে। তাহলে এজন্যই কি মেজাজটা বিগড়ে গিয়েছিল তখন—অকপটে কি অপেক্ষায় ছিলাম, কখন আমাকেও আইটেমটা খাওয়াবে? তুমি একটা কাঁটা চামচে তুলে খাইয়ে দিতে চাইলে। তোমার হাতের চুড়িগুলো তখন নড়েচড়ে বসল—টুং টাং শব্দ হলো। আমিও একটু নড়লাম, “না, খাব না। কিছুক্ষণ আগে তো মাত্র খেলাম—খিদে নেই। ” তবু জোর করলে তুমি। ডিমের ভেতর দিয়ে ঢুকে চামচটা কেমন আড়চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে— চারটা কাঁটাকে তীরের সুঁচালো চারটা ফলা বলে মনে হলো। “খাওনা প্লিজ, রিকশায় কথা বলিনি, দুজনের রাগটা কন্ট্রোল করতে চেয়েছি। তখনই ভেবে রেখেছি বাসায় এসেই তোমাকে বানিয়ে খাওয়াব। মন খারাপ করে না সোনা—খাও। ”

আমি কিছু স্বাভাবিক হওয়ার পর আবার কী কারণে যেন বেঁকে যাচ্ছি। বুঝতে পারছি মেজাজটা আগের চেয়ে চড়া হতে চলেছে এবার। কেন? তাও বুঝতে পারছি না। শুধু মনে হচ্ছে মুখের উপর তুলে ধরা ডিম আমায় বলছে, প্রথম সবসময়ই প্রথম, দ্বিতীয় কখনো প্রথম নয়—এরচেয়ে বেশি নয়ত কম।

যা হবার তা হয়ে গেছে, যা ঘটবার তা ঘটে গেছে।

কাঁদছি একা একা
এ কথাগুলোও কাউকে বলার ইচ্ছে ছিল না আমার। বলার মতোও না। তবুও দাম্পত্যের অনেক কথাই ফাঁস করে দিলাম। তুমিই বলো, কী করব? আমি এখন, একা। তোমার দেওয়া ডায়রিটার মাত্র ৪ পাতা পূরণ হলো। কিন্তু অন্য কিছু বলেও তো ডায়রি লেখা শুরু হতে পারত? কেন হয়নি জানি না। তাও জানি না কেন এই আবোলতাবোল অভিমানের খসড়া।

এখনো অনেক কিছুই বলা হয়নি। পরের কথাগুলো শোনালে বরং আমারই বেশি ক্ষতি। পাবলিক গাল দেবে, বলবে, “হালা, নিজের বউরে ধইরা রাখতে পারে নাই নিজের খাইস্‌লতের দোষে, আবার আওয়াজ দিয়া বেড়ায়!” পেট্রোলিয়াম জেলির অনেকগুলো কৌটা পকেটে নিয়ে হেঁটে বেড়াই। খাই-দাই-ঘুমাই। টেইলার্সের দর্জি অবাক হয়, “ভাই এক জামায় এত পকেটে!” জেলি মাখাই ডায়রির পাতায় পাতায়। ভালো লাগে। ডায়রিতে দেওয়া চুমোর ঠোঁটগুলোকে আর্দ্র করি।

এছাড়া কল্পনা করি, সে এখন লিপ প্লেট পরা ইথিওপিয়ার সুরি গোষ্ঠীর মেয়েটি হয়ে গেছে। লিপ প্লেট পরানোর জন্য দাঁত ভেঙে দেওয়া হয়েছে তার। বইছে রক্তস্রোত!



বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।